আফগানিস্তানের তালিবান বাহিনী ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতা দখল করেছিলো, তখন থেকেই চরমপন্থী সু্ন্নী অনুশাসন আরোপ করতে শুরু করে দেশটির ওপর। এসকল বিধিনিষেদের মুখ্য অংশই কার্যত নারীদের ওপর চর্চিত। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আরোপিত এসব নিয়মে আসুন একবার চোখ বুলাই …

১. পর্দার বিরোধীতাকারী মাত্রই বিধর্মী, আর পর্দাহীন নারী মাত্রই কামুকী।
নারীরা পর্দা করতে বাধ্য.. নিয়মাবলী:
২. নারীর পুরো শরীর ঢাকা থাকতে হবে।
৩. নারীর পরিহিত কাপড় পাতলা হতে পারবে না, মুখ ঢাকার নিকাবও না।
৪. সে রঙীন ও কারুকার্যময় কাপড় পড়তে পারবে না।
৫. আঁটোসাট বা চাপা ধরনের কাপড়, যাতে নারীর ‘মোহ-জাগানিয়া’ অংশগুলি স্পষ্ট করে তোলে তা নিষিদ্ধ।
৬. নারীদের সুগন্ধি ব্যাবহার নিষিদ্ধ, সুগন্ধি ব্যাবহার করে এক ঝাঁক পুরুষের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নারী মাত্রই ব্যাভিচারী।
৭. নারীর পোষাক পুরুষের পোশাকের মতো হতে পারবে না, অথবা অমুসলিম নারীর পোষাকের মতো।
৮. তাদের পায়ের অলঙ্কার বা পোশাক থেকে কোনো শব্দ যেন শোনা না যায়
৯. রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটা নিষেধ মেয়েদের।
১০. স্বামীর বিনা অনুমতিতে বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ।
১১. অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ।
১২. যদি কথা বলা জরুরী হয়, তবে নিচুস্বরে ও তোম্বা মুখে বলতে হবে।
১৩. অপরিচিতদের দিকে দৃষ্টিপাত বা মেলামেশা নিষিদ্ধ।
১৪. সকল বাড়ির একতলা ও দোতলার জানালার শার্সি ঘন রং দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিতে হবে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জনৈক তালেবান মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন.. ‘অ-সম্পর্কিত জেনানার মুখ যেকোন পুরুষের জন্য শয়তানের আছর স্বরূপ’।
১৫. নারীদের ছবি তোলা বা চলচ্চিত্রে বন্দী করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি শাস্তিযোগ্য তাদের ছবি বা চলচ্চিত্র কোন গনমাধ্যমে বা বইয়ে প্রকাশ করা অথবা দোকানে বা ঘরে প্রদশর্ন করা ।
১৬. সকল স্থানের নাম বদলে ফেলতে হবে যেসকল নামে নারীর নাম বা গন্ধ আছে। যেমন, ‘নারী-উদ্যান’ বদলে ‘বেহেশতী-উদ্যান’ রাখতে হবে।
১৭. বাড়ির বেলকনি বা ঝুল-বারান্দায় নারীদের গমন নিষিদ্ধ করা হলো।
১৮. রেডিও, টেলিভিশন বা কোন গন-জমায়েতে নারীদের উপস্থিতি সম্পুর্নরূপে নিষিদ্ধ করা হলো।
১৯. নারীরা কোনো বাই-সাইকেল বা মটর-সাইকেল চালাতে পারবে না, এমনকি স্বামীর সঙ্গেও না।
২০. কোন ট্যাক্সিতে নিজস্ব লোক ব্যাতিত চড়া নিষেধ।
২১. মেয়েদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে।
২২. বাড়ির বাইরে মেয়েদের কাজ করা সম্পুর্নরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ এ বিষয়ে ডিক্রি জারি করে তালিবান। চাকুরীতে কোন নারীকে নেয়া বা দেয়া শাস্তিযোগ্য করা হয়। সরকারযন্ত্রে কর্মরত শতকরা পঁচিশ ভাগ নারী সেদিনই চাকুরী হারায় ফল হিসেবে।
২৩. ছেলে/মেয়ে নির্বিশেষে সকল শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বাতিল করা হয় কাবুলে, সাথে সাথে চাকুরী হারায় সকল শিক্ষিকা।
২৪. মেয়েদের স্কুলে বা বিশ্ববিদ্যালয় গমন পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।
