মে ২২
মোবাইলে ফেইসবুক এ লগ ইন করে দেখলাম , এক বন্ধুর স্ট্যাটাস, পাকিস্তান নাকি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করেছে। সাথে সাথেই গুগল এ সার্চ করলাম এই ব্যাপারটা জানার জন্য… কারন যেটা জানা গেলো তা হলো একটা গ্রুপ ইভেন্ট – Everybody Draw Mohammad Day. এই গ্রুপ/ইভেন্ট ফেইসবুক এডমিনিষ্ট্রেশনকে ডিলিট করতে বলার পরেও ফেইসবুক তাতে কান না দেওয়ায় – যেটা সর্বোচ্চ করা সম্ভব ; গরু যেমন মেজাজ খারাপ হলে ক্ষেতের আইল ভাঙ্গার চেষ্টা করে শিং দিয়ে , অনেকটা সেরকম ভাবে ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয় পাকিস্তানে। যাই হোক এটা নিয়ে আমার একটুও সমস্যা নেই… ধর্মের দোহাই দিয়ে সেই কবে থেকে কি কি হচ্ছে , আর কি কি হতে পারে সেটা পাকিস্তান এর দিকে তাকিয়ে থাকলেই বোঝা যাবে… তবুও আমাদের দেশে কিন্তু পাকিস্তান ভক্তের অভাব হয়নি কখনো আর হবেও না… ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশ না ভাঙ্গার, মানে পাকিস্তান এক রাখার জন্য যা করার দরকার ছিল না… তাও করেছে আমাদের এই ধার্মিকরা… যাই হোক পাকিস্তানে কি হলো এইটা নিয়ে আমি এখানে লিখব ভাবি নি তবুও টেনে আনতে হলো কারন যা লিখতে চাইছি তার সাথে এর বোধয় ভালো রকমের সমন্ধ আছে

মে ২৯
ফেইবুক এ আবার লগ ইন করলাম মোবাইল থেকে , দেখি এক বন্ধুর একটা ছবি আপলোড এর সাথে কমেন্ট May be this is my last Facebook Upload. প্রথমে ভাবলাম পড়াশোনার চাপে হয়তো আর ফেইসবুক ইউস করবে না, পরে আরো স্ট্যাটাস আসতে থাকে আর জানতে পারি যে, বাংলাদেশ এ ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হায় রে ! এইবারতো আর না ভেবে পারা গেল না, যদিও আমার ভাবনায় বাংলাদেশ এর কিছু আসে যায় না, তবুও ভাবলাম…
বাংলাদেশ এর ক্ষমতায় কি এখন জামায়েত ? তাহলে এইটা মানতে সমস্যা হতো না, যারা ধর্ম রক্ষার নামে ধর্ষন করতে পারে তাদের দ্বারা এইটা নস্যি

কিন্তু এই কি সেই হাসিনা পরিচালিত সরকার যারা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল ? ডিজিটাল বানাতে না পারলেও মানুষের অবস্থা টাল বানিয়ে ফেলেছে এরমধ্যে আমার ধারনা … কিন্তু তবুও বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রথমে… কারন এই নির্বাচন এর সময় আমি প্রথম ভোটার হই, সৌভাগ্যবশত বয়স যখন ১৮, তখন ই নির্বাচন এসে যায়। ভেবেছিলাম এদেরকেই ভোট দেব, কিন্তু যদিও ভোট দেওয়া হয়নি।
ভোট দিলে হয়তো এখন আরো খারাপ লাগতো । গনতন্ত্র সবসময়ই আমার কাছে একটা হাস্যকরন পদ্ধতি বলে মনে হয়, কিন্তু এমন গনতান্ত্রিক সরকারের আচরন হাসির সাথে বিরক্তিও উদ্রেক করে।

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, দ্রব্যমুল্যের দাম নিয়ন্ত্রন করতে এরা কতটা সফল হয়েছে ? সন্ত্রাস কতখানি নিয়ন্ত্রন করেছে ? দেশ থেকে চলে আসার পরও প্রায়ই প্রথম-আলো পরি, তাতে আমার ধারনা এই উত্তরগুলো নেতিবাচকই হবে। তাই অবাক লাগে, যা নিয়ন্ত্রন না করলে দেশের ১০০% জনগন সর্বিকভাবে সাফার করবে সেইসব জিনিস রেখে , যা নিয়ন্ত্রন না করলে দেশের মানুষের তেমন কিছুই যায় আসে না সেইটা এত দ্রুত নিয়ন্ত্রন করে ফেললো… ? এটা কি আওয়ামিলিগের(যদিও এই নাম ধরে ডাকার চেয়ে এখন এর ইংরেজি এক্রোনিমটাই বলতে ইচ্ছা করছে) পরবর্তি নির্বাচন এর জন্য কিছু ধার্মিক ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করার কৌশল ?

