যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ফোর্টহুড সেনানিবাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন মেজর নিদাল মালিক হাসান তারই সহকর্মী সৈন্যদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ১২ সৈন্য এবং এক অসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করলেন। আহত করলেন আরও অন্তত তিরিশজনকে। সেই সংবাদ যেমন বিষাদের, তেমনি বিস্ময়েরও বটে। আহত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া মেজর হাসান সেনাবাহিনীর একজন চিকিৎসক, যিনি মূলত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মনোরোগের চিকিৎসা করতেন। তার সহকর্মীদের বরাত দিয়ে এখানকার পত্র-পত্রিকায় যা লেখা হচ্ছে তা হলো, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক ছিলেন এবং পর্যাপ্ত যত্ন নিয়েই সহযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। বিশেষত যুদ্ধে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত সৈন্যদের চিকিৎসার ব্যাপারে তার বিশেষ প্রশিক্ষণও রয়েছে। এ ধরনের একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক-সৈন্য, যখন এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে তার সহকর্মীদের হত্যাযজ্ঞে একক ভূমিকা পালন করেন, তখন বিস্ময়ে-বিষাদে আমরা সবাই বিচলিত বোধকরি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিজ দেশের মাটিতে দেশের সৈন্যদের এই প্রাণ সংহারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সেসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছেন কোনোরকম আঁচ-অনুমাননির্ভর মন্তব্য না করতে। স্বভাবতই ওবামা প্রশাসনের সামনে এমন একটি সময়ে একটি নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হলো যখন প্রশাসন আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে সেখানকার সেনা কমান্ডারের অনুরোধ পর্যালোচনা করে দেখছে। এ ঘটনা যে সেই পর্যালোচনায় একটি প্রভাব ফেলবে না সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
মেজর হাসানের এ হত্যাযজ্ঞের কারণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে যেমন সংবাদ মহলে, তেমনি স্বভাবতই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পেছনে বাহ্যত যে কারণটি উল্লেখ করা হয়েছে সেটি হলো, তিনি সম্ভবত এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন নিজেও এবং দ্রুত সেনাবাহিনী ত্যাগ করার ইচ্ছা ছিল তার। হাসানসহ হতাহত সব সৈন্যই ওই কেন্দ্র থেকে ইরাক ও আফগানিস্তানের দুটি ক্ষেত্রে মোতায়েনের অপেক্ষায় ছিলেন এবং যুদ্ধে অংশ নিতে অনিচ্ছার কারণবশতই নিদাল হাসান এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটালেন। অনেকেই বলেন, প্রায় এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যে একাধিক প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িত রয়েছে এবং যেখানে তার হতাহতের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়, সে ক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে সৈন্যদের মধ্যে আত্মহনন বা এ জাতীয় উষ্মা প্রকাশ বোধকরি বিস্ময়কর কিছু নয়। তবে মেজর হাসানের কর্মকাণ্ডটি একটু ভিন্ন। তিনি আত্মহননের পথে যাননি, সম্ভবত তার গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস তাকে সে কাজটি করতে দেয়নি। তবে সেই একই ধর্মীয় মাপকাঠিতে তিনি অন্য মানুষকে (যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল সৈন্য) হত্যা করতে দ্বিধান্বিত হননি। অতএব মেজর নিদাল মালিক হাসানের এ আচরণের কারণ সম্ভবত অন্যত্র সন্ধান করতে হবে। প্রথমত নিদাল হাসান আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধকে সমর্থন করতেন না বলে কোনো কোনো সূত্র থেকে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত তিনি একজন কট্টর ধর্মানুসারী ছিলেন, যা সম্ভবত তাকে তার নিজ ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে কুণ্ঠিত করেছিল এবং সেই বিবেচনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেসব সৈন্যকে হত্যা করেছেন, যাদের যুদ্ধে যাওয়ার কথা ছিল। নিদাল হাসানের এই বদ্ধ মনোভাব বা মাইন্ডসেটটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে, কেবল তার জন্য নয়; বরং তাদের জন্যও যারা অনুরূপ ধারণা পোষণ করে থাকেন। এ বিষয়টির তাত্তি্বক বিশ্লেষণ দরকার মূলত ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেখার প্রয়োজনের জন্য। প্রথমত এটি মনে রাখা প্রয়োজন, ইরাক-আফগানিস্তান কিংবা অন্যত্র যুদ্ধ করা যৌক্তিক কি-না তা নিয়ে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য থাকতে পারে; কিন্তু এসব যুদ্ধের কোনোটিই যে ধর্মযুদ্ধ নয়, সে কথা বলাবাহুল্য। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবি্লউ বুশ এক সময় ক্রুসেড শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন বটে এবং যে জন্য বিশ্বের অনেক জায়গাতেই সমালোচনার ঝড়ও উঠেছিল; কিন্তু তার ওই শব্দ ব্যবহারটি ছিল নিতান্তই প্রতীকী। যেমন আমরা প্রায়ই বলি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিহাদ যেমন ধর্মযুদ্ধ নয়, বুশ উচ্চারিত ক্রুসেডও তেমনি ধর্মযুদ্ধ নয়, যুদ্ধের গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই বুশ এ শব্দটি অনবধানতাবশত ব্যবহার করেছিলেন, যা স্পর্শকাতর পরিবেশে ভিন্ন ও ভুল ব্যাখ্যা পেয়েছে। অন্যদিকে তালেবান, আল কায়দা কিংবা অন্য জঙ্গি মৌলবাদীরা যে সহিংস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক কিংবা অন্যত্র_ তারা নিজেরা একে জিহাদ বা মুসলমানদের ধর্মযুদ্ধ বলে যতই অপপ্রচার চালাক না কেন, একে ধর্মযুদ্ধ মনে করাটা ঠিক নয়। এসব সহিংস কার্যক্রমে ধর্মকে ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না ধর্ম ব্যবসায়ী একদল লোক। বিভ্রান্ত করছে শান্তিপ্রিয় ধর্মানুরাগী মানুষকে। এই বিভ্রান্তির মূল কারণ হচ্ছে ধর্মকে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও নির্দিষ্ট আচারের বাইরে রাজনীতিতে সম্প্রসারিত করা। ধর্মকে যখন রাজনীতির একটি কথিত আদর্শ হিসেবে দেখা হবে, তখনই ধর্মের সর্বোচ্চ অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। নিদাল হাসানের ক্ষেত্রে এ কথাটি সম্পূর্ণ প্রযোজ্য। নিদাল যতক্ষণ ধর্মকে তার ব্যক্তিক আচরণের অংশ হিসেবে রেখেছিলেন নিয়মিত ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের মধ্যে, ততদিন তিনি ধর্মের সঙ্গে যুদ্ধকে সম্পৃক্ত করেননি; কিন্তু যখনই তিনি