(গত কয়েকদিনে মুক্তমনায় নারী/নারীবাদ বিষয়ে বেশ ক’টি মূল্যবান প্রবন্ধ, গল্প ও আলোচনা চলছে। এর মাঝে আমার এই লেখাটি পোষ্ট করা ঠিক হবে কিনা ভেবে দ্বিধান্বিত ছিলাম। সাহস করে দিয়েই দিলাম। লেখাটি ছন্দপতন ঘটালে ক্ষমাপ্রার্থী।)

নারীবিষয়ক অপরাধে দন্ডিত বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি জনাব শাহ আলম মজুমদার বাংলাদেশের নির্যাতিত মেয়েদের কল্যানে তার অপরাধ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে রাজী হয়েছেন। এই শুভবুদ্ধির জন্যে আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই।

মহামান্য আদালত পাশের বাড়ির লুসিকে উত্যক্ত করার জন্য শাহ আলম মজুমদারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদেশ জারী করলেন! এই আদেশে বাদি সন্তুষ্ট হলেও মজুমদার সাহেব সহজ ভাবে মেনে নিতে পারলেন না। বাদী তার আর্জিতে বলেছিল, অপরাধী প্রথম প্রথম তার মেয়ের দিকে আঁড় চোখে তাকাতো, কিছু না বলাতে শিষ দেয়া শুরু করে। সারাদিন বাসায় বসে তো আর মেয়েকে পাহাড়া দেয়া যায় না। পর্যায়ক্রমে অনুরোধ, ধমক, গালি, ও শেষমেষ ভয় দেখানোকে থোড়াই কেয়ার করে এর পর কিনা বাদীর অনুপস্থিতিতে বাড়িতে এসে তার মেয়েকে উত্যক্ত করতে থাকলো। মজুমদার সাহেব ভাবছিলেন, আইনে কোথাও একটি বড় রকমের ফাঁক রয়ে গেছে। বাংলাদেশ হলে না হয় কথা ছিল, কিন্তু মার্কিন মুল্লুকের এই খোলামেলা, সহনীয় সমাজ়ে এধরনের ব্যাপার ঘটতে পারে তাতো তিনি ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করতে পারেন নাই। কার মনে কখন প্রেমের দূত এসে হাযির হয় তা কি কেউ আগে থেকে বুঝতে পারে, না বয়স দিয়ে বোঝা যায়? দোষ তো তাঁর একার হতে পারে না, প্রেমের ব্যাপারে এতোই যদি রক্ষণশীল হবে, তবে মেয়েকে বোরখা পরিয়ে বাড়ীর চারপাশে কালো কাপড়ের পর্দা লাগিয়ে রাখলে না কেন? আর তোমাদের মেয়ে যদি আহ্লাদ ও প্রশ্রয় না দিত, তবেতো কোর্টে আসারই প্রয়োজন হোত না। শাস্তি পাওয়ার এই অপমানের বোঝা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে ভেবে তিনি কারো দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছিলেন না। আদালত আপাততঃ পাঁচশত ডলার জরিমানা করে এই বলে সাবধান করে দিলেন যে, অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে এর পর তাকে জেলে ঢোকাতেও দ্বিধা করবেন না। আসলে জরিমানাটা তো বড় কথা নয়, এটাকা তার মাসিক আয়ের বিশ ভাগের এক ভাগও না। কথা হচ্ছে স্ত্রীর কাছে তিনি মুখ দেখাবেন কি করে? তিনি কি আগেই ইঙ্গিতে মজুমদার সাহেবকে সাবধান করে দেননি? প্রায় চল্লিশ বছর সংসার করছেন বলে স্ত্রীকে না হয় কোন ভাবে সামাল দেয়া যাবে, কিন্তু সমাজ? বাংগালি সমাজ যদি ঘটণাটি একবার জানতে পারে তবে কি আর তার ফোবানার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জীবণের শেষ ইচ্ছাটি পূরণ হবে? তিনি তো আর লেজেহোমো এরশাদের মত এতো লোকনিন্দা তুবড়ি মেরে কিভাবে উড়িয়ে দিতে হয় শেখেননি।

