ইদানিং ধর্ম নিয়ে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদেরকে ইউরোপের মধ্য যুগের কথা মনে করিয়ে দেয় যাকে আমরা অন্ধকার যুগও বলে থাকি। সেই অন্ধকার যুগে ইউরোপে খৃষ্টান দের ধর্ম গুরু ভ্যটিকানের পোপ ছিলেন সর্বে সর্বা, তার কথাই ছিল আইন, আর গন মানুষের সমাজে তার প্রতিনিধি স্বরূপ পাদ্রী ও ধর্ম যাজকদের কথাই ছিল চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করতে পারত না। কেউ তা করার সাহস দেখালে তার গর্দান যেত, না হয় জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারা হতো। এর উদাহরন ভুরি ভুরি। খৃষ্টীয় ধর্ম তখন ইউরোপে এমন জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল যে, জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা সব শিকেয় উঠেছিল। তখন বলা হতো- যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা বাইবেলে লেখা আছে তাই বাইবেল ছাড়া অন্য কোন কিছু পড়ার কোন দরকার নেই। ইউরোপ তাই তলিয়ে গেছিল গহীন অন্ধকারে। অবশেষে রেনেসা আন্দোলনের ফলে ইউরোপ রক্ষা পায় সে অন্ধকার যুগের জগদ্দল পাথর থেকে আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে। এর পর পরই শুরু হয় ইউরোপের অগ্রযাত্রা। যে জগদ্দল পাথর ইউরোপ ৬০০ বছর আগে ত্যাগ করে নতুন ভাবে শুরু করে আজকের আধুনিক সভ্যতার পত্তন ঘটাল হঠাৎ করে মুসলিম বিশ্ব এখন সম্পুর্ন বিপরীত দিকে যাত্রা কেন শুরু করল এটা বিশেষ ভাবে চিন্তার বিষয়। কেন তারা সব কিছু ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মের মধ্যে সব কিছুর সমাধান খোজার চেষ্টা করছে তা বিশেষ কৌতুহলদ্দীপক। কিন্তু সব কিছুর আগে দেখতে হবে যে ইসলাম ধর্মের মধ্যে তারা নিজেদের শর্তহীনভাবে সপে দিয়ে এমন কি মাঝে মাঝে জীবনকে উৎসর্গ পর্যন্ত করছে সেই ইসলাম ধর্মের মূল কিতাব কুরআন টা আসলে কি জিনিস।সেটা সত্যি সত্যি কোন ঐশী কিতাব কিনা মানে তা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লার কাছ থেকে সরাসরি এসেছে কিনা। নবী মোহাম্মদ নিজেকে আল্লার প্রেরিত পুরুষ হিসাবে দাবী করছেন ,আল্লাহ তাকে সত্যি সত্যি প্রেরন করেছিলেন কিনা। প্রথমেই আমরা কুরআন কে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে পারি।

উদার দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে কুরআন কে খুব মনযোগ দিয়ে পড়লে বহু সংখ্যক স্ববিরোধী ও বিজ্ঞানের সাথে সংঘাতপূর্ন অনেক বক্তব্য পাওয়া যায় যা নিম্নে বর্ননা করা হলোঃ

ইদানীং কিছু মুসলমান ব্যক্তি ( বর্তমানে জাকির নায়েক, হারুন ইয়াহিয়া প্রমুখ তাদের মধ্যে খুবই অগ্রগন্য) কোরানের আয়াতে আয়াতে বিজ্ঞানের যাবতীয় তত্ত্ব ও সূত্র খুজে পাচ্ছেন। অতীতে বা বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যা কিছু বহু কসরত করে আবিষ্কার করেছেন তারা কোরান নামক গ্রন্থে খুজে পেয়ে নিজেরা যেমন পুলকিত হচ্ছেন তেমনি তারা সাধারন মুসলমানদেরকেও পুলকিত করার চেষ্টা করছেন। তাই তারা দাবী তুলছেন কোরান হলো বিজ্ঞানময় কিতাব আর মোহাম্মদ হলো মহাবিজ্ঞানী, মানে সবার সেরা। এখন দেখা যাক, কোরান কতখানি বিজ্ঞানময়।

পৃথিবী ও মহাবিশ্ব গঠন সম্পর্কিত বিষয়ঃ

১। কতদিনে আল্লাহ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছিলেন? ৬ দিনে ? নাকি ৮ দিনে?

নি:সন্দেহ, তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ , যিনি আসমান ও জমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করিয়াছেন, অনন্তর সিংহাসনে সমাসীন হইয়াছেন, তিনিই দিনকে রাত্রির দ্বারা আচ্ছাদিত করেন, যাহা উহার পিছনে দৌড়াইয়া চলে এবং তিনিই চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রসমূহকে তাহার নির্দেশাধীন করিয়াছেন। সূরা-৭: আ’রাফ, আয়াত:৫৪

তোমাদের প্রতিপালক সেই আল্লাহ তিনি আকাশ ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিবসে, তৎপর তিনি অধিষ্ঠিত হন আরশের উপর। সূরা-১০: ইউনুস, আয়াত:৩

তিনিই সর্বশক্তিমান, যিনি সৃজন করিয়াছেন আসমান ও জমীনকে ছয় দিবসে আর তিনি সিংহাসনে আসীন ছিলেন যা ছিল পানির উপরে। সূরা-১১: হূদ, আয়াত: ৭

উপরের তিনটি আয়াত ই সু-স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে যে, আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমীন কে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তখন তার সিংহাসনে বসেছিলেন যা ছিল পানির উপরে। তো পানি ছিল কোথায় ? আসমানে নাকি জমিনে ? তখনও তো তিনি আসমান জমিন সৃষ্টিই করেন নি , তাহলে ? আজগুবি কথা বার্তার একটা সীমা আছে। কোরান তো দেখি তাও লঙ্ঘন করেছে।

তুমি বল- তোমরা কি সত্যই তাহাকে অমান্য করিতেছ, যিনি দুই দিবসে পৃথিবী সৃজন করিয়াছেন এবং তোমরা তাহার সমকক্ষসমূহ নির্ধারন করিতেছ? ইনিই বিশ্বজগতের প্রতিপালক। এবং তিনিই উহাতে উহার উপর পর্বতসমূহ স্থাপন করিয়াছেন এবং তিনি উহাতে আধিক্য প্রদান করিয়াছেন ও তিনি চারি দিবসে উহাতে উৎপন্ন সমূহের নির্ধারন করিয়া দিয়াছেন। সকল প্রার্থীর জন্য সমতূল্য করিয়াছেন। পুনরায় তিনি উহাকে ও পৃথিবীকে বলিলেন তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এস, উহারা উভয়ে বলিল-আমরা স্বেচ্ছায় উপস্থিত হইয়াছি। অতঃপর তিনি দুই দিবসে সপ্ত আকাশ সৃজন করিলেন এবং তিনি প্রত্যেক আকাশে উহার আদেশ প্রেরন করিলেন এবং নিম্নের আকাশকে আমি প্রদীপসমূহ দ্বারা সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত করিয়াছি। সূরা-৪১:হা-মীম সাজ্বদা, আয়াত: ৯-১২

উপরের সূরাটিতে খুব স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট ভাবে দেখা যায়, দুই দিবসে পৃথিবী সৃজন, চারি দিবসে উহার উপর নানা বস্তু সকল এবং অবশেষে আরও দুই দিবসে সপ্ত আকাশ সৃজন করলেন, অর্থাৎ (২+৪+২) বা ৮ দিনে আল্লাহ পৃথিবী ও আকাশসমূহ সৃষ্টি করলেন।

এখন প্রশ্ন হলো- কোনটা সত্য? ৬ দিন নাকি ৮ দিন? আল্লাহ নিশ্চয়ই একই বিষয়ে দুই রকম কথা বলবেন না। একদিন ইসলামিক টেলিভিশনে এ বিষয়ে এক যুবক প্রশ্ন করেছিল জাকির নায়েক নামক এক ব্যক্তিকে যিনি কিনা ইদানিং বিজ্ঞানের সব তত্ত্ব ও সূত্র কোরানে খুজে পাচ্ছেন। দেখা গেল জাকির নায়েক ইনিয়ে বিনিয়ে নানারকম কথা বলে গোজামিল ধরনের একটা উত্তর দিয়ে বিষয়টা চাপা দিলেন। গোজামিল যে জায়গাতে দিলেন তা হলো- চারি দিবসে উহাতে উৎপন্নসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন- এ বক্তব্যের মধ্যেই আগের দুই দিন অর্থাৎ দুই দিবসে পৃথিবী সৃজন করার সময়কে ধরে নিতে হবে।তার মানে আগের দুই দিন কে আলাদা ভাবে ধরা যাবে না। ধরা যাবে না তার কারন সেটা বলছেন স্বয়ং জাকির নায়েক।তো একদল মোটিভেটেড শ্রোতার সামনে দাড়িয়ে এধরনের গোজামিল দিয়ে সহজেই পার পাওয়া যায়, কারন দেখা গেল এত বড় একটা গোজামিল দেয়ার পরেও সেই যুবকটি বা শ্রোতাদের অন্য কেউ এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্নই করল না। এখন যে কোন নিরপেক্ষ পাঠক যদি একটু মনটা খোলা রেখে উপরোক্ত আয়াত গুলো পড়েন- তিনি কি অর্থ করবেন এর? লক্ষ্যনীয় যে, আয়াত গুলো অতীব সহজ সরল ভাষায় লেখা, অতি সাধারন শিক্ষিত লোকও কিন্তু এর অর্থ অতি সহজেই বুঝতে পারবেন। ইনিয়ে বিনিয়ে প্যাচানো কোন কিছু লেখা নেই বরং ইদানিং কালের এক ধরনের তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদরাই বড় বেশী প্যাচানো শুরু করেছেন।

২। আল্লাহ কি আগে সৃষ্টি করেছিলেন? পৃথিবী নাকি আকাশ মন্ডল ?

