কিছুদিন আগে বিপ্লবদা একটা পরিকল্পনার কথা বলেছেন মৌলবাদ নির্মূলের উপায় নিয়ে। বেশ যুগোপযুগী এবং বাস্তবধর্মী চিন্তা ভাবনা। আমি আগেও বিপ্লবদা কে এই জন্য সাধুবাদ জানিয়েছি। এই লেখার সুযোগে আরও একবার সাধুবাদ জানাচ্ছি।

আমরা সবাই চাই মৌলবাদ মুক্ত একটি সমাজ। প্রশ্ন হল সেই সমাজে উত্তরন আমাদের দ্বারা কিভাবে সম্ভব? বিপ্লবদা একটি সংগঠনের কথা এবং ঐ সংগঠনের মাধ্যমে অনেকগুলো উপায়ে কাজ করার বলেছেন? আমি সেগুলো নিয়ে কিছু বলব না। বিপ্লব দা সহ আরও অনেকের কমেন্ট থেকে জানতে পারি তারা মনে করেন আস্তিক( প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসী) এবং নাস্তিক( প্রথাগত ধর্মে অবিশ্বাসী ) উভয়ের পক্ষেই এই ধরনের একটি সংগঠনে মিলিত ভাবে কাজ করা সম্ভব। মানে হল এই সংগঠনে আস্তিকরাও সদস্য হওয়ার যোগ্য। এই সিদ্ধান্ত আমার কাছে অনেকটা দৌড় শুরুর আগে নিজের পা নিজের হাতে ভাঙ্গার মত মনে হয়েছে। এ আলোচনাতে আসছি সামনে।

আমরা এই বিজ্ঞানভিত্তিক আন্দোলনটা চালাব কিভাবে? আমি মনে করি আমাদের কাজ হবে মানুষকে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন কার্যাবলী যেগুলো মানুষের কাছে আপাত অলৌকিক বলে মনে হয় সেগুলোর পরিষ্কার বিজ্ঞান ভিত্তিক উত্তর দেয়া, সর্বোপরী মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক যৌক্তিক উত্তর দেয়া। আমাদের নিয়মিত দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। আমাদের যারা ভালো বিজ্ঞান লেখক আছেন তারা নিয়মিত ভাবে অন্তর্জাল, প্রিন্টমিডিয়াতে বই, আর্টিকেল ছাপাবেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া আমাদের সংগঠনের ব্যানারে গনমাধ্যমে ছাপানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কারো মনেই কোন প্রকার সংশয় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এই কাজগুলো নিবেদিত ভাবে করবে কারা?

আমাদের সংগঠনে যদি জাকির নায়েক সদস্য হতে চায় তাহলে কি করা হবে সে কথা জানতে চাইলে বিপ্লবদা বললেন, সে যদি আমাদের সংবিধান মেনে আসতে চায় এবং বিজ্ঞান বিরোধী কোন কাজ না করে তাহলে নাকি জাকির নায়েকও আমাদের সংগঠনে যোগ দিতে পারবে। আমি জানিনা অন্যদের কি অবস্থা, তবে আমি আমার এই ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বলতে পারি, সংগঠনে যদি এই ধরনের আগাছাদের ঢোকানে হয় তাহলে এর বারটা বাজতে বেশি দিন লাগবে না। কেন লাগবে না সে কথাই বলছি।

জাকির নায়েক, এস এম রায়হান কিংবা মুক্তমনায় অধুনা অসম্প্রদায়ীক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আব্দুর রহমান আবিদ সাহেবকে যদি জিজ্ঞেস করেন আপনারা কি বিজ্ঞানমনষ্ক? পরিষ্কার উত্তর আসবে “অবশ্যই”। যদি জিজ্ঞেস করেন ধর্মে বিশ্বাস করেন? ক্রিস্টাল ক্লীয়ার ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটারের মত সচ্ছ পরিষ্কার উত্তর আসবে “অবশ্যই অবশ্যই”।
এখন বিপ্লবদা এবং যারা মনে করেন যে আস্তিক এবং নাস্তিক উভয়েই নাকি একসাথে বিজ্ঞান আন্দোলন চালাতে পারে তাদের কাছে প্রশ্ন , আপনারা কি মনে করেন প্রকৃত একজন বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষের পক্ষে কোন ধর্মে বিশ্বাস রাখা সম্ভব? আমি নিশ্চিত আপনাদের উত্তর হবে না। যদি না হয় তাহলে আপনারা কোন যুক্তির ভিত্তেতে বলছেন যে আস্তিকরাও এই রকম একটি সংগঠনে কাজ করার উপযুক্ত? আর যদি আপনারা মনে করে থাকেন যে না ধর্মের উপরে বিজ্ঞানমনষ্ক হয়েও বিশ্বাস রাখা সম্ভব তাহলে আমাকে দয়া করে জানাবেন কোন ধর্মের মাধ্যমে তা সম্ভব এবং কেন আপনারা ধার্মিক হয়ে যাচ্ছেন না? আমাদের উদ্দেশ্য বিজ্ঞান দিয়ে সমাজের কুসংস্কার, মৌলবাদ দূর করা, সেই কাজ কি একজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষকে দিয়ে সম্ভব?

