পর্ব-৪

ঢাকা শহরকে এখন একটুও ভাললাগে না। বর্ষা এলে ডুবে যায় রাস্তা ঘাট। নালা নর্দমা থেকে বিকট গন্ধ আসে। ম্যানহলের ঢাকনা চুরি হয়ে যায়।
সকাল হলেই মানুষজনের ব্যস্ত ছোটাছুটি জীবিকার তাগিদায়।
দিনগুলো কাটে ঢিলেঢালা। সকালে বাচ্চাদের স্কুল কলেজ। ওরা এখন বড়ো হয়ে গেছে ।
সেই নতুন সংসার পাতার পর অনেক ভাঙ্গাগড়ার মাঝ দিয়ে এখন একটু থিতু হয়েছি। নিজের নতুন ঝকঝকে ফ্ল্যাট গোছাই। অবসরে কিছু লিখতে চেষ্টা করি।

কবিতা, গল্প জানিনা এদের ভবিষ্যত কী। তবু বিভিন্য জাগায় লেখা পাঠাই।
–মা তোমার বই কবে বের হবে ? মেয়ের এই প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই, আমি আনমনা হয়ে যাই।
বুক ধুকপুক করে। কখন যেনো স্বামীর বিধিনিষেধ শুরু হয়। সন্ধার পর স্বামী যখন বের হয়ে যান, আমি লিখতে বসি তখন। বুঝতে দেইনা আমি কী করছি। নয়তো গভীর রাতে লিখি।
হঠাৎ সাজগোজ করি মনের মতো , স্বামীর সময় নেই আমার দিকে তাকানোর।
মনকে প্রবোধ দেই। তার উপেক্ষায় বুক ফাটে। মুখ ফোটে না। বলতে ইচ্ছে করে –“ চলো না কোথাও ঘুরে আসি। “

কিন্তু, জানি সে বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলবে। যেনো পৃথিবীর একটা আশ্চর্য বিস্ময়ের কথা বলেছি।

সকাল থেকে রাত অব্দি ব্যস্ততায় কাটছে ক’টা মাস আমার। ছোট মেয়ের পরীক্ষা ।
দেড় মাস টানা পরীক্ষা চলল। ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। মেধাবী হলেও পড়াশোনায় মন ছিলোনা। পড়তে বললে রেগে যেতো। সেই মেয়েই পরীক্ষা সামনে রেখে পড়তে শুরু করল। এক সময় পরীক্ষা শেষ হল।
ক’দিনের জন্য ঢাকার বাইরে ঘুরতে গেলাম। সাগর , পাহাড় সব দেখলাম তিনটে বছর পর।

রাত্রি তখন। সাগর তীরে বসে মেয়েদের নিয়ে। সাগরের জোয়ারের ঢেউ গুলো কান্নার মতো আছড়ে পড়ছে আমার পায়ে। ঝির ঝিরে বৃষ্টিতে দৌড়ে একটা ফাস্ট ফুড এর দোকানে বসেছি। বেয়ারা কফি দিয়ে গেলো।
সাগরের নোনতা স্বাদ আমার জিভের ডগায় টের পেলাম কফির মগে চুমুক দিতে গিয়ে।
রাতে ফিরে আসি নিজেদের বাড়িতে।
এইখানে বেড়াতে এসে শখ করে জায়গাটা কিনে ফেলছিল আমার স্বামী। নিজের প্ল্যানে তৈরি করা বাড়ি।
গাড়ি থেকে নামলাম আমরা। কাজের মানুষটা ঝিমাচ্ছিল।-
–তোমার স্যার কই ?
–ঐ উপরে। সে জবাব দেয়।
তার মানে ছাদে। পায়ে পায়ে ছাদে গেলাম। ছাদে যাবার আগে বাইরের কাপড় ছাড়লাম। আর একদফা স্নান করলাম। সারা গায়ে নোনতা ভাব , সাগরের ঝিরঝিরে হাওয়ায় লেগে আছে। এখন চ্যাটচ্যাট করছে। গায়ে বডি স্প্রে দিয়ে স্বামীর পাশে চেয়ার টেনে বসলাম। বসে বসে দু’জনা রাতের তারা দেখলাম। ঝক ঝকে আকাশ। ঢাকার আকাশ এতো সুন্দর হয়না। অনেক ধূসর লাগে আকাশটা।
রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম, আমি সাগরের কিনার ধরে হাঁটছি । হঠাৎ বিশাল ঢেউ এসে আমাকে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমি সাঁতার জানি। কিন্তু , এত বড়ো ঢেউয়ের সাথে পারছিনা ।
—-ওঠো ওঠো — আমি চোখ খুললাম –
–স্বপ্ন দেখেছ? ধাক্কা দিচ্ছে আমার স্বামী –
–হুম – বলে পাশ ফিরে শুলাম। একটা ভয় আমায় আচ্ছন্ন করে দিল।