তোমাদের জন্য তিনি ভূ-মন্ডলের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর নভমন্ডলের যাবতীয় বস্তু সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর নভোমন্ডলের প্রতি দৃষ্টি দিয়া ইহাকে সাত স্তরে বিভক্ত করিয়াছেন, তিনিই সকল বস্তু সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। সূরা-২:বাক্কারাহ, আয়াত:২৯

উপরোক্ত আয়াত পড়লে সহজে বোঝা যায় আল্লাহ প্রথমে ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন ও পরে নভোমন্ডল মানে সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও পূর্বে উল্লেখিত সূরা-৪১:হা-মীম সাজ্বদা, আয়াত: ৯-১২ থেকেও বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ আগে পৃথিবী ও পরে আকাশ সমূহ সৃষ্টি করেছেন।

ওহে ! সৃষ্টির দিক দিয়া তোমরাই কি অধিক শক্ত , না কি তাহার তৈয়ারী আসমান? উহার ছাদকে উচ্চ করিয়াছেন এবং উহাকে নিখুত করিয়াছেন। উহার রাতকে আধার ও দিনকে প্রকাশ্য বানাইয়াছেন। অতঃপর ভূমিকে বিছাইয়াছেন। সূরা-৭৯, আয়াত:২৭-৩০

উপরোক্ত আয়াত পড়ে জানা যাচ্ছে আল্লাহ আগে আকাশকে তৈয়ারী করেছেন ও পরে ভূমি অর্থাৎ পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়া কি অন্য কোন অর্থ হতে পারে এ সূরার? অবশ্য আপনি অন্য অর্থ করতে পারেন যদি আপনি ধান্ধাবাজ হন।তো যাই হোক, আল্লাহ একবার বলছেন তিনি আকাশ মন্ডলীকে প্রথমে ও পৃথিবীকে পরে সৃষ্টি করেছেন অন্য একবার বলছেন তিনি প্রথমে ভূমি অর্থাৎ পৃথিবীকে আগে সৃষ্টি করেছেন ও আসমান বা আকাশকে সৃষ্টি করেছেন।কোনটা সত্য? আল্লাহ কি এভাবে একই বিষয়ে দুই কথা বলতে পারেন ?মনে হয় , এখানেও ইসলামী চিন্তাবিদরা এর অন্য অর্থ খুজে পাবেন। হয়ত বলবেন- এমন কিছু সূরা আছে যার অর্থ কেউ বুঝতে পারে না। তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে- যা মানুষ বুঝতে পারবে না তা কোরানে মানুষদের জন্য বলার দরকার কি? কিন্তু একথাও টিকবে না কারন কুরানে আল্লাহ নিজেই আবার বলছেন-কুরান খুব সহজ ও সরল ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে যাতে সবাই বুঝতে পারে। অর্থাৎ কোরানে তেমন কিছুই নেই যা মানুষ বুঝতে পারবে না। তাহলে?

সমস্যা সেখানেই শেষ নয়। কোরান বলছে জমীন তথা পৃথিবী আগে সৃষ্টি হয়েছিল তারপর সৃষ্টি হয়েছে আকাশমন্ডলী। সেখানে আধুনিক বিজ্ঞান কি বলছে?আধুনিক বিজ্ঞানের নানাবিধ গবেষনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা নির্দেশ করছে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল আজ থেকে কমপক্ষে পনের শ’ কোটি বছর আগে। আর তখন পৃথিবী তো দুরের কথা খোদ আমাদের সৌরজগতেরই কোন অস্তিত্ব ছিল না। পৃথিবীর বয়স বড়জোর পাচশ’ কোটি বছর। অর্থাৎ বিশ্ব জগত সৃষ্টিরও প্রায় এক হাজার কোটি বছর পর। আর সেখানে আল্লার প্রেরিত আসমানী কিতাবে বলা হচ্ছে পৃথিবী আগে সৃষ্টি হয়েছিল এর পর সৃষ্টি হয়েছিল আকাশমন্ডলী তথা মহাবিশ্বের বাকীসব। সুতরাং প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক কোরান কি সত্যি সত্যি আল্লাহর বানী নাকি মোহাম্মদের নিজের বানী?

৩। পৃথিবী কি চ্যাপ্টা কোন সমতলীয় ক্ষেত্র নাকি? তারপর আকাশমন্ডলী বা পৃথিবী কি কথা বলতে পারে? আকাশ কি কঠিন পদার্থ দিয়ে গঠিত ছাদ ?

কোরানে বার বার পৃথিবী যে সমতল একথাই বলা হয়েছে। নানা উপমা আর রূপক ব্যবহার করেই তা বলা হয়েছে। যেমন-

আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন। সূরা-২: বাক্কারাহ, আয়াত: ২২

এখানে ভূমি বলতে পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে এবং তা বিছানার মত, বিছানা বলা বাহুল্য সমতল। এছাড়া আকাশকে একটা কঠিন ছাদ রূপে বর্ননা করা হয়েছে। দুটো বিষয়ই যে স্রেফ রূপক বা উপমা হিসাবে বলা হয়নি তার প্রমান পাওয়া যাবে পরবর্তী সূরা গুলোতে কারন সেসব সূরার বানী দিয়ে উপরোক্ত দুটি বিষয়কে বার বার সমর্থন করা হয়েছে।

তিনিই ভূমন্ডলকে বিস্তুৃত করেছেন এবং এতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। সূরা-১৩: রা’দ, আয়াত: ৩

ভূমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন যার সোজা অর্থ পৃথিবীকে সমতল বলা হচ্ছে।

আল্লাহ তিনিই যিনি আসমানগুলিকে বিনা খুটিতে উচ্চে দন্ডায়মান রাখিয়াছেন তাহা তোমরা দেখিতেছ, তৎপর তিনিই স্থির হইলেন আরশের উপর, গতিশীল করিয়াছেন সূর্য ও চন্দ্রকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ পথে ক্রমাগত চালিত হয় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত,—। সূরা-১৩:রা’দ, আয়াত:২

আসমান বা আকাশ যে একটা কঠিন ছাদ তা বোঝাতে এখানে বিনা খুটিতে উচ্চে দন্ডায়মান রাখিয়াছেন দ্বারা সমর্থন করা হয়েছে। দালানের ছাদ তো খুটি ছাড়া উপরে থাকতে পারে না , তাই বিনা খুটি এর উপমা দিয়ে আকাশ যে একটা কঠিন ছাদ এবং তা যে খুটি ছাড়া উপরে স্থাপন করেছেন তা খুব পরিস্কার ভাবেই বোঝানো হয়েছে কোরানে।শুধু তাই নয়, যেহেতু তিনি খুটি ছাড়া এ ছাদ স্থাপন করেছেন তাই তা তার এক অসীম কুদরত।

ওহে ! সৃষ্টির দিক দিয়া তোমরাই কি অধিক শক্ত , না কি তাহার তৈয়ারী আসমান? সূরা-৭৯, আয়াত:২৭

আকাশ যে খুব কঠিন ও শক্ত ভাবে সৃষ্টি করেছেন তারই বর্ননা আল্লাহ দিচ্ছেন। এত বেশী শক্তভাবে তৈরী করেছেন বলেই তো তা ভেঙ্গে মানুষের মাথার ওপর পড়ে না। তিনি পরম দয়ালু বলেই না আকাশকে অত শক্তভাবে তৈরী করেছেন আর আমরা হুট হাট মাথার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে পটল তোলার হাত থেকে বেচে গেছি। মনে হয় সে থেকেই প্রবাব বাক্য চালু হয়েছে- মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া।

সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ পথে ক্রমাগত চালিত হয়- এর মধ্যে কোন কোন ইসলামী মহাবিজ্ঞানীরা মহাবিস্ময়তা আবিস্কার করেছেন। যেমন- দিনের বেলায় আমরা খালি চোখেই দেখি সূর্য সকালে পূর্ব দিকে উদিত হয় , বিকালে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। একই ভাবে রাতের বেলায় চাদকেও ঠিক তাই করতে দেখা যায়। এটা জানার জন্য আমাদের কোরান বা অন্য কোন ঐশী কিতাবের দ্বারস্থ হওয়ার কোন দরকার নাই। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই আদিম মানুষেরা তা স্বচক্ষে দেখত ও জানত। বরং কোরান আমাদেরকে সেই কথাই বোঝাতে চাচ্ছে যে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ও চাদ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুরে চলেছে।অর্থাৎ কোরান পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারনার কথাই বলেছে। যে ধারনার কথা সেই চোদ্দ শ বছর আগে আরব তথা সারা বিশ্বে প্রচলিত ছিল। অথচ আজকের দিনে প্রাইমারী স্কুলের একটা বাচ্চা ছেলেও জানে যে, সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে না, বরং সূর্যকেই কেন্দ্র করে শুধু পৃথিবী নয়, পৃথিবী ছাড়াও আরও আটটি গ্রহ নিয়মিত ঘুরে চলেছে। কিন্তু তাহলে বিস্ময়কর সেই জিনিসটা কি যা ইসলামী মহাবিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন? তা হলো- অতি সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকিষ্কার করেছেন যে, বস্তুতঃ সূর্যও কিন্তু স্থির নয়। সূর্য হলো ছায়াপথ নামক গ্যালাক্সির একটা তারকা যা গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার আলোকবর্ষ দুরে অবস্থিত। তো অন্যান্য কোটি কোটি তারকার মত আমাদের সূর্যও ছায়াপথের কেন্দ্র বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, একবার ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় বিশ কোটি বছর। ইসলামী মহাবিজ্ঞানীদের মহাবিস্ময়কর আবিষ্কার হলো-তারা বলতে চাচ্ছেন যে, উপরোক্ত সূরায় সূর্যের যে চলার কথা বলা হয়েছে তার মাধ্যমে ছায়াপথকে কেন্দ্র করে সূর্যের ঘোরার কথা বলা হয়েছে।?বেশ কয়টি ওয়েব সাইটেও দেখলাম বিষয়টি নিয়ে খুব আকর্ষনীয় বর্ননা দেয়া হয়েছে বেশ কিছু চিত্র সহকারে।আর বলা বাহুল্য তা অত্যন্ত বিস্ময়কর কারন সেই ১৪০০ বছর আগে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানত না।
কিন্তু বিষয়টা যে মোটেই তা নয় তা বোঝা যাবে নিম্নের আয়াত থেকেÑ

অবশেষে তিনি সূর্যের অস্তাচল স্থলে পৌছলেন, তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখলেন। সূরা-১৮:কাহফ, আয়াত:৮৬
ইহার পর জুলকারনাইন অন্য একটি জোগাড়যন্ত্রের পশ্চাতে লাগিল। এ পর্যন্ত যে, চলিতে চলিতে যখন সূর্যোদয় স্থলে উপনীত হইল সূর্যকে এরূপ বোধ হইল যেন কতক লোকের প্রতি উদিত হইয়াছে যাদের জন্য আমি সূর্যের দিকে কোনও আড়াল রাখি নাই। সূরা-১৮:কাহফ, আয়াত:৮৯-৯০

উপরের আয়াতগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে সূর্য সব সময় একটা নির্দিষ্ট স্থানে অস্ত যায় যাকে কোরানে অস্তাচল স্থল বলা হচ্ছে এবং একটা নির্দিষ্ট স্থানে উদিত হয় যাকে সূর্যোদয় স্থল বলা হচ্ছে। বস্তুতঃ পৃথিবী একটা সমতল ক্ষেত্র হলেই শুধুমাত্র তা সম্ভব। তাহলেই সূর্যের একটি অস্ত স্থল ও একটি উদয় স্থল থাকবে যা কোরানের সূরাতে খুব স্পষ্ট ভাবেই বর্ননা করা হচ্ছে। পৃথিবী যদি গোলাকার হয় আর তা যদি নিজের কক্ষপথের ওপর ২৪ ঘন্টায় একবার ঘুরে আসে , সূর্য যদি তার নিজ জায়গায় স্থির থাকে , তাহলে পৃথিবীর কোথাও কোন নির্দিষ্ট সূর্যোদয় স্থল বা অস্ত স্থল থাকবে না। পৃথিবীর কোন এক জায়গায় সূর্য যদি অস্ত যেতে থাকে তো ঠিক তার বিপরীত পৃষ্ঠে সূর্য উদিত হতে থাকবে। তার মানে পৃথিবীতে প্রতি মুহুর্তেই কোথাও না কোথাও সূর্য উদিত হচ্ছে ও ঠিক তার বিপরীত পৃষ্ঠে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। তাই পূর্বোক্ত সূর্যের যে চলাচল করার কথা বলা হচ্ছে তা হলো পৃথিবী নামক সমতল একটি ক্ষেত্রের যে স্থানে সূর্য উদিত হয়, সেখান থেকে সারা দিন পরিভ্রমন শেষে অস্ত স্থলে যাওয়ার ঘটনা। কোরানে বর্নিত সূর্যের চলাচল তাই বলা বাহুল্য কোন ক্রমেই ছায়াপথকে কেন্দ্র করে ঘোরার ঘটনা নয়। এখানে আরও লক্ষনীয় যে, সূর্য ও চন্দ্রকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ পথে ক্রমাগত চালিত হয় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এ বক্তব্য দিয়ে খুব পরিষ্কার ভাবে প্রকাশ করছে যে সূর্য ও চন্দ্র তারা যে নিজ নিজ পথে চালিত হয় তা কিন্তু হয় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত, সর্বক্ষন নয়, অথচ আমরা জানি পৃথিবী সারাক্ষনই ঘুরে মরছে যার কারনে পৃথিবীতে দিন রাত হয়, চন্দ্রেরও একই অবস্থা বিরামহীনভাবে ঘুরেই মরছে বিশ্রামের কোন অবকাশ তার নেই। অর্থাৎ সূর্য (যদিও চলাচল করে না, সাদা চোখে যে চলাচল আমরা দেখি তা ভ্রমাত্মক) ও চন্দ্র যে সব সময় চলার উপরে থাকে তাকে অস্বীকার করা হচ্ছে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই তারা চলাচল করে ও তারপর তারা কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়- এটাই বরং বোঝানো হচ্ছে।বিশ্রাম নেয়ার পর আবার চলা শুরু করে। সূর্য যে আসলেই মোহাম্মদের ধারনা অনুযায়ী বিশ্রাম নেয় তার সুন্দর বর্ননা আছে নিু হাদিসেঃ

আবু দার থেকে বর্নিতঃ আল্লার রসুল একদিন সূর্যাস্তের সময় আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কি জান অস্ত যাওয়ার পর সূর্য কোথায় যায় ? আমি উত্তর দিলাম- আল্লাহ আর তার রসুল ভাল জানেন। তখন আল্লাহর রসুল বললেন- এটা চলতে থাকে যতক্ষন না আল্লাহর সিংহাসনের নীচে পৌছে। সেখানে সে সিজদা দেয় আর আল্লাহর কাছে পূনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়। যতক্ষন অনুমতি না দেয়া হয় ততক্ষন সে সেজদা দিতেই থাকে। পরে তাকে যেখানে সে উদিত হয়েছিল সেখানে ফিরে গিয়ে পূনরায় উদিত হওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়। বুখারী শরিফ, খন্ড-৪. বই-৫৪, হাদিস নং- ৪২১

তাহলে সূর্য সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রসুলের জ্ঞানের বহরটা এবার ভালমত বুঝা গেল। সূর্য সারাদিন ভ্রমন শেষে ক্লান্ত হয়ে আল্লাহর সিংহাসনের নীচে হাজির হয়। তার মানে আল্লাহর সিংহাসন পৃথিবী থেকে খুব দুরে নয় কারন যেহেতু সূর্যকে আমরা দেখতে পারি বেশ বড় আকারে, পৃথিবী থেকে তার দুরত্ব মাত্র নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল, সুতরাং ঠিক সেই দুরত্বে আল্লাহর সিংহাসন। তাহলে অদুর ভবিষ্যতে মানুষ রকেটে চড়ে আল্লাহর সকাশে গিয়ে তাদের নানারকম আব্দার অভিযোগ তার কাছে জানাতে পারবে। এ থেকে আল্লাহর সিংহাসনের আকার সম্পর্কেও একটা ধারনা পাওয়া গেল । সূর্যের আকার যেহেতু পৃথিবীর চেয়ে তের লক্ষ গুন বেশী বড়, সেহেতু আল্লাহর সিংহাসনের আকারও প্রায় সেই রকমই হবে। হয়ত সামান্য কম বেশী হতে পারে।

