দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘যুক্তি’ ম্যাগাজিন(সংখ্যা ৩)-এর রিভিউ এখানে তুলে দেয়া হল। লিংক

‘যুক্তি’ : সময় উপযোগী সাহসী পত্রিকা

অঞ্জন আচার্য
ব্রিটিশ লেখক ম্যাথু আর্নল্ডের একটি কথা দিয়ে শুরু করা যাক_ ‘এক যুগের মুক্তচিন্তা আরেক যুগে কা-জ্ঞান বা সাধারণজ্ঞানে পরিণত হয়।’ আরেক ব্রিটিশ চিন্তক স্যামুয়েল জনসন বলেন_ ‘প্রতিটি যুগেই নতুন নতুন ভুল দেখা যায়, আর দেখা যায় নতুন নতুন সংস্কার।’ ‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেন_ ‘মতকে মত দিয়ে, যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে বাধা দেওয়া চলে, কিন্তু বুদ্ধির বিষয়কে ক্রোধ দিয়ে দ- দেওয়া বর্বরতা।’ যুক্তি বিষয়ে কথাসাহিত্যিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের একটি কথা আছে_ ‘মূঢ় যারা, মূর্খ যারা, অন্ধ যারা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন যারা, তারা চিরকাল যুক্তির অস্ত্রকে ভয় পায়।’ অপরদিকে কথাসাহিত্যিক আবুল বাশারের মতে_ ‘যুক্তির জোরেই মুক্তির আলো। সেই আলো মানুষকেই জ্বালাতে হয়।’ তেমনই একজন মুক্তচেতনায় ঋদ্ধ, প্রগতিশীল যুক্তিবাদী সাহসী মানুষ অনন্ত বিজয় দাশ। তার সম্পাদনায় ‘যুক্তি’ পত্রিকাটি অনন্যসাধারণ এক শাণিত যুক্তি ও মুক্তচেতনার পথে যেন এক নিরলস প্রয়াস। সম্পাদকীয় লেখায় সম্পাদক তার চেতনাগত স্বপ্ন, লক্ষ্য ও দর্শন স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছেন_ “আমরা চাই চিন্তার চর্চা ও প্রকাশের স্বাধীনতা। ঘটাতে চাই মুক্তচিন্তার বিপ্লব; সাংস্কৃতিক বিপ্লব। চাই এই বেনিয়াবাজির সমাজ পরিবর্তন। আমাদের দর্শনে বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদিতা। আমরা মনে করি অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর চিরাচরিত প্রথার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যই মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। আরো মনে করি, এই প্রশ্নহীন, যুক্তিহীন বিশ্বাস আর সংস্কারাবদ্ধ জীবনাচরণ কাটিয়ে ওঠার একমাত্র পথ হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদের প্রসার।” ‘যুক্তি’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় সিলেট থেকে। এর সদ্য প্রকাশিত সংকলনটি (সংখ্যা ৩; জানুয়ারি ২০১০)-তে আছে মুক্তচেতনাভিত্তিক নানা প্রবন্ধ। এবারের সংস্করণটি সাজানো হয়েছে মূলত চার্লস ডারউইন ও তাঁর বিবর্তনবাদকে কেন্দ্র করে। যেমন : দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন ‘শেষ-অধিনায়ক : চার্লস ডারউইন; শহিদুল ইসলাম ‘বিবর্তন তত্ত্বের দর্শন; আসিফ ‘সদূর অতীতে গেলে আমরা একই পূর্বপুরুষ দেখবো; অভিজিৎ রায় ‘বিবর্তনের সহজ পাঠ’ বিরঞ্জন রায় ‘বিবর্তন তত্ত্ব গ্রহণে বাধা কোথায়; বন্যা আহমেদের রচনা ‘আর্ডি-আমাদের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিল; দিগন্ত সরকারের রচনা ‘ডারউইন থেকে ডাবল হেলিক্স’; শিক্ষানবিসের রচনা ‘প্রসঙ্গ বিবর্তন’: জাকির নায়েকের মিথ্যাচার’ ইত্যাকার লেখাগুলো বিবর্তনবাদকে পাঠকের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করেছে। আছে আমেরিকার উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান এবং বংশগতিবিদ্যার অধ্যাপক সন বি. ক্যারল ও ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক প্রবীর ঘোষের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ওপর দুটি সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার। অনূবাদিত হয়েছে চার্লস সুলি্লভান ও ক্যামেরন ম্যাকফেরসন স্মিথের ‘বিবর্তন নিয়ে চারটি ভ্রান্ত ধারণা ও ড্যান বার্কারের ‘ঈশ্বরবাদ খ-ন’ নামে অসাধারণ দুটি প্রবন্ধ। আরও আছে রণজিৎ করের লেখা ‘নারী জাগৃতির প্রান্তিক সমীক্ষায় রোকেয়া ও তসলিমা’ এবং সৈকত চৌধুরী ও অনন্ত বিজয় দাশের ‘মিরাকল ১৯’-এর উনিশ-বিশ!’ নামে চমৎকার দুটি নিবন্ধ। এমন জ্ঞানগর্ভ সংকলনটি পাঠ করে পাঠক মাত্রই তাদের প্রচলিত নানা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি পাবেন। এরকম একটি পত্রিকার জন্য সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশকে তার সাহসী, সময় উপযোগী ও বস্তুনিষ্ঠ সংকলনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছি না।