প্রায় রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখি, পরীক্ষা দিতে যাবো, অথচ কলম নেই,বই নেই সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রাণপণ দৌড়াচ্ছি। স্বপ্নেই ভাবি-
–কেনো পরীক্ষা দেব ? আমার তো সব পরীক্ষা শেষ। তবু দেখি, এই স্বপ্নের কথা কাউকে বলিনা। মা বলেছেন স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে নেই ।
ভাবতে বসি। ভেবে ভেবে কুল কিনারা পাইনা ।

সকাল বেলায় ঘুম ভাংলো পানির মেশিনের শব্দে। এমন ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস। ছেলেবেলায় বাবার সাথে বের হতাম সুর্য্য ওঠার আগে। বাবা গাছ চেনাতেন। নানা রকম গাছ। হাঁটতে হাঁটতে আমি বাবা অনেক দূর চলে যেতাম। রোদ চড়া হলে মানুষজনের সমাগম শুরু হলেই ফিরে আসতাম।

মুখ ধুয়ে বাগানে এলাম। নিজ হাতে ফুল গাছ লাগিয়েছি। আমাকে দেখে বাগানের মালি দৌড়ে এলো। পেছনে ঘুরে আর গাছ গুলোর স্বাস্থ বিবরণ দেয়। মনে মনে বিরক্ত হলাম। এ সময়টা একান্তই একালা থাকতে চাই। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর দিকে তাকাই , অনেক বড়ো হয়েছে। কিন্তু, ফুল ফোটে কম। বিষন্ন হয়ে যায় মন। আমার সাধের কৃ্ষ্ণ চুড়া! সারি সারি লাগানো গেট অব্দি ।
–এতো কৃষ্ণচুড়া লাগিয়ে কি হবে ? স্বামীর প্রশ্নের জবাবে হেসে বলেছিলাম,

–আমি মরে গেলে ফুল দেবার কেউ থাকবে না। এইখানে কবর দিও –তাহলে লাল লাল ফুলে ছেয়ে যাবে আমার কবরখানা
–হো হো করে হেসেছিল স্বামী। তাকিয়ে দেখলাম একদম মাথার কাছে কয়েকগোছা ফুল।
নাহ ! যত্ন হয়না। ভেতরে এসে বারান্দায় বসলাম। টানা বারান্দা। এখানেই খাবার টেবিল।
–চা দাও গনি –
–দিতাসি মামী। গণি বেশ বয়স্ক মানুষ, এক চোখ পাথরের। কেউ না জানলে ভাববে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চোখের পাতা না ফেলে। কিন্তু, আমি জানি ওর চোখে খারাপ একটা অসুখ হয়েছিলো। তাই চোখটা ফেলে দিয়ে পাথরের চোখ বসানো হয়েছে।

চা খেতে খেতে ভাবলাম ঢাকা যেতে হবে। ঢাকার কথা মনে হলেই মনটা তেতো হয়ে যায়। এখানে এসে খালি পায়ে হাঁটি যখন , মনে হয় ঢাকার পীচ ঢালা রাস্তায় কোণো দিন যাবো না। আগের মত ধুলো বালি নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু , অনেক কাজ পড়ে আছে। ঢাকায় যেতেই হবে। সাতটা দিন উল্ল্যাসে উতল হাওয়ায় দিনগুলো কাটিয়ে দিয়ে ঢাকার দিকে রওয়ানা দিলাম। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের বিদায় জানালো স্বামী। সারা রাস্তা মনটা কেমন করলো। ওকে রেখে এলাম। অনেক স্মৃতি মনে এল। কতো রাত পর্যন্ত আমরা দু’জন ঘুরতাম সাগর পাড়ে।

