আমাকে মনে হয় চিনতে পারেন নি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা।

পরিচয়ঃ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের একজন।
পেশাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম!!
শিক্ষা জীবনের সাফল্যঃ টাকার অভাবে বিজ্ঞান বিভাগে না পরতে পারলেও আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীতে দ্বিতীয় ছিলাম। তাছাড়া তৃতীয় সেমিস্টারে আমি রেকর্ড পরিমান নম্বর পেয়েছিলাম।

পরিবারঃ আমার পিতা মহোদয় একজন দিনমজুর। আমার বড় ভাই বাজারে মুদির দোকান চালায়। আমার মা বাড়িতে মুরগি পালেন এবং ডিম বিক্রি করে আমাকে পড়ার জন্য টাকা দিতেন। মজার কথা এত কিছুর পরেওপড়ার খরচ যোগার না হওয়াতে আমি প্রায়ই বাড়িতে গিয়ে দিনমজুরি করতাম। উল্লেক্ষ যে আমার মাতা খুব সম্ভবত গত তিন বছর নিজের চুলের জন্য নারিকেল তেল না কিনে ওই টাকা আমার পড়াশুনার জন্য খরচ করেছেন।

গত ফেব্রুয়ারী মাসের তিন তারিখে ঢাকা বিস্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের কথাও নিশ্চয়ই কারো মনে নাই। কিন্তু আমার মনে আছে। কেন জানেন? কারন সেই রাতে এ এফ রহমান হলের একজন ছাত্র মারা যায় সেই মারামারির কারনে। না না, ভুল বুঝবেন না। ছেলেটা ওই দিন কোনো মারামারি করে নি। আরে, সেতো কোন ও দলই করত না। বেচারা হলের বাইরে হইচই শুনে বারান্দায় এসেছিল ঘটনা বুঝতে। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই কিছু একটার আঘাতে তার মাথার পেছনের অংশ চুরমার হয়ে যায়, এবং পরদিন সকালে তার মৃত্যু ঘটে।
আমি সেই বেচারা আবু বকর।

আমার মৃত্যুর পর আমার দেশের স্বরাস্ট্র মন্ত্রি নাকি বলেছেন, “এটা কোন ব্যাপার ই না, এমন তা ঘটতেই পারে।“
এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমার পরিবারের কোনো খোজ নেয়া হয়নি। তারা অনেক ব্যস্ত তাই এই নিয়ে আমার কোনো কথা নেই।
ছাত্রলীগের এক কর্মী কোন্দলের কারনে মারা যাবার পর থেকে সারা দেশে চিরুনি আভিযান চলছে এবং কমপক্ষে এক হাজার জন গ্রেফতার হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আমার পোস্ট মর্টেম রিপোর্টই ভেরিফাই করা হয় নাই। আমি কোনো দল করতাম না, তাই আমার মৃত্যুর কোনো বিচারের নাম গন্ধ নাই; তাই এ নিয়েও আমার কোনো কথা নাই।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায় যে, নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর পরিবারকে সরকার তহবিল হতে এক লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। তাছারা জনৈক মহিলা সাংসদ ব্যাক্তিগতভাবে তার পরিবারকে একটি গরু দান করেছেন।
আমি রাজনীতি না করে পড়াশুনা করেছি বলেই হয়ত আমার পরিবার দিকে তারা তাকান নাই।
“এটা কোন ব্যাপার ই না, এমন তা ঘটতেই পারে।“

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কিছুক্ষন আগে জানতে পারলাম মৃত্যুর পূর্বে দেয়া আমার দেয়া শেষ পরিক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বরাবরের মত এইবারও আমি প্রথম হয়েছিলাম।