মজুমদার সাহেবের আশঙ্কা অনুযায়ী এমুখ সেমুখ হয়ে ঘটনাটি ঠিকই আমার কান পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তিনি আমার বন্ধু মানুষ, কিন্তু ইদানিং যোগাযোগ খুবই কম। তা হলেও মেয়ে উত্যক্ত করার মানুষ তো তিনি নন, তাছাড়া তার সে বয়সওতো আর নেই। কথায় বলে ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’, তাই তর্ক না বাড়িয়ে লোকজন যা বলে আমিও তাতে সায় দিয়ে গেলাম। আসলে মেয়ে উত্যক্ত বা ইভ টিজিং এর ব্যাপারটি দক্ষিন এশিয়ায় যতটা প্রকট পৃথিবীর আর কোথাও তেমন শোনা যায় না। তিনিতো এই অঞ্চলেরই লোক, কে জানে সত্যি হলেও হতে পারে। কৈশোর-যৌবনের সন্ধিক্ষনে আড় চোখে দূর থেকে মেয়েদের দিকে দৃষ্টি দেয়াকে ইভ টিজিং এর অপরাধ বলে জানতাম। সময়ে তার পরিধি অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট ঘেটেঘুটে বুঝতে পারলাম মেয়ে-উত্ত্যক্ত করার সংজ্ঞা এখন শুধু শিষ দেয়া, কাছে বা দূরে দাঁড়িয়ে অপ্রিয় বাক্য ছুড়ে দেয়া, পথ আগলে দাঁড়ানো বা অযাচিত প্রেম নিবেদনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশে এর পরিধি অযাচিত ভাবে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়া, গায়ের ওপরে এসে পড়া, অপহরণ করা, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে ধর্ষন করাকেও এর সংজ্ঞার মাঝে ফেলা হয়। শেষটির মত জঘন্য অপরাধের পরও আমদের সমাজ ব্যাবস্থায় ভুক্তভোগী মেয়েকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এইতো জানুয়ারির ১৫ তারিখ কসবায় ষোল বছরের ধর্ষিতা এক বালিকাকে ১০১টি দোররা মারা হোল সমাজপতিদের বিচারে। সমাজ তার পরিবারকে কলঙ্কিত করবে সেই ভয়ে এর দুদিন পর পাড়ার বখাটে দ্বারা গালে চড় খাওয়া ঢাকার শ্যামলীর চৌদ্দ বছরের পিংকি আত্মহত্যা কললো; মাত্র ক’দিন আগেই নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী হিসেবে সে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পাঠ্যপুস্তক গ্রহন করেছিল। এপ্রিলের তিন তারিখ রামপুরার চতুর্দশী ইলোরা, ও তার আগে একই পথে গেল মিরপুরের কিশোরি ফাহিমা। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ এর ২০০৮ সনের এক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সংস্থা’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে দশ থেকে আঠারো বছরের প্রায় নব্বই শতাংশ মেয়ে এই ইভ টিজিং এর শিকার হয়। ২০০২ থেকে ২০০৬ সনের মধ্যে দেশে লিপিবদ্ধ পাঁচ হাযার ধর্ষণের মাঝে ৬২৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে ও ৬৯ জন আত্মহত্যা করেছে। ইভ টিজিং এর জঘন্যতম ঘটনা ও তার ফলে প্রাণহরণ যেন দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আত্মহত্যার এই প্রবণতায় আহত হয়ে দৈনিক প্রথম আলোর আনিসুল হক এক নিবন্ধে কোমলমতি এই বালিকাদের বোঝাতে চেয়েছেন সমাজের আগাছাদের সৃষ্ট এই উৎপীড়নের অপমানের চেয়ে তাদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। নারীপুরুষের বৈষম্যপীড়িত সমাজব্যাবস্থা ও ইভ টিজারদের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে হানা শামস আহমেদ নামে ঢাকার ডেইলি ষ্টার পত্রিকার সাহসী সাংবাদিক এক শিক্ষনীয় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন পত্রিকাটির গত বছরের ১১ই এপ্রিল সংখ্যায়। এসব পড়ে পড়ে বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আদালত কর্তৃক মজুমদার সাহেবের জরিমানার কথা শুনে মনে মনে খুশিই হয়েছিলাম।

