মানব প্রকৃতির ভ্রান্ত ধারনার ইতিহাস এবং এর প্রকৃত সরূপ -২
ইমরান হাবিব রুমন

পূর্ব প্রকাশের পর ……
শিশুর জন্মের পর তার স্নায়ুতন্ত্রে কেন্দ্রাভিগ যে সব স্নায়ুসূত্র নিউরোন থেকে তথ্য বহন করে নিয়ে যায় তা যথার্থভাবে অন্তরিত থাকে না এবং যথেষ্ট পুরুভাবে তা গঠিত হবার মত সময় পায় না। এর ফলে মস্তিষ্কে যে তথ্য প্রেরিত হয় তা পথেই হারিয়ে যায় অথবা গোলযোগ ঘটার ফলে ত্রুটিপূর্ণ ভাবে পৌঁছে। যেমন, শিশু তার মায়ের মুখ স্পর্শ করবে এমন তথ্য মস্তিষ্ক থেকে যাবার কথা। কিন্তু কেন্দ্রাভিগ স্নায়ুসূত্র অন্তরিত না হওয়ায় শিশুর হাত হয়তো ভুল নির্দেশ লাভ করে মায়ের চোখে হাত লাগিয়ে দিল।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই স্নায়ুতন্ত্র অন্তরিত হতে থাকে। মায়োলিন স্নায়ুসূত্রাবরক এই অপরিবাহী আবরণ সৃষ্টি করে। শিশুর বয়স যতই বাড়তে থাকে তার স্নায়ুসূত্রগুলো নিপুণভাবে অন্তরিত হতে থাকে। এলোমেলো তথ্য প্রেরণ ও আনুষঙ্গিক ব্যতিচার তখন বন্ধ হয়ে যায়। শিশুর স্নায়ুতন্ত্র এমনিভাবে অন্তরিত হবার আগে তার কাছ থেকে এই নিপুণতা আশা করা ঠিক হবে না। শিশু পাঁচ বছর বয়সে আনেক কিছু নিখুত ভাবে করতে পারে, তবে এই স্নায়ুসূত্র অন্তরিত হবার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। স্নায়ুসূত্র মায়োলিন দ্বারা আবৃত হওয়া একটি পূর্ব নির্দেশিত প্রক্রিয়া মাত্র যা জীনের নকশায় আগে থেকেই প্রোগাম করা থাকে। মানব মস্তিষ্কের জন্য যা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও অনন্য তা হল, স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যে যে সংযোগ তা নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে যুক্ত ও বিযুক্ত হবার ভিতর দিয়ে নতুন ভাবে বিন্যস্ত হয়। ফলে অনেক স্নায়ু সংযোগ, অনৈচ্ছিক প্রতিবর্তী ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেখানে সৃষ্টি হয় নতুন স্নায়ুসন্ধি যা ঐচ্ছিক অঙ্গচালনা নিয়ন্ত্রণ করে। অভিজ্ঞতার আলোকে শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের এই বিবর্তন তাকে নতুন স্বাধীনতা দেয় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের। এই পরিবর্তনটাই হচ্ছে ক্রান্তিক ঘটনা যা মানব শিশুকে অন্যান্য প্রাণীদের মতন প্রতিবর্তী ক্রিয়ার জগতে আবদ্ধ না রেখে চিন্তার জগতে উত্তীর্ণ করে। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটার অর্থ হল তার অভিজ্ঞতা স্মৃতি হিসেবে তার মস্তিষ্কে বিধৃত হওয়া। একজন মানব শিশুর যা কিছু আপন বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্ব তা আসলে তার স্মৃতিতে ধারণকৃত তথ্য ও ঘটনামালার অপেক্ষক। নতুন অভিজ্ঞতাকে সঞ্চিত পুরানো অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে গ্রহণ ও বর্জনের ভিত্তিতে নির্বাচিত তথ্যকে সাজাতে থাকে মস্তিষ্ক। এই ক্রম সঞ্চিত ও বিন্যস্ত তথ্যই সৃষ্টি করে তার ব্যক্তিত্ব ও আচরণ। এমনকি কি মানুষ তার মস্তিষ্কে বল্কল বা নিওকর্টেক্সের কল্যাণে অতিক্রম করতে পারে তার পুরানো ম্যামেলীয় মস্তিষ্কের প্রভাব, যেখানে অবস্থান করে আবেগ ও অজানা জিনিসের প্রতি ভীতির মত জৈব বৈশিষ্ট্যগুলো। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত মানব মস্তিষ্কের গঠন ও জৈব বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রধান নিয়ন্ত্রক নয়। জন্মগতভাবেই কেউ স্বাধীনচেতা, কেউ অধীনতা প্রবণ, কেউ সাহসী, কেউ ভীতু, কেউ নেতা, কেউ সাধারণ- এ কথা বলা যাবে না। মানুষের অভিব্যক্তি ঘটে বাইরে থেকে ভিতরে শিক্ষা-অভিজ্ঞতার প্রভাবে, ভিতর থেকে বাইরে নয়। যেমনটি ঘটে অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে, পূর্বনির্ধারিত পথে।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের প্রতিভা সম্পর্কে অনেক কথা প্রচলিত ছিল, যেমন- আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের তুলনায় বড়, মস্তিষ্কে খাঁজ সাধারণের চেয়ে বেশী ইত্যাদি। অথ্যাৎ বংশাণুর ভূমিকাকেই প্রধান করে দেখা হতো। অথচ আমরা জানি, ছোট বেলায় আইনস্টাইনের মধ্যে কোন প্রতিভায় দেখা যায়নি। স্কুল-কলেজে কোন দিনই ফাষ্ট-সেকেন্ড হননি। শিক্ষান্তে দুবছর বেকার থাকা এবং বহু ইন্টারভিউতে বিফল হবার পর কোনক্রমে জুটিয়েছিলেন এক পেটেন্ট অফিসের কেরানির চাকুরি। যদি জন্মগতভাবেই তিনি প্রতিভাধর হতেন তবে তবে তো প্রথম থেকেই তার স্বাক্ষর থাকতো। আইনস্টাইন বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে ‘অলিম্পিয়াড একাডেমি’ নামে বিজ্ঞান ক্লাব। যা আইনস্টাইন, তাঁর বন্ধু মাইকেল গ্রসমান এবং আরও কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা প্রতি সপ্তাহে আলোচনায় বসতেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত বিজ্ঞানের দর্শন। সেসময় যেসব দর্শন চিন্তা ইউরোপের জনমানসে প্রভাব ফেলেছিল সেগুলো নিয়ে চর্চা হতো। লেখকদের রচনা পড়া হতো এবং বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারগুলো নিয়ে দর্শনের আলোকে আলোচনা হতো। এই আলোচনাগুলোতেই আইনস্টাইন দর্শন চিন্তার নানা স্রোতের সাথে অবহিত হন, যা তাকে নিজের অবস্থান সন্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
লেখক তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, “… আগেই উল্লেখ করেছিলাম যে মানুষের স্বভাব বিকাশে বংশাণুর প্রভাবই মুখ্য। এবং কোন কোন বৈশিষ্ট্য শুধু বংশাণুর দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত হয়, পরিবেশের কোন প্রভাব এই বৈশিষ্ট্যে পড়ে না। এর সমর্থন মেলে অভিন্ন যমজ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। উইলিয়াম ক্লার্ক তাঁর ‘অৎব ডব ঐধৎফরিৎবফ’ বইয়ের ১৮-১৯ পৃষ্টায় লিখেছেন যে অভিন্ন যমজেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে লালিত হয়েও এক আশ্চর্যজনক সাদৃশ্য প্রদর্শন করে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ভিন্ন পরিবেশে অভিন্ন যমজদের মধ্যে সাদৃশ্য আনয়নে বংশানুর ভূমিকা যমজ নয় এমন দু’ব্যক্তির মধ্যে সাদৃশ্য আনয়নে অভিন্ন পরিবেশের ভূমিকার চাইতে অনেক বেশী শক্তিশালী। স্টিভেন পিঙ্কার তাঁর উল্লেখিত “ঞযব ইষধহশ ঝষধঃব” বইয়ের ৪৭ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন যে অভিন্ন যমজদের মধ্যে প্রাণদ-, ধর্ম ও অন্যান্য বিতর্কিত সামাজিক বিষয়ে চিন্তাধারার এক অদ্ভুত মিল দেখা যায়। অণ্যদিকে অসদ যমজ, যাদের বংশানু ভিন্ন বা দুই ভাই/বোন যারা অভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে প্রায়ই দিন রাতের মত তফাত পরিলক্ষিত হয়।”
