ঝিঁঝিঁ সর্বশেষে দেশ ছাড়ারই সিদ্ধান্ত নেয়। এটিই উত্তম বলে বিবেচনা করে। গত ছয় মাস যাবৎ চেষ্টার ফলে এ আন্তর্জাতিক পদে চাকরিটি হল। কাছেই। থাইল্যান্ড তার চাকরি স্থল। ঝেড়ে ঝুরে সাত আট বছর কাটাতে পারলেই ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাবে। নিজেদের ভাল মন্দ বুঝার বিবেচনাবোধ হবে।
ঝিঁঝিঁ আন্তর্জাতিক পদে আন্তর্জাতিক মানুষ হয়ে থাকবে। ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন নেই,জাতি নিয়ে প্রশ্ন নেই,ভাষা নিয়ে প্রশ্ন নেই। ইংরেজী তার দাপ্তরিক ভাষা। একটাই পরিচয় হবে দেশ কোথায়?পোষ্টিং আফ্রিকা বা অন্য কোন মহাদেশেও নিতে পারত। তাহলে দেশটাকেও হারাতে হতো। সহকর্মীরা, প্রতিবেশীরা দেশটাকেও চিনতো না। বাংলাদেশ কোন মহাদেশে ? এ প্রশ্ন আবার অসহ্য লাগত। তখন তার অস্তিত্বে – ঐতিহ্যে আঘাত লাগত। কাজেই কাছেই ভাল। প্রতিদিন একটা করে ফ্লাইট আছে। মন চাইলেই দুই ঘন্টায় দেশের হাওয়ায়। উচাটন মন যে হাওয়ায় জুড়াবে।

ঝিঁঝিঁ ইদানিং কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় পড়ছিল প্রায়শঃই। স্বামীটি দিন দিন দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। ঘরের লোকটিকে বুঝতেই পারছে না। জীবনের সংজ্ঞাটা পালটে যাচ্ছে নেতিবাচকভাবে। যে বন্ধুটি তার জীবন যাপনের সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়ার কথা ইতিবাচকভাবে সে কি না স্বামী হয়ে তাকে উল্টো পথে টানছে।

আজকেও বাসায় এসেই স্বামীটি বিরক্ত। অস্বস্থি। মাইক্রো ওভেনে দেড় মিনিট সবজি গরম করতে দিয়েছে ঝিঁঝিঁ। পনের সেকেন্ড বাকি থাকতেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে; টেবিলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে। যে কিনা সমাজতন্ত্রের জন্যে হাজার বছরও অপেক্ষা করার দীক্ষা নিয়েছিল সে পনের সেকেন্ডের জন্যে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে।
কোথায় গেল তার সেই ধৈর্য। দেখা করার কথা থাকলে ঝিঁঝিঁর কখনো দেরি হলে এ নিয়ে কখনো অনুযোগ দিত না। ঝিঁঝিঁ দেরি হবার জন্যে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করলেই বলত, আমার অসুবিধা হয়নি। বসে বসে ভাবনার সময় পেলাম। একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তো তুমি চলে এলে।
যেন বোধি বৃক্ষের নীচে বসে ছিল। ঝিঁঝিঁ এসে ধ্যান ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে। এ ধ্যানের জগতে ডুব দিয়ে থাকাটা তখন ঝিঁঝিঁর কাছে মহত্ত্ব বলেই মনে হতো। এখন আর সে অনুধ্যান নেই।
এখন সেই ভাবুক বন্ধুটি অধৈর্য স্বামীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বন্ধুটি কখন থেকে যে একজন কট্ট্রর মুসলিম স্বামী হয়ে গেল! শুন্যের কোঠায় তার সমঝোতার মনোভাব।
মা ভাইদের সাথে আপোষ চাহনির মানে ঝিঁঝিঁকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।