যুদ্ধকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভবত দেখার চেষ্টা করেছেন, তখনই তার মনে ভিন্ন ও ভ্রান্ত চিন্তার উদ্রেক ঘটেছে। মনে রাখা প্রয়োজন, স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কারণে তিনি নিশ্চয়ই জানতেন তাকে সেনাজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। হয়তো যুদ্ধটি যদি হতো, চীন কিংবা উত্তর কোরিয়া অথবা কিউবার বিরুদ্ধে তাহলে নিদাল হাসান একজন দেশপ্রেমিক আমেরিকান সৈন্যের মতোই যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন; কিন্তু যুদ্ধের আদর্শিক প্রতিপক্ষ যেহেতু ঘটনাচক্রে তার নিজ ধর্মী, সেহেতু তিনি বিভ্রান্ত হয়ে এই পাশবিক ঘটনাটি ঘটালেন। অথচ যুদ্ধটি যে ধর্মযুদ্ধ নয়, মুসলমানদের বিরুদ্ধেও নয়_ তার প্রধান প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে প্রচুর মুসলিম সৈন্য রয়েছে এবং তারা অন্যান্য দেশের সৈন্যের মতোই নিজ দেশের প্রতি অনুগত থেকেছেন। দ্বিতীয় প্রমাণটি হচ্ছে, এ যুদ্ধে কেবল আমেরিকানরা নয়, পাকিস্তানি সৈন্যরাও তালেবান ও আল কায়দার ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এটিকে ধর্মযুদ্ধ হিসেবে দেখলে পাকিস্তানিদের এই যুদ্ধে বরং প্রতিপক্ষের সঙ্গেই থাকাটা সমীচীন হতো। কিন্তু পাকিস্তান বাহিনীর ভেতরে আল কায়দা ও তালেবানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সত্ত্বেও এখনও পাকিস্তানি সৈন্যরা যাদের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা মূলত আল কায়দা ও তালেবান। অতএব স্বদেশানুগত্যের সঙ্গে স্বধর্মানুগত্যের যে বাহ্যিক দ্বন্দ্ব নিদাল হাসান লক্ষ্য করেন, সেটি রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটানোর এক ভ্রান্ত তত্ত্বের ওপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল। কারণ ইরাক কিংবা আফগান যুদ্ধসহ বিশ্বের যে কোনো যুদ্ধের অন্তর্নিহিত কারণ, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার বিস্তৃতি, এর সঙ্গে এই একুশ শতকে ধর্মের কোনো সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে যারা বিশ্লেষণ করে থাকেন, তারাও রাজনৈতিক বিভ্রান্তি দ্বারা আক্রান্ত। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান অনেকের কাছেই একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক কারণেই সমালোচিত হয়েছে এবং আমরা জানি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাক থেকে পর্যায়ক্রমে সৈন্য প্রত্যাহারের যে প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছেন, তাতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ইরাক অভিযানের যৌক্তিকতা রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মধ্যে সমালোচনার সম্পূর্ণ ঊধর্ে্ব নয়; কিন্তু আফগানিস্তানের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলামী মৌলবাদী তালেবানের শাসনামলে আল কায়দা নেতৃত্বকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে বড় রকমের আক্রমণ চালিয়ে, যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল আল কায়দা এবং তাদের মদদদানকারী তালেবান। সে কারণেই এমনকি বুশ যখন আফগানিস্তানে আক্রমণ-অভিযান শুরু করেন তখনও বিশ্বের কোনো মুসলমান দেশই এর বিরোধিতা করেনি। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধের পেছনে ছিল জাতিসংঘের অনুমোদন এবং এতে সম্পৃক্ত হয় ন্যাটোও। সুতরাং ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে একে একাত্ম করে দেখলে বাস্তব ইতিহাসকে অতিসরল করে ফেলা হয়। আক্রান্ত একটি দেশ আত্মরক্ষার্থে এবং এই উগ্র জঙ্গিবাদ থেকে বাদবাকি বিশ্বকে মুক্ত করতে যে অভিযান শুরু করে, তাকে ধর্মযুদ্ধ বলে অভিহিত করাটাই সবচেয়ে বড় অধর্ম। আর এই অধর্মের কাজটিই করছে তালেবান, আল কায়দারা যারা ধর্মকে ব্যবহার করছে নিজেদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে।
নিদাল হাসানের এই মর্মান্তিক আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে আসে, যে হতাশা কিংবা কল্পিত আত্মগ্গ্নানিই কি তার অস্ত্র চালনার পেছনের প্রকৃত কারণ, নাকি এক ধরনের উগ্র ও ভ্রান্ত ধর্মীয় চেতনাবোধই তাকে প্রণোদিত করেছিল ওই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে। এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সহজ নয়, বিশেষত ঘাতক নিদাল হাসান যখন এখনও (এই নিবন্ধটি লেখা পর্যন্ত) অচেতন এবং তাকে কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন করা সম্ভব হয়নি; কিন্তু প্রথম কিংবা দ্বিতীয় যেটিই কারণ হোক না কেন নিদাল যে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি ও যুদ্ধ এবং স্বদেশপ্রেম সবকিছুকে সম্পৃক্ত করে এক বিশাল ভ্রান্তিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ দেখি না। টেক্সাস ট্র্যাজেডি আবারও প্রমাণ করল দার্শনিক ও প্রায়োগিকভাবে ধর্ম এবং রাজনীতিকে পৃথক করে দেখা অত্যাবশ্যক। না হলে সভ্যতার সংঘাতের নামে ঘটবে সভ্যতারই সর্বনাশ।
অনিরুদ্ধ আহমেদ
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও নিবন্ধকার
যতদূর মনে পড়ে বুশের আমলেও এমন কিছু একটা হয়েছিলো। কোনো বিশেষ বিশ্লেষণ ছাড়াও আমি এটুকুতে জোর দিতে চাই যে আফগানস্থান আর ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের ভূমিকাকে কোনোভাবেই যেন ছোট করে না দেখা হয়। স্পেশালী আপনারা ঐ লোকের ধর্মীয় গোঁড়ামী, ব্যাক্তিগত জীবণে হতাশা ইত্যাদির কথা যা বললেন, সেগুলিকে আমার অনেকটাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপপ্রচেষ্টা মনে হচ্ছে।
অভির সাথে একমত! নিদালের ব্যাপারটা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের যোগফল। আফগানিস্তান আর ইরাকের যুদ্ধকে ‘ধর্ম যুদ্ধ’ হিসেবে না দেখলেও কিন্তু নিদালের মতো প্রতিক্রিয়া হওয়া সম্ভব। একজন বিশ্বাসী মুসলমান হিসেবে অন্য মুসলমানদের ওপর আক্রমণ – তা সে যে কারণেই হোক, বা যাদের কাছে যতই জাস্টিফায়েড হোক – এক সময় প্রচন্ড মানসিক চাপ/ক্ষিপ্ততা সৃষ্টি করতে পারে বোধহয়। বিশেষ করে যেখানে সে যুদ্ধফেরত সৈন্যদের কাছ থেকে একের পর এক যুদ্ধক্ষেত্রের নৃশংসতার বর্ণনা শুনছে। যারা এই যুদ্ধকে ‘ঠিক’ মনে করে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করে আসছে, তাদেরও তো কাউন্সেলিং এর দরকার হচ্ছে। যুদ্ধে তো আর একদম টার্গেটেড ভাবে শুধু ‘শত্রুসৈন্য’ মারা যায় না, হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষও যায় সাথে! কি অসম্ভব অমানবিক একটা ব্যাপার!
আর, সাইকিয়াট্রিস্টদের নিজেদের মানসিক চাপ মোক্ষণের জন্য কাউন্সেলিং নেয়া হয় বলে শুনেছি।
