যুক্তি তর্ক আবেগ দিয়ে কেও জিতে থাকে বা টিকে থাকে বলে জানি না। কারন তেমন হলে ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মরই বেশী টিকে থাকার কথা-বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি যুক্তি নির্ভর-বিশ্বাস নির্ভর না। তেমন কিন্ত হয় নি। বৌদ্ধদের পিটিয়ে পৌত্তলিক হিন্দু এবং যুদ্ধবাজ মুসলিমরাই টিকে গেছে। সুতরাং মৌলবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই এ জিততে হলে আমাদের স্ট্রাটেজি দরকার। প্রতিষ্ঠান দরকার। রাজনৈতিক ক্ষমতা দরকার। শুধু যুক্তি বার করে হবে না। যুক্তি দিয়ে মহম্মদকে নীচ এবং মহান-বিড়াল এবং বানর-মহৎ ও ক্ষুদ্র সবকিছুই প্রমান করা যায়। লাভ খুব বেশী হবে না।

আমাদের বাস্তব স্ট্রাটেজিগুলো এরকম হওয়া উচিত

[১] সোশ্যাল নেটোয়ার্কিং এবং প্রতিষ্ঠানের জন্মঃ
নাস্তিকতা এখন টিকে আছে এই সব ব্লগ সাইটে। কেও কেও ইউ টিউবে কিছু প্রচার করেন -এই ছোট্ট মিডিয়ার মধ্যে। নাস্তিকতার প্রচারের ও আমি খুব
একটা পক্ষপাতি না। প্রচার চালাতে হবে বিজ্ঞান মুখী চিন্তার। রাজনীতি, সমাজ, ব্যাক্তিগত জীবন সর্বত্রই যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়, সেটাই আমাদের দেখাতে হবে। বিজ্ঞানের দর্শনের মূল হল-এরর বা ভুলের পরিমান কমানো। আর আমরা কেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ঈশ্বরের নাম জপি? কারন সবাই চাই, তাদের সিদ্ধান্তে যেন কম ভুল থাকে, ফলপ্রসূ হয়। কিন্ত আসলেই কি তা হয়? কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের দর্শনই শ্রেষ্ঠ-কারন তার ভিত্তিই হল কিভাবে ভুল কমানো যায়।

কিন্ত এর সাথে সাথে নানান রেজিস্টার্ড সংস্থা গড়তে হবে। যারা সমাজের মধ্যে নানান বিজ্ঞানের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। বিজ্ঞান দিয়ে চাষাবাদ থেকে খেলার মাঠে “পারফর্মান্স” উন্নত হয়-এটা হাতে কলমে করে দেখাতে হবে। বিজ্ঞান একটি চেতনা-যাকে ছড়িয়ে দিতে হবে ব্যাবহারের মাধ্যমে। জ্ঞানের মাধ্যমে নয়। বিবর্তনের জ্ঞান বেড়ে সাধারন মানুষের কোন লাভ নেই-কিন্ত বিবর্তন সে সেই দিনই শিখতে চাইবে যেদিন দেখবে কৃত্রিম নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নত গাছ এবং ফলের জন্ম দিতে পারছে। এর জন্যেই সর্বত্র নানান বিজ্ঞানসংস্থা গড়া দরকার।

[২] মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে নাস্তিকতাকে টানাঃ
মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতে যাও বা নম নম করে হিন্দু ধর্মের সামান্য সমালোচনা চলে, ইসলামের সমালোচনা করার কেও সাহস রাখে না। সেটা মৌলবাদিদের শক্তির উৎস। আমাদের লেখা কেও শত ইচ্ছা থাকলেও মেইন স্ট্রিমে ছাপাতে সাহস পায় পাবে না। কেবল টিভিতে ইসলাম বা তার নবীর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার উপায় নেই। হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু “কোমল” সমালোচনা করা যায়-ব্যাস ওই পর্যন্তই। ওর বাইরে ওরা দেবে না। ফলে আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের মিডিয়া বানাতে হবে যা মোটেও কর্পরেট সাহায্যে চলবে না। চলবে সমভাবাপন্ন লোকেদের দেওয়া ব্যাবসায়-সাহায্য নিয়ে কোন কিছু বেশী দিন চালানো যায় না। নাস্তিকদের ও ব্যাবসাতে নামতে হবে, যাতে এই সাপোর্টগুলো আনা যায়। অধিকাংশ বাঙালী নাস্তিকই সুখী পড়াশোনা করা চাকুরীজীবি লোক-এটা একটা বিশাল সমস্যা নাস্তিক মিডিয়া করার ক্ষেত্রে। কারন মিডিয়া চলে ব্যাবসা প্রমোট করতে-সেখানে নাস্তিকদের ব্যাবসা না থাকলে এই ধরনের মিডিয়া করা খুব কঠিন। আমি এই জন্যে প্রতিটা নাস্তিককে ব্যাবসায় নামার জন্যে উৎসাহিত করব।