কোরান ও হাদিসে আল্লার এসব বানী পড়ে মনে হয়- সূর্য ও চাদের চলাচলের ব্যাপারে আল্লার( নাকি মোহাম্মদের ?) কোন জ্ঞানই ছিল না।কোরান উপরোক্ত সূরার বর্ননা মোতাবেক বলছে যে সূর্য স্থির নয় ও তা উদয় স্থলে উদিত হয়ে অস্ত স্থলের দিকে চলতে থাকে যা আজকের দিনে নিতান্তই হাস্যকর মনে হবে কারন আজকের দিনে একটা প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাও জানে সূর্য মোটেও চলাচল করে না , এক জায়গাতে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে আর পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।তার চেয়ে বড় বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- কোরানের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে সমতল পৃথিবীর সুন্দর বর্ননা একবার দুইবার নয়, বার বার বর্ননা করছেন। সে কারনে পৃথিবীর বর্ননা করতে গিয়ে তিনি বার বার বিছানা, বিস্তৃত, শয্যা ইত্যাদি শব্দ রূপক হিসাবে ব্যবহার করেছেন, ভুল করে একটা বারের জন্যও বলেন নি পৃথিবী হলো কমলালেবু বা আপেলের মত অথবা নিদেন পক্ষে গোলাকার। অথচ পৃথিবীর বর্ননায় সেটাই কিন্তু খুব জরুরী ছিল।বলা হবেই বা কি করে, সেই ১৪০০ বছর আগে তো কেউ সত্যিকার ভাবেই জানত না যে, পৃথিবী গোল, তখন তো মানুষ পৃথিবীকে সমতল হিসাবেই জানত। দুঃখের বিষয় হলো- আমাদের নবী মোহাম্মদও আল্লার কাছ থেকে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন যদিও বার বার তিনি একটি সমতল পৃথিবী সম্পর্কে অনেক সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন বিভিন্ন সূরাতে। তা ছাড়া কোরানে বার বার সূর্য আর চাদের চলাচলের কথা বলা হয়েছে যা না বললেও চলত কারন সেই কাফের আরবরাও তা জানত আর তা জানার জন্য আল্লাহর বানী দরকার নেই। ভুল করে হলেও কোরানে একবার বলতে পারত যে পৃথিবী ঘোরে, তাহলেই আমরা যা বোঝার বুঝে নিতাম। বলা হয়নি তার কারনও কিন্তু খুব সোজা। তার কারন হলো- সেই চোদ্দ শ’ বছর আগে তো কেউ জানত না যে পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে বিরামহীনভাবে ঘুরে মরছে। সুচতুর ইসলামী চিন্তুাবিদরা কিন্তু বলেন যে, কোরানে পৃথিবী যে স্থির বা ঘোরে না একথাও তো বলা হয়নি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে- কেন বলা হয়নি? বার বার যেখানে সূর্য আর চাদের ঘোরাঘুরির কথা বলা হচ্ছে যা আসলে বলারই কোন দরকার ছিল না কারন আল্লাহর বানী ব্যতিরেকেই সবাই সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই তা দেখত ও জানত, সেখানে পৃথিবীর কথা বলা হবে না কেন? পৃথিবী সম্পর্কে কোরান কেন এত চুপ? অথচ পৃথিবী ঘোরার কথাটি বলাটা খুব জরুরী ছিল। কারন ওটাই সেকালে মানুষ জানত না।আসলে এর কারনও কিন্তু খুব সোজা। তা হলো- নবী মোহাম্মদ কেন, যে কোন আরবও কিন্তু সেকালে সাদা চোখেই দেখতে পেত সূর্য ও চাদের ঘোরা ঘুরি, কেউ তো পৃথিবীর ওপর দাড়িয়ে থেকে পৃথিবীর ঘোরা ঘুরি দেখতে পারে না। মহানবীও তা দেখতে পারেন নি, সেকারনেই কোরানে পৃথিবীর ঘোরাঘুরির কথা বলা নেই।সাদা চোখে চাদ-সূর্যের ঘোরাঘুরি দেখে তা কোরানে বর্ননা করাতে ধূর্ত ইসলামী চিন্তাবিদরা আহ্লাদে গদ গদ, কিন্তু পৃথিবীর ঘোরাঘুরির কথা কেন কোরানে নেই সে বিষয়ে তারা আশ্চর্য রকমভাবে চুপ। একটা সাদা মাটা প্রত্যক্ষ বর্ননা যে কত জটিল আর মহাবিজ্ঞানময় হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরন সাম্প্রতিক কালে তথাকথিত ইসলামী স্কলার নামধারী কিছু ধান্ধাবাজদের ব্যাঙের মত লাফালাফি ।

সূর্য তাহার অবস্থিতি স্থানের জন্য চলিতেছে; ইহা মহাপরাক্রমশালী জ্ঞানীর নিরূপিত। এবং আমি চন্দ্রের জন্য বিরাম স্থান সমূহ নিরূপিত করিয়াছি। এমন কি সে জীর্ন খর্জুর শাখার ন্যায় পরিনত হয়। চন্দ্রকে প্রাপ্ত হওয়া সূর্যের জন্য সমীচিন নহে এবং রাত্রি দিবার অগ্রগামী নহে এবং প্রত্যেকটি কক্ষপথে সন্তরন করিতেছে।সূরা-৩৬:ইয়াসিন, আয়াত:৩৮-৪০

উপরের আয়াতে পরিষ্কার ভাবে বর্ননা করা আছে যে, সূর্য ও চন্দ্র তারা দিন বা রাতে পরিভ্রমন করে একটা বিশ্রাম স্থানে বা স্থান সমূহে উপস্থিৎ হয়। সূর্যের ক্ষেত্রে অবস্থিতি স্থান বুঝাতে এক বচন ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু চন্দ্রের ক্ষেত্রে বিরাম স্থান সমূহ বুঝাতে বহু বচন ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি কিন্তু খুবই অর্থপূর্ন। এর কারন হলো- সূর্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থান থেকেই উদিত হয় এবং নির্দিষ্ট স্থানেই অস্ত যায় যা যে কোন মুসলমান তো বটেই কাফির মুশরিকও দেখতে পায়। অস্ত যাওয়ার স্থান শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট জায়গা হওয়াতে সূর্যের ক্ষেত্রে অবস্থিতি স্থান বা বিরাম স্থানকে এক বচন দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। এর সোজা অর্থ হলো- সূর্য সারা দিন পরিভ্রমন শেষে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ফলে সে অস্ত যাওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট স্থানে সারা রাত বিশ্রাম নেয়। পক্ষান্তরে, চন্দ্রের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন ও জটিল। কারন চাদ সব রাতে একই সময় একই স্থান থেকে আকাশে উদিত হয় না। প্রতি রাতেই তার উদয় স্থানের পরিবর্তন ঘটে। তার মানে চন্দ্র যখন বিশ্রাম নেয়ার জন্য অস্ত যায়, তার অস্ত যাওয়ার অবস্থান প্রতিদিন পাল্টে যায়, অর্থাৎ তার বিশ্রাম স্থান অনেক সংখ্যক। ঠিক সে কারনেই সূর্যের বিরাম স্থান এক বচন ও চন্দ্রের বিরাম স্থান বহু বচনে প্রকাশ করা হয়েছে। আবারও বলা হচ্ছে- সূর্য সারা দিন পরিভ্রমন শেষে বিশ্রাম নেয়। পূর্বে এ সম্পর্কিত নবীর একটি হাদিসও উল্লেখ করা হয়েছে। চন্দ্রও কি রাতের বেলায় ভ্রমন শেষে বিশ্রাম নেয়? কোরান কিন্তু সেরকম কথাই বলছে যা কিনা সর্বজ্ঞানী আল্লার বানী। উপরোক্ত সূরায় আরও বলা হয়েছে- চন্দ্রকে প্রাপ্ত হওয়া সূর্যের জন্য সমীচিন নহে এবং রাত্রি দিবার অগ্রগামী নহে এবং প্রত্যেকটি কক্ষপথে সন্তরন করিতেছে-মনে হতে পারে এ বক্তব্য দিয়ে কোরান মহাবৈজ্ঞানিক কোন বর্ননা দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই কিন্তু বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। দুনিয়ায় এত কিছু থাকতে হঠাৎ সূর্য দ্বারা চন্দ্রকে প্রাপ্ত হওয়ার কথা বলতে গেল কেন? এর কারন হলো-আমরা জানি সূর্য গ্রহনের সময় চাদের ছায়া পৃথিবীর ওপর পড়লে কিছুক্ষনের জন্য সূর্য চাদের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় ও পৃথিবীর কিছু অংশ আবছা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সাদা চোখে বিষয়টাকে এমন মনে হয় যে, সূর্য যেন চাদকে গ্রাস করল বা প্রাপ্ত হলো। তো এই ঘটনা সেই ১৪০০ বছর আগে আরব দেশেও মাঝে মাঝে ঘটত যখন পূর্ন সূর্যগ্রহন হতো, মূর্খ আরবরা এর কোন কারন জানত না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা দেখে তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ত, নানা রকম অমঙ্গলের আশংকা করত।আল্লাহর নবী মোহাম্মদ দুনিয়াতে আসার পর, আরবরা হাফ ছেড়ে বাচল, কারন আল্লাহর নবী নিজে অনেক কিছু জানেন, যা জানেন না তা তিনি আল্লাহর কাছ থেকে জেনে নেন। তারা নবীর কাছে এ ঘটনার কারন জানতে চাইল। তো নবী একটু সময় নিলেন আল্লাহর কাছ থেকে ঘটনাটার কারন জেনে নেয়ার জন্য কারন তিনি নিজে এর কারন জানতেন না। ফলাফল- উপরোক্ত সূরা নাজিল হলো। অর্থাৎ আল্লার কোন অভিপ্রায় নেই যে সূর্য চাদকে গ্রাস করে ফেলবে, এবং এটাই আল্লাহর অলৌকিক ঘটনার এক অন্যতম নিদর্শন। অথচ আল্লাহ কিন্তু ও ধরনের অবান্তর কথা না বলে অতি সরল ভাবেই বলতে পারত যে- সূর্য চাদ থেকে অনেক দুরে অবস্থান করছে, চাদ ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে ফলে চাদের আড়ালে কিছুক্ষন ঢাকা পড়ে যায় সূর্য- এতে ভয়ের কোন কারন নেই। ভনিতা করে বলার কোন দরকারই ছিল না যে- চন্দ্রকে প্রাপ্ত হওয়া সূর্যের জন্য সমীচিন নহে। কিন্তু উপরোক্ত সূরাতে এ কথা বলে আরও একটা স্ববিরোধের জন্ম দিয়েছে। তা হলো- কোরানে বর্ননা মতে পৃথিবী থেকে চাদ ও সূর্য সম দুরত্বে অবস্থিত এবং একই কক্ষপথে অবস্থান করে ঘুরছে, তাই স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে ঘুরতে তারা মাঝে মাঝে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে, কিন্তু আমরা পৃথিবী থেকে সে ধরনের কোন সংঘর্ষ দেখতে পাই না। বরং দেখি সূর্য কিছুক্ষন চাদকে গিলে ফেলে পরে মুক্তি দেয়। কিছুক্ষন পর সূর্য চাদকে ছেড়ে দেয় বা মুক্তি দেয় কারন তা আল্লাহর অভিপ্রায় অনুযায়ী সমীচিন নয়। ঠিক সে বিষয়টাই অত্যন্ত সহজ সরল ভাবে বর্ননা করা হয়েছে ঐশি কিতাব কোরানে।

