বেগম রোকেয়ার ‘নারীস্থান’ এর কথা মনে আছে? এক’শ বছরেরও আগে লিখেছিলেন। এতো বছর পরে আমাদের সময়েও তাঁর লেখাগুলো নিঃসন্দেহে বিদ্রোহাত্মক ও বৈপ্লবিক। এক সময়ে সমাজে পুরুষের অন্যায় কর্তৃত্বকে তিনি এতোটাই ঘৃণা করতে শুরু করেন যে, এক কল্পিত ‘নারীস্থান’ এ পুরুষ জাতিকে বাড়ীর ভেতরে ঠেলে দিয়েছিলেন সব ঘৃহস্থালির কাজ করানোর জন্য। আজকের তসলিমা নাসরিনকে দেশি-বিদেশি অনেকে নারীবাদী লেখিকা হিসেবে স্বিকৃ্তি দিয়েছেন। যদিও আমরা তাকে দেশ ছাড়া করেছি। পুরুষ-প্রধান সেই সমাজে রোকেয়ার লেখাগূলো অতিশয় বৈপ্লবিক ছিল বলেই হয়তো তখনকার নামী দামী লেখকদের কেউই, মায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত, তাঁদের লেখায় রোকেয়ার কোন উল্লেখই করেন নাই। হে পুরুষ জাতি আপনারা এতো অল্পতেই সেযূগের বেগম রোকেয়া বা এযুগের তসলিমা নাসরিনের উপর নাখোস হবেন না। আপনাদের ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকারে ঢাকা। আপনাদেরকে খালু বলে ডাকার কেউ থাকলেও বাবা বলে সম্বোধন করার কেউ থাকবে না; আপনারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন যদিও, অচিরেই যাদুঘর বা চিড়িয়াখানায় আপনাদের ঠিকানা নির্ধারিত হওয়ার আলামত আমি দেখতে পাচ্ছি। আর সেকাজ ত্বরান্বিত করছেন কোন নারী বা নারীবাদী সমাজ সংস্কারক নন, বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু প্রথিতযশা বিজ্ঞানী। অতএব সাধু সাবধান!

 1_japan_shukro

জুলাই মাসের প্রথম দিকে বিলাতের একদল বিজ্ঞানী মানুষের শুক্র (স্পার্ম) তৈরি করেছেন ল্যাবোরেটোরিতে। শুক্র আদ্যাবধি শুধুমাত্র পুরুষ দেহের অণ্ডকোশের ভেতরেই তৈরি হয়ে আসছিল। ইতিপূর্বে একই ভাবে এই বিজ্ঞানী দল শুধু ইঁদুরের শুক্র তৈরি করেই থেমে যান নাই, তাঁরা এগুলো দিয়ে স্ত্রী ইঁদুরের ডিম (এগ) নিষিক্ত(ফার্টিলাইযেশন) করে তা থেকে আটটি ইঁদুরের বাচ্চাও প্রসব করান, যদিও এদের আয়ু ছিল সামান্য ক’দিন। মানুষের শুক্র তৈরিতে তাঁদের বর্তমান সাফল্যের একটি সম্ভাবনাময় উপকারী দিক হচ্ছে যেসব পুরুষ শূক্র তৈরীর অক্ষমতার জন্য পিতৃত্বের গৌরব থেকে বঞ্ছিত, তারা পিতা হতে পারবেন। আর পুরুষ জাতির জন্য এই সাফল্যটির বিপজ্জনক দিক হচ্ছে, মানব শিশু উৎপাদনের জন্য পুরুষের প্রয়োজনীয়তা একদিন শেষ হয়ে যেতে পারে। এই অপমান জনক পদ্ধতি আবিস্কারের পরও পুরুষ জাতির জন্য সান্তনামূলক গর্বের একটি বিষয় আছেঃ এই শুক্র গুলোর উৎপত্তি হয়েছিল শুধুমাত্র পুরুষ জাতীয় ভ্রূণ থেকে। কিন্তু হায়! এই সান্তনা নিয়ে বেঁচে থাকার উপায়ও বুঝি আর থাকলো না হতভাগা পুরুষ জাতির! জুলাই মাসের শেষের দিকে দুই দল চীনা বিজ্ঞানী ঘোষণা করলেন যে তাঁরা ইঁদুরের চামড়া থেকে ‘মূল কোশ’ (বা ষ্টেম সেল, যা থেকে শুক্র ও অন্যান্য সেল তৈরি করা যায়) তৈরি করেছেন এবং সেগুলো ব্যাবহার করে একদল সাতাশটি ইঁদুরছানা ও তাদের কয়েকশত নাতি-পুতির জন্ম গ্রহণ করিয়েছেন।

