আমি ধর্ম পালন না করলেও ধর্ম নিয়ে আমার আগ্রহ রয়েছে। তাই টিভিতে যখন আব্বু-আম্মু নিবিষ্ট মনে ডঃ জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনে তখন কাজ না থাকলে আমিও সোফায় যেয়ে বসি। বোঝার চেষ্টা করি তিনি কী বলতে চান। তেমনি ধর্ম নিয়ে লেখা বইও পড়ি। কয়েকবছর আগে বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আহমদ দিদাদ এর লেখা “কুরআন ও বিজ্ঞান” নামে একটা বই দেখলাম কাটাবনের মসজিদের নীচে মার্কেটটায়। কিনে নিয়ে আসলাম। সেই বইয়ে নানা ভাবে কুরআনকে স্বর্গীয় কিংবা আলৌকিক প্রমানের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে মিল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ছিল, উনিশ সংখ্যা দ্বারা আল্লাহ যে কুরআনকে বেঁধে দিয়েছিলেন তার প্রমান। আল্লাহতায়ালা বাঁধলেও সর্বসমক্ষে এই মিরাকলের ব্যাপারটি প্রথম তুলে ধরেন ডক্টর রাশাদ খালিফা

পুরো ব্যাপারটি যে কোন মানুষকে আকৃষ্ট করবে। যিনি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তিনি প্রমানটি দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন- জিনিসটা মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন, ক্ষেত্র বিশেষে কোন সংশয়বাদীর সাথে তর্কে লিপ্ত হলে তলোয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন। আর যিনি অবিশ্বাসী তিনিও সামান্য দ্বন্দ্বে পড়ে যাবেন।

আপনারা যারা এই মিরাকল সম্পর্কে জানেন না- তারা উইকিতে আমার লেখা এই নিবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন। পড়ে দেখতে পারেন ব্লগার মাহমুদুল আলমের এই লেখার শেষ অংশটুকু

আসলেই কী কুরআনে সাংখ্যিক মাহাত্ম্য (মিরাকল অফ ১৯) বিদ্যমানঃ-

স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে- না। ডক্টর খলিফা বেশকিছু ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন। এই লেখায় বেশকিছু উদাহরণ এবং গঠনমূলক আলোচনায় তা দেখানো হবে।

মূলত পৃথিবীর যেকোন বিষয়েই একটি গানিতিক মিরাকল বের করা সম্ভব (প্রবন্ধের নীচের অংশে উদাহরণ দ্রষ্টব্য)। সেটি গণিতবিদদের দ্বারা সমর্থিত না হলেও মানুষকে আনন্দ কিংবা ধাঁধায় ফেলার জন্য যথেষ্ট।

ধরুন একটি সমুদ্র সৈকত। আপনি একটি নিক্তি নিলেন- এবং সমুদ্র সৈকতের একটি একটি করে বালুর ওজন মাপা শুরু করলেন। যেসব বালুর ওজন হচ্ছে এক গ্রাম সেটিকে আপনি থলেতে ভরে রাখলেন। যেগুলো না সেগুলো ফেলে দিলেন। আরও ধরি আপনার হাতে অফুরন্ত সময় রয়েছে এবং এই অফুরত্ন সময় আপনি শুধু বালুর ওজন মাপবেন এবং এক গ্রামের ওজনের বালু আলাদা করবেন। তাহলে দীর্ঘসময় পর আপনি বেশ বড় একটি বালুর স্যাম্পল জোগাড় করতে পারবেন যাদের প্রত্যেকের ওজন এক গ্রাম করে। এখন যদি আপনি ঘোষণা দেন যে, এই সমুদ্র সৈকতটি একটি মিরাকল এবং এর প্রত্যেকটি বালু কণার ওজন এক গ্রাম তাহলে কী তা যুক্তি সংগত হবে? হবে না।

কারণ গণিত আমাদের বলে, এই সৈকতে প্রতিটি বালুকণার ওজন এক গ্রাম- এই শর্ত আরোপ করার আগে আপনাকে শতকরা কতভাগ বালুর ওজন এক গ্রাম তা নির্ণয় করতে হবে। যদি শতকরা মান ৯০- ৯৯% হয় তাহলে আমরা সেই শর্ত সঠিক বলে ধরে নিতে পারি।

শতকরা= এক গ্রাম ওজন এমন বালুর সংখ্যা/ পরীক্ষণীয় মোট বালুর সংখ্যা (যে বালু আপনি ফেলে দিয়েছেন+ যে বালু আপনি রেখেছেন) * ১০০

আপনার পরীক্ষায় একবস্তা বালুর বিপরীতে কমপক্ষে এক হাজার বস্তা বালু আপনি বাদ দিয়েছেন (কারণ তাদের ওজন এক গ্রাম নয়)। সুতরাং আপনার শতকরা মান হবে খুব কম। অর্থাৎ মিরাকলটি সত্যি নয়।

ডক্টর খালিফা ঠিক এই কাজটি করেছেন। কিভাবে?