রাত্রি দিবার অগ্রগামী নহে- কথাটির অর্থও কিন্তু কৌতুহলোদ্দীপক। পৃথিবীকে যদি সমতল মনে করা হয় ও পূর্ব দিকে যদি সূর্য উদিত হয় তাহলেই এ বক্তব্যের একটা গভীর অর্থ প্রকাশ হয়ে পড়ে। উদিত হওয়ার পর সারা দিন সূর্য পরিভ্রমন করে রাতে সে বিশ্রাম নেয় অর্থাৎ প্রথমে দিন ও পরে রাত আসে।কিন্তু পরদিন সকালে তাকে যদি আবার হুট করে পূর্ব দিকে উদিত হতে হয়,তাহলে তাকে আল্লার অশেষ রহমত ছাড়া তার পক্ষে আকাশ পরিভ্রমন না করে আবার পূর্বদিকে গিয়ে উদয় হওয়া সম্ভব নয়। অবস্থিতি স্থান বা নির্দিষ্ট সময় পরিভ্রমনের কথা (কারন দেখা যাচেছ ইদানিং কোরানের অনুবাদকরা তাদের ইচ্ছে মত বা সুবিধা মত অর্থ করে কোরানকে অনুবাদ করছেন, উদ্দেশ্য পরিস্কার-যাতে করে সম্ভাব্য স্ববিরোধিতা এড়ানো যায়, কিন্তু তাতে করেও কোন কাজ হচ্ছে না) খুব স্পষ্ট ভাবে ব’লে কিন্তু সূর্যের জন্য পৃথিবীর নীচ দিয়ে ঘুরে আসার রাস্তাও বন্দ করে দেয়া হয়েছে। সূর্য যদি পৃথিবীর তল দিয়ে ঘুরে আসত তাহলে সূর্যের কোন অবস্থিতি স্থান বা নির্দিষ্ট সময় পরিভ্রমন ব্যাপারটা অর্থহীন হয়ে যায়। তাই কোরানে দিনকে প্রথম ও রাত্রিকে তার পশ্চাদগামী মনে করা হয়েছে। রাত্রি দিবার অগ্রগামী নহে বাক্যটি দিয়ে সে কথাই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? পৃথিবী একটি গোলাকার পিন্ড, তা নিজের ওপর ঘোরে বলেই দিন রাত হয়, তাই কোথাও যখন দিন , তার বিপরীত পাশে তখন রাত, ২৪ ঘন্টায় পৃথিবী তার নিজ একবার পাক খায়, তাই এই ২৪ ঘন্টার প্রতিটি মুহুর্তে কোথাও দিন হলে তার বিপরীত পৃষ্ঠে রাত। পুরো পৃথিবীতে একসাথে কখনো শুধুমাত্র দিন বা রাত হয় না। পৃথিবীর অবস্থাকে দিন আর রাত দিয়ে ভাগ করা যায় না কিছুতেই। সুতরাং রাত কখনই দিনের অনুগামী বা অগ্রগামী নয়, তেমনি দিনও রাতের অনুগামী বা অগ্রগামী নয়।

তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষন করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। সূরা-২০:ত্বোয়াহা, আয়াত:৫৩

যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে তোমাদের জন্য করেছেন পথ যাতে তোমরা গন্তব্য স্থলে পৌছতে পার। সূরা-৪৩:যুখরুফ, আয়াত:১০

আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম। সূরা-৫১:আয-যাজিরাত, আয়াত:৪৮

যে দিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উন্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। সূরা-১৮:কাহফ, আয়াত:৪৭

আর তোমার কাছে পাহাড়গুলি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিতেছে। অতএব তুমি ইহাদিগকে বল যে, আমার প্রভূ ঐগুলিকে ধূলা করিয়া চতুর্দিকে উড়াইয়া দিবেন। এবং ভূমিকে সমতল ময়দান করিয়া ছাড়িবেন। তখন না তো তুমি উহাকে কোথাও বক্রতা দেখিবে আর না উচ্চ-নীচ দেখিবে। সূরা-২০:ত্বা-হা, আয়াত:১০৫-১০৭

এখানে একের পর এক সূরাতে সেই সমতল পৃথিবীর সুন্দর বর্ননা, কারন পৃথিবী এখানে শয্যা, বিছানা ইত্যাদির মত। সমতল পৃথিবীর ব্যপারে কেউ যাতে সন্দেহ পোষন না করতে পারে সেজন্যেই বলছেন- আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম । তাছাড়া এমন এক দিন আসবে যখন আল্লাহ সব পাহাড় পর্বতকে সরিয়ে দিয়ে পৃথিবীকে সত্যিকার একটা সুসম সমতল হিসাবে গড়ে তুলবেন। পাহাড় পর্বত থাকাতেই না পৃথিবী সব জায়গাতে সমতল নয়। তাই তো আল্লাহ একদিন পর্বত সমূহকে পরিচালনা করে বা তাদেরকে ধুলায় পরিনত করে একটা উন্মুক্ত প্রান্তরের মত তৈরী করবেন যাতে যমীন বা পৃথিবী সুষম সমতল ভুমিতে পরিনত হয়।তবে তার চেয়েও অদ্ভুত বিষয় হলো- অন্য অনেক কিছুর সাথে আল্লাহ পৃথিবীতে চলার জন্য পথ-ঘাটও তৈরী করেছেন। গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত না হয় আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন বোঝা গেল, তাই বলে পথ-ঘাট ও ? নবী মোহাম্মদ ভীষণ কল্পনা শক্তির অধিকারী ছিলেন বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই কল্পনাও যে সব সময় খাপে খাপে মিলে যাবে এমন নাও হতে পারে, তারই একটা উজ্জ্বল নমুনা এই আল্লাহর পথ ঘাট সৃষ্টির ব্যপারটা। নবী মোহাম্মদ ইতিহাস আর ভুগোল বিষয়ে যে খুব বেশী জানার সুযোগ পান নি তা তো আমরা সবাই জানি, সম্ভবতঃ একারনেই তিনি কল্পনা করে ফেলেছেন যে আল্লাহ পথ-ঘাটও দুনিয়াতে সৃষ্টি করে রেখে গেছেন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি যে, পৃথিবীতে সেই চোদ্দ শ’ বছর আগে সেসব রাস্তাঘাট ছিল তা মানুষ তৈরী করতে পারে। অবশ্য তিনি যেখানে বসবাস করতেন সে প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে এর কারন বোঝা খুবই সোজা। তা হলো- তার বাসস্থান মক্কা ও মদিনা হলো মরুভুমির মাঝে একটা খুব ছোট যায়গা সেখানে কোন রাস্তা ঘাটই ছিল না অর্থাৎ মরুভুমির মধ্যে কোন রাস্তা ঘাট ছিল না।আরবরা মরুভূমির মধ্য দিয়ে উটের পিঠে চড়ে এদিক ওদিক যেত। তো বানিজ্য উপলক্ষ্যে নবী যুবক বয়সে বেশ কয়বার তিনি সিরিয়ায় ভ্রমন করেছিলেন। সিরিয়া ও অন্যান্য অঞ্চল বলা বাহুল্য মরুভুমির মক্কার চাইতে অনেক বেশী উন্নত ছিল , সেখানে মানুষের চলাচলের জন্য চওড়া রাস্তা ঘাট ছিল। নবী মোহাম্মদ বিশ্বাসই করতে পারেননি যে সে সব রাস্তাঘাট মানুষই তাদের প্রয়োজনে তৈরী করেছিল বা করতে পেরেছিল।