এখানে লেখক বলেছেন যে কোন কোন বৈশিষ্ট্য শুধু বংশাণুর দ্বারায় নিয়ন্ত্রিত হয়, পরিবেশের কোন প্রভাব এই বৈশিষ্ট্যে পড়ে না। কিন্তু কোন্ কোন্ বৈশিষ্ট্য তা উল্লেখ করলে ভাল হত। আবার যমজদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় যে প্রায় একই ধরনের শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অভিজ্ঞতা এমনকি অনেক ক্ষেত্রে খাবার, পোষাক এবং পরিবেশের অনেক কিছুই প্রায় একই ধরনের হবার কারণে স্বভাব বা চিন্তার ক্ষেত্রে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। কিন্তু জন্মের পরপরই যদি যমজদেরকে আলাদা করে একজনকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন সমগ্র বিষয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষত করা হয়। অন্যজনকে যদি আমাদের দেশের এবতাদিয়া মাদ্রাসায় কামিল, ফাজিল ডিগ্রী লাভের পর দুজনকে একত্রিত করলে এই অভিন্ন যমজদের একত্রিত করলে তাদের হাসি বা মুখের গড়ন এক হলেও বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে তাদের চিন্তাধারার কতটুকু মিল পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমেয়।
আবার অপার্থিব, উইলিয়াম ক্লার্ক এবং স্টিভেন পিঙ্কার তাদের লেখায় বারবার ‘অভিন্ন পরিবেশ’ এর কথা বলেছেন। লেখকগণ তাদের আলোচনায় পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা অতি সরলীকৃতভাবে ভাবছেন। এবং এতটায় সরলীকৃত যে লেখক পিঙ্কারের উদ্ধৃতি বললেন যে কানাডীয়রা আমেরিকানদের মত একই ধরণের টিভি শো দেখে কিন্তু কানাডায় অপরাধজনিত হত্যার হার আমেরিকার চেয়ে এক চতুর্থাংশ মাত্র। এবং এর কারণ হিসেবে তিনি বংশাণুর ভূমিকার কথাই বুঝাতে চেয়েছেন। অথচ পরিবেশ বলতে তার মধ্যে অতি সুক্ষ্ম খুঁটিনাটি সমস্ত কিছুকেই (সরহঁঃবংঃ ফবঃধরষং) ধরা হয়। যেমন বাবা মা ভাবেন, তাঁরা তাদের সমস্ত সন্তানকেই সমান ভালবাসেন। বৈজ্ঞানিক বিচারে এই সমানভাবে ভালবাসা অসম্ভব- তত্ত্বগত দিক থেকে অসম্ভব এবং মানুষের সাধ্যের মধ্যেও অসম্ভব। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে বাবা-মা’র একই ব্যবহার করাও সম্ভব নয়। বাবা-মার ছেলে-মেয়েদের প্রতি এবং ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা’র প্রতি মমত্ববোধ দুবার একই রকমভাবে প্রকাশ পেতে পারে না এবং তার প্রতিক্রিয়াও এক হতে পারে না। একই পরিবারের দুই ছেলে যে পরিবেশে বড় হচ্ছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করলে দুই ছেলের বন্ধু-বান্ধব, কাদের সাথে কে মেশে, কে কাদের সঙ্গ দেয় ইত্যাদি বিচার করলে দেখা যাবে দুজনের পরিবেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিরাজ করছে। পরিবেশ ও ব্যক্তির মধ্যে এরকম হাজার হাজার দ্বন্দ্ব আছে। ফলে একই পরিবারের দুই ছেলে মুক্তিযুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আরেকজন রাজাকার হবার ইতিহাসও আমরা জানি। কিন্তু তা কখনোই ‘অভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা বংশাণুর ভিন্নতার জন্য’ নয়। অবশ্যই পরিবেশের ভিন্নতার জন্য।