তিনি বলেছেন কুরআনকে আল্লাহ ঊনিশ দ্বারা আটকে দিয়েছেন। তিনি বেশ কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন,

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এ মোট বর্ণ ১৯।
সর্বপ্রথম নাযিলকৃত ৫টি আয়াতে (সূরা আলাক) মোট শব্দ সংখ্যা ১৯, তাতে মোট বর্ণ ৭৬ (যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য)।
সর্বপ্রথম নাযিলকৃত পূর্ণাংগ সুরার (সুরা আলাক) আয়াত সংখ্যা ১৯।
সর্বশেষ নাযিলকৃত সুরায় (সুরা নসর) শব্দ সংখ্যা ১৯।
সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াতে (সুরা নসর-১) অক্ষর সংখ্যা ১৯।
পুরো কুরআনে ‘কুরআন’ শব্দটি এসেছে ৫৭ বার (যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য)।
কুরআনের সর্বমোট সুরার সংখ্যা ১১৪ (যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য)।
কুরআনের সর্বমোট আয়াত সখ্যা ৬৩৪৬ (যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য)।

তাহলে ডক্টর খালিফার চালাকিটা কোথায় হল? বের করা খুব সহজ।

যেকোন বই থেকেই আপনি “বিশেষ কিছু অংশ”/অপশন বাছাই করতে পারেন। তারপর যেই যেই অপশন আপনার মিরাকল প্রমানে কাজে লাগবে তা রেখে (ধরুন সাত দ্বারা বিভাজ্য) বাকিগুলো ফেলে দিতে পারেন। কুরআনের ক্ষেত্রে যেমন, একটি শব্দের অক্ষর সংখ্যা, চ্যাপ্টারের সংখ্যা, নির্দিষ্ট একটি শব্দ সর্বোমোট কতবার ব্যবহৃত হয়েছে সেই সংখ্যা ইত্যাদি- ইত্যাদি গ্রহন করা হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি চাইলে অন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা, বিজোড় সুরার সংখ্যা, জোড় চ্যাপ্টারের সংখ্যা, বিজোড় চ্যাপ্টারে অতটি অক্ষর রয়েছে- জোড়টিতে কতটি রয়েছে ইত্যাদি নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনি মাথা খাটিয়ে অসীম সংখ্যক অপশন/”বিশেষ অংশ” বাছাই করতে পারেন। ডক্টর খালিফা তাই করেছেন। অসংখ্য অপশন থেকে তিনি উনিশ দ্বারা বিভাজ্য প্রমান করা যায় এমন অপশনগুলো গ্রহণ করেছেন- বাকিগুলো ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু কুরআনে যদি আসলেই ঊনিশের মিরাকল থেকে থাকে তাহলে তা সব কিছুতেই থাকবে- শুধু মাত্র কয়েকটি জিনিসে নয়।

তারপরও কথা থেকে যায়। উনি তো অনেক কিছুই মেলাতে সক্ষম হয়েছেন। সেগুলো কী আসলেই মিলেছে? সেগুলো কি আসলেই ঊনিশ দ্বারা বিভাজ্য? চলুন দেখি পরবর্তী আলোচনায়।

এই অংশে, প্রমানিত শর্তগুলোও অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নয় তা দেখানো হবে। সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবচ্ছেদের জন্য একটি নিয়েই আলোচনা করবো।

ডক্টর রাশেদ খলিফা বলেন,

“The key to Muhammad’s perpetual miracle is found in the very first verse of the Qur’an, `IN THE NAME OF GOD, MOST GRACIOUS, MOST MERCIFUL = BiSM ALLaH, AL-RaHMaN, AL-RaHIM’…

