[আপলোড কিছুটা ধীর হতে পারে, দুঃখ প্রকাশ করছি। কয়েক সেকেন্ড সময় দিন।]

বানর” নামে ডাকা হলে আমরা অপমানিত হই, মন খারাপ করে এর প্রতিবাদ জানাই। অথচ, আমাদের যদি ডাকা হয় ইউথেরিয় স্তন্যপায়ী (mammal) কিংবা মেরুদণ্ডী (vertebrate) কর্ডেট, তাহলে কিন্তু আমরা অপমানিত বোধ করিনা। এমনকি আমরা যে ন্যাথান মাছ কিংবা অ্যামনিওট চতুষ্পদ (tetrapod) এই সত্য মেনে নিতেও আমাদের বেশিরভাগেরই কোন সমস্যা নেই। শুধু এক বানর নিয়েই আমাদের যতো সমস্যা। অথচ, আমরা যে নিছকই বানর বৈ কিছু নই এটা আমাদের জানা প্রায় তিনশো বছর ধরে। শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার (taxonomy) জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস প্রথম আমাদের অন্তর্ভুক্ত করেন প্রাইমেট এইপ এই শাখা (clade) দুটির, যাদের বাংলা আমি যথাক্রমে করবো বানর ও বনমানুষ। আর লিনিয়াসকে অন্যান্য জীববিদদের মতো শয়তানের সাক্ষাত চর ঠাওরে নেওয়ারও কিন্তু কোন উপায় নেই কেননা ডারউইনের জন্মেরও এক শতাব্দী আগে লিনিয়াস প্রকাশ করেন সিস্টেমা নেইচারা যার প্রচ্ছদে লেখা ছিলো “ঈশ্বর তৈরী করেন আর লিনিয়াস করেন শ্রেণীবদ্ধ।” শতকরা ৯২% বর্তমান সময়ের জীববিদদের সাথে অসাদৃশ্যপূর্ণভাবে লিনিয়াস ছিলেন একজন ঘোর আস্তিক। লিনিয়াস এটা জানতেন না। তবে আজ তিনশো বছর পর এসে আমি জানি (এবং ব্যাখ্যা করবো কি করে জানি) যে- সকল ন্যাথান মেরুদন্ডী যেমন মাছের সাথে আমাদের সম্পর্ক যদি হয় হাতে হাত ধরাধরি, সকল স্তন্যপায়ী যেমন ইঁদুরের সাথে আমাদের সম্পর্ক যদি হয় বুকে বুক জড়াজড়ি- তবে সকল বানরের সাথে আমাদের সম্পর্ক অস্থিমজ্জায়। এবং ডিএনএ প্রমান করে আমাদের এই অস্থিমজ্জা-গভীর সম্পর্ক। এই প্রবন্ধের নীচের অংশটি অনেকের কাছে অনাকর্ষণীয় মনে হতে পারে। এর দায় আমার নয় কেননা এটি আমার বক্তব্য না। আমার বক্তব্য এই প্রবন্ধের শেষের পাঁচ প্যারা। তাই চাইলে এটিকে এড়িয়ে গিয়ে শুধু শেষের পাঁচট প্যারা পড়ে ফেলতে পারেন।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)

উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বানর। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বানরের আঙ্গুলে তো নখ থাকার কথা নখর তো থাকার কথা নয়। তবে কি এটা কোন ফেলিন বা ক্যানিড? যদি এর গলার আওয়াজ শোনেন তবে আপনার মনে হবে এটি ঠিকই একটি ফেলিন কেননা এর ডাক একেবারে বিড়াল কিংবা চিতাবাঘের মতো। কিন্তু এবারও…… ফেলিনের আঙ্গুলে তো ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকার কথা নয়, অথচ এর রয়েছে। তবে এটি কী? অন্তত আঙ্গুলের গঠনগত ট্রেইটের জন্য এটি একটি জীবন্ত অন্তর্বর্তী জীবাশ্ম। এটি পিগমী মার্মোসেট যার বৈজ্ঞানিক নাম cebuella pygmaea যা কিনা ক্যালিট্রিক্স শাখার অন্তর্গত একটি সিমিয়ান প্ল্যাটিরিন বানর। ইঁদুরের মতো এটি কোন মডেল জীব নয় বিধায় এন্ট্রেজে এর প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মাত্র ৪৭টি, যার মধ্যে অন্তত একটি মাইটোকোন্ড্রিয়াল সাইটোক্রোম। সাইটোক্রোম জিনগুলো একটি নির্দৃষ্ট হারে মিউটেশন জমা করে বিধায় একে আমরা অনেকটা আনবিক ঘড়ি হিসেবে গন্য করতে পারি। দুটি প্রজাতিতে একই আনবিক ঘড়ির পর্যায়ক্রম সমান্তর ফলাফল তাদের বংশগত সম্পর্কের নৈকট্য বা দূরবর্তীতা নির্দেশ করে। দুটি পর্যায়ক্রম কতোটা সাদৃশ্যপূর্ণ এটা নির্ধারণ করা হয় ব্লাস্ট নামক একটি পদ্ধতি ব্যাবহার করে। ব্লাস্ট ফলাফলের আইডেন্টিটি যতো বেশী, গ্যাপ যতো কম এবং ই-ভ্যালু যতো কম দুটি পর্যায়ক্রম ততোবেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। মানুষের সাথে পিগমি মার্মোসেটের মাইটোকোন্ড্রিয়াল সাইটোক্রোম সি অক্সিডেস সাবইউনিট ৫এ এর সর্বোচ্চ পর্যায়ক্রম সমান্তর ফলাফল (sequence allignment) হচ্ছে আইডেন্টিটি- ৯৫%, গ্যাপ- ০%, ই-ভ্যালু- ১০^-৮০(লাল রেখা)। অর্থাৎ, এটি আমাদের খুবই খুবই ঘনিষ্ঠ আত্নীয়। বস্তুত মাত্র ৪০ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের বংশগতির ধারা আলাদা হয়।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
……………………………………………………………………………………….
আর এটা হচ্ছে মানুষের জিনোম। আমার বা আপনার জিনোম নয়, ক্রেইগ ভেন্টার নামক একজন বিজ্ঞানীর জিনোম যাকে বর্তমান সময়ের জিনোমিক্সের রাজা হিসেবে গন্য করা হয়। তবে আমার কিংবা আপনার জিনোমের সাথে এই জিনোমের সাদৃশ্য হবে ৯৯.৯%। শুধু আমি বা আপনিই নন- ভিখারী, যতো মানুষ আপনার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা হয়েছে, বন্ধু, শত্রু, সাঙ্গরি-লার লো-সেন, মার্লোর ফাউস্ট, রবীন্দ্রনাথ, জোয়ান-অফ-আর্ক, খুনি, হিটলার, আট্টিলা, এরশাদ শিকদার, হযরত, মুসা সকলে; য-তো মানুষ পৃথিবীর বুকে এই পর্যন্ত জন্মগ্রহন করেছে তারা তাদের প্রত্যেকে শরীরের প্রায় প্রত্যেকটি কোষে এই একই নিউক্লিওটাইড পর্যায়ক্রম নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে এবং জীবনযাপন করেছে। আর এ পর্যন্ত যতো শিম্পাঞ্জি পৃথিবীর বুকে জন্মগ্রহন করেছে তাদের সবার জিনোম হয়েছে ক্রেইগ ভেন্টরের জিনোমের সাথে ৯৮.৫% সাদৃশ্যপূর্ণ। হ্যাপ্লোটাইপ বিশ্লেষণ ও মিউটেশনাল বিশ্লেষণ না করে শুধু পর্যায়ক্রম দেখে আপনার জানার কোন উপায় নেই এটি যেই ব্যক্তির জিনোম সে কি সাদা না কালো, পুরুষ না নারী, লনবা না খাটো, বাঙ্গালী নাকি তাঞ্জানিয়ান, শিশু কি বৃদ্ধ। সমগ্র মানবজাতিকে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে এতোটা সহিংসভাবে একত্রীকরণকারী কোন ছবি বোধহয় আর হয় না। এর মাঝে রয়েছে সীমাহীন সম্ভাবনা। তবে, শঙ্কার উদ্রেক করে এমন ব্যাপারও রয়েছে। এটা আমাদের প্রদর্শন করে যে মরে যাওয়াটা কতোটা সহজ, বস্তুত বেঁচে যে আছি আমরা এটাই একটা দুর্ঘটনা। চার-পাঁচটি মাত্র পয়েন্ট মিউটেশনই যথেষ্টেরও বেশী আমাদেরকে একশোবার মেরে ফেলার জন্য।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
দেখুন প্রথমে আছে মাইটেলম্যান ম্যাপ যা কিনা লোসাইদের যুক্ত করে ক্রোমোজোমাল ভাঙ্গনজনিত ক্যান্সার বা নিছকই বিনাইন টিউমার বা যে কোন ধরণের নিওপ্লাজমের সাথে। কী সুন্দর ডিজাইন, ঠিক? আর জিনসেক ম্যাপে দেখুন যেই কয়টি খয়েরী বিন্দু দেখা যাচ্ছে এরা প্রত্যেকে সুডোজিন। আবারও বলি কী সুন্দর ডিজাইন। আর মর্বিড ম্যাপ (মাস্টার ম্যাপ) যেটা কিনা লোসাইদের সংযুক্ত করে ওমিম ডাটাবেজে, দেখুন জিনোমের এইটুকু মাত্র অংশে কতগুলো জঘন্য জঘন্য রোগ (সবুজ রেখা)। মাসুলার ডিসট্রফি থেকে শুরু করে, অল্টজাইমার, অস্টিওপোরোসিস কি নেই। আর খেয়াল করুন আছে মনযোগের অভাবজনিত অতিক্রিয়াশীলতা (attention-deficit hyperactivity)(খয়েরি রেখা)। মনযোগের অভাবজনিত অতিক্রিয়াশীলতা একটি সামাজিক মানসিক রোগ, অথচ এটারও অন্তস্থিত রসায়ন মানুষ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই ছবির আসল চমক হচ্ছে গোলাপি হাইলাইটটি। এটি টিউমার সাপ্রেসর প্রোটো-অঙ্কোজিন পি৫৩। একে বলা যেতে পারে সকল বহুকোষী মেটাজোয়ানদের বন্ধু। এর অভাবে ১০০ট্রিলিয়ন কোষ সম্বৃদ্ধ মানুষ আমরা প্রতিদিন একশবার করে ক্যান্সার লাভ করবো। পি৫৩ কে বলা যেতে পারে কোষের পুলিশ। প্রতিবার বিভাজিত হওয়ার জন্য এস ফেইজে ঢুকতে চাওয়া কোষকে এর কাছ থকে অনুমতি গ্রহন করতে হয়। এবং এর কার্যক্রমও হচ্ছে একই সমান নাটকীয়। একদম খাঁটি নির্ভেজাল কোষকেই এ এস ফেইজে ঢুকতে দেয়। আর পান থেকে চুন খসলেই এটা এমপিএফ নামক একটি মাল্টিপ্রোটিন কমপ্লেক্স ইনহিবিট করে দিয়ে বিভাজন আটকিয়ে দেয়। বিস্তারিততে যাবো না, কেননা এটার সম্পর্কে বিস্তারিত বলার এতোকিছুই আছে যে বলে শেষ করা কঠিন। পি৫৩ ই কিন্তু একমাত্র টিউমার সাপ্রেসর নয় আরকম আরও আছে যেমন আরবি একটি। এদের একেকটির কাজ একেকরকম নাটকীয়। এবং এই নাটকীয় প্রকরণই হচ্ছে ডিজাইনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রমান। যেই কাজ হাজার উপায়ে করা যায় সেই কাজ হাসিলের একটি মাত্র উপায়কে ডিজাইনড বলার কোন অবকাশ নেই। এইটি ডিজাইনড হলে আপরটি নয় কেনো তবে? আর প্রকরণ দিয়ে ডিজাইনার যদি তার শিল্পীমনের পরিচয়ই দিয়ে থাকে তবে সেখানে এতোগুলো মাইটেলম্যান ব্রেকপয়েন্টই বা কেনো? আর খেয়াল করুন সম্পুর্ণ ব্যবস্থাটা কিন্তু পিনের আগায় দণ্ডায়মান। পান থেকে চুন খসলেই সর্বনাশের এক ক্যাসকেড শুরু হয়ে যাবে এবং এইরকম একহাজারটি ক্যাসকেডের অন্তত একটি গন্তব্যে পৌছে আসলেই সর্বনাশ ডেকে আনবে। এই মুহূর্তেআপনার শরীরের হাজার হাজার কোষের বিভাজন আটকিয়ে রেখেছে পি৫৩, কোনভাবে যদি পি৫৩ও মিউটেন্ট হয়ে পড়ে সর্বনাশের সেই ক্যাসকেড শুরু হবে। কোষ যদি ডিজাইনড হয়ে থাকে তবে ডিজাইনারটির উচিত এই মুহুর্তে একটি সেইফটি কোর্সে ভর্তি হয়ে যাওয়া।
……………………………………………………………………………………….
প্রায় সকলেই জেনে থাকবেন যে মানুষের ক্রোমোজোম নম্বর ২, শিম্পাঞ্জির ক্রোমোজোম ২এ ও ২বি এর মুখোমুখী (head to head) ফিউশনের ফলাফল। বস্তুত এটা আমরা জেনেছি খুবই আল্প সময় ধরে হলো, শিম্পাঞ্জি জিনোমের ড্রাফট ও অ্যাসেম্বলি সম্পন্ন হয় ২০০৫ এ, আর অ্যানোটেশনের কাজ এখনও চলছে। কিন্ত, মানুষের ২৩ জোড়া আর আন্যান্য সকল বৃহৎ বনমানুষের (great-ape) ২৪ জোড়া ক্রোমোজোম যে রয়েছে এটা জানি অনেক আগে থেকেই। অর্থাৎ, এটা বস্তুত বিবর্তনতত্বেরই একটি ভবিষ্যদ্বাণী ছিলো যে- মানুষের একটি ক্রোমোজোমকে দুটি বনমানুষ ক্রোমোজমের ফিউশনের ফলাফল হতে হবে কেননা একটি সম্পূর্ণ ক্রোমোজোম হারিয়ে ফেলা নিঃসন্দেহে হবে একটি ঘাতক মিউটেশন। ক্রেইগ ভেন্টর শিম্পাঞ্জির জিনোম সিকোয়েন্স একপ্রকার শুরু করেন এই ভবিষ্যদ্বাণীর নিশ্চয়তা খোঁজার জন্য। ফলে, এখন আমরা জানি ক্রোমোজোম দুটি হচ্ছে ২এ ও ২বি। এটা ভালো করে বোঝা যায় মানুষের ক্রোমোজোম ২ এর একটি নির্বিচার অংশ শিম্পাঞ্জি জিনোমে ব্লাস্ট করলে। পি-বাহুর দিককার বেশীরভাগ পর্যায়ক্রম সমান্তরিত হয় শিম্পাঞ্জির ২এ ক্রোমোজোমাল কন্টিগগুলোতে আর কিউ-বাহুরগুলো হয় ২বি তে। অর্থাৎ এভাবে ব্লাস্ট করে করে এমন একটা পর্যায়ে পৌছানো যায় যেখানে মানুষের ক্রোমোজোমে হোমোলগাস শিম্পাঞ্জির ২এ ও ২বি ক্রোমোজমের মধ্যকার স্পষ্ট একটি সীমান পাওয়া যায়। এই সীমানাটিই হলো ফিউশন-স্থল। এই সীমানা অপটিমাইজ করে করে এখন আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি মাত্র ১৫ নিউক্লিওটাইডের মধ্যে। এখন আমরা জানি এই ফিউশন-স্থল ১১৪,৪৫৫,৮২৩ থেকে ১১৪,৪৫৫,৮৩৮ নিউক্লিওটাইডের মাঝে। আমি এই ফিউশন-স্থল দেখতে চাই।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
লাল বাক্সটি হচ্ছে আমার উপরোক্ত ফিউশন-স্থল যার অবস্থান ক্রোমোজোম ২ এর এই কন্টিগের ৪২০,৪৮৬ থেকে ৪২০,৯০০ নিউক্লিওটাইড পর্যন্ত। এর আগে পিছে ১৫০ নিউক্লিওটাইড রয়েছে যা শিম্পাঞ্জি জিনোমে সম্পুর্ণই অনুপস্থিত এবং তার আগে পিছে রয়েছে মাল্টিপল সাবটেলোমারিক ডুপ্লিকেশন যা নিশ্চিত করে এটাই সেই কথিত ফিউশন-স্থল। জিনোমের ব্যাপারে আরও একটি মজাদার জিনিস না বলে পারছি না- আসলে জিনোম সিকোয়েন্স করা কি শুধুই একদল ক্লোনের পর্যায়ক্রম উদঘাটন করা? না, এসটিএস ঘনত্ব একটি ট্রেশহোল্ড অতিক্রম না করলে উদঘাটিত উপাত্তের গুনগত মান খুব একটা ভালো হয় না। একটি জিনোম সিকোয়েন্স করার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ঐ জিনোম কন্টিগে অ্যাসেম্বল করা এবং এই প্রক্রিয়ায় গ্যাপ সর্বনিম্ন রাখা এবং তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ ঐ জিনোম অ্যানোটেড করা। বস্তুত শিম্পাঞ্জির জিনোমকে বলা হয় হিউম্যানাইজড, মানুষের সাথে এর পর্যায়ক্রম প্রায় পুরোই সাদৃশ্যপূর্ণ বিধায় মানুষের জিনোমকে স্ক্যাফোল্ড হিসেবে ধরে এর কন্টিগগুলো অ্যাসেম্বল করা হয়েছে (সূত্রঃ শিম্পাঞ্জি জিনোম ওভারভিউ পাতা)। এবং এটা সম্ভব হয়েছে এই কারণেই যে জিনোমিকভাবে মানুষ হচ্ছে প্রায় শিম্পাঞ্জি যেমন শিম্পাঞ্জি হচ্ছে প্রায় মানুষ।

