নারীরাই চেয়েছিল এক সময় পতিব্রত হতে । বহু যৌন সম্পর্ক নারীদের কাছে নিপীড়নের মত
মনে হয়েছিল । অনেকটা বাধ্য হয়ে তার হাত থেকে পরিত্রানের জন্য চেয়েছিল একপতি শয্যা ।
মিলেট [১৯৬৯-১১৬] এঙ্গেলস এর সিধান্তে পেয়েছেন “ এসোরডিটি “ ।
কেননা। নারীরা কাম অপছন্দ করে ।

ইংরেজি সাধারন আইনে স্ত্রীকে রক্ষনাবেক্ষনে থাকতে হলে পালন করতে হয় কতগুলো সাধারন
শর্ত [ কোভেরচার] ।
যে গুলোর কাজ হচ্ছে নারীকে অস্তিত্ত্বহীন করা ।
এ শর্তের উৎস বাইবেলের একটি অনুশাসন ঃ
‘ মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে , এবং তাহারা একাঙ্গ
হইবে “ [ আদি পুস্তক ,২ঃ২৪] ।
শুনতে সুখকর শোনালেও আইনে এর তাৎপর্য হচ্ছে “ ব্যাবহারিক মৃত্যু “

একই কারনে হিন্দু বিধানে বারবার বলা হয়েছে “ ন স্ত্রী স্বাতন্ত্রমর্হতি” [ মনু সংহিতা ঃ ৯ঃ৩] ।

ইসলামি শাস্ত্রে নারী ও কাম সম্পর্কে ধারনার পরিচয় দিয়েছেন “ ফাতিমা মেরনিসসি “ ।
তাঁর বোরখা পেরিয়ে (১৯৭৫) গ্রন্থে । তিনি দেখিয়েছেন ইসলামে কামকে দেখা হয় এক
আদিম শক্তি রুপে , যা শুভ নয় অশুভ নয় । তার শুভাশুভ নির্ভর করে ব্যাবহারের ওপরে ।
ইসলামে মনে করা হয় যে নারী পুরুষের মধ্যে নারীর ই কাম প্রচন্ড , তাইতো দারুন
সামাজিক উত্তেজনার ব্যাপার ।

নারীর এই কামকে বশে না রাখা হয় , তবে তা সৃষ্টি করবে ফিতনা বা সামাজিক
বিশৃ্ংখলা , যা সমাজকে নষ্ট করে দেবে ।
ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদ স্বামীর জন্য অতি সহজ , আর স্ত্রীর জন্য ফাঁসির মতোই ব্যাপার ।
স্ত্রীরা সর্বক্ষন বাস করে “তালাক “ এর মত খড়গের নীচে ।

মুসলমানের চারিটি স্ত্রী রাখার অধিকার ,তাতে যদি কিছু ক্ষুধা মেটে । অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেটে না ।
অত্যান্ত সহজ আর সুবিধাজনক কাজ ইসলামে “তালাক “এর মাধ্যমে ভয় ভীতিতে দমিয়ে
রাখা যায় স্ত্রীকে । আরবে বিশেষঃত এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বিভিন্য ভাবে
ভোগ করে স্ত্রীদেরকে ।

স্ত্রীদের তালাক দেবার সহজাত অধিকার নাই বললেই চলে । কেননা , বিবাহের কাবিনে
যে অধিকার আছে । স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিলে দেন মোহর টুকু পায়না ।
বাংলাদেশে বহু বিবাহ ও তালাক রীতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে “ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ (১৯৬১) গৃহীত হবার পর । তবু ও নারী আজো শরীয়ার শিকার ।

সভ্যতার সূচনায় একপত্নী একপতি বিয়ে রীতি হয়ে ওঠে । অর্থাৎ সু-নিশ্চিত পিতৃ্ত্বে সন্তান উৎপাদন । বাপই সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী।