এখন কল্পনা করুন, আর ক’বছর পর বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মেয়ে মানুষের চামড়া, মুখের লালা বা রক্তকণা থেকে অফুরন্ত সংখ্যায় মেয়ে-শুক্র বা ছেলে-শুক্র বানানো সম্ভব হচ্ছে। তা দিয়ে ওরা আমাকে বা পুরুষ-আপনাকে বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে যখন যা খুশি ইচ্ছেমত ছেলে-শিশু বা মেয়ে-শিশু জন্ম দিচ্ছে। (দোহাই একে নিছক কল্পনা মনে করবেন না, বিলাতে প্রথম পুরুষ-ভেড়ার অংশ গ্রহণ ছাড়াই মেয়ে-ভেড়ার একটি বাছুর (যার নাম ছিল ডলি) প্রসবের পর বিগত তেরো বছরে একই ভাবে ইঁদুর, বেড়াল, ছাগল, গরু ও ঘোড়া জন্ম নিয়েছে।) আপনি হয়তো ভাবছেন ছেলে-শুক্র দিয়ে যদি ছেলে শিশুরই জন্ম হয়, তাহলে পুরুষ জাতির ভয় পাবার কি হল? ভয় আছে মশাই, আছে। তবে শুনুন, হোমারের ‘ট্রয়ের যুদ্ধ’ এর কথা মনে আছে তো? সেখানে ‘এ্যমাযন’ নামে একটি যোদ্ধা জাতির কথা বলা আছে যার সদস্যরা সবাই মহিলা ছিলেন। সে উদাহরণ থেকে বা সম্পূর্ণ কল্পনা থেকে সিনেমা তৈরি হয়েছে যেখানে মেয়েদের একটি জাতি পুরুষদেরকে প্রজননের উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করেই মেরে ফেলতো। আলোচ্য বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মেয়েরা পুরুষদের মেরে ফেলারও কোন প্রয়োজন নেই, তাদের জন্মাতে না দিলেই হোল। এখন তো আর সন্তান উৎপাদনের জন্য পুরুষের প্রয়োজন হবে না, তবে হ্যা, বাথরুম ও রাস্তাঘাট পরিষ্কার, মড়ার সৎকার জাতীয় কাজ গুলো করার জন্য তারা কিছু পুরুষ সৃষ্টি করতে পারে বৈকি! ভাই সব এই অপমানের কথা ভাবতেই রাগে আমার নিজের মাথার শেষ ক’টা চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে সেদিন আসার আগেই আমার ভবলীলা সাঙ্গ হবে। কিন্তু আমার বংশধর ছেলে ও বংশবদ পুরুষ জা্তির কি অবস্থা হবে সেটা ভেবে অতিশয় পেরেশানীতে দিন কাটাচ্ছি।