মুহাম্মদের বলে যাওয়া- কুরআন যে একটি মিরাকল তার সন্ধান লাভ করা যায়, কুরআনের সর্ব প্রথম আয়াতেই। IN THE NAME OF GOD, MOST GRACIOUS, MOST MERCIFUL = BiSM ALLaH, AL-RaHMaN, AL-RaHIM’…

এই প্রথম আয়াতের অক্ষর গণনা করে (ইংরেজীতে শুধু মাত্র বড় হাতের অক্ষর) আমরা দেখতে পাই যে, এখানে ঊনিশটি অক্ষর রয়েছে। এবং এতে যে শব্দগুলো রয়েছে সেগুলো প্রত্যেকটি ঊনিশের গুনিতক। যেমন প্রথম অক্ষর, `ISM’ ঊনিশ বার; দ্বিতীয় শব্দ, `ALLaH’ ২৬৯৮ বার, যা ১৯ এর গুনিতক (১৯X১৪২) ; তৃতীয় শব্দ , `AL-RaHMaN ‘ আছে ৫৭ বার, (১৯ X ৩); সর্বশেষ শব্দ , `AL-RaHIM’ আছে ১১৪ বার (১৯ X ৬)”

ডঃ খালিফা দাবী করেছেন, কুরআনের এই অলৌকিকত্বে মানুষের কোন হাত নেই। অথচ, “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যে যে ১৯টি বর্ণ আছে, এই মৌলিক দাবীতেই মানুষের হাত আছে। আরবি বাক্যটিকে ইংরেজিতে প্রতিবর্ণীকরণ করার সময় আমরা যদি স্বরবর্ণ বাদ দেই, তাহলে বাক্যটি এরকম দাঁড়ায়: “BSM ALLH ALRHMN ALRHIM”, উল্লেখ্য আরবীতে স্বরবর্ণগুলো লেখা হয় না, পড়ার সময় ধরে নেয়া হয়। এই প্রতিবর্ণীকৃত বাক্যে বর্ণের সংখ্যা ১৯। কিন্তু, আরবিতে “তাশদিদ” বলে একটি প্রতীক আছে, কোন বর্ণের উপর সে প্রতীক থাকলে তা দুই বার উচ্চারণ করতে হয়। “ALLAH” শব্দের দ্বিতীয় “L” এর উপর একটি তাশদিদ আছে। সেক্ষেত্রে এই লাম দুইবার উচ্চারণ করে এভাবে লেখা যেত (বা এভাবে লেখা উচিত): “ALLLAH”; আর বর্ণ সংখ্যা হয়ে যেত ২০টি।

তাশদিদ যুক্ত বর্ণ দুইবার ধরা হয়েছে নাকি একবার ধরা হয়েছে, সে বিষয়টি ডঃ খালিফা কোথাও স্পষ্ট করে বলেননি। এছাড়া যে স্বরবর্ণগুলো লেখা হয় না, কিন্তু পড়ার সময় ধরা হয় সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা বা বাদ দেয়ার ব্যাপারটাও তিনি স্পষ্ট করেননি।

পরবর্তী সমস্যা “BISM” শব্দ নিয়ে। এটি প্রকৃতপক্ষে দুটি শব্দের সমন্বয়: “Bi” (এক্ষেত্রে এই শব্দের অর্থ “মধ্যে”) এবং “ISM” (অর্থ “নাম”)।

ডঃ খালিফা সবসময় আরবি বর্ণক্রম ব্যবহারের কথা বলেছেন। এই আরবি বর্ণক্রম ব্যবহার করে “ISM” শব্দটির অনুসন্ধান করা যেতে পারে। আবদুল বাকি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কুরআনের একটি নির্ঘণ্ট ঘেটে এই আশ্চর্যজনক তথ্য পাওয়া গেছে:

“BiSM” শব্দটি কুরআনের প্রথম আয়াতেই আছে। এই শব্দটি কুরআনের মাত্র তিনটি স্থানে উল্লেখিত হয়েছে: ১:১১, ১১:৪১ এবং ২৭:৩০।

কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কেবল “ISM” শব্দটি কুরআনে মোট ১৯ বার উল্লেখিত হয়েছে।

কিন্তু তৃতীয় আরেকটি তালিকা আছে। “ISMuHu” শব্দের অর্থ “তার নাম”। এটি আরবিতে একটি অখণ্ড শব্দ হিসেবে লেখা হয়। কুরআনে এটি ৫ বার এসেছে।