ইস, কি একটা অনর্থক নিষ্ঠুরতা হলো!
এই গোটা ব্যাপারে এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী বিস্মিত করেছে, সে নিজে মনস্তত্ত্ববিদ। সাধারনর এধরনের লোকদের দেখা যায় কারো পাল্লায় পড়ে ব্রেইন ওয়াশ হওয়ার, এ ক্ষেত্রে মনে হয় নিজে নিজেই হয়েছেন।
হ্যা, পরিবার ওয়ালা লোকে চিন্তাভাবনায় একই হলেও অন্তত পরিবারের কথা ভেবে হলেও এধরনের অতি চরম কিছু করবে না।
আমি কালকেই ভাবছিলাম টেক্সাসের ফোর্টহুডে এত বড় একটা ঘটনা ঘটলো মুক্তমনায় এ নিয়ে লেখা এলো না। সাধারণতঃ কোথাও এ ধরণের ঘটনা ঘটলে একদিনের মধ্যেই বিপ্লবের বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট চোখে পড়ে। কিন্তু এবারে বিপ্লব খুব অস্বাভাবিকভাবে নীরব! ?:-)
অনিরুদ্ধের এ প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ জানাই। অনিরুদ্ধের বিশ্লেষণের সাথে অনেকাংশেই আমি একমত, বিশেষ করে আফগানিস্তান এবং ইরাকের মধ্যকার যুদ্ধের পার্থক্যসূচকদিকগুলোতে। আমার চোখেও আফগান যুদ্ধ আর ইরাক যুদ্ধ এক নয়।
আসলে এ ঘটনার দুটো দিক আছে। এটা ঠিক যুদ্ধত্তোর বিষন্নতার (পোস্ট ট্রমাটিক ডিপ্রেশন) শিকার হয়ে নিদাল যেমন খুব একাকী জীবন কাটাচ্ছিলেন, তার উপর ইরাক এবং আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের সাথে তিনি মোটেই একমত হচ্ছিলেন না। তাকে যেন ওখানে পাঠনো না হয় তা নিয়ে তিনি তদ্বিরও করেছিলেন। কিন্তু উপর মহল এতে রাজী হয়নি। বোঝা যায় মানসিক অবসাদ, ঘৃণা, রাজনৈতিক মতদ্বৈততা সব কিছু মিলেয়ে তিনি ছিলেন বিরক্তির চরমে। ধর্ম যতই বড় হোক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ গোনায় না আনলে ব্যাপারটা অসম্পুর্ণই থেকে যায়। পৃথিবীর কোথাও সুইসাইড বোম্বিক হলে আজ ইসলামের আগ্রাসনের কথাই চলে আসে। অথচ রাজনীতির জন্য কিংবা আদর্শের জন্যও একসময় প্রচুর সুইসাইডের হামলার উদাহরণ আমরা একটা সময় দেখেছি। তামিলরা রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য সুইসাইড স্কোয়াড করেছিলো, তা ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে নয়, কিংবা শিখ দেহরক্ষীরা যখন ইন্দিরাগান্ধীকে হত্যা করেছিলো, তখন এর পেছনে ধর্মীয় বিদ্বেষ যতটা না ছিলো, তার চেয়ে ঢের বেশি ছিলো তাদের রাজনৈতিক মতদ্বৈততা, এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিপীড়ন। এই দিকগুলো ভুলে গেলে চলবে না।
কিন্তু পাশাপাশি ধর্মীয় দিকটিও অস্বীকার করার উপায় নেই কারো। এটা ঠিক আজকে আমেরিকার যুদ্ধটা ইরান বা আফগানিস্তানের সাথে না হয়ে অন্য অমুসলিম দেশের বিরুদ্ধে হলে সম্ভবতঃ নিদাল এই কান্ড ঘটাতেন না, বরং আনদের সাথেই আর্মিতে কাজ করতেন। কাজেই ইরাক এবং আফগানিস্তানের ব্যাপারটা ‘মুসলিম ভাইয়ের উপর আক্রমণ’ ভেবে নিজের ঘারে নিদাল নিয়েছিলেন, তা সে যে কোন কারণেই হোক না কেন। এই মুসলিম ভাতৃত্ববোধ এ উদবেলিত হয়ে নিদাল জিহাদ এবং জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড করেছিলেন, যেটা বাংলার মুরতাদ উপরে লিঙ্ক দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, খোদ আর্মিতে বসে থেকেই নিদাল আল কায়দার সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন। এ ছাড়া নিদালের ৯/১১ সন্ত্রাসীদের আখড়া হিসেবে