 2_xy_chromosome1

এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্ত্রী-জাতি পুরুষদের প্রতি এই অমানুষিক ব্যাবহার করবেই বা কেন? ভেবে দেখুন আমরা কি হাযার হাযার বছর ধরে তাদের উপর অত্যচার করে আসছি না? বেগম রোকেয়া লিখে গেছেন “যেখানে ধর্মের বন্ধন অতিশয় দৃঢ় সেই খানে নারীর প্রতি অত্যাচার অধিক”। এর একশত বছর পরও আমরা কি এখনো সমাজের শাসনে ও ধর্মের আবরণে দোররা মেরে, আঁতুর ঘরে গলা টিপে, মাটিতে পুরে, প্রস্তর নিক্ষেপে তাদের মেরে ফেলছি না? সেযুগেই রোকেয়া যদি পুরুষদের নারীস্থানে গৃহবন্দি করে ফেলতে পারেন, এবার কি এর চেয়েও কঠিন কিছুর জন্যে প্রস্তুত থাকা ভাল না? আর ‘ললিত দেহের কোমলতা’র অধিকারী, প্রেমময়ী চেহারার মহিলারা সুযোগ পেলে যে হিংস্র হয়ে উঠতে পারে, বছর কয়েক আগে রোকেয়া হলে মেয়েদের মধ্যেই মারামারির ঘটণায় আমরা তো তা প্রত্যক্ষ করেছিই! সুন্দরী লোরেনা বোবেট এর ছুরির ধারের কথা ভুলে যান নি নিশ্চয়ই। আর সামান্য একটু বুদ্ধি খরচ করে এক পুচকি মনিকা লিউইনিস্কি কিভাবে মহাধাড়ি-পরাক্রমশালী বিল ক্লিন্টন এর সিংহাসন পর্যন্ত টলিয়ে দিয়েছিল সেতো সবারই জানা।

জন্ম হওয়ার আগে থেকে জন্মের পর বড় হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতিগত ভাবে আমরা নারী ও পুরুষের মাঝে কি কি পার্থক্য দেখতে পাই ও তার বিপরীতে আমাদের চিরাচরিত বিশ্বাস ও প্রথা গুলো কি? নিচের কতকগুলো বৈজ্ঞানিক পর্য্যবেক্ষণ সত্য যদিও, এর সাথে সামাজিক রেওয়াজের তুলনাগুলো সম্পূর্ণ ভাবে আমার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা প্রসূত। বিশ্বাস করুন, মাথায় তেল না মাখলেও আমার মস্তিষ্কের এই উর্বরতা সম্পর্কে আমার স্ত্রীর বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। তুলনাগুলোর বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি আমার জানা নেই বলে পাঠক এগুলোকে শুধু বিনোদনের জন্য নিবেন এই অনুরোধ করছি। অন্যায় কিছু হয়ে থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করে শুধরে নেবেন। যেহেতু শুধুই বিনোদন মুলক, এখানে নারী, মেয়ে বা মহিলাকে ডিম ও এক্স ক্রোমোযোম এর সমার্থক, এবং পুরুষ বা ছেলেকে শুক্র ও ওয়াই ক্রোমো্যোম এর সমার্থক বোঝানো হয়েছে।

(১) মানুষ ও প্রাণী জগতে শিশুর জন্ম হয় ভ্রূণ থেকে। ভ্রূণের উৎপত্তি হয় যখন পুরুষ দেহে তৈরি কয়েক কোটি শুক্রের একটি, স্ত্রী দেহে তৈরী মাত্র একটি ডিমের সাথে নিষিক্ত (ফার্টিলাইযেশন) হয়। সৌভাগ্যবান সেই শুক্রটির ভেতরে যদি একটি এক্স ক্রোমোযোম থাকে তবে ভ্রূণটি হবে মেয়ে-ভ্রূণ ও তা থেকে জন্ম নেবে কন্যা সন্তান। আর শুক্রটির ভেতরে যদি ওয়াই ক্রোমো্যোম থাকে তবে ভ্রূণটি থেকে জন্ম নেবে ছেলে সন্তান। সহজ অর্থে ধরে নেয়া যায় ওয়াই ক্রোমো্যোম পুরুষ, আর এক্স ক্রোমো্যোম স্ত্রীলিঙ্গ নির্ধারণ করে। মজার ব্যাপার হল, ওয়াই ক্রোমো্যোম প্রস্থে প্রায় সমান হলেও লম্বায় এক্স ক্রোমো্যোম থেকে তিন গুণ ছোট। তার চেয়েও আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল আয়তনে পুরুষের একটি শুক্র, মহিলার একটি ডিম থেকে পনের হাযার গুণ ছোট। অথচ জন্মের পর পুরুষ মহিলাদের থেকে আকারে বড় হয়ে যায়। (সে কি খাদ্যের অসম বণ্টনের ফলে?) ফলে সমাজও মনে করে স্বামী-স্ত্রী’র মাঝে স্বামীর বড় ও লম্বা হওয়া বান্থনীয়। আগামীর কোন নারী নেত্রী কি প্রশ্ন করতে পারেন না ‘প্রাকৃতিক নিয়মে বড় হওয়ার কথা সত্বেও পুরুষ জাতি আমাদের ছোট বানিয়ে রেখেছে’?