পর্ব-৫

সে দিন পুরানো ছবি দেখছিলাম আলমিরা গোছাতে গিয়ে। ছবিগুলো মলিণ হয়ে গিয়েছে।আনমনা হয়ে গেলাম। স্মৃতি মলিণ হয়নি। মনে হয় এখানো চোখের সামনে ঝকমক করছে।
বেশীর ভাগ সময় আমি ইউনিভারসিটির শেষ বাসে বাসায় ফিরতাম, তার আগে চলতো আড্ডা।
একদিন টি,এস,সি চত্তরে দাঁড়িয়েছিলাম বান্ধবীরা মিলে। এমন সময় মোটরসাইকেল নিয়ে একজন গোটা এলাকা বার কয়েক চক্কর দিল। আবার ক্রমাগত হর্ণ বাজাতে শুরু করল। আমি বিরক্ত হলাম , চেয়ে দেখি সাইকেল আরোহী হেলমেট খুলে আমার দিকেই তাকিয়ে –
–এ কী মুর্তজা চাচা ? আপনি এখানে ?
আমি সবার সামনে চাচা ডাকাতে তিনি বিব্রত হলেন। একদম কম বয়স। সদ্য আর্মিতে ঢুকেই ফটাফট প্রমোশন। ক’দিনেই মেজর হয়ে গেছে। একটু কাছে এগিয়ে গেলাম –
–তুমি সবার সামনে চাচা ডাকলে কেনো ? কন্ঠে রাগ,
– আমাকে দেখলে কি চাচা মনে হয় ?
–না নাহ ! মানে মুনিয়ার দূর সম্পর্কের হলেও তো চাচা তাই না ? হেসে জবাব দি ।
–তা হলেও তুমি ডাকবে না , আর শোনো আমি যে আর্মি’র মানুষ কেউ যেনো না জানে ।
অবাক হলাম। মুর্তজা সামনের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে জানালো তার মর্মার্থ হছে, সরকার উচ্ছৃঙ্গখল ছাত্র, এবং বিশ্ব বিদ্যালয়ের কর্ম তৎপরতা জানবার জন্য কিছু আর্মির লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে ছাত্র হিসেবে।–
-হুম তোমায় দারুণ দেখাচ্ছে – হেলমেট পরতে পরতে বলল মুর্তজা।
–মানে ? বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম –
– ইয়া বড় চুল কেটে ছোট করেছি। তাই নিয়ে রোজ মায়ের কত বিলাপ আর গালমন্দ খাচ্ছি আর আপনি কী বলেন ?
কি জানি আমার ছোট চুল – আর জ্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে কথা বলা, আর জীন্স এর প্যান্ট, এলোমেলো আমাকে তাকে কেন আকৃষ্ট করল ।
ও দিকে মা চুল টেনে টেনে পরিক্ষা করে আর বিড় বিড় করে
–কি মেয়ে বাপু । চুলগুলো শেষ করে দিলো ?
–আবার ঠিক হয়ে যাবে মা –
–আর ঠিক হবে । তোমাদের আজ কালকার মেয়েদের কি যে হয় তোমরাই জানো –
আজ এতো কাল পরে মনে পড়ে ছবিগুলো যতোই মলিণ স্মৃতি গুলো ততোই উজ্জ্বল।
মুর্তজা আমাকে সে দিন বিদায় দিয়ে চলে গেল। তার মনের কথা আমি জানি। জানি বলেই প্রশ্রয় দেইনা বন্ধুদের জটলার মাঝে ফিরে এলাম। বান্ধবী আঁখি পরিচয় করাল এক সুন্দর ফর্সা ছেলের সাথে –
–এই যে আমার ভাই এইটা।শোন এইটা আমার সব থেকে প্রিয় বান্ধবী –
-ওহহ ! কিসে পড়েন? বেশ ভাল-চটপটি খান। ছেলেটা বলে,
আড্ডার মাঝে চটপটি আর ঝালমুড়ি খুব চলে। সেই সাথে গরম গরম চা।