ক্রোমোজোমাল ফিউশন সম্পর্কে একটি ব্যাপার পরিষ্কার হওয়া দরকার। ক্রোমোজোম কী আসলেই ফিউস হয়? উত্তর, হ্যাঁ। আমি আমার নিজ চোখে ক্রোমোজোম ভাঙ্গতে এবং ফিউস হতে দেখেছি। ক্রনিক মায়োলোজেনাস লিউকেমিয়া হচ্ছে অস্থিমজ্জায় ঘটা শ্বেত-রক্তকনিকার একটি ক্যান্সার যার ক্যান্সারাস কোষগুলোর ৯ নম্বর ক্রোমোজোমের কিউ-বাহুর একটি অংশ ও ২২ নম্বর ক্রোমোজমের পি-বাহুর একটি অংশ ভেঙ্গে একে অপরের সাথে অবস্থান স্থানান্তরিত করে (reciprocal translocation)। ফলশ্রুতিতে, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী লম্বা ৯ নম্বর ক্রোমোজোম ও স্বাভাবিকের চেয়ে খাটো ২২ নম্বর ফিলাডেলফিয়া ক্রোমোজোম স্টেইন করলে লাইট মাইক্রোস্কোপে দেখা যায়। শুধু তাই নয় ক্রোমোজোমের জি ব্যান্ডিং প্যাটার্ন দেখে এটাও নিশ্চিত করা যায় যে ভাঙা অংশগুলি প্রতিনিধিত্ব করছে ৯ ও ২২ নম্বর ক্রোমোজোমের। এছাড়াও ক্রোমোজোম ভাঙ্গে অয়নীতকারী তেজস্ক্রিয়তা। প্রতিবার যখন আপনি রোদ পোহাচ্ছেন কিংবা দাঁড়াচ্ছেন বছরে দু-একবার এক্স-রে মেসিনের সামনে আপনার কিছু কোষের কিছু ক্রোমোজোম ভেঙ্গে যাচ্ছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন বেগুনী রঙের চেয়ে স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যসম্পন্ন আলোর প্রভাবে। এইসব ক্ষতিগ্রস্ত কোষের এস ফেইজে ঢোকা আটকিয়ে রাখছে পি৫৩, আরবি ইত্যাদি টিউমার সাপ্রেসর প্রোটিন যখন কিনা এ সকল ভাঙ্গা ক্রোমোজোম জোড়া লাগাচ্ছে ডিএনএ রিপেয়ার এনজাইম নামক অন্য একদল প্রোটিন। ভাঙন যদি খুব বেশী গুরুতর হয় তবে ডিএনএ রিপেয়ার প্রোটিন এক টুকরোর সাথে অযথার্থ অন্য টুকরো জোড়া দিয়ে ফিউশন ক্রোমোজম বানাবে। টিউমার সাপ্রেসর প্রোটিন অঙ্কোজেনিক মিউটেশনের শিকার হলে কোষ হবে ক্যান্সারাস। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদি ডিএনএ রিপেয়ার এনজাইমগুলোরও একটি বা কয়েকটি অঙ্কোজেনিক মিউটেশন অর্জন করে তবে ক্যান্সার “বংশগত অস্থিতিশীলতা (genetic instability)” নামক একটি ফেইজে প্রবেশ করে। জীবন-প্রান্তিক ক্যান্সার রোগী কতোদিন বাঁচবে এটা হিসাব করতে এই বংশগত অস্থিতিশীলতার প্রশ্ন একটি বড় নিয়ামক রূপে দেখা দেয়। বাঁচা মরা আল্লার হাতে এই ধরণের একটি মগজশূন্য আলাপ শোনা যায় অনেক প্রজাতির ইসলামে। বস্তুতঃ সত্যি হচ্ছে- মেটাস্টেটিক, চরম হেটেরোজিনিয়াস কোষসম্পন্ন, বংশগতভাবে অস্থিতিশীল একজন জীবনপ্রান্তিক ক্যান্সার রোগীকে আল্লা কেনো আল্লার বাবাও বাঁচাতে পারবে না। ক্যান্সার না আল্লাকে যদি আমি একটি সাধারণ সিজনাল ফ্লু নিরাময় করতে দেখি ফ্যাত ফ্যাত করে কলেমা পড়ে ইমান এলে ফেলবো আমি। অন্যদিকে যাত্রা ধরতে চাই না, এখানেই থামছি।
……………………………………………………………………………………….
এর রয়েছে ছোট আকারের ইন্ট্রনবিহীন বৃত্তাকার (circular) প্রোক্যারিয়োট জিনোম, জিনদের মাঝখানে কোন শূণ্যস্থানের অনুপস্থিতি এবং কোডকৃত প্রোটিনগুলোর অপরিসীম প্রাণরাসায়নিক গুরুত্ব বিধায় মাইটোকোন্ড্রিয়াল জিনোমকে একটি আদর্শ আনবিক ঘড়ি (molecular clock) হিসেবে গন্য করা হয়। ক্লস্টোল হচ্ছে একটি অ্যালগরিদম যা একাধিক পর্যায়ক্রম মাল্টিপল অ্যালাইনমেন্ট করে হিসাব করে একটি প্রতিনিধিত্বশীল ফাইলোগ্রাম এবং ক্লেইডোগ্রাম উপস্থাপন করতে পারে। বিবর্তনতত্ত্বের একটি ভবিষ্যদ্বাণী এই ক্ষেত্রে হবে যে- একাধিক প্রজাতির একই আনবিক ঘড়ি পর্যায়ক্রমের ক্ষেত্রে ক্লস্টোল ফাইলোগ্রাম হবে হুবহু ডারউইনের জীবনবৃক্ষের মতো, যদিও ডারউইনের জীবনবৃক্ষের সাথে অসাদৃশ্যপূর্ণভাবে ক্লস্টোল ফাইলগ্রাম হবে শেকড়বিহীন (unrooted)। নীচে আমি ক্লস্টোল করেছি শিম্পাঞ্জি, রেসাস বানর, আফ্রিকান গ্রিন বানর, সি এলিগ্যান্সের মাইটোকোন্ডিয়াল জিনোম এবং মানুষের কয়েকটি মাইটোকোন্ড্রিয়াল হ্যাপ্লোটাইপ HV, T2b, J2b, H2a, C5L2a1 যার মধ্যে L2a1 ছাড়া অন্যান্যগুলো নির্বিচার বাছাইকৃত। নোটপ্যাডে সম্পাদনযোগ্য কোয়েরি ফাস্টা ফাইলটি পাওয়া যাবে এখানে। এবং কী দেখছি আমি?

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
আমি দেখছি সি এলিগেন্স রয়েছে ফাইলোগ্রামের সবচেয়ে দূরবর্তী শাখায়। একটি বিশাল ফাঁকা স্থানের পর রয়েছে আফ্রিকান গ্রীন বানর এবং তার পরপরই রেসাস বানর, উভয়ে একই শাখায় (clade) কেননা উভয়েই ক্যাটেরিন। এরপর রয়েছে শিম্পাঞ্জী, তারপর নিয়ান্ডার্টল এবং তারপর মানুষের হ্যাপ্লোটাইপগুলো। ঠিক যেমনটি বিবর্তনতত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে। মানুষের হ্যাপ্লোটাইপগুলো একই রেখায় দেখা যাচ্ছে কম্প্রেশনের কারণে। আমি যদি সি এলিগ্যান্স তুলে দেই তবে মানুষের হ্যাপ্লোটাইপগুলোর ফাইলোগ্রামও পাওয়া যাবে এবং সেই ফাইলোগ্রাম নিশ্চিত করবে বিবর্তনতত্বের ভবিষ্যদ্বাণী। নীচে আমি সেটা করেছি (ফাস্টা ফাইল এখানে), এবং আমি দেখছি-

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
নিয়ান্ডার্টল রয়েছে সবচেয়ে দূ্রবর্তী শাখায় এবং এর সাথে একই ক্লেইডে রয়েছে L2a1 হ্যাপ্লোটাইপ। মাইটোকোন্ড্রিয়াল ঈভের হ্যাপ্লোটাইপ হচ্ছে l0। একই হ্যাপ্লোগ্রুপ L এর সদস্য বিধায় এই হ্যাপ্লোগ্রুপই হচ্ছে বর্তমানে অবিলুপ্ত সর্বপ্রাচীন হ্যাপ্লোগ্রুপ যার উতপত্তি একশো হাজার বছর আগে সাব-সাহারান আফ্রিকায়। নিয়ান্ডার্টলদের সমসাময়িক বিধায় এটা নিয়ান্ডর্টলদের সাথে একই ক্লেইডে পড়াটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। একদম এটাই কিন্তু ডারউইনের ভবিষ্যদ্বাণী যে মানুষের উতপত্তি সাব-সাহারান আফ্রিকায় এবং সেখান থেকে মানুষ অন্যান্য মহাদেশে ভ্রমণ করে (migration)। এরপরই রয়েছে হ্যাপ্লোটাইপ C5 যার উতপত্তি ৬০,০০০ বছর আগে দক্ষিণ সাইবেরিয়ায়। বিবর্তনতত্বকে আমি একবাক্যে ভুল বলতাম যদি কিনা আমি দেখতাম ৬০,০০০ বছর আগে C5 এর উতপত্তিস্থল আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়া কিংবা অন্য কোন দ্বীপে। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে দুই দলছুট T2b এবং J2b যাদের সাথে একই ক্লেইডে অন্য কোন হ্যাপ্লোটাইপ নেই। এরপর রয়েছে যথাক্রমে H2a এবং HV একই ক্লেইডে। এবং এটাই স্বাভাবিক নৃতত্ব আমাদের বলছে যে HV, H2a এর ইমিডিয়েট পূর্বপুরুষ। H2a বা HV কে একে একই ক্লেইডে পাওয়া না গেলে বলা যেতে পারতো বিবর্তনতত্ব ভুল।