পরক্ষনেই এইটা খুব স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে ভেবে, কারন আমাদের দেশের কালচারটা তো এমনই… রাজনিতির ক্ষেত্রেও যাকে পছন্দ না, যে বিরোধিতা করে কোন কিছুর তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার রীতি আমাদের বহু পুরোনো। নৈতিকতা আমাদের চরিত্রে অনেক আগে থেকেই অনুপস্থিত।… আর সেই ক্রমেই ইসলাম বিরধিতার কথা বলে যেকোন কিছু বন্ধ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়তো।

কিন্তু আমার প্রশ্ন , মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে অটুট রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্র কবে থেকে নিয়েছে কিংবা সেই বিশ্বাস নিয়ন্ত্রন করার অধিকার কি একটা গনতান্ত্রিক সরকারের আছে ? আমার বিশ্বাস আমার নিজের, আমি আমার বিশ্বাস দুনিয়ার যেকোন ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রকাশ করতে পারি, এবং সেই জন্য যদি সমালচনা সহ্য করতে হয় তাহলেও সেটা সহ্যের দায়িত্বও আমার নিজের… এখন আমি আমার বিশ্বাস জোরে জোরে প্রকাশ করলাম, কিন্তু যখন এর সমালোচনা শুরু হলো তখন আর আমার ভালো লাগলো না … যেই সমলোচনা আমার পছন্দ হলো না সেইটা ডিলিট করার দাবি জানিয়ে গো ধরে বসে থাকলাম… এইটা কি পুরপুরি ছেলেমানুষি না ? তাহলে বাবা তোমার বিশ্বাসের কথাগুলো পকেটে পুরে রাখো না কেন বাপু ? মানুষকে ইম্প্রেস করার জন্য যদি সেগুলো ব্যবহারই করো তাহলে তো কিছু কথা শোনার ধর্য্যও থাকা উচিৎ নাহলে উচিৎ চুপ করে থাকা…
ইসলাম বিরোধিতার জন্য যদি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয়… ইসলাম বিরোধি গ্রুপ এর জন্য যদি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে ইসলাম প্রচারের জন্যও ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা উচিত! জলে নামবে আর কাপড় ভিজে গেলে বলবে আমি খেলবো না… এইটা তো রিতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা।

শুনেছিলাম , সরকার নাকি ৭২ এর সংবিধানে ফেরত যেতে চায়, এমন কিছু খবর প্রথম আলোয় পরেছিলাম কিছুদিন আগে, কিন্তু এইটা আমার কাছে ৭২ এর সংবিধানে ফেরত যাওয়ার লক্ষন মনে হলো না… মনে হলো ১৪০০ বছর আগে ফিয়ে যাওয়ার জন্য নেওয়া পদক্ষেপ। আমার ধারনা আমাদের সংবিধানের সমলোচনা করলেও বোধহয় সরকার ফেইসবুক বন্ধ করবে না… আথচ ফেইসবুক কে চিঠি পাঠিয়েছে সেইসব্ লিঙ্ক বন্ধ করার জন্য…!!! রীতিমত হাস্যকর !! তাহলে কি ১৪০০ বছর আগের জিনিসগুলই রক্ষা করা আমাদের সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ ?

ফেইসবুক যদি এইসব গ্রুপ ডিলিট করে তবে সাথে সাথে আরো অনেক গ্রুপ ডিলিট করা উচিত যেগুলো ইসলাম প্রমোট করে… কোন কিছু লাইক করার অধিকার যদি থাকে তবে তাকে লাইক না করার অধিকার ও নায্য অধিকার… আসলে ফেইসবুক এর কিছুই ডিলিট করা উচিত না, ইসলাম প্রমোট করার গ্রুপ গুলো যেমন থাকা উচিত তেমনি এর সমালোচনাকারি গ্রুপ গুলোও থাকা উচিত কারন সমালোচনা ছাড়া আলোচনা করার আশা করা পুরোপুরি ছেলেমানুষি …