কিংশুকের সাথে যখন পরিচয় হয় তখন এমন নজর কাড়েনি সত্যি বলতে কি।আর দশ জন ছেলের মতোই মনে হয়েছিল। হঠাৎ কা-কা- শব্দে নিজের মাঝে ফিরে এলাম। একদম জানালার কাছে কাক দুটো
হুটোপুটি করছে। জানালায় কিছু খাবার দেই কবুতরের জন্যে। আর কাক এসে
তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরাই খেয়ে ফেলে। দুর্বলের প্রতি সবলের আক্রমনের আর এক চিত্র। ও দিকে কাজের মানুষটা ঘুরঘুর করছে কি রান্না হবে তার তালিকা দিতে। সাধারন রান্নার কথা বলে বাচ্চাদের যার যার স্কুল কলেজ এ বিদায় দিলাম।

আজ শরীরটা ভাল লাগছে না। ছোট মেয়েকে একাই রিক্সায় পাঠালাম।
ঘরদোর গোছগাছ করলাম। ফুলদানীতে কিছু বাসি ফুল ছিল। ওগুলো বাদ দিয়ে নতুন ফুল দিয়ে সাজালাম। অর্কিড গাছগুলো একটু অযত্নে ছিল। ওগুলোর বিবর্ণ পাতা ছেটে পরিস্কার করে এক কাপ চায়ের কথা বললাম কাজের মানুষ কে।
ক’দিন আবহাওয়াটা গুমোট হয়ে আছে, প্রকৃ্তি কত বদলে যাচ্ছে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তাকালাম বাইরে। জানালাটা টেনে বন্ধ করলাম। এসি টা চালিয়ে চেয়ারে বসলাম শোবার ঘরে। ক্লান্ত লাগছে ।
মায়ের সাথে কথা হয়না অনেক দিন। ফোন করলাম , বিজি টোন পেলাম , বেশ অনেক দিন ধরেই কেবল আগের জীবন , শৈশব , কৈশর এ দিন গুলো আমায় তাড়া করে বেড়ায়। আমার মত হয়ত অনেকেই ভাবে। বর্তমানে বসে অতীতকে স্বরণ করে সামনের ধূসর ভবিষ্যৎ দেখে ।

কিংশুকের সাথে আমার পরিচয়ের সূ্ত্র আঁখির ধর্ম ভাই। আপন ভাইয়ের চাইতে ধর্ম ভাই নাকি অনেক গুরুত্ত্বপুর্ণ। দেখতে দেখতে গরমের ছুটি এসে গিয়েছিল তখন। এর মাঝে কিংশুক একদিন বলে ,
-ঐ তিথী মেয়েটা আমার ক্যামেরা নিয়ে গেছে এনে দেনা আঁখি।
–তুই দিতে গেলি কেনো ?
–আরে ওকে পটানোর জন্য দিয়েছিলাম ,এখন দেখি কতো ছেলেই তার আছে।তুই এনে দে

— দেখি কি করতে পারি , আঁখি বলে।
শান্তাকে কিংশুকের ভালো লাগে। শান্তাকে কি করে পাবে আঁখিকে তাগাদা দেয়। একদিন বিরক্ত হয়ে বলি,
-তোর ভাইয়ের কি আর কাজ নাই? সারাদিন মেয়েদের কথা বলে ?
-এমন করিস কেনো? -বেচারা ভালো একটা মেয়ে চাইছে বন্ধুত্ব করবে ,আরো ভাল লাগলে বিয়ে করবে।
– বিয়ে ? আমি আঁতকে উঠলাম।
–বলিস কি ? এইটুকু ছেলে –আবার বিয়ে ?
–দেখ ওর বাসার সাথে সম্পর্ক ভালোনা, তাছাড়া ওতো ফাঁকে ফাঁকে ব্যবসাও করে, মন্দ কি।
–কি জানি বাপু তোরা ভাইবোনরাই জানিস। তবু কিংশুকের মায়া কাড়া মুখ দেখলে মমতা হয় ।
চেষ্টা করি একবার তিথীকে দিয়ে, কখনো শান্তাকে দিয়ে। কিন্তু কিংশুকের মন বোঝা দায়, ও
যে কী চায় বোঝা মুশকিল।