মাইটোকোন্ড্রিয়াল জিনোম সম্পর্কে আরও একটি ব্যাপার বলতে চাই। একটি ক্রোমোজমে জিনের ক্রমবিন্যাসকে বলা হয় সিন্টেনি। বিবর্তনতত্বের একটি স্বাভাবিক পূর্বাভাষ হবে যে একাধিক প্রজাতির জিনোমে এক বা একাধিক অংশের সিন্টেনি মান্য করবে জীবনবৃক্ষ। মানুষের মাইটোকোন্ড্রিয়াল জিনোমের সিন্টেনি নিম্নরূপ-
ফেনিলঅ্যালানিন টিআরএনএ, ১২এস আরএনএ, ভ্যালিন টিআরএনএ, ১৬এস আরএনএ, লিউসিন টিআররএনএ, এনএডিএইচ ডিহাইড্রজেনিস প্রোটিন, আইসোলিউসিন টিআরএনএ………ইত্যাদি।

এবং মাইটোকোন্ড্রিয়াল জিনোম আনবিক ঘড়ি বিধায় এমনকি জেব্রামাছ পর্যন্ত এই মাইটোকোন্ড্রিয়াল সিন্টেনি বিবর্তনতাত্বিকভাবে সংরক্ষিত (conserved)। সিন্টেনিতে প্রথম উলট-পালট দেখা যায় সি, এলিগেন্সে গিয়ে। শুধু কি মাইটোকোন্ড্রিয়াল জিনোমের সিন্টেনিই এতোটা সংরক্ষিত? না, সিডিএনএ এর সিন্টেনিও ঠিক একইভাবে জীবনবৃক্ষ মান্য করে চলে।

মাল্টিপল অ্যালাইনমেন্টের ব্যাপরে আরেকটি কথা না বলেই পারছি না। মনে করুন সদ্য-বিবর্তিত একটি ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া বা অন্য যে কোন প্যাথোজেন দ্বারা কেউ সংক্রমিত হলো। কি করে আমরা নিশ্চিত করতে পারি প্যাথজেনটি কোন প্রজাতির? আমাদের সংগ্রহ করতে হবে ঐ প্যাথোজেনের একটি আনবিক ঘড়ি পর্যায়ক্রম এবং ইতিমধ্যেই উদঘাটিত রয়েছে এমন প্যাথোজেনের একই আনবিক ঘড়ির সাথে আমাদের করতে হবে মাল্টিপল সমান্তর। এটা করলে আমরা যেই ফাইলোগ্রাম পাবো সেই ফাইলোগ্রাম নিশ্চিত করবে জীবনবৃক্ষে ঐ প্যাথোজেনের অবস্থান। জুনোটিক স্থানান্তর (zoonotic transfer) যা কিছু ঘটছে যেমন এইচআইভি, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু এরা প্রত্যেকেই ঠিক এই প্রক্রিয়ায়ই উদঘাটিত হয়েছে। আরও একটি ব্যাপার এটি আমাকে অনুভব করায় যে- কম্পিউটার আমাদের জীবনকে কতোটা সহজ করেছে। প্রথম ক্লস্টোলটি যেটি কিনা মাত্র দেড়লক্ষ নিউক্লিওটাইড, করতে আমার সময় লেগেছে ৩৫ মিনিট। চিন্তা করুন, সুপার কম্পিউটারের যেই কাজ করতে ৩৫ মিনিট লাগে মানুষের হাতে করতে সেটা কয় বছর লাগবে? লক্ষ লক্ষ বছর। কোয়েরি ৬ কি ৭ মেগাবাইট হলেই ক্লস্টোল ২০ থেকে ২৪ ঘন্টা সময় নেয় ফলাফল প্রদান করতে, আমি নিজেই পূর্বে ক্লস্টোল দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি।
……………………………………………………………………………………….
সাইক্লিক অ্যাডেনোসিন মনোফসফেট নির্ভর প্রোটিন কেনেইসকে সহজ নামে ডাকা হয় পিকেএ। খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন এটি এবং অবশ্যই ক্যান্সার ক্রিটিকাল। এটি অংশগ্রহন করে রিসেপ্টর টায়রোসিন কেনেইস, ম্যাপ কেনেইস, হেজহগ, কিমোকাইন, ইনসুলিন সংকেত সংবহন গমনপথের (signal transduction pathway) মতো একদল অপরিহার্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়। পিকেএ এর ক্যাটালাইটিক সাবইউনিটে রয়েছে গ্লাইসিন লিড নামক একটি স্বতন্ত্র মোটিফ যার কাজ কার্যকরী খাঁজে (active site/catalytic pocket) বন্ধনযুক্ত এটিপিকে ঠেঁসে ধরে এর কাঁপাকাপি নড়াচড়া বন্ধ করা। GXGXXGXV পর্যায়ক্রম নিয়ে এই গ্লাইসিন লিড গঠিত যেখানে G=গ্লাইসিন, V=ভ্যালিন এবং X=যে কোন রেসিজিউ। বিবর্তনতত্বের একটি স্বাভাবিক ভবিষ্যতবাণী এই ক্ষেত্রে হবে- যদিও X যে কোন রেসিডিউ হবার জন্য মুক্ত, তথাপিও বংশগতভাবে নিকট সম্পর্কযুক্ত জীবেরা তাদের গ্লাইসিন লিডে একই রেসিডিউ ব্যাবহার করবে এবং এর তারতম্য ঘটবে কেবল দূরবর্তী সম্পর্কযুক্ত জীবদের বেলায়। এটাই কি আসলে আমরা প্রকৃতিতে ঘটতে দেখি?

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
উপরে দেখা যাচ্ছে পিকেএ এর ক্যাটালাইটিক ডোমেইনের হোমোলজিন ফলাফল। লাল বাক্সের ভেতর দেখা যাচ্ছে গ্লাইসিন লিড রেসিডিউগুলো। খেয়াল করুন মানুষ থেকে শুরু করে মাছ পর্যন্ত সকল মেরুদন্ডী প্রাণীই তাদের গ্লাইসিন লিডে ব্যাবহার করছে GVGTFGKV পর্যায়ক্রম, যদিও প্রজাতিভেদে তারা GPGPAGAV কিংবা GGGGGGGV ব্যাবহার করলেও কোনও নির্বাচনী চাপের সূচনা হতো না। প্রথম তারতম্য আমরা দেখছি গাছে। দেখুন ক্রেস গাছে দ্বিতীয় স্থানের ভ্যালিন ও চতুর্থ স্থানের থ্রিওনিন পরিবর্তিত হয়েছে যথাক্রমে আইসোলিউসিন ও সেরিনে (নীল আন্ডারলাইন)। এবং এই ক্রেস গাছেরই আপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী ধান গাছও ভাগাভাগি করছে এই একই পর্যায়ক্রম, ঠিক যেমনটি বিবর্তনতত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে। একইসাথে পর্যবেক্ষণ করুন আরও একটি বিবর্তনতাত্বিক ঘটনা, জিন ডুপ্লিকেশন। দেখুন ক্রেসের রয়েছে দুই কপি একই পিকেএ সাবইউনিটের জিন। বস্তুত এখানে একটু পর্যালোচনা নাড়াচাড়া করলে আমরা এটাও বের করতে পারি কতো সময় আগে এই ডুপ্লিকেশনের ঘটনা ঘটেছে। তবে আমি আরও একটু গভীরে যেতে চাই। প্রোটিনগুলো শুধু নয়, আমি দেখতে চাই তাদের জিনগুলো। সিডিএনএ দেখার জটিলতায় আমি যাবো না, আমি বরং দেখতে চাই স্প্লাইসকৃত এমআরএনএ। এখানেও বিবর্তনতত্ব আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী করবে। যেহেতু একটি রেসিডিউ একাধিক সমার্থক কোডন (synonymous codon) দ্বারা কোডকৃত হতে পারে, তাই বিভিন্ন বংশগত দুরত্বের একদল জীবের গ্লাইসিন লিডের আটটি রেসিজিউ কোডকারী কোডনগুলোর আইডেন্টিটি সবচেয়ে বেশী হবে নিকটসম্পর্কযুক্ত প্রজাতিগুলোতে এবং সম্পর্কের দুরত্ব যতো বাড়বে কোডন আইডেন্টিটি ততো কমবে। আসলেই কি প্রকৃতিতে এটা ঘটে? দেখার জন্য আমি বেছে নিচ্ছি চারটি প্রাণী মানুষ, ইঁদুর, ড্রসোফিলানিউরোস্পোরা । এবং যাতে আমি হারিয়ে না যাই তার জন্য দেখে নিচ্ছি যে মানুষের গ্লাইসিন লিড রয়েছে শেকলের ৫১-৫৮ নম্বর রেসিজিউ জুড়ে।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
মানুষের এমআরএনএ এর সূচনা কোডন ATG শুরু হয় আমরা দেখছি ২৬৫ নম্বর নিউক্লিওটাইড থেকে (নীল আন্ডারলাইন)। অর্থাৎ, গ্লাইসিন লিডের ৫১ নম্বর রেসিডিউ গ্লাইসিন কোডকারী কোডন GGX এর শুরু আমাদের পাওয়ার কথা (২৬৫+(৫১-১)x৩) বা ৪১৫ নম্বর নিউক্লিওটাইডে। হ্যা আমরা ঠিক তাই ই পেলাম। খেয়াল করুন এই আটটি কোডনের জন্য (সবুজ বাক্স) মানুষ ও ইঁদুরের কোডন আইডেন্টিটি ৫/৮, যাদের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ কোডনগুলোতে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ ও ড্রসোফিলার বেলায় কোডন আইডেন্টিটি ৩/৮। এবং মানুষ ও ক্রেস গাছের বেলায় ২/৮। ঠিক এটাই কিন্তু বিবর্তনতত্বের ভবিশ্যদ্বাণী।