 4_dim_shukro

(২) মেয়েদের মাত্র একটি ডিমের সাথে নিষিক্ত (ফার্টিলাইযেশন) হতে প্রতিবার পাঁচ কোটি শুক্র এক হাস্যকর প্রতিযোগিতায় নেমে আত্মাহুতি দেয়; ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে মাত্র একটি শুক্র তার ‘প্রমিযড্ ল্যান্ড’, ডিমের সাথে মিলিত হতে সফল হয়। আমরা পুরুষরা সাধারনতঃ প্রাচীন পৌরাণিক ও কোরানিক রীতিনীতিকে ধর্ম-জ্ঞ্যান করে অতি গুরুত্ব সহকারে তা পালন করি। সে অনুযায়ী এই সবচেয়ে প্রাচীন প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে অনেকজন পুরুষের সর্বদা একজন নারীকে সম্রাজ্ঞীর আসনে বসিয়ে রাখার কথা। অথচ জন্মের পর বড় হয়ে একটি পুরুষ একাধিক মেয়ের হারেম গড়ে তোলার নিয়ম করে রেখেছে। এটা কি পুরুষ মানুষ হয়ে জন্মাবার আগের শুক্রের চরম ব্যার্থতার গ্লানি ভুলে থাকার প্রয়াশ?

 3_prokando_dim

(৩) মেয়েদের ডিমের ভেতর শরীরের শক্তি উৎপাদনকারী লক্ষাধিক মাইটোকোন্ড্রিয়া (বায়োলজিক্যাল পাওয়ারহাউজ বা জীবনের শক্তিকেন্দ্র) থাকে অথচ পুরুষের শুক্রে মাইটোকোন্ড্রিয়া একশ’র বেশি থাকে না। ডিমের দিকে প্রচণ্ড বেগে ধাবিত হতে গিয়ে যে শক্তির প্রয়োজন হয় শুক্রের এই স্বল্প সংখ্যক মাইটোকোনড্রিয়াগুলো তা যোগান দিতেই হয়তো ফতুর হয়ে যায়। তাছাড়া দুর্বল স্বাস্থ্যের শুক্র দুই তিন দিনেই অক্কা পায়, অথচ একটি ডিমের আয়ূ হতে পারে পনের দিন। তা সত্বেও জন্মের পর থেকে শারিরীক ও সামাজিক ভাবে ছেলেকে শক্তিশালী ও মেয়েদেরকে দুর্বল করে গড়ে তোলা হয়। অভিযোগ হতে পারে ‘প্রাকৃতিক নিয়মে শক্তিশালী হওয়ার কথা থাকলেও পুরুষ জাতি চিরাচরিত ভাবে নারীকে দুর্বল বানিয়ে রেখেছে’।

(৪) ডিমের সাথে নিষিক্ত হয়ে ভ্রূণ তৈরীর পর শুক্রের মাইটোকোন্ড্রিয়াগুলো অচিরেই ধ্বংশ হয়ে যায়, ফলে সন্তান শুধুমাত্র মা থেকেই মাইটোকোন্ড্রিয়া উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। যদিও তর্কের অবকাশ রয়েছে, এই মাইটোকোন্ড্রিয়া নিয়ে গবেষনা করে জানা গেছে যে আজকের পৃথিবীর বেঁচে থাকা সব মানুষ দুই লক্ষ বছর আগের আফ্রিকার একজন মাত্র ইভ্ বা মা হাওয়া’র সন্তান। অন্যদিকে ওয়াই ক্রোমো্যোম এর গবেষণায় জানা যায় আমাদের একমাত্র বাবা আদম ষাট হাযার বছর আগে আফ্রিকায় বাস করতেন। অর্থাৎ মা হাওয়া পৃথিবীতে এসেছিলেন বাবা আদম থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে। যুক্তির আলোকে হাওয়া’র গর্ভ থেকেই আদমের বের হওয়া উচিৎ, অথচ শেখানো হয়েছে আদমের কোমরের হাড় থেকে হাওয়া’র জন্ম হয়েছে। অভিযোগ হতে পারে নারীজাতিকে পরাধীন করার জন্য আসল ঘটনাকে ভিন্নভাবে প্রচার করা হয়েছে।