বিপ্লব দা সব সময় গনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। ধরুন যদি এমন হয় আমাদের সংগঠনে আস্তিক এবং নাস্তিক উভয়েই সদস্যপদ লাভের সুযোগ আছে, তাহলে আমি নিশ্চিত সেখানে আস্তিকদের সংখ্যাই বেশি হবে, কেননা বিপ্লবদা আপনার মনে আপনার বিজ্ঞানমনষ্কতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকলেও আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন জাকির নায়েক টাইপের কোন ধার্মিকের মনে তার বিজ্ঞানমনষ্কতা নিয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। যা বলছিলাম, যদি সবাই সংগঠনে যোগ দিতে পারে তাহলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে কিন্তু তারাই এগিয়ে থাকবে। এখন প্রশ্ন তারা যদি কোন বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তাহলে কিন্তু গনতন্ত্রের কথা বললে আপনি তার বিরুদ্ধে যেতে পারবেন না। তখন আপনি কি করবেন?

মৌলবাদ নির্মূলের মানে হল বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ, বিজ্ঞানমনষ্ক বিশাল জনগোষ্ঠি তৈরী করা। কেউ যদি মনে করেন বিজ্ঞানমনষ্কতা কখনই ধর্মে আঘাত করবে না তাহলে কিন্তু ভুল করবে। কেননা মৌলবাদ রুখতে ধর্মের দুর্গে আঘাত করতেই হবে। যারা মনে করেন ধার্মিকের দ্বারা এই কাজ সম্ভব তাহলে আমি বলব you are living in fools paradise.
আপনি কি মনে করেন জাকির নায়েক কিংবা আব্দুর রহমান আবিদ সাহেবকে দিয়ে ধর্মের দুর্গে আঘাত করা সম্ভব? প্রশ্নই আসে না। তাহলে আপনারা কিভাবে এই ধরনের মানুষকে নিয়ে বিজ্ঞান আন্দোলন চালাবেন তা বুঝতে আমি সত্যি অপারগ।

বিপ্লব দা বলেছেন সংবিধানের পরিপন্থি কোন কাজ করলে, বিজ্ঞান বিরোধী কোন কাজ করলে তাকে নাকি সংগঠন থেকে বের করে দেয়া হবে। কথাটা কতটুকু অদুরদর্শীতার প্রমান আসুন দেখা যাক।
সংগঠন যদি আজকে সিদ্ধান্ত নেয় যে আমাদের পরবর্তী কাজ হল ধর্মের অবৈজ্ঞানিক দিক গুলো জনগনের সামনে তুলে ধরা। এখন সংগঠনে যারা বিশ্বাসী আছে তারা কি এই প্রজেক্ট সমর্থন করবে বলে আপনাদের মনে হয়? অবশ্যই না, কেননা যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা মনে করে তাদের ধর্মই শ্রেষ্ট, এবং তাদের ধর্মে কোন অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা নেই। বস্তুত বিজ্ঞানের সৃষ্টিই হয়েছে ধর্মের থেকে!!!!!!

আস্তিকরা যদি এই কাজে বাধা দেয় বা বিরোধীতা করে তাহলে কি করা হবে সংগঠনের পক্ষ থেকে? সংগঠন কি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে? নাকি থাকবে না? যদি থাকে তাহলে কিন্তু ঐ সদস্যরা সংগঠন ত্যাগ করবে এবং ঐ সদস্যদের ভেতর থেকে কিন্তু দু চারটা জোকার সাহেব বের হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। সবচেয়ে বড় কথা সংগঠন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে বিপ্লবদার সাধের গনতন্ত্র কিন্তু একনায়কতন্ত্র হয়ে গেল। আর যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয় তাহলে কি এই ধরনের একটি সংগঠন তৈরী করাটা বালখিল্যতা হয়ে গেলনা?

কথা হল ধর্মে বিশ্বাসী লোক যে এই ধরনের কথা বা কাজ করবে তা কিন্তু পাশের বাড়ির পাগল কেষ্ট ব্যাটাও জানে। আমরা কেন যুক্তিবাদী মানুষ হয়ে এই সহজ কথাটা বুঝব না? বুঝে আসে না।

বিপ্লবদার একটা কমেন্টে তিনি বলেছেন, তার বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক লোক হতে পারে শুধু নাস্তিকরাই। ১০০% সত্য, খাটি কথা। এই ধরনের কথা শুনলে আমরা অনুপ্রানিত হই। কিন্তু আবার দুঃখ পাই যখন এই বিপ্লবদাই বলেন বিজ্ঞান আন্দোলন নাকি আস্তিক নাস্তিক উভয়ে মিলে করা সম্ভব।

আমাদের কাজ হবে বিজ্ঞান দিয়ে মৌলবাদ নির্মূল করা। কুসংস্কার দিয়ে নয়। কেননা তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা ১০০%।
আমাদের মানবতাবাদীদের হতে হবে সচ্ছ। দুদু খাব তামুকও খাব তাহলে ধার্মিকদের সাথে আমাদের পার্থক্য থাকল কোথায়?