এখন কথা হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে কাছের অবিলুপ্ত আত্নীয় শিম্পাঞ্জির এমআরএনএ কেনো আমি অন্তর্ভুক্ত করলাম না? করেছিলাম আসলে। কিন্তু, দেখলাম শুধু প্রোটিনই নয় শিম্পাঞ্জির সাথে মানুষের এমআরএনএ-এরও আইডেন্টিটি ১০০% এবং গ্যাপ ০% । অর্থাৎ, মানুষ ও শিম্পাঞ্জির পিকেএ প্রোটিন ও এমআরএনএ যদি আপনাকে দেওয়া হয় আপনার বলতে পারার কোন উপায় নেই কোনটি মানুষের এবং কোনটি শিম্পাঞ্জির। তাহলে, আমি এখন দেখতে চাই সিডিএনএ। অন্তত, নির্বাচনী চাপ বহির্ভূত ইন্ট্রনগুলোর একটিতে শিম্পাঞ্জির সাথে আমাদের কিছু অমিল থাকা উচিত। প্রতি একশো নিউক্লিওটাইডে অন্তত দুটি নিউক্লিওটাইড আমাদের আলাদা হবার কথা এই ভরসায় পিকেএ ক্যাটালাইটিক বেটা জিনের সিডিএনএতে প্রথম ইন্ট্রনের প্রথম একশো নিউক্লিওটাইড আমি ব্লাস্ট করলাম। না, কোন আমিল নেই। দুইশো নিউক্লিওটাইডে? না, তাও না।। পাঁচশো নিউক্লিওটাইডে? যদিও মাত্র একটি, তাও হ্যা, অবশেষে (নীল ডট)। অবশেষে ফেলা গেলো স্বস্তির নিশ্বাস এই সান্ত্বনা পেয়ে যে- অন্তত নিউক্লিওটাইডে নিউক্লিওটাইডে আমি বানর নই। যদিও আমাদের ফোকাস এখানে অমিল, তারপরও লক্ষ্য নিন্মোক্ত ব্লাস্টের ই-ভ্যালু ০ (লাল বৃত্ত)। অর্থাৎ, এটা হচ্ছে নিরেট, নির্ভেজাল হোমোলজির একটি উদাহারণ।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
এই সান্ত্বনাও কিন্তু উবে যাবে যখন দেখবো এই আমিলের ধারাও অনুসরণ করছে ঠিক ডারউইনের জীবনবৃক্ষ। শিম্পাঞ্জির ইন্ট্রনে প্রথম অমিল পেতে আমাকে যেতে হয়েছে ৫০০ নিউক্লিওটাইড, রেসাস বানরে যেতে হবে হয়তো ৩০০, মাছে ২০০, গাছে হয়তো মাত্র দশ পনের নিউক্লিওটাইড গেলেই চলবে। ঠিক যেমনটি বিবর্তনতত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে। জীবজগতের এরকম লক্ষ লক্ষ এনজাইমের লক্ষ লক্ষ কার্যকরী খাঁজের (active site) একটির বেলায়ও এই ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হয় না। এবং আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে- আমরা যদি এখন পিকেএ ইনহিবিট করতে চাই কোন পেপটাইড ইনহিবিটর ব্যাবহার করে আবারও আমাদের বিবর্তনের দরজায় কড়া নাড়তে হবে। পেপটাইড ইনহিবিটর অনুর শক্তি ফাঙ্কশন হচ্ছে রেসিজিউগুলোর ব্যাকবোনের পরিবর্তনশীল ফাই সাই ডাইহিড্রাল কোণ চলক দুটির ফাঙ্কশন। এই ফাঙ্কশন অপটিমাইজ করে আমদের গ্লোবাল/লোকাল মিনিমা বের করতে হবে। এবং হাতে কিংবা কম্পিউটারে সারাজীবন অঙ্ক করলেও আটটি কি দশটির অধিক ডাইহিড্রাল কোণ রয়েছে এমন অনুর গ্লোবাল মিনিমা বের হবে না। এই ধরণের অনু অপটিমাইজ করার জন্য দুটি মাত্র পদ্ধতি রয়েছে- ইভলিউশনারি অ্যালগরিদম ও সিমুলেটেড অ্যানিলিং। সুপার কম্পিউটার সহজলভ্য হবার কারণে এখন ইভলিউশনারী অ্যালগরিদমই ব্যাবহৃত হচ্ছে বেশী। আধুনিক আনবিকভাবে বড় যতো ঔষধ আমরা ব্যাবহার করছি এর প্রত্যেকটি ডিজাইন করা সম্ভব হয়েছে একই অ্যালগরিদম ব্যাবহার করে যেই অ্যালগরিদম ব্যাবহার করে প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে এমন জীব যারা বড় বড় ঔষধ অনু ডিজাইন ও সংশ্লেষ করতে পারে।
……………………………………………………………………………………….
আমাদের জিনোমের প্রায় পুরোটাই কিন্তু রিপিট যেমন রেট্রোভাইরাল অন্তর্ভুক্তি, ট্রান্সপোজন, রেট্রোট্রান্সপোজন, রেট্রোপোজন, সাইন, লাইন ইত্যাদি দিয়ে গঠিত। এরা প্রত্যেকেই একট কাজ সাধারণভাবে করে তা হলো জিনোমের যেখানে সুযোগ পাওয়া যায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে। এবং কি কার্যক্রম পালন করে রিপিট? প্রায় কিছুই না। তবে মাঝে মাঝে উল্টা পালটা জাগা যেমন জিনের এক্সন, প্রোমোটার অঞ্চল ইত্যাদিতে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে ক্যান্সারের জন্ম দেয়। স্তন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারকে সরাসরি এএলইউ সূচনাকৃত রিকম্বিনেশনের সাথে সংযুক্ত দেখানো গেছে। বলাই বাহুল্য এই সকল রিপিট পর্যায়ক্রমের বেশীরভাগই ট্রান্সলোকেশন, ট্রান্সপজিশন, রিকম্বিনেশন ও মিউটেশনের কারণে একটি স্বল্প সময় পরই অকেজো হয়ে পড়ে, তবে সক্রিয় রিপিটের উদাহারণও প্রচুর। আমরা কি বলবো “বাহ! কি সুন্দর ডিজাইন?” রিপিটের ব্যাপারে ক্রিয়েশনিস্টদের কিন্তু অবসেশন আছে। রিপিটের একটি কোন কার্যক্রম আবিষ্কার করতে পারলে তারা যেনো আকাশে হাতের চাঁদ পায়! তারা বলে রিপিট দুটো জিনের মাঝখানে ফাঁকাস্থানের যোগান দিয়ে রিকম্বিনেশন, ট্রান্সক্রিপশন, রিপেয়ার ইত্যাদিতে সহায়তা করে। খুবই সত্য কথা তবে তাদের এই কথা বলার ধরণ দেখলে মনে হয় যেনো এগুলো কোন জীববিদের করা আবিষ্কার নয় বরং তাদের করা আবিষ্কার! রেট্রোট্রান্সপোজনকে গন্য করা যেতে পারে অনেকটা সুডোরেট্রোভিরিডাই এর মতো। এটা রিভার্স ট্রান্সক্রাইব্ড। অর্থাৎ, অন্তর্ভুক্তির জন্য এটা ডিএনএ থেকে আরএনএতে ট্রান্সক্রাইবড হয়ে আবার আরএনএ থেকে ডিএনএ তে উলটা ট্রান্সক্রাইবড হয়। সাইন হচ্ছে এই ধরণের একটি রেট্রোট্রান্সপোজন যা আকারে খুব ছোট হয় তবে নিজে নিজের রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ কোড করেনা বলে অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্ভর করে জাতভাই লাইনের উপর। এরূপ একধরণের সাইন পর্যায়ক্রমকে বলা হয় এএলইউ বস্তু যা কিনা দেখা যায় শুধুই বানরদের (primate) জিনোমে। এএলইউ অন্তর্ভুক্তি বানরদের বিবর্তনের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে অবির্ভুত হয়েছে।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
উপরের ছবির এই অংশটি সম্ভবত মানব-জিনোমের সবচেয়ে বেশী অধ্যয়িত অঞ্চল। এটি আলফা গ্লবিন ক্লাস্টার যা অবস্থিত ১৬ নম্বর ক্রোমোজোমের পি-বাহুতে ১৬পি১৩.৩ জি ব্যান্ডে ৩০ কিলোবেইসপেয়ার জায়গা জুড়ে। জিটা, মিউ, আলফা১, আলফা২ ও থিটা গ্লবিন জিন নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। বলাই বাহুল্য যে হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষ করে এমন প্রতিটি জীব অর্থাৎ প্রতিটি ন্যাথান মাছ যেমন- শিম্পাঞ্জি, ইঁদুর, জেব্রামাছ থেকে শুরু করে কনড্রিকথাইস হাঙ্গর পর্যন্ত প্রত্যেকে তাদের জিনোমের এই অঞ্চলে প্রদর্শন করে হুবহু উপরোক্ত সিন্টেনি। তবে সিন্টেনি আমার ফোকাস নয়, আমার ফোকাস এএলইউ। উপরে একই ম্যাপে আমি দেখিয়েছি মানুষ ও শিম্পাঞ্জির আলফা গ্লবিন ক্লাস্টারের এএলইউ রিপিটগুলো। দেখা যাচ্ছে সাতটি এএলইউ রিপিট রয়েছে এই অঞ্চলে (বেগুনী গোল্লা)। শিম্পাঞ্জির জিনোমে আরও কিছু সিম্পল এএলইউ রয়েছে যারা কিনা সাইন এএলইউ নয়। কিন্তু মানুষের আলফা গ্লবিন ক্লাস্টারের সাতটি সাইন এএলইউ-ই একই সিন্টেনিতে রয়েছে শিম্পাঞ্জির জিনোমেও।