(৫) ধনী ও উন্নত জাতিগুলো অনেক তথ্য পেটেন্ট ও গোপন দলিল করে রাখে, আর এটি সর্বজন স্বিকৃত যে যার কাছে যত বেশি তথ্য আছে সে তত বেশি ধনী বা উন্নত। শরীরের প্রতিটি ক্রোমো্যোম অসংখ্য জিন এর সমষ্টি, আর এই জিনগুলোতে লেখা থাকে এক একটি দলিল, তথ্য বা নির্দেশ। পুরুষের ওয়াই ক্রোমো্যোম ছোট বিধায় তার জিন বা তথ্য সংখ্যা মেয়েদের এক্স ক্রোমো্যোম এর তথ্য (যার অনেকগুলোই মস্তিষ্কের কাজ পরিচালনা করে) থেকে দশ গুণ কম। ফলে সব মেয়েদেরই মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় তথ্যের সংখ্যা ছেলেদের থেকে বেশি। এই বিবেচনায় প্রকৃতিগত ভাবেই স্ত্রীজাতি পুরুষজাতি থেকে উন্নততর হওয়ার কথা। সম্ভবতঃ এ কারণেই মেয়েরা পুরুষের চেয়ে বেশি, একসাথে অনেক কা্‌জ করতে (মাল্টি টাস্কিং)পারে, আর আমেরিকায় ষোল বছরের কম মানসিক প্রতিবন্দি ছেলের সংখ্যা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন। অথচ সর্বকালে মেয়েদেরকে মেধাহীন বা নিম্ন মেধার বলে বিশ্বাস করিয়ে শিক্ষাহীন, গৃহবন্দি ও অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। একাধিক জাতির শিক্ষিত পুরুষকে বলতে শোনা যায় তারা চাকুরিজীবি স্ত্রীদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট তদারক করতে দেন না কারণ তারা ভাল হিসাব করতে পারে না বলে স্ত্রী সব টাকা কেনাকাটিতে শেষ করে ফেলবে। আমাদের ডঃ ইউনূসকে জিজ্ঞেস করুন এব্যাপারে তিনি কাকে বেশি বিশ্বাস করেন।

(৬) আগামীর সেই নারী নেত্রী আরো বলতে পারেন যে ‘পৃথিবীতে পরিশ্রম ও উৎপাদনশীল কাজ আমরাই বেশি করি, অথচ একাজে শুধু পুরুষদেরই কৃতিত্ব দেখিয়ে এগুলো ‘ম্যান-আওয়ার’ দিয়ে পরিমাপ পরা হয়’। জাতিসঙ্ঘ পরিচিলিত বিশাল এক জরিপে দেখা গেছে যে পৃথিবীর সব জাতিতেই মহিলারা পুরুষদের চেয়ে ঢের বেশি পরিশ্রম করেন আর সামাজিক ও সাংসারিক প্রয়োজনের জন্য বেশি জিনিষ প্রস্তুত করেন। (এ ব্যাপারে আমার হাতে প্রমাণযোগ্য কোন লিখিত তথ্য নেই, কিন্তু বছর বিশেক আগে এই রিপোর্টটি সম্পর্কে কোথাও পড়েছিলাম।)