অফিসে আসার পথে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মহিলা ভিক্ষুককে ঝিঁঝিঁ প্রায়ই টাকা দেয়। ঐদিন ভাশুর স্বামীটিকে বলল– বাজি, আসলে মানত করেছিলাম — সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ জিতলে একশ টাকা দান করব। জিতলও।
স্বামীটি বলল — বাঃ, তোমাকে দিয়ে তো প্রয়োজনে মানত করাতে হবে।
ভাশুর একটি একশ টাকা নোট স্বামীর হাতে দিয়ে বলল, তুমি তো প্রায়ই বাড়ি যাও। বাড়ি যাবার সময় আমতলায় একটি মসজিদের জন্যে বাস থামিয়ে চাঁদা তুলে। টাকাটা তাদেরকে দিয়ে দিবে।
ঝিঁঝিঁ বলল —খামার বাড়ির গেটে যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মহিলাটি বসে তাকে দিয়ে দিও। ভাশুর বলল, না, টাকাটা কোন মসজিদে দেব বলেই মানত করেছি। বলেই বাইরে চলে যায় বুঝি বা ঝিঁঝিঁ কিছু একটা উত্তর দিয়ে ফেলবে সে আশংকায়ই। স্বামীটি এ বিষয়ে কোন কিছুই বলল না। অথচ ছাত্র জীবনে এমন ইস্যু হলে বন্ধুদের সাথে তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলত।
ঝিঁঝিঁর তাৎক্ষণিক প্রশ্ন — কেন?
স্বামীটি বেশ গম্ভীর স্বরে বলে — পরকালের কাজে লাগবে।
ঝিঁঝিঁ ঠান্ডা কন্ণ্ঠে উত্তর দেয় –মসজিদের চেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মহিলাটিকে দিলে বেশি কাজে লাগবে। তাছাড়া , তুমি কবে থেকে আবার পরকাল নিয়ে ভাবছ? আগে তো বলতে একটাই কাল।
স্বামীটি আগেই তেতে ছিল, কারণ ঝিঁঝি৬র সরাসরি ভাইয়াকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মহিলাটিকে টাকাটা দেওয়ার প্রস্তাব তার পছন্দ হয়নি। কণ্ঠে এরই প্রকাশ ঘটিয়ে বলে, এটাতো আমাদের ইচ্ছে।
তাতো অবশ্যই। তোমাদের ইচ্ছেটাকেই, বিশেষ করে তোমাকে আমার পথে আনতে চাই।
তোমার পথে গেলে তো। তুমি বরং আমার পথে আসো।
তোমার পথেই তো এসেছিলাম। তুমি যে এখন পথভ্রষ্ট। নষ্ট পথের পথিক। মসজিদ বানিয়ে বানিয়ে তো দেশের জমির পরিমাণ কমিয়ে ফেললে।
এবার ধর্মের অবমাননায় ফেটে পড়ল স্বামীটি — বাজে কথা বলো না।
এই নিয়ে আধঘন্টার কথা কাটাকাটি, বারাবাড়ি। স্বামীটি সুযোগ পেলেই পুণ্য করার ধান্ধায় থাকে। স্বামীর এ পুণ্যার্থী হওয়ার লোভে ঝিঁঝিঁর জীবন ঝালাপালা।
অথচ বিয়ে করেছিল একজন বামপন্থী ছাত্র নেতাকে। আজ সে ডানপন্থী হলেও অবাক হত না, কিন্তু হয়ে গেল আকাশপন্থী।