আরও খেয়াল করুন জিটা ও মিউ গ্লবিন জিনের মাঝখানে রয়েছে সুডোজিটা নামক একটি সুডোজিন (হলুদ বৃত্ত); কি চমৎকার ডিজাইন, ঠিক? মানুষ যদি ডিজাইনকৃত হয়ে থাকে তবে দুটি বিকল্প রয়েছে এর পেছনে। হয় জিনটি অতীতে কার্যকরই ছিলো কিন্তু কালক্রমে ডিলিট্রিয়াস মিউটেশন জমিয়ে হেঁদিয়ে পড়েছে, অথবা আল্লা মানুষের ইমান পরীক্ষা করার জন্য কিংবা নিছকই ফাজলামো করে মানুষকে একটু গোলমালের মধ্যে ফেলে মজা নেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্চাকৃতভাবে এই পর্যায়ক্রম মানুষের জিনোমে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দ্বিতীয় বিকল্পটি সত্যি হয়ে থাকলে আমি নিশ্চিত এটা ইসলামের আল্লার কাজ। অথবা কেউ যদি ইসলামের আল্লার চেয়েও হৃদয়হীন, বদমায়েস কোন আল্লার সন্ধান পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আমাকে জানাবেন।

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
ইন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাল অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে আরেক ধরণের রিপিট যা কিনা জার্মলাইন কোষ সংক্রমন করা রেট্রোভাইরাসদের জিনোমস্থিত প্রোভাইরাস। উপরে দেখুন একই ম্যাপে মানুষ ও শিম্পাঞ্জির ইআরভি১ এর অবস্থানগুলো একই রেখায় সব (গোলাপী হাইলাইট)। বনমানুষ জিনোমের ১২ ভাগের ১ ভাগ ইআরভি অন্তর্ভুক্তি দিয়ে গঠিত যার মধ্যে মানুষের জিনোমে ইউনিক k-ক্লাস ইআরভি (যার মধ্যে কয়েকটি এখনও সক্রিয়)ছাড়া আর সমস্ত ইআরভি এর অবস্থানই আমাদের ও শিম্পাঞ্জির জিনোমের একই অবস্থানে।
……………………………………………………………………………………….

(ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
আমার কিশোর বয়সের এক শিক্ষকের কথা মনে আছে যার প্রিয় একটি উক্তি ছিলো “অঙ্গে অঙ্গে বাদর”। গঞ্জনার উদ্দেশ্যে বা মাঝে মাঝে সস্নেহে বলা তার এই কথার কথাটি হয়তো গুরুত্বহীন- তবে গুরুত্বের সাথে নেওয়ার যোগ্য “বাস্তবে” আমরা দেখছি অঙ্গে অঙ্গে নয় আমরা আসলে অনুতে অনুতে বাদর। উপরের ছবিতে আমি সমান্তরিত করেছি মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের লিগান্ড বন্ধনকারী ডোমেইন। মানুষেরটার রঙ দিয়েছি লাল আর শিম্পাঞ্জীরটা সবুজ, মানুষেরটার হিলিসগুলোকে বানিয়েছি রিবন আর শিম্পাঞ্জীর গুলো সিলিন্ডার। ব্যাকবোন ছাড়া অন্যান্য পরমানুগুলো অদৃশ্য রেখেছি। খেয়াল করুন কতোটা নিখুঁতভাবে এরা একে অপরের উপর সমান্তরিত হয়। প্রতিটি আলফা হিলিস এবং বেটা শীট (আকাশী তীর) দেখুন একে অপরের উপর সমান্তরিত। এমনকি র‌্যান্ডম কয়েল যার সমান্তরিত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম, সেই র‌্যান্ডম কয়েলগুলোও (ছাই তীর) কতোটা সুনিপুন ভাবে সমান্তরিত খেয়াল করুন। তবে দুটি কয়েল (বেগুনী তীর) সমান্তরিত নয়। এবং এর দুটি যথার্থ কারণও রয়েছে। প্রথমত, নীচে সিকোয়েন্স ভিউয়ারে খেয়াল করুন মানুষের চেইনের (লাল) প্রথম রেসিডিউটি সেরিন যেখানে শিম্পাঞ্জীরটির (সবুজ) সিস্টাইন এবং প্রথম অসমান্তরও চেইন সূচনাকারী স্থানে (origin)। দ্বিতীয়ত, দুটি রিসেপ্টরের সাথেই ভিন্ন দুটি লিগান্ড বন্ধনরত ছিলো যা আমি অদৃশ্য রেখেছি এবং দ্বিতীয় অসমান্তরও লিগান্ডবন্ধনকারী কার্যকরী খাঁজে (active site)।

বিবর্তনের পক্ষে ও ডিজাইনের বিপক্ষে আরও একটি যুক্তি উপস্থাপন করে এই অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর। আসলে দেখুন, বিবর্তন কিন্তু একই গন্তব্যে যাওয়ার জন্য একাধিক রাস্তা ব্যাবহার করে। মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যায় ভায়া চট্টগ্রাম হয়ে। অপরপক্ষে ডিজাইন সবসময় একটি গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ব্যাবহার করে একটি পথ, যেই পথটি সবচেয়ে সহজগম্য, সহজগম্য পথ রেখে ঘুর পথে গন্তব্যে যায় না। রিসেপ্টরের সংজ্ঞা আমরা জানি, যে “লিপিড ঝিল্লিতে নোঙ্গরকৃত একটি বহিঃকোষীয় (extracellular) ও একটি অন্তঃকোষীয় ডোমেইনসম্বৃদ্ধ প্রোটিন যার কাজ লিগান্ডের সাথে বন্ধন স্থাপন করা এবং সংকেত সংবহন করা” অথচ অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের কোন বহিঃকোষীয় ডোমেইনই নেই! অসম্ভবই কি মনে হয় না আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা? কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে এটা খুবই সম্ভব কেননা অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের লিগান্ড স্টেরয়েড হরমোন এবং স্টেরয়েড হরমোন লিপিডলোভী (lipophilic)। অর্থাৎ, এর লিগান্ড নিজের রাসায়নিক গুনে ঝিল্লী ভেদ করে সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করতে পারে স্বাধীনভাবে, তাই অন্যান্য পানিতে দ্রবীভুত লিগান্ডের রিসেপ্টরের মতো অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের ঝিল্লীর বাইরে থেকে লিগান্ড বন্ধন করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। এই কারণেই এর বহিঃকোষীয় ডোমেইনের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই! অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর একটি ক্যান্সার ক্রিটিকাল গ্রুথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর। এই যে লিগান্ড বন্ধনকারী ডোমেইন আমরা দেখছি, মিউটেশনের ফলে যদি এর লিগান্ড নির্দৃষ্টতা বাধাগ্রস্থ হয়, অর্থাৎ অ্যান্ড্রোজেন যেমন টেস্টোস্টেরোন ও ডাইহাইড্রক্সিটেস্টোস্টেরোন ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য অনুকে যদি লিগান্ড হিসেবে গন্য করে এটা বন্ধন স্থাপন করা শুরু করে তবে কোষ হবে ক্যান্সারাস। লিগান্ডবদ্ধ সক্রিয় অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর একটি ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর যা কিনা কোষকে বংশবৃদ্ধি করার সংকেত (proliferative signal) দেয়। প্রায় সকল প্রোস্টেট ক্যান্সারাক্রান্ত পুরুষের ক্যান্সারাস কোষগুলোর অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরে এই ধরণের মিউটেশন পরিলক্ষিত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর ইনহিবিটরসমূহ প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একদল অন্যতম ঔষধ।
……………………………………………………………………………………….