আবার পিঙ্কারের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক বলেছেন, “… অন্যান্য অনেক ঘটনাও এই সাক্ষরই দেয় যে মানুষের স্বভাব শেখার দ্বারা সৃষ্ট নয়। আমরা দেখি কিভাবে কোন কোন মানুষ ধার্মিক হয়ে যায় ধর্মশিক্ষা বা প্রচারণার অবর্তমানেই। আবার উল্টোটাও দেখা যায়। হঠাৎ করেই ধর্মভীরু বা ধর্মান্ধ ব্যক্তি নাস্তিক বনে যান।”
যারা ইতিহাস এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন তাদের মধ্যে সংশয় থাকার কথা নয় যে, মানব সমাজ বিবর্তনের একটা পর্যায়ে মানুষের মধ্যে ধর্ম চিন্তার উদ্ভব হয়। অপার্থিবের যুক্তি অনুসারে যদি ধর্ম শিক্ষা বা প্রচরণার অবর্তমানে মানুষ ধার্মিক হয়ে যায়, তাহলে সমাজে ধর্ম চিন্তা আসার পূর্বেও কি ধার্মিকদের অবস্থান ছিল!
লেখক পিঙ্কারের বইয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ঘটনাটি হচ্ছে, পুলিতজার পুরষ্কারপ্রাপ্ত এক লেখক তাকে লেখা এক বন্দীর চিঠিগুলো পড়ে চমৎকৃত হোন এবং ঐ বন্দীকে মুক্ত করতে সাহায্য করেন। পরে ঐ বন্দীটি অনেক নামীদামী মহলে আপ্যায়িত হন। অথচ দু সপ্তাহ পরে সে এক রেস্তোরার বেয়ারাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে রেস্তোরার টয়লেট ব্যবহার নিয়ে কথা কাটাকাটির সময়। এই ঘটনায় লেখক স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন যে মানুষের কুস্বভাব পরিবর্তন করা যায় না। যা প্লেটো, অ্যারিষ্টোটলের তৎকালীন আধ্যাত্ববাদী দর্শনকেও হার মানায়।
যদি লেখকের ভাষ্যমতে মানুষের স্বভাব পরিবর্তন না হয় তাহলে মানব মস্তিষ্কে দ্বিতীয় সংকেততন্ত্র অথ্যাৎ পাওয়ার অভ্ ট্রানশ্লেশন কাজ করছে না। মস্তিষ্ক বিকৃতি ছাড়া তা হবার কথা নয়। আর তা যদি হয়ে থাকে (লেখকের ভাষ্যমতে) তবে তা ব্যাপক গবেষণার দাবি রাখে…
আবার অভিজিৎ রায়ের লেখা শুরুই হয়েছে এক পাগলের গল্প দিয়ে। মানসিক রোগী মানে যাদের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের মত ক্রিয়াশীল নয়। তাই তাদের নিয়ে খুব বেশী আলোচনা করারও বোধ হয় প্রয়োজন নেই। যা হোক আমরা যদি ধরেও নিই লেখকের শরীরে ‘বিজ্ঞানী জিন’ থাকার জন্য তিনি মন্দিরের প্রসাদ না খেয়ে বিজ্ঞানী হতে পারলেন। কিন্তু আমাদের দেশে যে ৪০ লক্ষ শিশু স্কুলেই যেতে পারে না (ঝরে পড়া শিশুদের কথা না হয় বাদই দিলাম) তারা তো কখনোই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী হতে পারবে না। অথাৎ এই হতভাগারা ঐ ধরণের জিনের অধিকারী না। কিন্তু তাদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারতাম তাহলে কি হতো! লেখক হয়ত বলবেন তাদের মধ্যে ঐ ধরণের জিন লুকায়িত অবস্থায় ছিল পরিবেশ না পাওয়ায় বিকশিত হতে পারলো না। এই পরিবেশ না পাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ‘নধফ ষঁপশ জিন’ আছে কি না তা হয়তো লেখকেরা বলতে পারবেন। আর যদি না থাকে তাহলে কৃষক পরিবারে এই ধরণের জিন আসবেই বা কোথা থেকে। আদিম মানুষের মধ্যেও এ জিনগুলো ছিল। বা বিবর্তনের ঠিক কোন সময় এই জিন গুলোর তৈরী তাও জানাটা জরুরী। আবার লেখক বলেছেন, ‘ছলেটো বাপরে মতই বদরাগী হয়ছে’ে, কংিবা বলি ময়েে হয়ছেে মার মতই সুন্দরী। চোখগুলো দখেছে কি রকম টানা টানা? এগুলো কন্তিু আমরা এমনি এমনি বলি না। বহুদনিরে অভজ্ঞিতা থকেইে এগুলো বল,ি আর সজেন্যই এই উপমাগুলো আমাদরে সংস্কৃততিে এমনভিাবে মশিে গছে।ে কবেল শারীরকি সৌর্ন্দয নয়, আবগে, অনুরাগ, হংিসাত্মক কংিবা বদরাগী মনোভাব এমনকি ডায়াবটেসি কংিবা হৃদরোগরে ঝুঁকি র্পযন্ত আমরা বংশপরম্পরায় বহন করি জনেটেকি তথ্য হসিবে আমাদরে অজান্তইে।’ লেখক না বুঝেই কতটা সরলীকরণ করে ব্যাখ্যা করলেন। মেয়েটা মার মতো সুন্দরী বা টানা টানা চোখ বা বিভিন্ন রোগ এগুলো যে জিনগত তা সবাই জানে। কিন্তু রাগ, হিংসা! বাবার বদরাগী চরিত্র জন্মের পর থেকে দেখে দেখে বড় হওয়া একজন বদরাগী হতেই পারে। কিন্তু লেখক কি এমন কথা শোনেননি যে, বাবা বদমেজাজী কিন্তু ছেলেটা কত শান্ত!
লেখক উল্লেখ করেছেন, “সইে ধারণাকে উইলসন আরো বস্তিৃত করনে তার পরর্বতী বই ‘ঙহ ঐঁসধহ ঘধঃঁৎব‘(১৯৭৮)-এ। তনিি বলনে আজকে আমরা যাদরে আজ মানুষ নামে অভহিতি কর,ি সইে হোমোস্যাপয়িন্সে প্রজাতটিরি মূল মানসপটরে বর্নিমিান আসলে ঘটছেলিো অনকে আগে – যখন তারা বনে জঙ্গলে শকিার করে জীবন যাপন করত। একটু লক্ষ্য করলইে দখো যাব,ে সইে আদি স্বভাবরে অনকে কছিুই কছিুই এখনো আমরা আমাদরে স্বভাবচরত্রিে বহন করি – যমেন বপিদে পড়লে ভয় পাওয়া, দল বধেে বপিদ মোকাবলো করা, অন্য জাত/িগোত্ররে সাথে যুদ্ধে জড়য়িে পড়া, সবার আগে নজিরে পরবিাররে বা গোত্ররে নরিাপত্তা নয়িে চন্তিতি হওয়া ইত্যাদ।ি” বিপদে পড়লে ভয়ে শরীরে কাটা দেয়া বা ভালো খাবার দেখলে জিভে জল আসার কারণের ব্যাখ্যা আমরা জানি। এটা মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ‘অন্য জাতি বা গোত্রের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া’- সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনায় আমেরিকার উদাহরণটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক। আজ সকলের কাছে স্পষ্ট বুশ প্রশাসন মূলত তেলের জন্য ইরাকে অন্যায় যুদ্ধ করে শিশু-বৃদ্ধসহ লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাহলে দায়টা পুরো জাতির কাধে চাপিয়ে লেখক কি বুশ প্রশাসনকে আড়াল করতে চাচ্ছেন। আর এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে যে খোদ আমেরিকাতেই লক্ষ লক্ষ মানুষ বিরোধিতা করলো! আবার ‘ সবার আগে নিজের পরিবারের বা গোত্রের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়া’- একটু খেয়াল করুন! মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের বিপদের কথা চিন্তা না করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো কোন স্বভাবের টানে। বা পরিবার, জাতি, গোত্রের উর্দ্ধে যে মানুষেরা মানবমুক্তির জন্য লড়াই করছেন তাদের ব্যাখ্যাই বা কি?