বিবাহে দাম্পত্য জীবনের পুরুষের বিশ্বাসভঙ্গের অধিকার থাকে খুব
বেশী । নারীর অধিকার কম ।
গ্রীকদের মধ্যে এ অবস্থার কঠোর রুপ দেখা যায় বেশী । সেখানে পুরানো দেবীদের প্রতিষ্ঠা ।
তা থেকে বোঝা যায় নারিদের অবস্থান । নারীদের অবস্থার পতন ঘটে বীর যুগে ।
দেখা যায় পুরুষরা বিয়ের বাইরেও যৌণ সম্পর্ক রাখছে । নারীরা বাধ্য হচ্ছে সতীত্ব প্রথা বা পতিব্রতা হতে ।
এ সমস্ত নানা কারনে দেখা যায় একপতি পত্নী বিবাহ নির্মম ভাবে সত্য কেবল
নারীর জন্য। পুরুষের জন্য না ।

ডেমথেনেস বলেছেন “ চেতনার সুখের জন্য আমাদের আছে গণিকা , ইন্দ্রিয় সুখের জন্য
রক্ষিতা , এবং পুত্র লাভের জন্য স্ত্রী” [ দ্র দ্য বোভোয়ার ১৯৪৯,১১৯]
বিয়েতে নারীর কাম কিছুটা মেটে , তবে নিজের চাইতে সন্তুষ্ট করে পুরুষ্টি কে ।
একটা পন্য রুপে কিনে নেয় পুরুষ নারীটির দেহ । ব্যাবহার করে নিজের সুবিধা মত ।
ঘর গেরস্থালীর কাজ ,দেহ দান , সন্তান ধারন ,প্রসব , প্রতিপালন ইত্যাদি ।

একটা গাছকে শেকড়শুদ্ধ তুলে এনে বসানো হয় অন্য পরিবারে ।
নারীকে ছিঁড়ে ফেলতে হয় অতীতের সম্পর্ক । মুসলমান সমাজে তো বিবাহের কথার
সাথে “তালাক” এর কথা ও মনে আসে। পশ্চিমের নারীরা এতটা অসহায় না ।
বিবাহ বিচ্ছেদ তাদের জন্যে বিপর্যয় নয় । তারা বহু আগেই সুর্যদয়ের মতো নিজের জীবন
নিজের মতো গঠনের সুবিধা ভোগ করতে পারছে ।

বিয়ের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক থাকে খুব ই কম ।
নারী বিয়েতে বসে তার মৌলিক চাহিদার বেশির ভাগ জুড়ে থাকে সামাজিক আর ধর্মীয়
কারন । দেখা যায় পুরুষ বিয়ে না করলেও সমাজে তাকে নিগৃহিত হতে হয়না । যত টুকু হয় নারী । নারী মানেই মেরুদন্ডহীন প্রানী । পুরুষের উপর নির্ভরশীল ।

হিন্দু ধর্মে দেখা গেছে কুমারী মেয়ে বিবাহ না হলে গাছের সাথে বিয়ে দেয়া হয় ।
মঁতেন বলেছেন “ আমরা একাধারে চাই স্বাস্থাবতী , তীব্র গোলগাল , এবং সতী ,
অর্থাত গরম ঠান্ডা দুই । [ দ্র দ বোভোয়ার ১৯৪৯-৪৫৯] ।

“কোন পুরুষ স্ত্রীকে শয্যায় আহবান করলে সে যদি
অস্বীকার করে এবং প্রভাতকাল পর্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি যাপন করে তাহলে
ফেরেশ্তাতা ঐ স্ত্রীকে অবিশম্পাদ দিতে থাকে ( বুখারি শরীফ হাদিস নং -৪৮১৪) ।

এই হচ্ছে নারীর পুরুষ দ্বারা রচিত ধর্মীয় গ্রন্থের চরম পরিনতি ।
যেখানে ফেরেশ্তারাও(?) নারীকে অভিশম্পাদ দেয় । নারীর ইচ্ছে অনিচ্ছা , শারিরীক সমস্যা ,
মানসিক কষ্টো থাকতে নেই । যৌন সঙ্গমে যদি অনিচ্ছা প্রকাশ করে কোনো কারনে
তখনো তাকে এ ভাবেই শাসিত হতে হয় ।
এক অত্যাচারি স্বামী স্ত্রীর সাথে শয়ন করতেন না । তার কন্যা সন্তান্দের কেও সন্দেহ
করতেন বিধায় স্ত্রীটির শয়ন কক্ষ ছিল না । কন্যা সন্তানের সাথে শয়ন করতেন ।
রাত দুপুরে স্বামীটি কন্যাদের সামনেই স্ত্রীকে তার কর্তব্য স্বরণ করে দিতেন ।
এবং স্ত্রীটি নিরুপায় হয়ে তার কর্ম সম্পাদন করতে যেতেন ।