[৩] যারা গ্রামে, ফিল্ডে কাজ করছে, তাদের অর্থনৈতিক সাহয্য দেওয়ার জন্যে অর্গানাইজেশন তৈরী করাঃ
অল্প হলেও দুই বাংলাতে বিজ্ঞান কর্মীরা আছেন। তারা কাজ করছেন। তারা যাতে আরো বেশী করে কাজ করতে পারেন, তার জন্যে আমাদের মতন সচ্ছল নাস্তিকদের উচতি সাহায্য দেওয়া। এটাকে রেগুলারাইজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হবে। নাস্তিকরা ব্যাবসা না করায়, সেটাও একটা সমস্যা। প্রতিটা ধার্মিক লোক গ্রামে মন্দির মসজিদ বানানোর জন্যে টাকা দিয়ে থাকে। এবার বাড়ি গিয়ে দেখলাম এই ভাবে গুচ্ছ গুচ্ছ বিরাট মন্দির হচ্ছে চারিদিকে। এর পাল্টা জবাবে আমাদের যাদের সামর্থ আছে, তাদের উচিত নিজেদের গ্রামে উন্নত মানের ডিজিটাল এবং সাবেকি লাইব্রেরী করা। এখানেও সেই ব্যাবসার প্রসঙ্গ আসছে। ব্যাবসা না করলে সীমিত অর্থ থেকে এত কিছু করা সম্ভব না চাকুরীজীবি নাস্তিকদের। তাই আমি সবাইকেই বলব ব্যাবসা করা শুরু করতে। ধার্মিক ব্যাবসায়ীরা অতিরিক্ত অর্থ মন্দির মসজিদে ব্যায় করে-আমরা লাইব্রেরী তৈরী করতে ব্যায় করব। মোদ্দাকথা এই নেটওয়ার্কিং টা দরকার। মুসলমানরা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ায়-হিন্দুরাও দাঁড়াচ্ছে-নাস্তিকদের মধ্যেও এই সাপোর্ট সিস্টেমটা বানাতে হবে।

[৪] শিশুদের জন্যে বিজ্ঞান সাহিত্য-প্রিন্ট, কেবল মিডিয়াতে ছড়াতে হবেঃ
শিশুদের মনে বিজ্ঞানকে না ঢোকালে আমাদের আন্দোলন ব্যার্থ হবে। কারন শিশু বয়সেই মানুষ ঠিক করে নেয় সে নাস্তিক না আস্তিক হবে। খুব ভাল বিজ্ঞান সাহিত্য দরকার শিশুদের জন্যে। বাংলায় বাচ্চাদের জন্যে বিজ্ঞান সাহিত্য উঠে গেছে। তাছারা আজকাল কেবল মিডিয়া সব থেকে জনপ্রিয়। বাচ্চাদের জন্যে সেখানে বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান দরকার। এগুলি ব্যাবসায়িক ভিত্তিতেই করতে হবে-কারন এর মার্কেট আছে। তাতে এই ধরনের কাজের কর্মক্ষেত্র বাড়বে।

[৫] গ্রীন এবং পিস পার্টি তৈরী করা
বামপন্থী, দক্ষিন পন্থী সবাই ধার্মিকদের পা চাটা কুকুর। এটাই ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে। শ্রেনীতত্ত্বের মতন আধাবৈজ্ঞানিক হজপজ নিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ানো যাবে না। পরিবেশবাদি পার্টি তৈরী করতে হবে। ভোটে জিতে পার্লামেন্টে যেতে হবে, এর মানে নেই-কিন্ত ভোটে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে অংশ নিতে হবে। আমাদের হয়ে কোন বামপন্থী বা বুর্জোয়া পার্টি কথা বলবে না-কারন তারাও ক্ষমতা দখল ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।

[৬] জনগণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিতে হবে
আমাদের রাজনৈতিক সিস্টেম ত পার্ফেক্ট না। গণতন্ত্রে অনেক ঘূণ। মানুষের ওপর শোষন বঞ্ছনা এবং অত্যাচার অব্যাহত। শোষিত মানুষের পাশা না দাঁড়ালে বিজ্ঞানের কথা কে শুনবে? কিন্ত তার জন্যে লোকজন যেন লেনিনবাদ, বা হিন্দুত্ববাদ বা ইসলামের মতন ফাসিজমের কবলে না পড়ে-জাতীয়তাবাদি গড্ডালিকা প্রবাহে যেন গা না ভাসায়। আন্তর্জাতিকতাই আগামী দিনের পথ। উন্নততর সেই বৈজ্ঞানিক এবং মানবিক সমাজের রূপরেখা আমাদের রাজনীতির মধ্যে যেন অনুপ্রাণিত হয়।

বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির পথেই উন্নত ডিজিটাল গণতন্ত্র আনা সম্ভব-এবং গণতান্ত্রিক পথেই আমাদের এই দ্বন্দ্বগুলিকে সমাধান করতে হবে। লেনিনবাদের মতন ভুয়ো কিছু তত্ত্ব এবং পার্টির পাল্লায় পড়ে কিছু আদর্শবাদি তরুণ যেন তাদের জীবন নষ্ট না করে। কমিনিউজম আরেক ধরনের মৌলবাদ যা ধর্মীয় মৌলবাদের চেয়েও ভয়ংকর।

মোদ্দা কথা আমাদের আরো প্রতিষ্ঠানিক সক্রিয়তা চাই। নেতা চাই।