ধর্মীয় কৌতুক বা হাসি উদ্রেককারী ঘটনা
-মাহফুজ
[গেল বছরের ১৬ই নভেম্বরে ব্লগে কিছু কৌতুক উপস্থাপন করে নাস্তিকের ধর্মকথা পাঠককে হাসিয়েছেন চরমভাবে। কয়েক মাস অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও মনের ভেতর থেকে কৌতুকগুলো একেবারে মুছে যায় নি। সে সময় আল মুর্শেদ এমন কিছু কৌতুক বলেছিলেন যেগুলো ‘অশ্লীল, কুরুচীপূর্ণ আর সার্বিকভাবে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে নারীজাতির অবমাননা বিষয়ক হয়েছে’ বলে আকাশ মালিক, ফরিদ আহমেদের ছিল আপত্তি; শেষ পর্যন্ত মুক্তমনা এডমিন বলতে বাধ্য হয়েছিলেন- “এখন থেকে ব্লগে সরাসরি প্রকাশিত হবে না, মডারেটরের স্ক্রিনিং-এর মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হবে।” কেউ কেউ আনন্দ পেলেও বেশির ভাগই আপত্তি উঠেছিল। কারণ মুক্তমনা সস্তা পর্ণগ্রাফীর অন্তর্জাল নয়। আমি মুক্তমনায় এসে যে সুন্দর পরিবেশ পাচ্ছিলাম তা ক্ষূন্ন হয়েছিল সেদিন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, আমি যখন মুক্তমনায় ঢুকি তখন আমার সাথে ছিল আমারই ছোট ভাই ও দুই বোন। আমি সাধারণত সেগুলো জোরে জোরে পড়ি আর ভাই-বোনেরা শ্রবণ করে। ঐদিন আমি জোরে জোরে পড়তে গিয়ে আমার মুখ আটকে যায়। আমার মুখের শব্দের গতি থমকে দাঁড়ায়, আর এগুতে পারিনি; লজ্জা পাচ্ছিলাম ভীষণ। মন্তব্যের বিষয়গুলির প্রতি কর্তৃপক্ষ নজর দেয়াতে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।
আমি এখন কিছু কৌতুক এখানে তুলে ধরছি যেগুলো পেয়েছিলাম তাবলীগী ভাইদের কাছ থেকে, সেই ১৯৮৩ সালে। তাবলিগে সময় দেয়াকালীন অবস্থায়। এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে বড় মামার আহ্বানে কাকরাইল মসজিদে গেলাম দ্বীনের বিষয়ে কিছু শিখতে। এক চিল্লা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটা কারণে থাকতে পারলাম না। একই প্লেটে একসঙ্গে বসে খাওয়াটা আমার ধাতে কুলাচ্ছিলো না। আমাদের যিনি আমীর ছিলেন, তিনি একজন ডাক্তার, মামার পরিচিত। মামা তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট, ফজলে রাব্বী ছাত্রাবাসে থাকতেন। সেই মামা এখনও কঠিন তাবলীগী মানুষ। আর আমি তাবলীগ ছেড়ে দিয়ে হয়েছি- মুক্তমনা পথের পথিক। যাক সেসব অন্য কথা। এখন আমি ৬ টি কৌতুক তুলে ধরছি- আশা করি এই কৌতুকগুলি পাঠকদের নির্মল আনন্দ দিবে]

(১) মুরীদের স্বপ্ন।
পীরের এক মুরিদ স্বপ্ন দেখে তার তা’বির (স্বপ্নের অর্থ বা ফলাফল) জানার জন্য পীরের কাছে এলো। বলল-” হুজুর, রাত্রিতে একটা স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু ইবনে সিরিনের খোয়াবনামা বইয়ের মধ্যে স্বপ্নটির কোনো অর্থ পেলাম না। আপনি যদি স্বপ্নের অর্থ বলে না দেন তাহলে খুব মানসিক কষ্টের মধ্যে থাকবো।”
পীর সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন- “স্বপ্নটা কি?”
মুরিদ বলল- “হুজুর, স্বপ্নে দেখলাম, আপনার একটা হাত মধুর পাত্রে ডুবানো আছে আর আমার হাত পায়খানা ভর্তি এক পাত্রে ডুবানো আছে।”
এতটুকু বলতে না বলতেই পীরের মধ্যে আনন্দের ভাব ফুটে উঠলো। মুরিদকে বাধা দিয়ে বলল- “আমি বুজুর্গ, আল্লাহর ওলী, আমার হাত তো মধুর পাত্রে থাকবেই। আর তুই হচ্ছিস-পাপী গোনাহগার, তোর হাত তো নাপাক বস্তুর মধ্যে থাকবেই। এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম, তাই না?”
মুরীদ বলল- “হুজুর, আমার স্বপ্নটির পুরাটা তো শুনলেন না। এরপর কি হয়েছে সেটা শুনেন।”
পীর সাহেব বলল, ” হ্যা বল্, এরপর কি হলো?”
মুরিদ বলল, “এরপর দেখি- আপনার হাতের আঙ্গুল আমি চাটছি আর আপনি আমার আঙ্গুলগুলো চাটছেন।”