আর আমাদের এই ছাগল মার্কা নিতিনির্ধারকদের বোঝা উচিত যে, মানুষের এটা মৌলিক অধিকার, ভালো খারাপ এর মধ্য থেকে নিজের জন্য উপযুক্ত জিনিসটা খুজে নেওয়ার , একক ভাবে কিছু চাপিয়ে দেওয়া গনতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র! ফেইসবুক এ কিছু লিখলে যদি ফেইসবুক নিষিদ্ধ করতে হয় তাহলে কি আমাদের অনান্য লেখার মাধ্যম গুলোও এই গাধা সম্প্রদায় বন্ধ করে দেবে? আমারতো মনে হয়, লেখার কাগজও একই যুক্তিতে নিষিদ্ধ করা হতে পারে… নিষিদ্ধ হতে পারে গুগল! ইসলাম এর বিরুদ্ধে কিছু লিখা যাবে না এই যুক্তিতে এরমধ্যেই অনেক বই অনেক দেশে নিষিদ্ধ হয়ে আছে, আমাদের বাংলাদেশেও এমন অনেক বই আছে। অথছ অনান্য ধর্মের বিরুদ্ধে যখন ইসলামপন্থিরা বই লেখে, টেলিভিশন এ অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করে সেই ক্ষেত্রে কেউতো ওদের মাথার দাম নির্ধারন করে দেয় না… নিষিদ্ধ করে না ওদের বই… তাহলে এরা এত অসহনশীল কেন ? জাকির নায়েকের টিভি প্রোগ্রামগুলো কেন নিষিদ্ধ হয়না ? প্রতেকটা আনুষ্ঠানেই এই লোক অন্য ধর্মগুলোকে গালমন্দ করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আমি এখানে আমেরিকা আসার পর, কেউ যখন জিজ্ঞেস করে তুমি কোথা থেকে এসেছ?, যখন বলি বাংলাদেশ, তখন ওরা ধরে নেয় আমি মুসলিম , আর যখন বলি আমি মুসলিম নই, তখন বলে তোমাদের অনেক অত্যাচার করে ওখানে, না ? আমি বলি না… আমি বাংলাদেশ এ ভালোই ছিলাম, হয়তো আমেরিকা থেকেও ভালো!
এই হলো বাংলাদেশ স্বমন্ধে আমেরিকান মানুষদের ধারনা… কিন্তু যখন ফেইসবুক নিষিদ্ধ করার মধ্যমে বাংলাদেশ , পাকিস্তান এর সাথে একই পথে হাটা শুরু করলো… তখন আমাদের এই প্রগতিশীল , অসাম্প্রদায়িক , গন্তান্ত্রিক স্বিকারোক্তি ওদের কাছে অবিশ্বাস্যই লাগবে। আমরা একটা মিথ্যাবাদি ভন্ড জাতিতে পরিনত হবো… একেবারে পাকিস্তান এর মতো, কিন্তু এই জন্যতো বাংলাদেশ এর জন্ম হয় নি… এটাই আফসোস

তবে আরেকটা মজার ঘটনাও ঘটিয়ে ফেলেছেন আমাদের হাসিনা শাসিত সরকার… আমার ধারনা হাসিনা আর খালেদা বোধহোয় কিছুদিনের মধ্যেই মহিলা নবী হতে চলেছেন অথবা এরই মধ্যে আমাদের অজান্তে হয়ে গেছেন… ওনাদের আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করায় এক যুবক কে অলরেডি রিমান্ডে নেওয়া হয়ে গেছে… আমি বুঝি না… এরা রাজনীতি করতে এসে এমন ফকিরের মত নাদান আচরন কেন শুরু করে দেয়? সমালোচনা যে হাসিনা সহ্য করতে পারেন না, সেইটার প্রমান এরমধ্যেই তিনি দিয়েছন ওনার পৈত্রিক দলের কউন্সিল এ। তবুও আমজনতার কাছে তিনি বাংলাদেশ এর গনতন্ত্রের মানসকন্যা… আমার কাছে তো ডাইনি মনে হয় মাঝে মাঝে!

আর সেই রডিন এর সাইবার ক্রাইম এর বর্ননাটাও রীতিমত হাস্যকর, ফেইসবুক এ একাধিক নামে , একাধিক ই মেইল এর মাধ্যমে একাধিক একাউন্ট থাকা , পর্নো সিডি রাখা (আমার ধারনা , মানুষের যাতে এই ছেলের প্রতি কোন সহানুভুতি না থাকে তাই এই ব্যাপারটা ফোকাস করা হয়েছে) আর কোন এক গায়েবি ক্ষমতার বলে র‌্যাব এর লোকেরা এটার ব্যাপারেও নিশ্চিত যে সে হ্যাকিং জানে যদিও হ্যাকিং করেছে কিনা এই বিষয়ে কিছুই বলেনি … এই যদি হয় সাইবার ক্রাইম এর নমুনা, তাহলে আর কিছু বলার থাকে না… সরাসরি বললেই পারে, অথবা এই আইন করলেই পারে যে সরকার প্রধান এর বিরুদ্ধে কোন আপত্তিকর কিছু বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ!

আর কতো ডিজিটাল ম্যাজিক অপেক্ষ্যা করছে বাংলাদেশ এর মানুষের জন্য একমাত্র হাসিনা মালুম… অনেকেই বলবে আমি শুধু হাসিনাকেই কেন দোষারোপ করছি ? এটা হাসিনার সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে !! তার একমাত্র কারন সরকারপ্রধান হিসবে এর দায় তাকেই নিতে হবে , আর এর জন্য যদি তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে চান, তাহলে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে সবার কাছে তার সরকারের এই নির্বোধ কাজের জন্য!