আমি আকাশ মন্ডলীকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি, অথচ তারা আমার আকাশস্থ নির্দেশাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। সূরা-২১: আম্বিয়া, আয়াত:৩২
তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতি লক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে ভূমিসহ তাদের ধ্বসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের ওপর পতিত করব। সূরা-৩৪: আল-সাবা, আয়াত:৯

উপরোক্ত সূরা পড়ার পর কি আর কোন সন্দেহ থাকে যে, আল্লাহ আকাশমন্ডলী (সাত আসমান বা আকাশ) কে কঠিন পদার্থ দিয়ে পৃথিবীর ছাদের মত তৈরী করেছেন? সুরক্ষিত ছাদ বলতে বোঝাচ্ছে যে, উপর থেকে নানা রকম বালা মুছিবত আমাদের মাথার ওপর পড়তে পারে, তা থেকে আদম সন্তানদের রক্ষার জন্য আকাশরূপ যে ছাদ তৈরী করা হয়েছে তা ভীষন সুরক্ষিত যা স্বয়ং আল্লাহ তৈরী করেছেন। আকাশ যে সত্যি সত্যি কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরী তা আরও নিশ্চিতভাবে সমর্থন করতে পরের আয়াতে বলা হয়েছে আকাশের একটা খন্ডকে ফেলে দেয়ার কথা। আকাশ কঠিন পদার্থের তৈরী না হলে কি এক খন্ড আকাশ ফেলে দেয়ার কথা মনে হয় নাকি?

তবে ধূর্ত ইসলামী চিন্তাবিদরা কিন্তু মোটেও এতে হতোদ্যম হন নি। তারা কিন্তু এর একটা মহা অর্থ খুজে বার করে ফেলেছেন। তা হলো- আমাদের বায়ূমন্ডলে প্রায় ১৫ কিমি উপর থেকে ৩০০ কিমি পর্যন্ত ওজোন গ্যাসের একটা পাতলা স্তর আছে যাকে আমরা ওজোন স্তর বলে থাকি। এ স্তর কিন্তু সত্যি সত্যি পৃথিবীর জন্য সুরক্ষিত ছাদ। কারন সূর্যে যে মহা প্রচন্ড পারমানবিক বিস্ফোরন ঘটে চলেছে অবিরাম যে কারনে সূর্য অত উত্তপ্ত ও উজ্জ্বল এবং শুধু তাই নয়, একই সাথে সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমান অত্যন্ত ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি নির্গত হচ্ছে যার একটা অংশ সব সময়ই আমাদের পৃথিবীতে আঘাত করছে। ওজোন স্তর সেই অতি বেগুনি রশ্মিকে শুষে নিয়ে পৃথিবীবাসীকে সেই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করছে। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলতে চেষ্টা করছেন ঠিক এ কথাটিই কোরানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সত্যিই ইসলামি চিন্তাবিদরা মহা চিন্তাবিদ ও তাদের কল্পনা শক্তি ইদানিং নবী মোহাম্মদকেও হার মানায়। অথচ সত্যিই কি কোরানে সুরক্ষিত ছাদ বলতে ওজোন স্তরকে বুঝানো হয়েছে? যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেই যে ওজোন স্তরকে পৃথিবীর সুরক্ষিত ছাদ হিসাবে বলা হয়েছে তাহলে কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদরা আরও বেশী গ্যাড়াকলে পড়ে যাবেন। তা হলো-ঐ ছাদ তাহলে কোরান বর্নিত সর্বনিম্ম আকাশ আর সে আকাশের নিচে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন কোটি কোটি প্রদীপ সদৃশ তারা , সূর্য আর চাদ। তার মানে এসব তারা , সূর্য ও চাদ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে মাত্র তিন শ’ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। এ তো দেখি উন্মাদ লোককেও হার মানায় প্রলাপ বকাতে! মোহাম্মদ যে আসলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মহা মূর্খ ছিলেন তা প্রমান করতে শুধুমাত্র এ আয়াতগুলিই যথেষ্ট। আকাশের কোন খন্ড তাদের ওপর পতিত করব- সূরার এ অংশ পড়লে কি মনে হবে কোরানে সত্যি আল্লাহ ওজোন স্তর জাতীয় কিছু বলেছেন। ওজোন স্তর হলো একটা গ্যাসীয় স্তর তাকে কি খন্ড আকারে কারও ওপর ফেলা যায় নাকি? মহাজ্ঞানী আল্লাহ এত বেকুব নাকি যে তিনি একটি গ্যাসীয় স্তরকে অবিশ্বাসী মানুষদের ওপর ফেলে দিয়ে তাদের শাস্তি দেবেন? নবী মোহাম্মদ আকাশকে একটা কঠিন পদার্থের শক্ত স্তর মনে করেছেন বলেই তা থেকে একটা টুকরা ফেলে দিয়ে শাস্তির কথা বলেছেন। কারন মাথার ওপর গ্যাসীয় কোন পদার্থ নয়, কঠিন কোন বস্তু ফেললেই মানুষ মাথা ফেটে মারা যেতে পারে। আর ঠিক সে ভয়টির কথাই নবী মোহাম্মদ কোরানে বলেছেন। আকাশকে যে নবী কঠিন পদার্থের স্তর মনে করেছেন তা নিম্ম সূরাতেও প্রকাশ পায়:

আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন, অতঃপর তাদের কাছে কোন মোজেযা আনতে পারেন তবে তা নিয়ে আসুন। সূরা-৬:আল আন্আম, আয়াত:৩৫

আকাশ যে সত্যি সত্যি কঠিন পদার্থের তৈরী তা বোঝাতে এখানে আকাশে উঠতে সিড়ির উপমা দেয়া হয়েছে। কারন যে কোন ঘরের ছাদে উঠতে তো সিড়িই ব্যবহার করা হয়। আকাশকে যদি ওজোন স্তরের সুরক্ষিত ছাদ মনে করা হতো- তাহলে কি তাতে সিড়ি বেয়ে ওঠার কথা বলা হতো নাকি ? তখন যেহেতু উড়োজাহাজ বা রকেটের আবিষ্কার হয় নি, তাই তার মাথায় সিড়ি ছাড়া আর কোন কিছুর কথা মনে হয় নি। তবে চিন্তা করে যদি বোরাকের কথা বলতেন যাতে চড়ে তিনি আল্লাহর আরশে গেছিলেন তাহলে কিছুটা হলেও মান ইজ্জত রক্ষা পেত। তিনি বোরাকের কথা বলেন নি কারন মনে হয়, ওটা শুধুমাত্র তার নিজের বাহন অথবা মনে হয় তিনি এ বর্ননা তার মেরাজে যাওয়ার আগেই দিয়ে ফেলেছেন।

আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সাজিয়েছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্য ক্ষেপনাস্ত্র করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্য জলন্ত অগ্নির শাস্তি। সূরা-৬৭:আল-মুলুক, আয়াত:৫