(২) দাড়ি ও দাঁত।
এক গ্রামে এক তাবলিগ জামাতের দল এলো। আসরের নামাজ বাদ তারা মহল্লায় ঘুরে ঘুরে বাদ মাগরিব মসজিদে বয়ান হবে তার দাওয়াত দিতে লাগলো। যাকে সামনে পাই তাকেই ধরে মসজিদে যেতে বলছে। সামনে এক লোককে পেলো। সে ছিল নাস্তিক, মানে লোকটি আল্লাহ খোদা মানে না। নাম ছিল আব্দুর রহিম। এই রহিমের মুখে কোন দাড়ি ছিল না।
তাবলিগের আমীর নাম জানার পর বলল- “কি সুন্দর ইসলামী নাম আপনার, অথচ দাড়ি রাখেন নি কেন? দাড়ি রাখা তো সুন্নত। মুসলমানদের জন্য এটা স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। সুন্নতের বুকে ছুড়ি চালানো কি উচিত?”
রহিম বলল- “দাড়ি রাখা জরুরী নয়। এটা স্বভাবগত বৈশিষ্ট হতে পারে না। কারণ, মানুষ যখন জন্ম নেয় তখন তার কোন দাড়ি থাকে না। অতএব এটা প্রকৃত বিরুদ্ধ কাজ।”
আমির সাহেব বললেন- “মানুষ যখন জন্ম নেয়, তখন তো তার দাঁতও থাকে না। দাঁত গজানোর পর কি দাঁতগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে?”
(৩) ঈসা আল্লাহর একমাত্র পুত্র।
ব্রিটিশ আমল। এক গ্রামে এক খ্রিস্টান মিশনারী এসে লোকদেরকে নাজাতের বাণী শুনিয়ে বলছে- “আল্লাহ তার একমাত্র পুত্র ঈসাকে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন মানুষকে তার গোনাহ থেকে মুক্তি দিতে। আমাদের উচিত আল্লাহর সেই একমাত্র পুত্রের উপর ঈমান আনা।”
তার একথা শুনে গ্রামের এক কৃষক খ্রিস্টান মিশনারীর কাছে জানতে চাইল- “ঈসাই কি আল্লাহর একমাত্র পুত্র নাকি তার আরো পুত্র কন্যা আছে?”
মিশনারী জবাব দিল- “আর নাই, ঐ একটাই।”
কৃষক বলল- “বাস্, এতকালে ব্যাটা তোর আল্লাহর মাত্র একটা ছেলে হলো! আর আমি মাত্র কয়েক বছর হলো বিয়ে করেছি, আমার ছেলে হয়েছে ৫টি আর মেয়ে হয়েছে ৪ টি.. ইনশাল্লাহ সামনে আরো হবে। তাহলে আমার তো তোর আল্লাহর চেয়ে ফলন ভালো।”