গরমের ছুটিতে আঁখির দেশের বাড়ি যাবো। এমনটা স্থির করাই ছিলো। মুশকিল আমার বাসা। কোথাও অনুমতি নেই রাতে থাকবার। কিন্তু, আঁখির সাথে যেহেতু আমার একটা পারিবারিক সম্পর্ক, মা নিমরাজী হয়ে বললেন,
– এক দিন থাকতে পারবো। বাবার অনুমতি নিয়ে আমি আর আঁখি রওয়ানা দিলাম ওদের গ্রামের বাড়ি।
দুই ঘন্টার রাস্তা। সাভার পার হলেই ওদের গ্রাম ।
কাঁচা রাস্তা দিয়ে রিক্সায় চড়লাম। চার দিক অপুর্ব ! ধান খেতের মাঝ দিয়ে রাস্তা ।
উঁচু নীচু , রিকশা এসে থামলো এক মরা নদীর সামনে। নদী পার হতে হবে নৌকা দিয়ে, দারুণ লাগছে।
এই যে গ্রাম যার নাম আমি জানিনা। মনে হচ্ছে এই স্টেশন আমার অত্যন্ত আপন ।
আমি যেন প্রায়ই স্বপ্নে দেখি এমন একটা মেঠো আল ভাঙ্গা পথ। নদীর ওপারে তাকিয়ে মনে হচ্ছে আমার অতি আপনজনেরা ওপারেই সাগ্রহে প্রতীক্ষা করছে।

নৌকা থেকে নামলাম। মেঠো পথ দিয়ে এক সময় আঁখিদের গ্রামের টিনের দোতালা বাড়ির উঠোনে দাঁড়ালাম । চার দিক চুপচাপ। আঁখির মা এগিয়ে এলেন। পা ছুঁয়ে সালাম করলাম।
–তোমরা আইসো আমি খুশি হইসি –যাও হাত মুখ ধুইয়া লও – শহরের মাইয়া তুমি আমাগো গেরাম দেহ – কেমুন লাগে ।
তিনি আঁখির দিকে ঘুরে তাকিয়ে আবার বললেন,
– ওরে নিয়া বিকাল বেলা গেরাম দেখাইবি –তোর চাচার বাড়ি নিবি ।
রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। ঠিক বিকেলে আঁখির ভাই উপস্থিত। মেডিকেলে পড়ে, আমার সাথে এক মুহুর্তের পরিচয়ে বিরুভাই যেনো অন্তরঙ্গ হয়ে গেলো।

বিকেল হতেই বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম ঘুরতে। ঢাকার পাশেই বলে গ্রামটা বেশ আধুনি। আমরা তিনজন আঁখি, আমি আর বিরু ভাই। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত আমি ।

এক গাছ তলায় দাঁড়ালাম। আঁখি একটা কাজে বাসার দিকে গেল ।-
–বিরু ভাই বান্ধবীরে রাইখা গেলাম দেইখা রাইখো –
আঁখি ও এখানে আসার পর গ্রাম্য ভাষায় কথা বলছে। বিরু ভাই পলিটিক্স করে ।
যা দু’চক্ষে দেখতে পারিনা। তিনি হাত পা নেড়ে অনেক কিছু বোঝাচ্ছেন ।
আমি নীরব শ্রোতা। বিরু ভাই কথা বলতে জানে বেশ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। আঁখির দেখা নেই। বিরুভাই এক সময় আমার হাত ধরে বলে ,
–তুমি খুব সুন্দর, আরো সুন্দর তোমার কথা। আস্তে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।
–বিরু ভাই চলুন বাসায় যাই – আঁখি এলো না, সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
–তুমি কি রাগ হলে ? বিরু ভাইয়ের ম্লান কন্ঠ ।
আমি নিরুত্তর। সামনে পা বাড়ালাম। এতো কম সময়ে এতো ঘনিষ্ঠ আচরণ পছন্দ নয়। কিন্তু, সে কথা বিরু ভাই কে বললাম না ।
বারান্দায় পা রাখতেই ব্যস্ত হয়ে আঁখি এগিয়ে এলো।
–এ কী দাদা ? তোমাদের গ্রাম দেখা শেষ ?
–তোর বান্ধবীর মনে হয় পছন্দ নয় আমাদের গ্রাম। আড় চোখে তাকালো বিরু ভাই।
–আরে নাহ! সন্ধ্যা হয়ে গেল তাই চলে এলাম ।
পরের দিনই ঢাকার পথে পাড়ি দিলাম। জানতাম না এই গ্রামে নিজের জীবনের একটা পটপরিবর্তন হবে।

[ চলবে ]