বিবেচিত একটি র্যাডিকাল মসজিদের ইমামের সাথেও যোগসূত্র ছিলো, যিনি একসময় জিহাদ করার জন্য আমেরিকা থেকে ইয়েমেনে চলে যান। আরো অনেক বিষয়ই ধীরে ধীরে মিডিয়ায় বেড়িয়ে আসছে। এর মধ্যে কতটুকু ধর্মীয়, কতটুকু সামাজিক, কিংবা কতটুকু নিদালের যুদ্ধত্তোর বিষন্নতা – এ নিয়ে হয়তো বিতর্ক চলবেই, কিন্তু এটা থেকে একটা জিনিস বেরিয়ে আসে – ধর্ম আসলে কখনোই নির্ভেজাল শান্তির আকর নয় (যতই কোন কোন ধর্মকে ‘শান্তির ধর্ম’ ট্যাগ লাগিয়ে ফুল-চন্দন ছড়ানো হোক না কেনো), যেটা সবসময় ধর্মবাদীরা দাবী ঢালাওভাবে করে থাকেন। ধর্ম আমার চোখে অনেকটা ট্রোজান হর্স ভাইরাসের মত। এর ভাল আয়াতগুলো থেকে যেমন সুফি সাধক হওয়ার অনুপ্রেরণা যেমনি পাওয়া যায়, তেমনি আবার বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণাসৃষ্টিকারী আয়াতগুলো থেকে অনেকে পাবেন বিন লাদেন কিংবা নিদাল হাসান হবার অনুপ্রেরণা। ইতিহাস অন্ততঃ সেই সত্যই তুলে ধরে।
@অভিজিৎ,
না কনফিউজড আছি। আমি খুব ভালো করেই সব মিডিয়া ফলো করেছি। অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই। আমি এর মধ্যে নতুন এঙ্গল খুঁজে পাচ্ছি। আসলে হাসান ডিভোর্সী। ছেলে আছে। বৌ পালিয়েছে না ডিভোর্স নিয়েছে কেও জানে না। মুসলিম ম্যাট্রিমনিয়ালে বিজ্ঞাপন দিয়ে সতি সাবিত্রি খুঁজতে গিয়ে কোন বৌ পাচ্ছিল না। এই ব্যাপারটা আমেরিকানদের কাছে সমস্যা না-বৌ পালালে সঙ্গিনীর অভাব হয় না। কিন্ত ধর্মর জন্যে হাসানের এই সমস্যা হয়েছে। পরবর্তিতে যা হয়েছে, তা মর্মন, ইস্ লাম বা যেকোন কাল্ট ধর্মি আদর্শের জন্যেই হতে পারত। আমার এখনো ধারনা ব্যার্থ যৌন জীবন থেকেই হাসান আস্তে আস্তে জীবনের উদ্দেশ্য ইত্যাদি খু্জতে গিয়ে ধর্মের কলে পড়েছে। এবং যৌন জীবনের ব্যার্থতা তাকে আরো বেশী রাডিক্যাল করেছে। যুদ্ধ বিরোধিতাটা ফালতু কসমেটিক। যে এত জন বন্ধুকে মারতে পারে, সে শান্তিবাদি মোটেও না। কারন একজন শান্তিবাদি সর্বদাই শান্তিবাদি। আমি আরো ডাটা পয়েন্ট এর অপেক্ষায় আছি।
ধর্মের ভূমিকা এখানে এটাই যে ধর্মের কারনে সে স্বাভাবিক যৌন জীবন থেকে বঞ্ছিত হচ্ছিল।
@বিপ্লব পাল,
আমি গাদা গাদা লোক চিনি যারা সূস্থ পারিবারিক জীবন যাপনে করেও র্যাডিকেল ধ্যান ধারনায় বিশ্বাসী।
ওটা একটা কারন হতে পারে, তবে মূল কারন নয় মনে হয়।
@আদিল মাহমুদ,
সেটা হতেই পারে। তবে সেই রাডিকালিজম মুখে বা লেখায়। আত্মঘাতি জঙ্গি হতে বললে কি তারা রাজি হবে? এখানে এই হাসান ত আমেরিকা থেকে অনেক কিছু পেয়েছে। তাছারা সে নিজে একজন মনস্তত্বের ডাক্তার।তাই
কেও তার ব্রেইন ওয়াশ করেছে-এটা সম্ভব না। সে নিজের পরিচিতিতে ইসলামকে কেন এত জোরে ঢোকালো? এটাও ত হতে পারে, তার বৌ তাকে এবং তার সংসার ছেড়ে পালানোর পর-ইসলামের রক্ষনশীল জীবন তার কাছে অনেক বেশী অর্থবহ হয়ে ওঠে? কারুর বৌ যদি ছেলে মেয়ে নিয়ে তাকে একা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়-এরকম হতেই পারে। আমি স্ক্রাইবে হাসানের লেখা ব্লগটা পড়েছি। মাথা খুব্ই সুস্থ। এবং ঠিক ঠাকই বলেছেন ভদ্রলোক সুইসাইড বোম্বিং নিয়ে কারন যেকোন যোদ্ধাই একধরনের সুইসাইড বম্বার। শুধু যোদ্ধার প্রান ত্যাগের উদ্দেশ্য বদলায়।
@বিপ্লব পাল,
হা হা হা হা হা বিপ্লব 🙂 । তুমি ফ্রয়েডের যোগ্য উত্তরসূরী, তোমাকে এখন থেকে সিগমুন্ড বিপ্লব বলে ডাকা দরকার।