কলেজে পড়ার সময় আঁড়চোখে চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কোন মেয়ের প্রশ্রয়মূলক চাহনি ফেরত পেলে সমবয়সী বন্ধুরা রাজ্য জয়ের গৌরবে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিত। এখন সে প্রশ্রয় ছাড়াই ছেলেরা মধ্যযূগীয় রাজা-বাদশার ন্যায় যা খুশি তাই করে। মেয়ের সাথে ভাই বেরাদার অথবা আশেপাশে মুরুব্বি স্থানীয় কেউ দেখলে তাকানো তো দূরের কথা পৃথিবীতে মেয়েজাতীয় কোন প্রাণীর আদৌ যে অস্ত্বিত্ব আছে আমরা সেটা বেমালুম ভুলে যেতাম। সময়ে সেসবও বদলেছে, ছেলেরা অনেক সাহসী হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসের খবরে জানা যায় যে এক ভাই তার এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বোনকে কেন উত্যক্ত করা হোল জানতে চাওয়ায় শান্ত মরিয়ম (Santa Marium) বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্রাট নামের এক উত্যক্তকারী ভাইটিকে নিদারুণভাবে ঠেংগিয়েছে। ঢাকার নিউনেশন পত্রিকার খবরে আরো জানতে পারি গত বছর অক্টোবরের তেরো তারিখে কলেজে এক ছাত্রীকে উত্যক্ত কারীরা কুমিল্লা ভক্টোরিয়া কলেজের প্রতিবাদ কারী শিক্ষককে মেরে মারাত্মক ভাবে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রতিকার বিহীন এধরনের ঘটণায় অভ্যস্ত হয়েই হয়তো আমাদের ‘সভ্য সমাজ’ও মেয়ে উত্যক্ত করাকে স্বাভাবিক চোখে দেখতে শিখেছে, দেশের একটি ইংরেজী দৈনিকে পরিবেশিত খবর থেকে তা বোঝা যাবে। ২০০৮ সনের ২১শে অক্টোবরে বাংলাদেশনিউজডটকমে লিখেছে এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার মত “সামান্য ঘটনার (ট্রিফ্লিং ম্যাটার)” জের হিসেবে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ও তিনজন শিক্ষক সহ ১৫ জন জখম হয়েছেন। মারামারির ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর ইন্টারভিউ দিয়ে ও ঘটনার ফলে রাজপথের যানজটে জনজীবনে দুর্ভোগের বিবরণ সহ। কিন্তু এই উত্যক্তের ঘটনা এবং যাকে করা হোল তার শারিরীক-মানসিক যন্ত্রণা এতোই “সামান্য” ছিল যে প্রতিবেদক পাঠককে তা জানানো বা উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। “সাত কান্ড রামায়ন পড়ে” আসলেই “সীতা কার বাপ” বোঝার উপায় নেই।

এবছরের মার্চ-এপ্রিলে এধরনের কয়েকটি সাড়া জাগানো ঘটনার পর খবরে দেখলাম খোদ মন্ত্রীপরিষদে ব্যাপারটি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পরপর কয়েকদিন বেশকিছু বখাটে ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী খবরেই দেখা গেল অভিভাবকরা এসে তাদের ছাড়িয়েও নিয়ে গেলেন। মা-বাবার আদরে অপরাধী এত সহজে ছাড়া পেয়ে গেলে তাদের মেয়েটি যখন এমনি আরেক বখাটের অত্যাচারে আত্মাহুতি দেবে বা দেহ-মনে সারা জীবন ক্ষত নিয়ে বেড়াবে তখন তারা কি করবেন? গুরুতর অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক দন্ডে দন্ডিত করতে না পারলে আমরা কখনোই এই অভিশাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবো না। তাছাড়া এই ‘বখাটে’ কিশোর-যুবকদের শিক্ষায়, খেলাধুলায় ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে সম্পৃক্ত করতে না পারলে ধরপাকড়ে সাময়িক উত্তেজনা কমলেও সমস্যার সমাধান “দিল্লী দূর আস্ত” রয়ে যাবে। একটি আশার ব্যাপার হোল ইদানিং ঢাকায় ও মফসঃলে মেয়েরা সম্মিলিত ভাবে এবং বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংস্থা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন। এধরনের আন্দোলনের ফলেই এই ক’বছর আগেও ‘এসিড নিক্ষেপ’ এর ভয়াবহ অপরাধ থেকে মনে হয় দেশ এখন অনেকটা মুক্ত। আমেরিকায় ইভ টিজিং কে বলা হয় যৌন নিপীড়ন (সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট)। উত্যক্ত করার আপরাধে বেশি অঙ্কের জরিমানা ও জেলে পাঠানোর কঠোর ব্যাবস্থা আছে। ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ইভ টিজিং এর অপরাধীরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, ও বয়স, সমস্ত স্তরেই সমান ভাবে বিরাজমান। ভুক্তভোগী মেয়েদের বিভিন্ন ইন্টারভিউ ও লেখা থেকেও ধরে নেয়া যায় কাথাটি সত্যি। (এর কিছু নমুনা পাওয়া যাবে এসপ্তাহের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মহিলা শিক্ষকের অভিযোগে।) এদেশে সমাজকে মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলার জন্যে পঞ্চম শ্রেণীতে ছেলে ও মেয়েদের শারিরীক পার্থক্য ও শারিরীক প্রয়োজনের পার্থক্য বুঝিয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। সহকর্মীদের মাঝে যৌন নিপীড়ন কিভাবে এড়িয়ে চলা যায় সেটা শেখাতে ও চর্চা অব্যাহত রাখতে সরকারী সব কর্মচারীদের বছরে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার দুটো ক্লাশ করে পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। আমার বিরাশি বছর বয়সী এক সহকর্মীও এ দায়বদ্ধতা থেকে রেহাই পান না। ক্ষনিকের পদস্খলন হলেও কর্মচারীদের আহাম্মকীর দায় সরকার বহন করতে চায় না বলেই এই ব্যাবস্থা।