তাই জমজের ক্ষেত্রেও ‘একই নামের মেয়েকে বিয়ে করার জিন’ ‘একই নামে সন্তান রাখার জিন’ ‘কমোডে একই ভাবে বসার জিন’ ‘কুকুরের নাম একই রাখার জিন’ ‘একই সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের জিন’- এগুলো আবিস্কার করে অহেতুক সময় নষ্ট না করে কার্য-কারণ সম্পর্ক খুজে বের করাটায় শ্রেয় বলে মনে হয়।
যা হোক লেখকদের আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করা যেত। সময় স্বল্পতার জন্য সম্ভব হচ্ছে বলে দুঃখিত। লেখক একটা গল্প দিয়ে শুরু করেছিলেন, আমি একটা একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি।
‘সূর্য কোথা থেকে প্রতিদিন সকালে উদিত হয় এবং সন্ধ্যায় কোথায় হারিয়ে যায় তা নিয়ে মানুষ ভাবছে কিন্তু কোন সুরাহা করতে পারছে না। অনেকেই তখন এই বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত। হঠাৎ এ সময় আবিষ্কার হলো, সূর্যটা গভীর সমুদ্র বক্ষে প্রতি সন্ধ্যায় ডুবে যায়। টকটকে লাল গরম সূর্য সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় ‘ছ্যাঁ’ (পানিতে গরম কিছু পড়লে যে শব্দ হয়) করে শব্দ হয়। আর শুধু মাত্র জ্ঞানীরাই এই শব্দ শুনতে পায়। প্রতিদিন সমুদ্র উপকুলে প্রচুর মানুষ আসত। সূর্য ডোবার সময় সবাই চুপচাপ কান খাড়া করে রাখত এ শব্দ শোনার জন্য। সূর্য ডোবার পর সমাজ অধিপতিরা গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলত ‘হু, শব্দটা শুনতে পেয়েছি’। আর সাধারণ মানুষেরা শব্দ শুনতে না পেয়ে নিজেদের খুব মূর্খ ও বোকা মনে করত। আবার কিছু মানুষের মধ্যে প্রশ্নও তৈরী হত, আদৌও শব্দ শোনা যায় কি?
গল্পটা স্কুলের বিজ্ঞান স্যারের কাছে শোনা। যা হোক ‘ছ্যাঁ’ শব্দ শোনা জ্ঞান কোন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে না। বিজ্ঞান কোন ধরণের গুরুবাদী চর্চাকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনকি কোন বিজ্ঞানীর কথাকেও গ্রহণ করতে হবে যুক্তির নিরিখে, তিনি জ্ঞানী বলেই অন্ধভাবে নয়। ব্লগের পাঠকদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রতিবছর লঞ্চ ডুবি আর নৌকা ডুবিতে শত শত মানুষ মারা গেলেই প্লাবতার সুত্র ভুল প্রমানিত হয় না। প্লেন দুর্ঘটনায় হাজার মানুষ মারা গেলেই অরৎ উুহধসরপং এর সুত্র ভুল প্রমানিত হয় না। কার্য-কারণ ব্যাখ্যা ছাড়া শুধুই কিছু উদাহরণ দিয়ে সিদ্ধান্তে আসাটাও কোন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়।