সবগুলো ফলাফল যোগ করলে পাওয়া যায়: ৩ + ১৯ + ৫ = ২৭, স্পষ্টতই এখানে ১৯ এর সাংখ্যিক তাৎপর্য আর থাকছে না।

আমাদের সামনে আরও অনেকগুলো অনুমানের ব্যাপার আছে, যেগুলো সম্বন্ধে ডঃ খালিফা কোন ব্যাখ্যা দেননি। কোন বিবেচনায় তিনি তিনবার উল্লেখিত “BiSM” শব্দটি গণনা থেকে বাদ দিয়েছেন? যে শব্দ নিয়ে গবেষণা করছিলেন সেই শব্দটিই বাদ দেয়ার পিছনে কোন যুক্তিই দেখাননি। আর কেবল বিচ্ছিন্ন “ISM” শব্দ গণনার ব্যাপারেই বা তিনি কোন নীতি অনুসরণ করেছেন? সর্বনামযুক্ত বিশেষ্য “ISMuHu” কেই বা কেন বাদ দিলেন?

তাহলে কি এই তিন ধরণের শব্দের অর্থের মধ্যে কোন ব্যাখ্যা লুকিয়ে আছে? হয়ত বা, যেসব স্থানে এই শব্দগুলোর মাধ্যমে কেবল আল্লাহ্‌র নাম বোঝানো হয়েছে সেগুলোকেই ডঃ খালিফা গণনা করেছেন। কিন্তু নিম্নোক্ত দুটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে এই ধারণাও ভুল বলে প্রমাণিত হয়। সূরা মায়িদার ৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“…but pronounce God’s name (ISM ALLaH) over it…”
এবং সূরা বাক্বারার ১১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“And who is more unjust than he who forbids in places for the worship of God, that His name (ISMuHu) should be pronounced?”

মূল আরবি বা ইংরেজি অনুবাদ কোনটিতেই এই শব্দগুলোর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই, একটি ছাড়া: এখানে “God’s name” সরাসরি বিধেয় এবং “His name” উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আরবি বর্ণক্রমেএই শব্দ দুটির লেখ্য রূপের ভিত্তিতেই কেবল দুটিকে ভিন্ন স্থানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

আরও কথা আছে, কিসের ভিত্তিতেই বা ডঃ খালিফা এই শব্দগুলোর বহুবচন রূপগুলো বাদ দিলেন? এগুলোর বহুবচন কুরআনে আরও ১২ বার এসেছে। বিশেষত সূরা আ’রাফের ১৮০ নম্বর আয়াতের কথা উল্লেখ করা যায়, “The most beautiful names belong to God…”

বহুবচন বাদ দেয়ার কেবল একটি কারণই থাকতে পারে। সেটি হচ্ছে, বহুবচনগুলো গণনা করলে মোট সংখ্যাটি ১৯ না হয়ে ৩৯ হয়ে যায়।

উপরন্তু ALLAH শব্দটির ব্যবহারের ধরণের ব্যাপারেও সন্দেহ আছে। এই শব্দের সাথে যখন “Li” প্রসর্গ যুক্ত হয় তখন দুইয়ে মিলে “LiLaH”বা “LiLLah” শব্দের জন্ম দেয়। এখানে প্রসর্গটির অর্থ “প্রতি”। এই লিল্লাহ শব্দেও একটি লাম এর উপর তাশদিদ আছে। (উদাহরণ হিসেবে ২:২২ আয়াতটি দেখা যেতে পারে।) ব্যকরণ অনুসারে এই প্রসর্গযুক্ত শব্দটি ঠিক “BiSM” এর মত করেই ব্যবহৃত হয়। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি ডঃ খালিফা এবার প্রসর্গযুক্ত শব্দগুলো বাদ দিয়ে কেবল মূল শব্দটিই গণনা করবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এবার ঠিকই “LiLaH” গুলো গণনা করেছেন, কারণ এগুলো গণনা না করলে মোট সংখ্যাটা ২৬৯৮ হত না এবং তা ১৯ দিয়েও বিভাজ্য হত না। এ ধরণের যাদৃচ্ছিক ব্যবহারের পেছনে কি আদৌ কোন যুক্তি আছে?