কি অদ্ভুত আর হাস্যকর এই বর্ননা। সর্বনিম্ন আকাশ একারনে বলা হয়েছে কারন যেহেতু আকাশ কঠিন পদার্থ দিয়ে গঠিত তাই সর্বনিম্ন আকাশের ওপর আরও যে ছয়টি আকাশ একটার পর একটা স্তরে স্তরে সজ্জিত আছে তা আমরা দেখতে পারি না। দেখতে না পারার কারন হলো-আকাশ যেহেতু কঠিন পদার্থ দিয়ে গঠিত তাই সর্বনিম্ন আকাশের ওপরে যে আকাশসমূহ আছে সেখানে সর্বনিম্ন আকাশকে ভেদ করে আমাদের দৃষ্টি যায় না।আমরা শুধু দেখতে পারি নিচের আকাশ ও তার নীচে যে সব বস্তু নিচয় ঝুলে আছে তাদেরকে যেমন- চাদ, তারা , সূর্য ইত্যাদি। নিচের আকাশে যে তারকা রাজি রয়েছে তাদেরকে এখানে প্রদীপ বলা হচ্ছে। কিন্তু নবী মোহাম্মদ বুঝতে পারেন নাই যে তারা কখনো ক্ষেপনাস্ত্রের মত ছুটে আসে না। যা আসে তা হলো অতি ক্ষুদ্র উল্কা পিন্ড। রাতের আকাশে আমরা যে জ্বলন্ত তারার মত ছুটে যেতে দেখি তা হলো জ্বলন্ত উল্কা পিন্ড। প্রচন্ড গতিতে তারা মহাকাশে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ যখন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়, বায়ূমন্ডলের সংস্পর্শে এসে তা জ্বলে ওঠে ও তাকে জ্বলন্ত তারার মত মনে হয়। তো কোরানে বলা হচেছ যে ক্ষেপনাস্ত্রগুলো হলো জ্বলন্ত তারা (প্রদীপমালা) ও তাদের কাজ শয়তানদের বিতাড়ন করা। ভাবতে খুব কষ্ট লাগে যে, মহাবিশ্বের বস্তু সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান এত কম ছিল যে, কোনটা তারা আর কোনটা অতি ক্ষুদ্র উল্কা পিন্ড তা তিনি মোটেও বুঝতে পারেন নি। বরং উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ননা করা হচ্ছে যে, তারকারাজি আর উল্কা পিন্ড একই বস্তু। তাও আবার তারা নাকি শয়তানদের বিতাড়ন করার তালে আছে। এ বর্ননা পড়ে হাসব নাকি কাদব তা বোঝা দুঃসাধ্য। পাঠকদের অবগতির জন্য বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি যে- আকাশে আমরা যে তারা দেখি তা শত শত থেকে কোটি কোটি আলোক বষ পর্যর্ন্ত দুরে অবস্থান করছে। খালি চোখে আমরা মাত্র ছয় হাজারের মত তারা দেখতে পারি। অথচ গোটা মহাবিশ্বে আছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন( এক লক্ষ কোটিতে এক ট্রিলিয়ন) তারা। এসব তারার অধিকাংশই আমাদের সূর্যের চাইতেও বড় , কোন কোনটি কোটি কোটি গুন বড়। এছাড়া আছে কোটি কোটি ব্লাকহোল যা আমাদের সূর্যের চাইতে কোটি কোটি গুন বেশী ভরসম্পন্ন। আর সে তুলনায় উল্কা পিন্ড হলো অতি ক্ষুদ্র বস্তু কনা যার ওজন সাধারনত কয়েক গ্রাম থেকে কয়েক টন পর্যন্ত। এ গুলো কোথা থেকে আসল? বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন- মঙ্গল আর শনি গ্রহের মধ্যেকার যে দুরত্ব তাতে তাদের মাঝখানে আর একটি গ্রহ থাকার কথা এবং সম্ভবত ছিলও এক সময়। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে সুদুর অতীতে সে গ্রহটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে(মনে হয় কেয়ামত হয়েছিল?) এবং সেসব টুকরাগুলোকে বলা হয় গ্রহানুপুঞ্জ যারা সব এক সাথে একটি কক্ষপথে অবস্থান করে সূর্যকে প্রদক্ষিন করছে। তবে মাঝে মাঝে তারা তাদের কক্ষ পথ থেকে বিচ্যুৎ হয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথে এসে পড়ে এবং এক সময় আমাদের পৃথিবীর আকর্ষণে পৃথিবীর ওপর তীব্র গতিতে পতিত হতে থাকে। পৃথিবীকে বেষ্টন করে বায়ূমন্ডল থাকায় যখন তারা তীব্র গতিতে ( সেকেন্ডে প্রায় ৪৫ কিমি) বায়ূমন্ডলে ্প্রবেশ করে তখন তারা বাতাসের ঘর্ষনে অতি উত্তপ্ত হয়ে জ্বলে ওঠে এবং প্রায় ছাই হয়ে ভূ পৃষ্ঠে ঝরে পড়ে। মাঝে মাঝে অবশ্য কিছু খন্ড ছাই হওয়ার আগেই পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত হয়। এগুলো সংগ্রহ করে পৃথিবীর অনেক যাদুঘরে তাদের সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। এখন কোরানের বর্ননা মতে এসব অতি ক্ষুদ্র উল্কা পিন্ড আর তারা/নক্ষত্র একই রকম বস্তু এবং তাদেরকে ক্ষেপনাস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয় শয়তানদের হাত থেকে পৃথিবীর আদম সন্তানদের রক্ষা করতে কারন আল্লাহ বড়ই করুনাময় আদম সন্তানদের জন্য। আসলে নবী মোহাম্মদ কল্পনাই করতে পারেন নি যে, আকাশের তারাগুলো শত শত হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দুরে অবস্থিত আর তারা পৃথিবী তো বটেই খোদ সূর্যের(অবশ্য কোরানে সূর্যকে পৃথিবীর চাইতে অনেক ছোট আকারে কল্পনা করা হয়েছে এবং যার কাজ একমাত্র পৃথিবীকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আলো ও তাপ দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়) চাইতেও শত শত বা লক্ষ লক্ষ গুন বড়। বরং তার ধারনা ছিল ওগুলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন ছোট ছোট আলোর প্রদীপ রূপে যার একমাত্র কাজ হলো- আকাশকে আলোকসজ্জিত করা। ঠিক সেকথাই অত্যন্ত সুন্দর ও সরল ভাষায় কোরানে বর্ননা করা হয়েছে। মোহাম্মদ প্রকারান্তরে এখানে আরও একটা সমস্যা তৈরী করেছেন। কোরানে বলা হয়েছে- শয়তান মাত্র একজন যে নাকি আদমকে সৃষ্টির পর আল্লাহর নির্দেশ মতো তাকে সেজদা করে নি। এ সূরাতে দেখি শয়তানকে বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে, তার মানে শয়তান কি বিয়ে শাদি করে বংশবিস্তার করে তামাম দুনিয়া ভরে ফেলেছে নাকি মানুষের মত? একটা মানুষ যতই ধুর্ত আর চালাক হোক না কেন মাঝে মাঝে সে ভূল করবেই। মোহাম্মদও তাই সেরকম বহু ভুল করেছেন তার কোরান বলতে গিয়ে।

পৃথিবী যদি সমতল হয় তাহলে কিন্তু একটা বিরাট সমস্যা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।তা হলো পৃথিবী সেক্ষেত্রে যে কোন সময় এদিক ওদিক ঢলে পড়তে পারে বা কাত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যখন ভূমিকম্প হয়। পৃথিবী তখন থর থর করে কাপতে থাকে , ঘরবাড়ী হেলে দুলে ভেঙ্গে পড়ে যায়।পৃথিবী যদি বেশী কাপা কাপি করে তা হলেই কিন্তু মহা সর্বনাশ। পৃথিবীর ওপর যত জীব জন্তু জিনিস পদার্থ আছে সব কিন্তু গড়িয়ে পড়ে যাবে। দুনিয়া লন্ড ভন্ড হয়ে যাবে। কেয়ামত হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ হুট হাট করে দুনিয়াতে কেয়ামত চান না। তাই তিনি কেয়ামত ঠেকাতে যা করলেন তা হলো-

আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ়ভাবে পর্বতসমূহ স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না পড়ে আর তিনি স্থাপন করেছেন নদ নদী ও পথ যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাতে পার। সূরা-১৬: নাহল, আয়াত:১৫।