২৫. নারীদের কোন প্রকার বিনোদনমূলক জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
২৬. জন্মনিয়ন্ত্রন নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয় নারীদের জন্য।
২৭. পুরুষ ডাক্তার কর্তৃক চিকিৎসা করা যাবে না নারী রোগীর।
২৮. মুমূর্ষ হলেও নারী রোগীর অস্ত্রপ্রচারকারী ডাক্তাদের দলে কোন পুরুষ থাকতে পারবে না।
২৯. খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয় নারীদের জন্য, কোন স্পোর্টস সেন্টারের ধারেকাছেও যেন তাদের না দেখা যায়।
৩০. তাদের কোন আইনগত অধিকার থাকলো না, নারীর জবানবন্দী পুরুষের অর্ধেক বিবেচিত হবে।
৩১. বিবাহিত নারীর পরকীয়া অভিযোগের শাস্তি জনসমক্ষে তার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা, এতে মৃত্যু হলেও সমস্যা নাই।
৩২. দোকানে গিয়ে পুরুষ দোকানীর সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ।
৩৩. সাথে নিজস্ব লোক না থাকলে নারীরা যেকোন আইন ভঙ্গ করলে তাকে বেত্রাঘাত, পাথর মারা, বা গালিগালাজ করা যাবে।
৩৪. পায়ের গোড়ালী দেখা গেলে সেই নারীকে জনসমক্ষে বেত্রাঘাত নিতে হবে।
৩৫. বিবাহ ব্যাতিরেকে যৌন আচরন মানে পাথরে মৃত্যু। (বেশ কিছু প্রেমিক-যুগল এই আইনে মারা গিয়েছে)
৩৬. নদীর ধারে নারীদের কাপর ধৌতকরন নিষিদ্ধ করা হলো।
৩৭. পুরুষ দর্জি কোন নারীর জামা বানাতে পারবে না, মাপজোক নেয়া তো দুরে থাক।
৩৮. সকলের জন্য চলচ্চিত্র, টেলিভিশন বা যেকোন প্রকার ভিডিও দেখা নিষিদ্ধ করা হলো।
৩৯. বোরখার ভেতরে হলেও চওড়া প্যান্ট পড়া নিষিদ্ধ করা হলো।
৪০. অনৈস্লামিক বিধায় একুশে মার্চ ‘নওরোজ’ বা আঞ্চলিক নববর্ষ পালন নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো।
৪১. কমুনিস্ট বিধায় পহেলা মে শ্রমিক দিবস পালন নিষিদ্ধ করা হলো।
৪২. কোনো নাগরিকের অ-মুসলিম ধাঁচের নাম থাকলে তা বদলে মুসলিম নাম গ্রহন বাধ্যতামূলক করা হলো।
৪৩. বালক/কিশোদের চুল কাটতে বাধ্য করা হলো্
৪৪. সকলের জন্য ইসলামিক পোশাক পরিধান এবং লম্বা দাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক করা হলো।
৪৫. সকলের জন্য পাঁচ বেলা মসজিদে নামাজ পালন বাধ্যতামূলক করা হলো।
৪৬. অনৈসলামিক বিধায় কবুতর পালন বা যেকোন পাখি নিয়ে খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হলো, অপরাধীদের জেলে পাঠানো হবে ও পাখি(গুলি) মেরে ফেলা হবে। ঘুড়ি ওড়ানোও নিষিদ্ধ করা হলো।
৪৭. কোন খেলায় দর্শকদের ‘আল্লাহুআকবার’ হুঙ্কার দেয়া বাধ্যতামূলক করা হলো। (হাততালি সেইসাথে বাতিল করা হলো)
৪৮. কারো কাছে আপত্তিকর লেখা/বই পাওয়া গেলে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে।
৪৯. ইসলাম ছেড়ে অন্য কোন ধর্মে যোগ দেয়ার শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
৫০. সকল ছাত্রকে পাগড়ী পড়তে হবে। কারন পাগড়ী ছাড়া পড়াশোনা হয় না।
৫১. অ-মুসলিমদের সকল সময় কাপড়ে হলুদ ফিতা বা ব্যাজ পড়ে ঘুরতে হবে, যাতে তাদের আলাদা করে চেনা যায়।
৫২. আফগান ও বিদেশীদের জন্য ইন্টারনেট ব্যাবহার নিষিদ্ধ করা হলো।

মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়, পৃথিবীতে শারিয়া আনয়নের যে চেষ্টা চলছে দেশে দেশে, খোলা মাঠে গোল করতে পারলে ইসলামের নামে্ এই ধরনের ‘বিধান’ ই চালু হবে।