(৪) ক্ষির খাওয়া।
এক মহিলা কিছু ক্ষির পাক করেছিল। খাবার পর বেঁচে থাকা ক্ষির উঠানের এক কোণায় একটা বাসনে রেখে দিল। পরে তার ছোট ছেলেকে বলল, যা তো বাবা, ঐ ক্ষিরগুলো নিয়ে মসজিদের মোল্লাজীকে দিয়ে আয়।
ছেলেটি মোল্লাজীকে দিতেই, মোল্লাজী ক্ষির হাতে নিয়েই খেতে শুরু করল।
ছেলেটি বলল-” হুজুর বাসনের ওপাশ থেকে খাবেন না, ও পাশে কুকুর খেয়েছে।”
একথা শুনে মোল্লা রেগে হাতের বাসনটি জোরে ছুড়ে ফেলে দিল। বাসনটি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। ছেলেটি ভয়ে কাপতে লাগলো।
মোল্লা জিজ্ঞেস করল- “কাঁদছিস কেন?”
ছেলেটি বলল- “বাসনটি ভেঙ্গে ফেললেন, মা আমাকে মারবে।”
মোল্লা বলল- কুকুরে খাওয়া বাসন ভেঙে গেছে তো তাতে মা মারবে কেন?
ছেলেটি বলল, ওটা আমার ছোট ভাইয়ের গু ফেলার বাসন।
(৫) মোহাম্মদ বিড়াল।
পাঁচ বছরের এক ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা বারান্দায় বসে বিড়াল নিয়ে খেলা করছিল। ঐদিন ঐ বাড়িতে ইমাম সাহেবের খাবার পালা। ইমাম সাহেব বাড়ির মধ্যে ঢুকেই তার নজরে পড়ে বাচ্চাটিকে। বাচ্চাটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে- ও সোনাবাবু তোমার নাম কি? ছেলেটি আধো আধো বোলে বলল, আমার নাম রহিম। ইমাম সাহেব বললেন, বলো মোহাম্মদ রহিম। বাচ্চাটি বলল- আমার নাম মোহাম্মদ রহিম। ইমাম সাহেব বললেন- হ্যা ঠিক হয়েছে। তোমার আব্বুর নাম কি? জবাব দিল- মোহাম্মদ কুদ্দুস মিয়া। এবার ইমাম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন- তোমার হাতে ওটা কি? বাচ্চাটির জবাব- মোহাম্মদ বিড়াল।
(৬) এ প্লাস বি হোল স্কয়ার।
‘সব সমস্যার সমাধান, দিতে পারে আল কোরান’- শ্লোগানে মুখরিত আমাদের গ্রাম। শ্লোগান ছাড়াও দেয়ালে দেয়ালে লেখা থাকে। এমন কি মসজিদের দেয়ালেও হামলা চালিয়েছে জামাতীরা। আমাদের তাবলীগ জামাতের এক সাথী ভাই (সেও ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে এসেছে) তাবলিগের আমির সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন- সব সমস্যার সমাধান কি সত্যিই আল কোরানে পাওয়া যাবে? আমিরের জবাব- নিশ্চয়ই। সাথী ভাইয়ের এবারের প্রশ্ন- এ প্লাস বি হোল স্কয়ার সমান কী হবে, এটা কোন সুরার কোন আয়াতে পাওয়া যাবে?
(৫নং কৌতুকটি কে কবে বানিয়েছিল জানি না, তবে তাবলিগ জামাত ছাড়াও অন্যদের মুখেও শুনেছি। এই কৌতুকটি পত্রিকার বদৌলতে বিখ্যাত হয়ে গেছে। আমি এই কৌতুকটি কতজনকে যে বলেছি ও শুনেছি তার হিসাব নেই। কিন্তু কৌতুকটি নিয়ে কেউ কখনও আপত্তি তুলে নি। এতকাল ধরে তো মানুষেরা স্রেফ আনন্দ পেয়েছে। হঠাৎ করে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলো কেন, এর কারণ জানি না। তবে একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পারি সেটা হচ্ছে- এখন কৌতুকটি বললে তো বাঁশডলা দেবে। তাই ভয়ে ভয়ে আছি!)

আজ এ পর্যন্তই থাক, শেষ করার আগে হুমায়ুন আজাদ স্যারের প্রবচনগুচ্ছের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি-

কিছু বিশেষণ ও বিশেষ্য পরস্পর সম্পর্কিত; বিশেষ্যটি এলে বিশেষণ আসে, বিশেষণ এলে বিশেষ্য আসে। তারপর এক সময় একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়, দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। যেমন: ভণ্ড বললেই পীর আসে, আবার পীর বলতেই ভণ্ড আসে। এখন আর ‘ভণ্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ভণ্ড পীর’ বোঝায়।

ভালো মন্তব্য পেলে এগিয়ে যাবো নাস্তিকের ধর্মকথা ভাইয়ের অদৃশ্য হাত ধরে। সকলকে ধন্যবাদ।