দ্বন্দ্বে আছি জিনিষপত্র বেশি জটিল করে কঠিন করে ফেললাম না তো আবার? অনিচ্ছাকৃতভাবে? আসলে কি করবেন আপনি? কেউ যদি আমেরিকায় অবিশ্বাস করে কি বলবেন তাকে আপনি? আমি বোধহয় তাকে আমেরিকার মানচিত্র দেখাবো প্রথমে, এটা চিন্তা না করেই যে- অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ সম্পর্কে তার কোন ধারণা আছে কি নেই। ঠিক এই কাজটাই আমি করেছি পূর্বে অনেকে দেখে থাকবেন বোধহয়, “ঋণগ্রস্থ” নামক এক সদস্যের সাথে যখন আমার আদান-প্রদান হয়। আদানের তুলনায় প্রদান যদিও ছিলো অনেক কম তারপরও ঐ অল্প একটু প্রদানের পুরোটাই সম্ভবত ছিল অপাত্রে দান বলে এখন আমার অনুশোচনা হয়। কেননা যতোবড় মুখ নয় ততো বড় কথা বলে বলে মানুষের মেজাজ সপ্তমে চড়িয়ে দিতে পারার ঐশ্বরিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মানো ঐ প্রদাহী হেমোরয়েডটি ছিলো একজন স্বঘোষিত ক্রিয়েশনিস্ট। একই সাথে রথও দেখতে আর কলাও বেচতে এখানে এসে একের পর এক ‘হলদে সবুজ ওরাং-ওটাং ইট পাটকেল চিতপটাং’ মার্কা পোস্ট লিখে লিখে মানুষের ভ্রুকুঞ্চন সে যথেষ্টই কামিয়েছিলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দুর্গতি উপলব্ধিপূর্বক মুক্তমনা এডমিন এসে তার একটি পোস্ট প্রকাশ-অযোগ্য বিবেচনা করে। এডমিনকে উদ্দেশ্য করে আমরা কি বলবো “হেইল”! আমি তাকে দেখিয়েছিলাম যে- বহুল প্রচলিত কিছু পাঠ্যবই যেগুলো কিনা অবশ্যই এনসিবিআই-এ নিবন্ধিত, এর প্রথম দুই-চার পাতার মধ্যেই লেখক বিবর্তনতত্বকে ইতিবাচকভাবে নিশ্চিত করেছেন। তবে এখন আমি বলছি ভিন্ন কথা। এখন আমি বলছি- বিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে আপনার একেবারেই জানার দরকার নেই কোন কোন বিখ্যাত জীববিদ বিবর্তন সম্পর্কে কি কি বিখ্যাত উক্তি করেছেন কিংবা কোন পিয়ার পুনঃসম্পাদনকৃত গবেষণা সংকলন বিবর্তন সম্পর্কে কি মত প্রকাশ করেছে। মানুষ সহ আরো শতাধিক জীবের জিনোম, সহস্রাধিক প্রোটিন ও জিনে সম্পুর্ণ বিনামূল্যে আপনার প্রবেশাধিকার রয়েছে যদি কিনা আপনার একটি আন্তর্জাল সংযুক্ত কম্পিউটার থেকে থাকে। আপনি নিজেই উদঘাটন করতে পারেন বিবর্তনের অজস্র সহস্র প্রমানাবলী। বস্তুত ডারউইন যদি বিবর্তন তত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে নাও পারতেন আদৌ, তারপরও বিবর্তন মানুষ এমনিতেই আবিষ্কার করতো ডিএনএ এর প্রর্যায়ক্রম উদঘাটন প্রণালী আবিষ্কার হওয়ার পর। ডারউইন আমাদের ইতিহাসের একজন অন্যতম বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী এবং মানুষ হিসেবে স্বী্কৃত শুধু এই কারণে যে তিনি একশো বছর আগে এমন কিছু আবিষ্কার করেছেন যার আবিষ্কার হওয়ার কথা ছিলো আরও একশো বছর পর। আর এই হলো ডারউইনের সেই বুদ্ধিদীপ্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সত্যতার প্রমান। এটা আছে। এটা দেখা যায়, ধরা যায়, ছোঁয়া যায়, এটা পিছলে যায় না। এটা পরীক্ষা করা যায়, পরীক্ষায় পাশ করলে গ্রহন করা যায়, ফেল মারলে সহিংসভাবে ছুড়ে ফেলা যায় ডাস্টবিনে। এটা উৎপাদনশীল, এটা ভবিষ্যদ্বাণী করে, উপকার সাধন করে, জীবনকে সহজ করে, নতুন নতুন ধারণার জন্ম দেয়। শতাব্দী পূর্বে পৃথিবীর সাধারণ একটি দ্বীপের সাধারণ একটি মানুষের মাথায় জন্ম নেয়া এই ধারণাটি এই কারণেই সদম্ভে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য অসাধারণ মানুষের মনন এবং দাপিয়ে বেড়াবে যতোদিন পৃথিবী গ্রহে উদ্ভুত বুদ্ধিমত্তার এই লাইন টিকে থাকে, পৃথিবীতেই কিংবা অন্য কোথাও।

হেনরিয়েটা ল্যাক্স নামক এক মহিলা সার্ভিকাল ক্যান্সারে মারা যান ১৯৫১ সালে। তবে খুবই খুবই আক্রমনাত্নকভাবে বিভাজিত এবং নাটকীয়ভাবে ডিফ্রেন্সিয়েট হতে পারার জন্য বিখ্যাত তার ক্যান্সারাস কোষগুলো এখনও বেঁচে রয়েছে, সদম্ভে বেঁচে রয়েছে। পেট্রি ডিশে কালচার করা এই কোষের লাইন নিজ গুনে বিজ্ঞানীদের হাতে হাত ঘুরে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর প্রায় সকল গবেষণাগারগুলোতে। শুধু টিউমার জীববিদ্যাই নয়, কোষ জীববিদ্যার অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অধ্যয়নের জন্যও শক্তিশালী মডেলের যোগান দিয়ে আসছে এই হেলা কোষ-লাইন। কতোগুলো বিভিন্ন জাগায় যে বেঁচে রয়েছে হেনরিয়েটা ল্যাক্সের শরীরের এক-একটা অংশ, আর মৃত্যুর পরেও যে কতো-কতোবার সুমুদ্র পারি দিয়েছে, মহাদেশ পাড়ি দিয়েছে সে ! প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি রূপক প্রকাশ হতে পারে এই ছোট্ট গল্পটি। “উপকারী জিনিষ ছড়িয়ে পড়ে, আর গুরুত্বহীন জিনিষ ছড়িয়ে পড়তে ব্যর্থ হয় এবং সঙ্গত কারণেই সফল জিনিষদের ভিড়ে হারিয়ে যায় কালের গর্ভে, প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে।” জীবনের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গীতে গর্ব রয়েছে। অরিজিনের শেষ অধ্যায়ের শেষ প্যারার এই ব্যাক্যটাতে এসে বার বার আমি থমকে গিয়ে চিন্তা করি এটা কি বললেন ডারউইন, কেনোই বা বললেন? তবে এখন আমি বুঝি কেনো ডারউইন উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন এতো শক্তিশালী একটা বাক্য। প্রকৃতির ইতিহাস যেই পথে এগিয়ে চলছে এই পথে মূলত অন্ধকার আর অসংখ্য টর্চার-কিল্ড মৃতদেহ ছাড়া কিছু নেই, গলিত মাংশের গন্ধ আছে।

এখানে ইখনুমনিডাই ক্যাটার্পিলারের স্নায়বিক ব্যাবস্থার বেইসাল গাঙ্গলিয়নগুলো অকেজো করে ডিম পাড়ছে তার শরীরের ভেতর যাতে ডিম ফুটে বের হওয়া লার্ভা সতেজ মাংস পায় খাদ্য হিসেবে। এখানে উল্লেখ্য ডর্সাল রুট গ্যাঙ্গলিয়ন থাকছে পুরোই অক্ষুণ্ণ, অসহায় ক্যাটার্পিলার ব্যাথা অনুভব করছে এবং বেঁচে থাকছে যতক্ষণ না তার শরীরের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ ভেতর থেকে খেয়ে ফেলা না হয়, শুধু নড়াচড়া করতে পারছে না। জঙ্গলে নিজ আকারের চেয়ে বড় বা নিজ আকারের কাছাকাছি শিকার ধরা মাংশভুক প্রাণী সকল একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সময়েই শিকারকে সাথে সাথে হত্যা করতে পারছে না, শুধুমাত্র বাহুবলে পরাস্ত করে নিস্তেজ রেখে আহার করছে, অসহায় শিকারকে বেঁচে থেকে ব্যাথা অনুভব করতে হচ্ছে যতোক্ষণ না শক তার মৃত্যু ঘটায়। অথবা চিন্তা করুন এমায়োট্রোপিক ল্যাট্রাল স্ক্লেরোসিসের মতো ক্ষয়কারী (degenerative) মোটর নিউরন রোগের কথা যা এক বছরের মধ্যে চোখের পাতা, পিনাল আর রেক্টাল স্ফিঙ্কটার ছাড়া রোগীর শরীরের বাদবাকী পাঁচশো স্কেলিটাল মাংশপেশীর প্রত্যেকটি পুরোপুরি অকেজো করে দেয়। তবে, অন্যান্য নিউরো-ক্ষয়কারী রোগ যেমন অল্টজাইমার বা পার্কিনসন্সের সাথে অসাদৃশ্যপূর্ণভাবে এমায়োট্রোপিক ল্যাট্রাল স্ক্লেরোসিস কগনিশনকে আক্রান্ত করে না, শুধু মোটর কার্যক্রমকেই আক্রান্ত করে। ফলে রোগী হয়ে পড়ে নিজ শরীরের কারাগারে বন্দী। চিন্তা, চেতনা, অনুভুতি, ভালোবাসা, বেদনা, শিল্পবো্ধ, ছোঁয়া অনুভব, ব্যাথা অনুভব, যৌনানুঅভুতি, বিবেচনাবোধ, আত্নসচেতনতাবোধ, বিচারবোধ, দেখা, শোনা, গন্ধপাওয়া সব থাকছে কার্যকর। সবকিছু একেবারে আগের মতোই সক্রিয়, শুধু মাংশপেশীগুলো পুরোপুরিই নিস্ক্রিয়। খেতে পারে না কেননা গলা্র মাংশপেশীগুলো কার্যক্ষমতা হারায়, একই কারণে কথাও বলতে পারে না। মৃত্যু সাধারণত হয় অনসেট থেকে তিন বছরের মধ্যে, শ্বশনযন্ত্র ব্যর্থ হয়ে (respiratory failure), যখন কিনা দুর্বল ডায়াফ্রাম আর ফুসফুসকে স্ফীত করতে পারে না। শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্থ হলে সাধারণত অবস্থায় সকল প্রাণীর মস্তিষ্ক ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স চালু করে। ফলে প্রাণী হাইপারঅ্যাকটিভিটি প্রদর্শন করে, অনেক শক্ত শক্ত ম্যানুভার করা শুরু করে, মাংশপেশীকে সর্বোচ্চ যতোটুকু কাজ করানো যায় ততোটুকুই করায় যা কিনা শরীরে অক্সিজেন যা অবশিষ্ট আছে তা পুড়িয়ে শেষ করে দ্রুত প্রাণীকে কোমায় পাঠিয়ে দেয়, যন্ত্রনা লাঘব করে। কিন্তু, এমায়োট্রোপিক ল্যাট্রাল স্ক্লেরোসিস রোগীর স্কেলিটাল মাংশপেশী আগে থেকেই অক্ষম থাকে বলে তার শরীরে ইতিমধ্যেই থাকা অক্সিজেন পুড়তে সময় লাগে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী। মৃত্যু হয় ধীর ও অধিক যন্ত্রনাপূর্ণ। তবে সেই যন্ত্রনাবোধ এমনকি মুখভঙ্গীতে ফুঁটিয়ে তুলতে পারার ক্ষমতাটুকুও তার আর থাকে না, কেননা মুখের মাংশপেশীগুলোতো আগে থেকেই অক্ষম। নিঃশব্দ আর একাকীত্বের মধ্য দিয়ে তার চার বিলিয়ন বছর পুরোন একটি প্রাণ প্রাণহীনতায় ফিরে যায়। ফিরে যায় সেই ব্যাক্টেরিয়ার কাছে যেই ব্যাক্টেরিয়া থেকে চার বিলিয়ন বছর লাগিয়ে ফুল ফোটার মতো সে ফুটে উঠেছিলো। কেনো এই রোগ হয়? আমরা জানি না। এর ঝুঁকি উপাদান (risk factor) কি? আমরা জানি না। কার এই রোগ হয়? যে কারো হতে পারে, যেকোন সময় হতে পারে যদি সে প্রতি ১০০,০০০ এ ২ জন দুর্ভাগ্যবানদের একজন হয়ে থাকে।