“ISM” এর সাথে “Bi” যুক্ত হয়ে যখন “BiSM” হয়েছে তখন ডঃ খালিফা সেটা বাদ দিয়েছেন, কিন্তু “ALLAH”-র সাথে “Li” যুক্ত হয়ে যখন “LiLaH” হয়েছে তখন তিনি সেগুলো ঠিকই গণনা করেছেন; কেবল ১৯ দিয়ে বিভাজ্য একটি সংখ্যায় পৌঁছানোর জন্য।

AL-RaHMaN শব্দের ক্ষেত্রে কোন দ্বিধা নেই। এটি কুরআনে ৫৭ (১৯ X ৩) বারই উল্লেখিত হয়েছে। লেখকও এমনটিই বলেছেন।

এবার AL-RaHIM শব্দের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। ডঃ খালিফা বলেছেন, এই শব্দ মোট ১১৪ (৬ X ১৯) বার এসেছে। কিন্তু আবদুল-বাকির নির্ঘণ্ট অনুসারে কুরআনে এই শব্দটি হুবহু এই রূপে মাত্র ৩৪ বার উল্লেখিত হয়েছে। অর্থাৎ এই ৩৪ স্থানেই শব্দের আগে “AL” নামক ডেফিনিট আর্টিক্‌লটি আছে। কিন্তু বাকি ৮১ স্থানে শব্দের আগে কোন ডেফিনিট আর্টিক্‌ল নেই। এখন আর্টিক্‌ল সহ এবং ছাড়া সবগুলোই যদি আমরা গণনা করি, তাহলে মোট সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১১৫। এক বার এর বহুবচনও উল্লেখিত হয়েছে। তাহলে মোট ১১৬ হয়ে যাচ্ছে। ১১৫ এবং ১১৬, কোনটিই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।

ডঃ খালিফার এই আবিষ্কারকে অনেকেই সম্পূর্ণ অনুমোদন দিয়েছেন। ডঃ Bèchir Torki এ নিয়ে রীতিমত ৪ পৃষ্ঠার এক বিশাল সারাংশ রচনা করেছেন। এই সবগুলো অনুমোদন পত্র বা সারাংশতেও উপরে উল্লেখিত চারটি মৌলিক অনুমিতির ব্যাপার সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

ডঃ খালিফা “ALLAH” শব্দে তাশদিদের কারণে দ্বিত্ব হয়ে যাওয়া লামগুলো গণনা থেকে বাদ দিয়েছেন, আবার অলিখিত স্বরবর্ণগুলোও বাদ দিয়েছেন।

তিনি “ISM” এর মোট সংখ্যা গণনা করতে গিয়ে “BiSM” শব্দটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন, কিন্তু ওদিকে আবার “ALLaH” শব্দ গণনা করতে গিয়ে “LiLaH” অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এছাড়াও তিনি তার গণনা থেকে “ISMuHu” বাদ দিয়েছেন, যদিও ব্যকরণগত দিক দিয়ে এটি হুবহু “ISM” এর মতোই অর্থ বহন করে।

এছাড়া তিনি “ISM” এবং “AL-RaHIM” শব্দের বহুবচন রূপগুলো বাদ দিয়েছেন।

উপরন্তু তার “AL-RaHIM” শব্দের গণনা ভুল হয়েছে।

সুতরাং মিরাকল প্রমানের জন্য খলিফা নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন- মিল করার জন্য। কিন্তু সে ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেন নি। তার অন্যান্য সিদ্বান্তগুলোও ভুলে ভরা। সেগুলোও আলাদা করে প্রমান করা সম্ভব।

এ ধরণের সংখ্যাতাত্ত্বিক খেলা বিজ্ঞানবহির্ভূতঃ-

সংখ্যা নিয়ে এ ধরণের ধাঁধাময় খেলা অনেক প্রাচীন। সেই পিথাগোরাসের আমল থেকেই মানুষ এসব করে আসছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হওয়ার পর অনেক কিছুর মত এটাকেও বিজ্ঞানের অঙ্গন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছে। এই অপবিজ্ঞানের নাম দেয়া হয়েছে Numerology তথা সংখ্যাতত্ত্ব। গণিত থেকে সংখ্যাতত্ত্ব সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে; যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে জ্যোতিষ শাস্ত্র আলাদা হয়েছে এবং রসায়ন থেকে আলকেমি আলাদা হয়েছে। সংখ্যাতত্ত্ব তাই একটি পরিপূর্ণ অপগণিত বা অপবিজ্ঞান। বিজ্ঞানের কুসংস্কারাচ্ছন্ন অপব্যবহারকেই অপবিজ্ঞান বলা হয়।