(৭) ভবিষ্যতের সেই বেগম রোকেয়ার অভিযোগ এখানেই শেষ হবে না। তিনি অবশ্যই বলবেন ‘সন্তানের বৃদ্ধি, নিরাপত্তা, আহার, বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যাবস্থা একমাত্র আমরা, স্ত্রী-জাতিরাই করে থাকি, অথচ সমাজে এসব কিছুরই কৃতিত্ব পুরুষ জাতি ভোগ করে ও আমাদের স্বীকৃতি দেয়া হয় না’। মানুষ সহ স্ত্রী-জাতির প্রাণীর ডিমের মাঝে শুধু এক্স ক্রোমোযোমই থাকে না, এতে সঞ্ছিত থাকে নানান সুস্বাদু খাবার, ভাইটামিন, ও জীবন রক্ষাকারী নানান মিনারেল (আহা কী মজা, পরিবারের কর্তা প্রতিদিন সকালে একটি করে মজার ডিম ভাজা আয়েশ করে খেয়ে খেয়ে স্বাস্থ্য ভাল রাখে, আর সেটি ভেজে দেয়া-গিন্নীর কপালে কদাচিৎ জোটে)। পুরুষের শুক্রটি তো ডিমটিকে নিষিক্ত করেই খালাস, স্ত্রীর ডিমের ভেতরে সঞ্ছিত খাবার দিয়েই ভ্রূণটির প্রাথমিক বৃদ্ধি হতে থাকে। পরবর্তিতে মায়ের শরীরই বাড়তে থাকা শিশুটির খাবার জোগাতে থাকে, যখন বাবা শরীরে হাওয়া লাগিয়ে আড্ডা দিয়ে বেড়াতে থাকেন। জন্মের পর মায়ের স্তন, বা পাকস্থলী বা মুখের ভেতর (পাখি ও মাছ এর ক্ষেত্রে প্রযোয্য) থেকে মা’ই সন্তানের খাবার জোগায়। পৃথিবীর বৈরী পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য সব প্রাণীর মা’ই নিরাপদ ও আরামদায়ক বিছানা ঠিক করে, শিশুকে আগলে রাখে ও বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় শিক্ষা দান করে। অথচ অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রেই পুনরায় সঙ্গমে উৎসুক বাবা শিশুটিকে পথের কাঁটা মনে করে। সন্তানের জন্য মায়ের এতো ত্যাগের পরও সমাজে সন্তানের পরিচয় হয় বাবার নামে। এমনকি আইন করে সন্তানের অধিকার বাবার হাতে ন্যাস্ত করা হয়। আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন, আদালত মা বিদিশা’কে বঞ্চিত করে সত্তরোর্ধ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লে-জে-হো-মো (অব) এরশাদ কে শিশু এরিখে’র আইনী অভিভাবকত্ব দিয়েছেন?

তাই আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা ও মানসিকতায় ন্যুনতম ভাবে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। অন্যথায় আগামীর স্ত্রীজাতি তাদের খেলার সঙ্গী হিসেবে যদি আমাদের বা্ঁচিয়ে রাখেও, বাবা নিশ্চয়ই আমাদের হতে দেবে না, খালু হতে দিতে আপত্তি না থাকলেও। আর কপাল নেহায়েত খুব খারাপ হলে ভবিষ্যতের পুরুষ জাতি একটি যাদুঘরে স্থান করে নিতে পারে। সেই যাদুঘরের নাম হতে পারে ‘স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অব হিউম্যান মেইল’।

(লেখার শিরোনামটি সম্ভবতঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘চরম পত্রে’ প্রথম শুনেছিলাম, এর রচয়িতা প্রয়াত এম আর আখতার মুকুল এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তথ্যগুলো ২০০৯ সনের জুলাই মাসের দুটি বিজ্ঞান সাময়িকী, কলেজের বায়োলজি পাঠ্যবই, ইন্টারনেটে পাওয়া জরিপ, সংবাদ, এউ এস সেন্সাস বুরো’র ডাটা, ও জনাব গোলাম মুরশিদ এর মুক্তমনায় প্রকাশিত লেখা ‘প্রথম বাংগালি নারীবাদী বেগম রোকেয়া’ থেকে নেয়া।)