এতোক্ষনে পাহাড় পর্বত সৃষ্টির আসল কারন জানা গেল।পাহাড় পর্বত সৃষ্টির এ কারন পড়ে সুস্থ কোন মানুষের আর বুঝতে বাকি থাকে যে কোরানের এ বর্ননা মানুষের নাকি আল্লাহর ? উপরোক্ত সূরা খুব শক্ত ভাবে প্রমান করেছে যে, কোরানে বর্নিত পৃথিবী হলো একটা সমতল ভূমি। টেবিলের ওপর একটি কাগজ রাখলে তা যেমন বাতাসের ধাক্কায় বা অন্য কিছুর ধাক্কায় যে কোন সময় পড়ে যেতে পারে, তাই তা জায়গা মতো রাখতে তার ওপর পেপার ওয়েট রাখা হয়।ঠিক তেমন অবস্থা আমাদের পৃথিবীরও যে কোন সময় হতে পারে বিশেষ করে ভূমিকম্পের সময়, তাই তা থেকে রক্ষা করতে মহান আল্লাহ তালা পৃথিবীতে পাহাড় পর্বত সৃষ্টি করেছেন। এর চাইতে হাস্যকর বক্তব্য আর কি হতে পারে? আচ্ছা, পৃথিবী হেলে দুলে পড়ার ভয় কেন হলো নবী মোহাম্মদের? এর কারনও কিন্তু খুব সোজা। আজকে যেমন ভূমিকম্প হয়, নবীর সময়ও ভূমিকম্প হতো। তাতে বাড়ীঘরের ক্ষতি হতো, ভেঙ্গে পড়ত। ভূমিকম্পের সময় ভূমি কেপে ওঠে এটা তো আমরা সবাই জানি। তো নবীর মনে হলো- এরকম কেপে উঠলে তো বিরাট সমস্যা। ভূমি কেপে উঠে যদি তা বেশী হেলে পড়ে , তাহলে পৃথিবীতে কেয়ামত হয়ে যাবে। তাই তার মনে হলো সেই হেলে দুলে পড়া থেকে আদম সন্তানদের রক্ষা করতেই মহান আল্লাহ পাহাড় পর্বত সৃষ্টি করেছেন। আর আমরা আদম সন্তানরা যখন তখন কেয়ামত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছি। এখানে পাহাড় পর্বত সমতল পৃথিবীর জন্য পেপার ওয়েটের ভূমিকা পালন করেছে। তাই বলছে- আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা ? এবং পর্বতকে পেরেক? সূরা-৭৮: নাবা, আয়াত:৬-৭ অর্থাৎ ভূমি মানে পৃথিবী যেমন একটা সমতল বিছানা আর তাকে ভূমিকম্পের কাপা কাপি থেকে রক্ষা করতে পর্বতকে তার উপর পেরেকের মত পুতে রেখেছেন। কি অদ্ভূত বক্তব্য! মহান আল্লাহ যিনি দ্বীন দুনিয়ার সব কিছু জানেন তার কাছ থেকে কি এ ধরনের বালখিল্য সুলভ বক্তব্য আশা করা যায়? এখানে আবারও রাস্তা ঘাট সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে যা নাকি আল্লাহ তৈরী করে দিয়েছেন। আর কাহাতক ফালতু প্রলাপ সহ্য করা যায় ?

কিন্তু সত্যিকার বিষয় হলো- ভূমিকম্পের মত ঘটনা থেকেই কিন্তু সুদুর অতীতে অর্থাৎ কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আজকে জানি, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে এখনও গরম গলিত পদার্থ প্রচন্ড উত্তপ্ত অবস্থায় আছে। তার ওপর বেষ্টন করে আছে ভূত্বক। একটা তরল বা তরল জাতীয় গোলাকৃতির বস্তুকে যদি কোন কঠিন পদার্থ বেস্টন করে রাখা হয় তাতে কিন্তু এক সময় নানা জায়গাতে ফাটলের সৃষ্টি হবে। ভূ-ত্বকেও কিন্তু ঠিক তাই ঘটেছে। ফলে গোটা পৃথিবীর ভূ ত্বক বেশ কয়েকটি বিরাট খন্ডে বিভক্ত যাদেরকে বলে কন্টিনেন্টাল প্লেট।যেহেতু প্লেটগুলো তরল জাতীয় বস্তুর ওপর ভাসছে , সেকারনে তা স্থির থাকবে না বরং চলনশীল হবে। টেকটোনিক প্লেটের ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই। টেকটোনিক প্লেটগুলো চলতে চলতে যখন একটা অন্যটার সাথে ধাক্কা খায় তখনই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। ধাক্কা ধাক্কির কারনে সংলগ্ন স্থানে ভূ-পৃষ্ঠ উপরে উঠে যায়, এর ফলে সৃষ্টি হয় পাহাড় পর্বত। সুতরাং ভূমিকম্প থেকে পৃথিবী বাসিকে রক্ষা করতে পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয় নি বরং ভূমিকম্প থেকে পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক এ ঘটনাটিকেই জোকার নায়েক ধরেছেন খুব শক্তভাবে। তিনি দাবী করা শুরু করেছেন পাহাড় পর্বত সৃষ্টি হয়েছে কোরানের বর্ননা মত পৃথিবীকে কাপাকাপির হাত থেকে রক্ষা করতে। দুনিয়াতে পাহাড় পর্বত কম নেই , তাই বলে ভূমিকম্প হওয়া কি বন্দ আছে ? খুব খারাপ লাগে কিছু তথাকথিত শিক্ষিত লোক স্রেফ কিছু অর্থহীন. বিভ্রান্তিকর ও প্রলাপ বাক্যকে বিজ্ঞানের সাথে জুড়ে দিয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমানদেরকে আরও বেশী কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে তুলছে যা মুসলমানদের উন্নয়নের জন্য স্থায়ী প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। এই সমস্ত তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ বা পন্ডিত লোকরা মুসলমানদের জন্য যে কি ভয়াবহ ক্ষতির কারন হচ্ছে তা তারা এখনই বুঝতে পারছে না , বুঝবে অদুর ভবিষ্যতে যখন প্রত্যেকটি মুসলিম রাষ্ট্র দরিদ্র হতে হতে স্রেফ ভিক্ষুকের জাতিতে পরিনত হবে তখন। এখনই কিছু আরব দেশ ছাড়া বাকী সব মুসলিম রাষ্ট্রই দরিদ্র বা ভিখারী।আরব দেশগুলোতে তেলের খনি না থাকলে এখনই বোঝা যেত মুসলমানদের পরিনতি। মুসলমানরা যদি এখনই সচেতন না হয় তাহলে তাদের শেষ পরিনতি দেখার জন্য আমাদেরকে আরব দেশের তেল খনি গুলো নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আর একটা বিষয় বিশেষ লক্ষ্যনীয়।তা হলো কোরানে বার বার ভূমি বা জমিন এই শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও কদাচিৎ যে পৃথিবী বা ভূমন্ডল শব্দ দেখা যায় তা আসলে আধুনিক কালের অনুবাদকের কারসাজি। মূল আরবী কোরান যখন রচিত হয়েছিল তখন সেটাতে সব সময়ই ভূমি বা জমিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । সেই সময়কার আরবী ভাষায় গোলাকার পৃথিবীর কোন শব্দ থাকার কথা নয় কারন তখন তো পৃথিবী যে একটি গোলাকার বস্তু তাই জানা ছিল না।আরবী ভাষা নিয়ে একটু গবেষণা করলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যাইহোক, বার বার ভূমি বা জমিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার কারনও কিন্তু সুস্পষ্ট। তা হলো-কোরানের পৃথিবী তো গোলাকার নয়।কোরানের পৃথিবী হলো স্রেফ একটা সমতল বিরাট জায়গা। যা বার বার বিভিন্ন সূরাতে বর্ননা করা হয়েছে। এধারনা এসেছে তৎকালীন প্রচলিত পৃথিবী সম্পর্কিত ধারনা থেকে। সে সময়ে পৃথিবী যে গোলাকার একটি বস্তু তা কেউ জানত না, জানত পৃথিবী একটা সমতলীয় ক্ষেত্র যা আবার গোটা বিশ্বের কেন্দ্র। সুতরাং এরকম একটা সমতল জায়গাকে ভূমন্ডল বা পৃথিবী বলা যায় না সঙ্গত কারনেই। তাহলে আধুনিক কোরান অনুবাদকেরা হঠাৎ করে ভূমন্ডল বা পৃথিবী বলা শুরু করল কেন? এর কারন হলো-বার বার ভূমি বা জমিন শব্দ কোরানে থাকাতে সুচতুর অনুবাদকেরা বুঝতে পেরেছেন যে তা গোলাকার পৃথিবীর বিপরীতে যায়। ঠিক সেকারনেই তারা হঠাৎ করে পৃথিবী বা ভূমন্ডল শব্দ ব্যবহার করা শুরু করেছেন। কিন্তু আসলে আরবী কোরানে এত বেশী ভূমি বা জমিনের আসল আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যে, আধুনিক যুগে এসে খুব বেশী ইচ্ছা করলেও তার বদলে পৃথিবী বা ভূমন্ডল শব্দ ব্যবহার করা যায় নি। তবে নিশ্চিত- আজ থেকে কিছু বছর পর কোরানের যে সব অনুবাদ বেরোবে তাতে কোথাও ভূমি বা জমিন শব্দ আর থাকবে না ,সব জায়গাতে থাকবে পৃথিবী বা ভূমন্ডল।