গাণিতিক মিরাকলের আরও উদাহরণঃ-

মূলত চাইলে কুরআনে সাত কিংবা অন্য যেকোন সংখ্যার মিরাকল বের করা সম্ভব। সম্ভব পৃথিবীর যেকোন কিছুতেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে এমন একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা বেশ জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে- এই ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে আমেরিকার ভবিষ্যতের সকল ঘটনা আগে থেকেই বলে দেওয়া সম্ভব। খুব রিসেন্টলি টুলের (Tool) একটা গানে (Lateralus) ফিবোনাক্কি সিরিজের সুন্দর প্রয়োগ আছে। সব রকম কবিতাতেই গণিতের খেলা দেখা যায়, সেই ঋগ্বেদ থেকে শুরু করে। পিকাসোর ছবিতে পাওয়া যায় ত্রিমাত্রিক জ্যামিতির খেলা। গস বা অয়লারের মত গণিতবিদের জীবনী পড়লে মানুষের গাণিতিক ক্ষমতায় আপনার আরো আস্থা বাড়বে।

আরেকটি উদাহরণ হতে পারে ইহুদিদের বিখ্যাত শেমহামেফোরাস। ইহুদি ধর্মবেত্তার সেই মধ্যযুগ থেকেই সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে মত্ত। সে সময়ই তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহ-র দ্বিতীয় গ্রন্থ এক্সোডাস থেকে স্রষ্টার রহস্যময় নাম বের করেছিল। এক্সোডাসের ১৪:১৯-২১, এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে তারা স্রষ্টার ৭২টি নাম উদ্ভাবন করেছে। এই প্রতিটি আয়াতে ৭২টি করে বর্ণ আছে।
– প্রথমে প্রথম আয়াতটি ডান থেকে বামে লিখেছে
– তারপর দ্বিতীয় আয়াত বাম থেকে ডানে লিখেছে
– সবশেষে তৃতীয় আয়াত আবার ডান থেকে বামে লিখেছে
– এই লেখার কাজটি ১৮ কলাম ও ১২ সারিতে করা হয়েছে। ১৮ গুন ১২ = ৭২ গুন ৩
– এবার ১২ টি সারিকে ৩ সারি ৩ সারি করে ভাগ করেছে। মোট চারটি ভাগ হয়েছে যার প্রতিটিতে ১৮ কলাম ও ৩ সারি।
– প্রতি ভাগের একটি কলাম দ্বারা স্রষ্টার একটি তিন অক্ষরের নাম পাওয়া গেছে। এভাবে মোট ১৮ গুন ৪ = ৭২ টি তিন অক্ষরের নাম পাওয়া গেছে।
– চার ভাগের প্রতিটিতে আবার একটি বর্ণের সাথে মিলিয়েছে। এতে স্রষ্টার একটি চার অক্ষরের নাম পাওয়া গেছে।
– এই যে চার অক্ষরের নাম তার সঠিক উচ্চারণ জানার চেষ্টা করছে তারা। এ নিয়েই তারা সংখ্যাতত্ত্বের খেলা খেলছে, এখনও। এই শব্দকে ডিজিটে নিলে নাকি ২১৬ ডিজিটের একটা নাম পাওয়া আছে। ড্যারেন আরনফ্‌স্কির “পাই” সিনেমায় এই ২১৬ ডিজিটের সাথে পাই এর সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।

রাশাদ খলিফাকে দরকারী সাইজ মুমিন মোসলমানরা পরে ঠিকই করেছেন। তিনি যে ভন্ড হেন তেন অনেক অনেক কিছুই পরবর্তীতে তারা চিৎকার করে বলেছেন। আবার তারাই “কুরআনকে অন্যরকম কিছু একটা” প্রমাণের জন্য রাশাদ খলিফার এই মিরাকল নাইন্টিন ব্যবহার করছেন আজ অবদি। তা করুক। আমার মতো কেউ যেন এই মিরাকল নাইন্টিন দেখে কুরআনের গ্রন্থকে অলৌকিক না ভেবে বসেন- সে জন্যই এই লেখা।

তথ্যসূত্রঃ অনেক কিছুই হুবুহু অনুবাদ করা হয়েছে। সাইটের লিংকটা পেয়েছিলাম অভিজিৎদার কাছ থেকে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি এখন খুঁজে পাচ্ছিনা। আমার কৃতজ্ঞতা থাকলো।

পূর্বপ্রকাশঃ ক্যাডেট কলেজ ব্লগ