ইংরাজি সাধারন আইনে স্ত্রীকে ফেলা হয় , নির্বোধ , ও
বদ্ধ পাগোল এর দলে । যার কোনো বিবেচনা শক্তি নাই । স্বামীকে দেয়া হয় স্ত্রীর শরীরের
সম্পুর্ন মালিকানা । স্বামী ঐ সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবেন যথেচ্ছ ভাবে ।

পশ্চিমে গৃহিনীরা আবিস্কার করে – গৃহ , কাম
সন্তান ,স্বামী আসবাবপত্র তাদের আটকে ফেলেছে । ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে তাদের
ব্যাক্তিত্ব্য স্বকীয়তা ।

বিয়ে ও সংসার জীবনের অনিবার্য একটা তীর্থ । বিশেষঃত বাংলাদেশে । গরীব মেয়েদের
অত্যাচারের লীলাক্ষেত্র । সুখকর বন্দি শিবির উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নারীদের জন্য ।

একটা মেয়ের যতটুকু নিজস্ব প্রতিভা ও নিজের গন্ডির বাইরের গন্ডিতে
প্রস্ফুটিত হবার সুযোগ থাকে , কিন্তু “ বিবাহ “ নামক বন্দী শিবিরে তা বেশিরভাগ ই হয়ে যায় অচিরেই বিলুপ্ত । বিশেষতঃ মুসলিম মেয়েদের ক্ষেত্রে অধিকাংশই দেখা যায়
ছেলেদের ক্ষেত্রে পিতা মাতা যে সুযোগ সুবিধা অবারিত করে দেন । মেয়েদের করা হয়
ততোখানি রুদ্ধ ।
ছেলেবেলা থেকেই তাদের চেষ্টা চালানো হয় কি করে ভালো গৃহিনী হওয়া যায় ।
লেখা পড়ার মূল উদ্দেশ্য এবং নিজকে , গৃহকে কি করে সু-সজ্জিত করা যায় ।
এখনকার শিক্ষিত বধু গৃহকে অলংকৃ্ত করে । স্বা্মীরা গর্বিত হন শিক্ষিত গৃহ বধু
পেলে ।

এমন ই একজন কে জানা যায় , যার জীবনে বহু কিছু হবার সুযোগ ছিল ।
কিন্তু পিতৃ গৃহে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় চত্তর পার হতে পেরেছে । বাদ বাকী প্রতিভা স্বামী গৃহে
যাবার পর নিষিদ্ধ হয়েছে ।
স্বামীর যোগ্যাতা স্ত্রীর চাইতে কম হলেও স্ত্রীকে থাকতে হয় তার অধীনে । দরিদ্র দেশ
গুলোতে স্ত্রীদের অবস্থা আরো শোচনীয় । আর ভয়াবহ ।
স্ত্রী ধর্ষিত হয় স্বামী দ্বারা । কেবল দেহে নয় , প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করা হয় তার আত্মাকে ,
তার নিজস্ব জগতকে । স্ত্রীকে পরোক্ষ ভাবে অভিনয় করতে হয় শয্যায় স্বামীটির সাথে ।
কেননা, স্বামী যদি আবার অন্য কারো প্রতি আসক্ত হন ।
ভয় সর্বদা তাড়িত করে স্ত্রীকে । এ ভাবে চলতে থাকে “বিবাহ “ নামক সুন্দর
ও মধুর জীবন ।
প্রগতিশীল স্ত্রী ভূমিকাটি প্রশংসিত হয় পারিচারিকার ভুমিকায় । দাসীর সাথে স্ত্রীর পার্থক্য
দাসী বেতন ভুক আর স্ত্রী মর্যাদা বিলাসে রক্ষিত হয় ।

তথ্য সূ্ত্র ঃ
১- নারী- হুমায়ুন আজাদ ।
২- রাহুল সংকৃ্ত্যায়ন ।
৩- বারট্রান্ড রাসেল ।
৪- বিভিন্য ধর্মের গ্রন্থ থেকে উধৃতি ।
———————