বন্ধু হলেও মজুমদার সাহেব আমার থেকে সাত বছরের বড়, এবছরেই কাজ থেকে অবসরে যাবেন। প্রতি বছর এত প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং শাস্তির কথা জেনেও তিনি এই অকম্মটা করতে গেলেন কেন? লোকজনের কাছে তো আর মুখ দেখাতে পারছি না। শেষে সাহস আর কায়দা করে ফোনে বললাম, আজকে ফাঁকতালে একটা ছুটি পেয়েছি, চলুন একসাথে লাঞ্চ করি। খেতে বসে একটি প্রসঙ্গ তৈরি করে ব্যাপারটা কি জিজ্ঞেস করতেই তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, ‘আপনারা পেয়েছেন কি বলেন দেখি, অন্য সবার কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু আপনি এতোদিনের বন্ধু হয়ে কিভাবে আমাকে এই প্রশ্ন করতে পারলেন’। আমি এই উত্তরে খুব বিচলিত হইনি কারণ ইতিমধ্যেই পড়াশোনা করে জেনে নিয়েছি এধরণের অপরাধী ঠিক এই উত্তরই দিয়ে থাকে। বললাম, ‘আরে, বিখ্যাত ও উঁচুদরের লোকজনের এধরণের অভ্যাস থাকাটা তো খুবই স্বাভাবিক, জানেন না বিবাহ বহির্ভুত নারী কেলেঙ্কারীর ছোঁয়া না থাকলে তো ফ্রান্স ও ইটালীতে প্রেসিডেন্ট বা প্রধান মন্ত্রী হওয়া যায় না। আর আপনি কি আমাদের এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন না’? খুশি হয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে অন্য সবাইকে যেমন বলেছি, আপনাকেও তাই বলবো, কিন্তু কথা দিতে হবে অবিশ্বাস করে আমাকে আর অপমান করবেন না’। আমি বললাম, ‘রাজি’। তিন ছেলের পর জন্ম নেয়া একটি মাত্র কন্যা, জিনিয়া, সখ করে একটা বেড়াল বাচ্চা পুষছিল তার প্রশ্রয় পেয়ে, স্ত্রীর মানা সত্ত্বেও। পালক নেয়ার সময় খেয়াল হয়নি বড় হয়ে এই বালক-বেড়ালের সঙ্গী হিসেবে একটি মেয়ে-বেড়ালের দরকার হবে। বাসার সবার আদরে অল্পদিনেই সে শরীরে-মনে শেয়ানা হয়ে ওঠে। একদিন সাথে নিয়ে বাসার বাইরে হাঁটতে গেলে জানালায় পাশের বাসার লুসিকে দেখে সে মিউ স্বরে শিষ দিয়ে ওঠে। তিনি ওকে ধমক দিয়ে, সভ্যতা শিখিয়ে, বুঝিয়ে শান্ত করে ঘরে নিয়ে এলেন। পরদিনই সুযোগ পেয়ে ঘর পালিয়ে প্রেম করতে সে লুসির জানালায় গিয়ে ঠোকা দেয়। লুসি আসার পর ওকে ধরতে না পেরে আনন্দে উত্তেজনায় আঁচড়ে আঁচড়ে জানালার দামি কাঁচে অনেকগুলো দাগ ফেলে দেয়। লুসির মনিব ক্ষতিপূরণ চেয়ে মজুমদার সাহেবের নামে মামলা ঠুকে দেয়। আদালত বললেন বাড়ীতে কোন মেয়ে-বেড়াল না রেখে অথবা ছেলে বেড়ালটিকে নপুংশক (ক্যাষ্ট্রেট) করে না রাখার ফলে যে অঘটন ঘটেছে, তার জন্য দায়ী মজুমদার সাহেব।

বেড়ালটির মত বাংলাদেশে যেসব ছেলেরা কৃতকর্মের ফলাফল আগেভাগে চিন্তা করতে পারে না, মজুমদার সাহেবের মত তাদের অভিভাবক, বা চাকুরিদাতা, বা ওয়ার্ড কমিশনার বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপরাধগুলোর জন্যে দায়ী করে আইন বানিয়ে কঠোর শাস্তি বিধানের কথা চিন্তা করা যেতে পারে।

১৭ই এপ্রিল, ২০০৯