এ রোগ অত্যন্ত মারাত্মক। নিজের ধর্মীয় পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের উপরে মনে করার মানসিকতাকে পাগলামী ছাড়া আর কি বলা যায়।
আমার আগে ধারনা ছিল এ রোগে শুধু ইমিগ্র্যান্টরাই আক্রান্ত। হাজার হোক তারা এই দেশে জন্ম নেয়নি, বড় হয়নি। তবে কোন দেশে জন্ম নিয়ে সে দেশের জল হাওয়া খেয়ে বড় হয়ে কিভাবে সে দেশের জাতীয়তা অস্বীকার করা যায় বুঝি না।
এ জাতীয় লোকদের উচিত কোন আসল ইসলামিক দেশে চলে যাওয়া। এনারা তাও করতে রাজী না, কারন আমেরিকার হালুয়া রুটির লোভ ছাড়তেও এনারা রাজী নন। এ ভদ্রলোক অন্তত সেনাবাহিনীতে না ঢুকলেই তো পারতেন।
আজকাল পাশ্চাত্যে এনাদের কারনে যা শুধু হয়েছে তাকে বলা যায় সভ্যতার সংঘাত। পশচীমা দেশগুলির উদার সমাজ ব্যাবস্থার সুযোগ নিয়ে এনারা যা ইচ্ছে তাই দাবী করছেন। এ রোগ আস্তে আস্তে বেড়েই চলেছে।
আগে শোনা যেত মহিলাদের পর্দা ঘটিত সমস্যা হচ্ছে। এখন পুরুষদেরও এ জাতীয় সমস্যা হচ্ছে।
এখন প্রায়ই শোনা যায় কেউ ড্রাইভিং টেষ্ট দিতে গিয়ে বেগানা মহিলা পরীক্ষক দেওয়া যাবে না দাবী করছেন, পরিবারের মহিলা সদস্যদের পুরো নেকাব ঢাকা অবস্থায় ইমিগ্রেশন পার করার দাবী জানাচ্ছেন, বেপর্দা করে ছবির সাথে চেহারা মিলানো যাবে না এহেন হাজারো দাবী। যেগুলি শুনলে মামা বাড়ির আবদার ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। বুঝতে পারছেন না যে কিভাবে নিজেদের মূল সমাজের বিরুদ্ধে দাড় করাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের মানুষ সাধারন ধর্ম নিয়ে মোটেও কেয়ার করে না। এরা সেটা করাতে বাধ্য করাচ্ছেন।
মুশকিল হল কেউ তাদের এসব মামা বাড়ি মার্কা দাবীতে আপত্তি করলেই দ্রুত সিলাম বিদ্বেষী এসব লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই মেজর সাহেবের ঘটনাতেও তা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এমন ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। অন্য কেউ করলে ধর্ম ধরে টান পড়ে না, মোসলমানে করলেই আসে। এনারা বুঝতে চেষ্টা করেন না যে এটা মুসলমান বলে কথা নয়। কেউ যদি বৈদিক সমাজ বা বাইবেলের আইন প্রতিষ্ঠার দাবীতে এহেন কান্ড করে তবে তার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার হবে। মানসিক বিকারের ফলে অনেকেই মাঝে মাঝে এমন করে, তবে সেগুলির সাথে ধর্মের যোগ না থাকলে কেন বেহুদা ধর্ম ধরে টানাটানি হবে? ধর্মীয় উন্মাদনায় এমন কান্ড কারলে মুল কারন চেপে যেতে হবে?
Clues to Maj. Hasan’s motivation can be traced in this lecture (powerpoint presentation) he gave to his military comrades, which was supposed to be a medical-related lecture. Maj. Hasan makes it clear that his allegiance to Islam comes ahead of America (its citizenship he gave up in recent years), and makes it clear that unconditional killing of the infidels–thereofre, of the Americans for that matter–is clearly permitted in the Islamic docrtine of Jihad.
What surprises me most is that his listeners made no/little fuss about a man, standing in front of them, and obviously saying that he has a duty to kill his listeners as per his relgious commands.