এসব দেখে মাঝে মাঝে আমার মনে হতো আসলেই একজন ঈশ্বর থাকলে মন্দ হতো না বোধহয়; কিংবা এমন কোন ক্ষমতাশালী আকাশচারী অভিভাবক মনে মনে যাকে স্মরণ করলেই আমার মনের কথা বুঝে যে আমার সকল সমস্যা সমাধান করে দিবে। যার শাসনাধীন পৃথিবী হবে একটি অনেক বেশি বাসযোগ্য জায়গা। কিন্তু অলস কল্পনা-বিলাস আমাকে কোথাও পৌছায়নি। এই হতাশার একটা বিশাল ভার আছে, সেই ভার ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছিলো। ঠিক এমন সময়ই আমি হঠাত করে অনুধাবন করে ফেলি বিবর্তনতত্ব। এতোটা নির্ভার আমি কখনও অনুভব করিনি আগে, এতোটা উত্তেজিতও কখনো হয়ে উঠেছিলাম মনে পড়ে না। আমার মনে হয়েছিলো যেনো আবিষ্কৃত হওয়ার জন্য, কর্ষিত হওয়ার জন্য স্ফীত হয়ে অপেক্ষমান কুমারী পৃথিবীর বুকে, মাটিতে প্রথমবারের মতো প্রথম পদক্ষেপটি ফেললো প্রথম ইকথিওস্টেগা, আর আমি যেনো সেই ঐতিহাসিক বেলাভূমিতে সশরীরে উপস্থিত এই তীব্র দৃশ্য চামড়ার চোখে দেখতে পাবার জন্য। আর কেউ নেই, আমার সামনে শুধু আদিগন্ত-বিস্তৃত উত্তাল ডেভোনিয়ান সুমুদ্র। এই কারণেই জীবনের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গীতে গর্ব রয়েছে। বিবর্তনতত্ব এমন একটি তত্ব যা বোধগম্য হলে সহসাই অযাচিতভাবে দুই যোগ দুই চার হয়ে ওঠা শুরু হয়ে যায়, মহাবিশ্ব একটা অর্থ নিয়ে দৃশ্যমান হয়। করুণায় আমার মন ভার হয়ে আসে যখন কিনা হৃদয়হীন মাপেটদের বলতে শুনি ‘বিবর্তন কেবলই একটি তত্ব’। অন্যান্য সকল বৈজ্ঞানিক তত্বের সাথে অসাদৃশ্যপূর্ণভাবে বিবর্তনতত্ব যে একটি তত্বের চেয়েও অনেক অনেক বেশী কিছু, মাঝে মাঝে এটি যে একটি কবিতাও- এতোটা সাধারণ একটি ভাবনা ভাবতে পারার ক্ষমতাসম্পন্ন মন থেকে বঞ্চিত করে প্রকৃতি তাদের সাথে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে।

ব্যাপারটা পুনঃপ্রতিক্রিয়াশীল (re-enforce) করার জন্য মাঝে মাঝে আমি নিজের কানে কানে বলি ‘নিছকই বানর বৈ আমি কিছু নই,’ এবং প্রতিবারই গর্বে আমার বুক একশো হাজার হাত ফুলে উঠে। কেননা এটা আমার চোখের সামনে প্রতিয়মান করে ঠিক কতোটা দুর পথ হেঁটে আজ আমি এখানে এসে পৌছেছি। আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম আজ থেকে অন্তত সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর আগে, একটি মামুলী ব্যাক্টেরিয়া হিসেবে, অজানা কোন সুমুদ্রে আমার আরও কিছু আত্নীয়ের সাথে। তারপর শুরু হয়েছে আমাদের পথ চলা। অনেক বিপত্তি এসেছে, মৃত্যু এসেছে। আমাদের আত্নীয়ের ৯৯% ই মরে গিয়েছে, তাদের দুই-তৃতীয়াংশই মরেছে প্রতি দশ মিলিয়ন বছরে একবার আকাশ থেকে যেই বড় আকারের একটি উল্কাপাত হয় তার আঘাতে। তবে আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। আমাদের আত্নীয়েরা দুরে থাক এমনকি তারাদেরকেও মরে যেতে হয়েছে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য। মৃতপ্রায় সূর্যের চেয়ে অন্তত দেড়গুন বড়ো তারা মরে যাওয়ার সময় সুপারনোভা নিউক্লিওসিনথেসিস প্রকৃয়ায় বড় আকারের পরমানুগুলো যেমন ক্লোরিন, লোহা, সোডিয়াম, পটাশিয়াম তৈরী না করলে আজ আমরা এখানে থাকতাম না। আমাদের পেছনে প্রকৃতির এতো বড় বিনিয়োগ কেনো? এটার একটা কাব্যিক কারণ হিসেবে আমার কাছে মনে হয়, আমরা হচ্ছি প্রকৃতির চোখ। আমাদেরকে দিয়ে সে জানতে চায় নিজেকে। সে জানতে চায় কেনো ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ কিংবা কেনো একটি এক্সপোনেন্সিয়াল ফাঙ্কশন নির্দৃষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির একাধিক সাইন ও কোসাইন ফাঙ্কশনের সুপারপজিশন। এই মহান উদ্দেশ্যের খাতিরেই আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে যে নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নই। একটা গরীব বানরের চেয়ে অনেক অনেক বড় কিছু আমরা, এই ভ্রান্ত ধারণা আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। নির্দ্বি্ধায় আমাকে দিয়ে খুন করিয়ে নিয়েছে আপনাকে ও আপনার আশপাশের মানুষকে; জন্ম দিয়েছে অসংখ্য মগজহীন ধর্মের, সভ্যতার সম্মিলিত পুলে যাদের অবদান হয়েছে ‘সমতল শূণ্য, ঘোড়ার ডিম’; এই ছলনায় ভুলিয়ে রেখেছে আমাদের যে আকাশ হতে যাদুকরী সাহায্য চলে আসবে বিপদের সময় মনে প্রাণে যদি আমরা চাই; তেরো বিলিয়ন বছর পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু কোন সাহায্য আসেনি এবং আসবেও না কোনদিন। অশ্রু, রক্ত আর ঘাম ঝড়িয়ে যা গড়ার গড়তে যখন হবে আমাদেরকেই তখন এটা অন্তত একবার অনুধাবন করে দেখার চেষ্টা করাটা বোধহয় খারাপ কিছু হবে না যে- নিছকই বানর বৈ আমরা কিছু নই। নিজেদের একটি গরীব বানরের চেয়ে বেশি কিছু ঠাওরে অপ্রয়োজনী ভাঙ্গচুর আমরা যা করেছি অতীতে তার ভবিষ্যত পুনরাবৃত্তি রোধে এটা সহায়ক হতে পারে, আমার অনুকল্প!