শাশুড়ি কয়েকদিন যাবৎ ঝিঁঝিঁকে নামাজ পরতে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ঝিঁঝিঁ তো ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেনি। স্বামীটিরও তো নামাজী হবার কথা ছিল না। এখনও শুক্রবার মসজিদে যাওয়া ছাড়া নামাজ পড়েও না। অবশ্য শাশুড়ি ছেলের চেয়ে ছেলে বউয়ের কাছে বেশি ধর্ম চর্চা আশা করে। তবে স্বামীর নামাজী হওয়া নিয়ে ঝিঁঝিঁর আপত্তি তো দূরের কথা কোন মাথাব্যথাই নেই। যার যার মনোভাব তার তার। তখনকার বন্ধুটি বন্ধুত্ব ছেঁটে ফেলে এখনকার স্বামীতে রূপান্তরিত হয়েছে। কাজেই তার মধ্যে থেকে বন্ধুত্ব উধাও হবার সাথে সাথে আরও কিছু তো যাবেই। এ নিয়ে ঝিঁঝিঁর মনে মনে আপসোস থাকলেও কোন অনুযোগ নেই। কিন্তু স্বামীটি ঝিঁঝিঁকে কেন রূপান্তরিত করতে চাচ্ছে! নিজের ইচ্ছেটাকেই কি মাকে দিয়ে বলাচ্ছে! মায়ের কথা, ভাইয়ের অনুযোগ, অন্যদের অনুশাসন নিয়ে কোন প্রতি বাদ নেই কেন!

ঘরের কাজের ভাগাভাগি না থাকলেও বাজার করায় ঝিঁঝিঁর অংশগ্রহণ চাই, যদিও স্বামীটির অংশদারিত্বে বিশ্বাস নেই। এটাকে সামাজিকীকরণ মনে করে ঝিঁঝিঁ অনুতাপ থেকে নিজেকে ঈষৎ ঠান্ডা রাখার চেষ্ঠা করে।
কিন্তু আর সব?
মাস ছয়েক আগে একবার স্বামীটির একটি কাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিল, অস্থির হয়েছিল ঝিঁঝিঁ। তবে স্বামীটি যে হুট করে সিদ্ধান্তটি নেয়নি এ ব্যাপারে ঝিঁঝিঁ নিশ্চিন্ত ছিল। এ নিয়ে প্রায়ঃশই কথাবার্তা হচ্ছিল। ভাশুর তো একদিন বলেই ফেলল, ছেলেমেয়েদেরও কি লেনিন বানাবে নাকি?
স্বামীটি প্রতিউত্তরে শুধু মাথা দুলিয়েছে। ভাই ও বউয়ের সামনাসামনি দোলানোটা কোনদিকেই হেলেনি। কূল রাখি না শ্যাম রাখির দোলায় দোলায়িত।

স্বামীটি তাদের বিয়ের শর্তগুলো তার আত্মীয় স্বজনকে বলেনি। ঝিঁঝিঁ অবশ্য তা বিয়ের পর থেকেই টের পেয়েছে। ঝিঁঝিঁর মা বাবা না এলেও ভাইবোনেরা আসে যায়। ঝিঁঝিঁর বিয়ের শর্তও জানে ,তবে ঝিঁঝিঁ এ সব শর্ত মানে কি না তা কখনোই জানতে চায় না। তাদের মনোভাব প্রকাশ করে না। এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।

শাশুড়ি এ বাড়ি আসবে না। এখনও নাতিটির খৎনা করা হয়নি। নাতনিটিও তো কম বড় হয়নি, অথচ কোরাণের এক পারাও পড়েনি।
কাজেই স্বামীটি তাকে জিজ্ঞেস না করেই মৌলভী ঠিক করে এসেছে। ঝিঁঝিঁ অফিস থেকে ফেরার পর স্বামীটি বলল, কাল সকালে একজন মৌলভী আসবে।
ঝিঁঝিঁ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন?
মোলায়েম কণ্ঠে স্বামীর উত্তর, দুজন বাচ্চারই আরবী শেখা প্রয়োজন।
ঝিঁঝিঁ একটু শক্তভাবেই বলে, অন্য ভাষা শিখতে হলে আরবীর চেয়ে প্রয়োজনীয় আরও ভাষা রয়েছে !
ততোধিক জোরের সাথে স্বামীটি বলে — আরবী ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্য তো আর শুধু ভাষা শেখা নয় তা তো তুমি ভাল করেই জান?
হ্যাঁ, জানি বলেই তো আপত্তি। সিদ্ধান্ত ছিল বাচ্চারা বড় হয়ে নিজেরাই বেছে নেবে তারা কি করবে।
এসব রোমান্টিক কথা রাখ?
রোমান্টিকতায় ভর করেই কিন্তু আমাদের বিয়ে, আর এরই ফসল এ বাচ্চারা।
অশ্লীল কথা বলবে না। বাচ্চারা শুনবে।
ঝিঁঝিঁ স্বামীর এমন আচরণে অবাক হয়নি, কারণ স্পেশাল ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুসরণে বিয়ে রেজিষ্ট্রি হলেও স্বামীটি সামাজিকতার দোহাই দিয়ে অনেক কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছিল।

