আহমেদ মনসুর একজন ইসলামিক সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তিনি আল-আজহার বিশ্ব-বিদ্যালয়ের সহকারী প্রফেসর হিসেবে ছিলেন। কিন্তু প্রচলিত প্রথার ইসলামের কান্ডারীগণ তার এই সংস্কার বিষয়ক গবেষণাগুলো ভালমনে গ্রহণ করে নি। বরং সুন্নী মতানুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফতোয়া দেয়া হয় এবং একটি কমিটি গঠন (৫/৫/১৯৮৫)করে তাকে ইসলাম বিরোধী, ধর্মত্যাগী হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং তার লেখাগুলোকে কোরান বিরোধী আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে তার লেখাগুলোর বিষয়-বস্তু সুন্নী মতবাদ, যা ইসলাম ও কোরানের পরিপন্হী সে বিষয় নিয়েই বর্ণিত। প্রচলিত ধারার মুসলিম ধর্ম-বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ভাবে তাকে হয়রানী করে এবং কাজ থেকে অব্যহতি নিতে বাধ্য করে। এরপর তিনি বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে তার ইসলাম সংস্কারের বক্তব্য প্রদান করতে থাকেন। কিন্তু শেখ আস-শারাওয়ির ফতোয়া অনুযায়ী সেখানেও বাঁধা আসে এবং তাকে এরেস্ট করা হয়। তিনি এরপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা শুরু করেন, সেই সাথে তার বিরুদ্ধে ধর্মত্যাগীর বিভিন্ন ফতোয়াও চলতে থাকে–তারমধ্যে অন্যতম ছিল শেখ আব্দুল গাফফার আজিজের মৃত্যূ ঘোষনা। এরপর আহমেদ মনসুর এবং ড. ফারাজ ফোঔদা আলাদা স্টেট গঠনের উদ্দেশ্য (যেখানে সকল জনগণ সম-অধিকারী) পলিটিকাল(আল-মাস্তিকবাল পার্টি) পার্টি গঠন করেন। ফতোয়া ঘোষনার কিছু দিন পর ১৯৯২ সালে ড. ফারাজ ফোঔদাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এত বিপদ মাথায় নিয়েও তিনি থেমে থাকেননি। ১৯৯৬ সালের ২রা জানুয়ারী বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি গ্রুপ এবং হিউম্যান রাইটসের সাহায্যে তিনি ইবনে খালদুন সেন্টারে সাপ্তাহিক (মঙ্গলবার) সিম্পোজিয়াম শুরু করেন এবং এটা চলতে থাকে ২০০১ সালে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির সহযোগিতায় আমেরিকায় পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। আমেরিকায় অবস্হানের সময় তিনি The International Quranic Center প্রতিষ্ঠা করেন।

তার বিপক্ষ দল বলতে তিনি আল-আজহারের শেখদেরকেই শুধু বোঝাতেন না, সেই সাথে মিশর, সুদান, আশে-পাশের আরব রেজিম (শাসন-প্রণালী), সৌদি ওয়াহিবীগণ, চরমপন্হী, এবং আল কায়দার সালাফী সন্ত্রাসীগণকে, ও যারা তাদের সমর্থন করে তাদেরকেও বুঝিয়েছেন; এরা মডারেশনের নামে চরমপন্হাকে সমর্থন করে এবং হত্যা এবং সন্ত্রাসকে প্রশয় দেয়। আবার এই দলগুলো পরস্পর বিরোধী; যেমন, সৌদি এবং মুবারক রেজিম আল কায়দা এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের বিপক্ষে। কিন্তু তারা সবাই একটা বিষয়ে সংঘটিত, আর তা হচ্ছে, শুধু মাত্র (হাদিস ত্যাগী) কোরান অনুসরনকারীদের বিরুদ্ধে বিরুপ মনোভাব। কারণ, কোরান অনুসারীরা সুন্নী মতবাদের স্তম্ভে আঘাত হেনেছে এবং সুন্নীরা যে ইসলামের বা কোরানের পরিপন্হী জীবন-যাপন করছে এবং সেই সাথে কয়েক মিলিয়ন ধর্মপ্রাণ মুসলিমকে ধর্মের নামে প্রতারিত করছে, সে বিষয়ে প্রমাণ দিতে পেরেছে। আহমেদ মনসুর আরো মনে করেন যে, যখন-তখন এই ফতোয়া দেবার দুষ্টু শেকড় এই অত্যাচারী রেজিমগুলোই বয়ে বেড়াচ্ছে। যার ফলে তানতাওয়ি ও আয-যোয়াহরি, আয-যারকাওয়ি এবং হুসনে মোবারক, বিন লাদেন এবং সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ এদের কারো মধ্যেই কোন পার্থক্য নেই। এরা সবাই বিভিন্নভাবে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় এবং প্রসার করছে সুন্নী মতবাদের মাধ্যমে। তিনি রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাবানদের বিন লাদেন, আয-যোয়াহরি, আয-যারকাওয়ির চেয়ে খারাপ মনে করেন; কারণ আল কায়দা যা প্রমোট ও প্রচার করে সেই অনুযায়ী কাজ করে। আর এই অত্যাচারী ক্ষমতাবানরা ভন্ড এবং বহু চরিত্রের অধিকারী। তারা তাদের শত্রুকে গোপনে হত্যা করায় কিন্তু সামনে শোক প্রকাশ করে, তাদের ব্যবহার-শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিগণ বিবেকহীন, তারা সবাই মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে কিন্তু অন্যদিকে ইসলামের পরধর্ম বা পরমত সহিন্ষু্তার কথা বলে।

সাম্প্রতিক খবর যে, আল কায়দা আহমেদ মনসুরের মৃত্যূর ফতোয়া দিয়ে ওয়েবসাইটে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। আহমেদ মনসুরের ভাষ্য অনুযায়ী এই সাইটে তারা কিছু আর্টকেলের কথা উল্লেখ করেছে যা তার নিজের লেখা নয়। আহমেদ মনসুরের কিছু কথা ইংরেজিতেই তুলে ধরা হলোঃ
…. Let it be known, and Allah, glory be to Him, knows…and suffice for Him to be a Witness and a Knower, that I wish and hope that I be murdered in the cause of my peaceful mission for reform….At that time, the greatest triumph would have been achieved for me, in this life and the Hereafter.

So come on all you Al-Qaeda rascals. I am in wait for you, with all your weapons and explosives…rest assured…I have nothing in my hands ….except the Book of Allah the Glorious Quran.