fire_nimtoli
ঢাকার নিমতলীতে ঘটে গেল স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা। একশবিশ জনের কাছাকাছি লোক মারা গেছে। তার একদিন আগেই আমরা পেপারে পড়লাম তেজগাঁও-এর বেগুনবাড়িতে পাঁচতলা বাড়ি ধ্বসে অধিবাসীদের মৃত্যুর খবর। খবরগুলো এখন এতোটাই গা সওয়া হয়ে গেছে যে, আমাদের আর বিচলিত করে না। একটু আধটু হয়ত হা পিত্যেস করি, বড় জোর আড্ডায় কিংবা ব্লগে গলাবাজি করি, সরকারের তরফ থেকে ঘটা করে এক দিন দুদিন শোক দিবস পালন করা হয় – তারপর আবার যেই কি সেই।

অথচ এই মৃত্যুগুলো আমাদের চোখে বার বারই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কি অপরিণতভাবে আমাদের ‘তিলোত্তমা’ ঢাকা নগরী বেড়ে উঠেছে। পঙ্গপালের মত পিল পিল করা ‘মনুষ্যমন্ডলী’, যেখানে সেখানে পরিকল্পনাহীন দালান কোঠা, আর ময়লা আবর্জনার স্তুপ তো আছেই। আর সবচেয়ে ভয়াবহ মনে হয় পুরানো ঢাকার অবস্থা। কানা ঘুপচি গলি, দুই হাত বিঘতের চিপা চাপা রাস্তা, আর দুপাশে সারি সারি অবিন্যস্ত ‘শহুরে বাড়ি’। একই জায়গায় রাসায়নিক কারখানা, তার পাশেই হয়তো কাগজের মিল বা বইয়ের দোকান, আর তার পেছনেই থাকবে কাঠের দোকান আর সিঙ্গারা ডালপুরির ‘রেসটুরেন্ট’, আর সামনে হয়তো কাঁচা বাড়ি ঘর। কাজেই আগুন লাগলে কারো বাপের সাধ্য নেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকায়। সত্যি বলতে কি – আগুন লাগলে আমি আর অবাক হইনা, অবাক হই এই ভেবে এতদিন ধরে এরকম গরম চুল্লির উপর বাস করেও আগুন লাগেনি কেন! যেখানে ট্রান্সফর্মার, তার পাশেই কেমিক্যালের গো-ডাউন, তার পাশেই সারি সারি ভবনগুলো মিলে মিশে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মাথা উঁচু করে বসবাস করে! সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ।

হাইতির ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা যখন পত্রিকায় পড়েছিলাম – প্রথমেই মনে এসেছিল একটা হিমশীতল ভাবনা – ঢাকায় এ ধরণের ভূমিকম্প হলে কত লক্ষ মানুষ একদিনে মারা যাবে? বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চালনের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প বলয়ে আছে খুব ভাল ভাবেই। কাজেই বাংলাদেশও যে হাইতি হয়ে উঠবে না কে বলতে পারে হলফ করে? যে শহরে হাজার হাজার ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং, ঘুপচি ঘুপচি ঘর বাড়ি, ফায়ার এক্সিট বিহীন গ্যাস চেম্বারের মত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, যেখানে আগুন লাগলেও শ্রমিকেরা বের হতে পারে না, যে শহরে পয়ঃপ্রনালী আর ওয়াসার লাইন প্রায়শঃই এক হয়ে যায়, যেখানে পানির জমাটবদ্ধতা আর দুর্গন্ধ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় প্রতিদিন, সেই শহর কতদিন আর প্রকৃতির চোখ রাঙ্গানি অপেক্ষা করে টিকে থাকবে? সামনে আসছে আরো বড় দুর্দৈব।

নিমতলীর ঘটনায় আমি মর্মাহত। নিহতদের জন্য শোক প্রকাশের শব্দও হারিয়ে ফেলেছি। যারা বেঁচে আছেন – তাদের সম্পর্কে আর নতুন কিছু বলার নেই। ঢাকা শহরের টিকে থাকাটাই আমার মতে শতাব্দীর বড় বিস্ময়। সেই বিস্ময় প্রতি নিয়ত পদদলিত করে সেখানে বাস করে যারা টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিদিন – তাদের জানাই আমার শ্রদ্ধা।