ঝিঁঝিঁর ছেলেমেয়ে দুটো জন্মসূত্রে মানুষ হয়ে জন্মেছিল। জন্মস্থানসূত্রেও পৃথিবীর মনুষ্য সমাজেই বাস বলে তাদেরকে মানুষ হিসেবেই বড় করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বামী সংসার তাদেরকে জীবনের পরতে পরতে ধর্মীয় পরিচয়ের প্রকাশ ঘটাতে চাচ্ছে। প্রথমেই ঘটকা লাগে তাদের নাম রাখা নিয়ে।
ঝিঁঝিঁ ছেলেমেয়ের বাংলা নাম রাখলেও শাশুড়ি আকিকা করে আরবী শব্দের আরেকটা করে পোশাকী নামও রেখেছে, যদিও ঝিঁঝিঁ স্কুলে এসব নাম দেয়নি। এতে সপ্তাহ দুয়েক পারিবারিক অসন্তোষ ছি্‌ পরে আবার ঠিক হয়ে গেছে। তবে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদের আরবী নামেই ডাকে। অন্যান্য ছেলেমেয়েদের দুটো নাম, এমনকি ঝিঁঝিঁর স্বামী, ননদ,ভাশুরদেরও। ডাক নামটা বাংলা আর পোশাকী নামটা আরবী, কিন্তু তার ছেলেমেয়েকে কেউ ডাক নামে ডাকে না। উদ্ভট আশংকা থেকেই যে এ চর্চা তা ঝিঁঝিঁ ভাল করেই জানে।

আরবী পড়া নিয়ে পারিবারিক অসন্তোষ কাটাতে মাস তিনেক লেগেছিল।
স্বামীটি শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে সাথে নিয়ে এখন আবার অন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আরবী শিখতে পারলেও তখন তো ছেলেটির মুসলমানী করানো কঠিন হবে। কাজেই এটা করানো উচিত।
ঝিঁঝিঁ তার দিব্যদৃষ্টিতে দেখে, ছেলেমেয়ে বড় হয়ে মানুষ হয়েছে। মা বাবা কোন ধর্মীয় পরিচয় থেকে এসেছে তা বিবেচ্য হয়নি। কিন্তু এখন বাস্তবে দেখছে মানুষ পরিচয় পরে। আগে তাকে হিন্দু বা মুসলিম হতে হবে তার পর লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে। কিন্তু ঝিঁঝিঁ তো আগে চায় তার ছেলেমেয়ে সুস্থ মানুষ হোক, পরে যে কোন পেশাজীবীর পরিচয়। তা আর রাখা যাচ্ছে না।

