৪ আগস্ট,মঙ্গলবার

গ্যালারীতে বসে টিচারদের বিরক্তিকর লেকচার আর কাহাঁতক সহ্য করা যায়।তবু মেজাজটা ফুরফুরে।পরের দুটো ক্লাশ করতে হবে না বরং বহুদিন পর একটু ভ্রমনের সুযোগ…আহ ভাবতেই দারুন লাগছে!
ট্রেন ছাড়বে দুপুর দুটোয়।যথারীতি আটকে গেলাম,ঢাকার রাস্তা,জ্যাম অনিবার্য!ঘেমে নেয়ে একাকার,গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।কমলাপুর পৌঁছে দেখি ঘড়ির কাঁটা দেড়টার ঘরে।আমরা আটজন,গন্তব্য সিলেট। আরে!কামরার মুখোমুখি সিট যে ! আড্ডা তাহলে জমবে দারুন !
সিলেট যাবার ফন্দি আঁটছিলাম প্রায় দুবছর ধরে।কিন্তু মেডিকেল কলেজে পড়ার সুবাদে দম ফেলবার ফুরসত কোথায়!শেষমেশ ফিফথ্ ইয়ারে এসে সুযোগটা হল,মানে করে নিলাম আর কি!
ট্রেন ছাড়লো প্রায় দুটো দশে।এর মধ্যে শান্তার সাথে কয়েকদফা খুনসুটি করে ফেললাম।পাশের সিটে বসে দিশা,ওর কনুইয়ের গুতো খেয়ে মনে পড়ল যাচ্ছি আসলে শান্তাদের বাড়িতেই!আপাতত ক্ষান্ত হলুম।
কেয়া আর চন্দ্রিমা কথায় ব্যস্ত…বাকি দুটো দেখি এরই মধ্যে ঘুমে কাদা!দিশার সাথে জানলার পাশে বসা নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা দফা রফা হল ঘণ্টা হিসেবে!সিমিকে দেখলাম কানে আইপডের হেডফোন গুঁজে বসেছে।আশেপাশের যাত্রীরা আড়চোখে চিড়িয়াদের কান্ড দেখছে!দেখুক গে,আজকে আমরা সবাই রাজা!
যেকোনো ভ্রমণ আমাকে খুব টানে,গন্তব্য নিয়ে ভাবি না,পথটাই বেশি আকর্ষনীয় বলে মনে হয়!
আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে পেটপূজাও চলছে।এর মধ্যে হবিগঞ্জে পৌঁছে একটা স্টেশনের নাম চোখে পড়ল,”মনতোলা”!বেশ তো!পথের অবিরাম সবুজে চোখ জুড়িয়ে নিচ্ছিলাম!
প্রায় আট ঘণ্টার জার্নি ।দুপুর,বিকেল,সন্ধ্যা…রাত সবই উপভোগ করলাম।লম্বা পথ,তবু ভালই কাটলো!
তখন রাত প্রায় সাড়ে দশ।ট্রেন থেকে নেমেই দেখি স্টেশনে সাদা রঙের মাইক্রোবাস অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য,বাহ!অন্তত পথ ভ্রমনটা যে মসৃন হবে তা বেশ টের পাচ্ছি!
তিনতলার দুটো ঘরে আমাদের জায়গা হল।একটা বারান্দাও আছে দেখি।খাওয়া দাওয়া আর টুকটাক আড্ডায় রাত অনেক হয়ে গেল।বাতি নিভিয়ে ঘুমে ডুব দিল একে একে সবাই।
আমি জানালার পাল্লাটা খুলে দিলাম চুপিচুপি।শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছিলাম,সিলেটের আকাশ!একটু পর টের পেলাম বৃষ্টির ছাঁট আসছে,অবাক কান্ড!!বলা নেই কওয়া নেই,হঠাৎ বৃষ্টি…খেয়ালী বৃষ্টি!
অদ্ভুত ভালো লাগায় চোখ বুজে এলো!