ঝিঁঝিঁ অফিসের কাজে সাতদিনের জন্যে দেশের বাইরে গিয়েছিল। এসেই দেখে ছেলে বিছানায় বসা। লুঙ্গি পরা। তৎক্ষণাৎ ঝিঁঝিঁর মাথাটা চক্কর দেয়। আঁচ করতে পারে কি ঘটেছে। রাগ আর স্নেহের মিশ্রণে ছেলে যে ব্যথা পেতে পারে তা ভুলে ছেলেকে বুকে নিতে গেলে ছেলে চিল্লিয়ে বলে, মা। ব্যথা ব্যথা। দিদা আর বাবা মিলে একটা লোক দিয়ে আমার নুনু কেটে ফেলেছে। তোমাকে আর অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে যেতে দেব না।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেই ঝিঁঝিঁর বুকে মাথে রেখে ছেলেটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
মুসলমালি করিয়ে তাকে মুসলমান বানিয়েছে। ঝিঁঝিঁ এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি। স্বামীকে এ বিষয়ে একটা প্রশ্নও করেনি। করাক খৎনা। আরে এ তো কাপড়ের নিচের ইসলাম। এ নিয়ে আর কোন বাক্য ব্যয় নয়। ঝিঁঝিঁ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ছেলের স্কুলে যাওয়া শুরু না করা পর্যন্ত ছেলের কাছে থেকেছে।
তারপর অফিসে গিয়েই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পদে আবেদন করা শুরু করেছে। ছয় মাসের মাথায় চাকরিও পেয়ে গেল।
কিন্তু বন্ধুরা থামাতে চাচ্ছে— তুই তাহলে জীবিকার জন্যে দেশ ছাড়বি।
ঝিঁঝিঁর দৃঢ় উত্তর, না, জীবিকার জন্যে নয়, জীবনের জন্যে।

ভাল চাকরি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছিস আর বলছিস জীবিকা নয়?
না। নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে যাচ্ছি। নিজের ছেলেমেয়েকে নিজের মত করে মানুষ বানাতে যাচ্ছি।

তার পারিবারিক বন্ধুরা––যারা স্বামীটিকেও জানে তারা প্রায় সবাই স্বামীটির পক্ষে ওকালতি করে। উদ্দেশ্য সৎ । ঘর না ভাঙ্গা। ঝিঁঝিঁ কিন্তু ঘর রাখতেই দেশের বাইরে যাবে। কারণ এ সমাজ তার সংসারকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখে না।
শর্ত লঙ্ঘন করে চুক্তি ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত লোকটি নিয়ে স্বামী পরিচয়ে ঘর করার সাধ যদিও উবে গেছে তবুও বন্ধুদের বলে, পারলে তোরা স্বামীটিকে বলে আমার সাথে পাঠা।
খুব কাছের এক বন্ধু বলে, তুই তো জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে চাস। আবার স্বামীটিকেও সাথে নিবি?
অন্যজন বলে, আমারা অবশ্য কথা বলে দেখেছি, তোর স্বামীটি পরিস্থিতির শিকার মাত্র। তোর প্রবাস জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটাও বিরোধী মন্তব্য করেনি।
আরেক জন মনে করিয়ে দিল,
তোমরা যেখানে সাধ চ’লে যাও – আমি এই বাংলার পারে র’য়ে যাব;
কোথায় গেল তোর জীবনানন্দ। এখন তো জীবিকার গন্ধ।
ঝিঁঝিঁ জোরের সাথে বলে, না, আমি এ দেশের সমাজ থেকে আপাতত দূরে চলে যেতে চাচ্ছি শুধু। তবে আসব, আবার ফিরে আসব।
হাসতে হাসতে জীবনানন্দকে একটু উল্টিয়ে বলে —
‘আবার আসিব ফিরে ঢাকায় — আমার এই বাসায়
শঙ্খচিল শালিক নয় — মানুষেরই বেশে ।
আমার ডান হাতের কব্জির উপরে বন্ধুটির হাত ঠেসে। বলেই শব্দ করে হা হা করে হেসে উঠে।
বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠল, তাহলে পুনর্মুষিকো ভব? স্বামীটিকে বন্ধু বানাতে প্রবাস জীবন? আমরা তোর স্বামীটিকে ঠেলে ঠুলে প্লেনে উঠিয়ে দেব।
ঝিঁঝিঁ কোন উত্তর দেয় না।