ডঃ বিপ্লব পাল,
অসম্ভব ভাল একটি সাম্প্রতিক হট্ ইস্যু নিয়ে লিখেছেন। কোন যুক্তিতেই ভারত সরকারকে এব্যাপারে সমর্থন করা সমিচীন নয়। আমরা বাংলাদেশে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে জর্জরিত। এমতাবস্থায় কোন ভাবেই নতুন করে গলায় ফাঁস লাগানো কাম্যনয়। আমি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা। আমার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কয়েকটি মাতঙ্গিনী নদীর মৃত্যু। বেশী নয়, এই আমার ছোট বেলা আর এখন। এই হলো পার্থক্য। যে প্রমত্য পদ্মাকে দেখেছি! আজ তার কি দশা! এই যে দেখুন আমাদের প্রাণপ্রিয় পদ্মার মুমূর্ষু মুখ! এটি আমার কম্পিউটারের স্ক্রীন! প্রতিদিন সকালে এই আয়নায় আমি আমার বেদনা-বিধুর অথচ সুন্দরতম মাতৃমুখ দর্শন করি আর ভাবি তার কুলাঙ্গার সন্তানদের কথা! আর ভাবি জোচ্চোর দুর্মুখদের কথা যারা তাকে এইভাবে ক্লিষ্ট এবং পিষ্ঠ করেছে!

 সাম্প্রতিক পদ্মা !

সাম্প্রতিক পদ্মা !

ছোট বেলায় বাবা-মা’র হাত ধরে বেড়াতে যেতাম জেঠা-বাড়ি (মানে আমাদের গ্রামের বাড়ি)। পথে পাড়ি দিতাম যমুনা। এপাড়ে সমভবতঃ ফুলছড়ি ঘাট থেকে ওপাড়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট। স্টীমারে দিতাম পাড়ি। ট্রেনে ছিলো যাতায়াত। পরবর্তীতে বাসে অবশ্য আরিচা-নগরবাড়ি দিয়ে যেতাম। আমার আজও মনে পড়ে যমুনার ভয়াল রুদ্ররূপের কথা। এপাড়-ওপাড় দেখা যেতনা। সর্ব্বত্রই জল আর জল! নদীর তীর ধরে যখন স্টীমার এগুতো তখন দুচোখ ভরে দেখতাম জল-জঙ্গলের মাখামাখি! এখনো অনুভব করি বুনো আর জলের মেছো গন্ধের মিশেল সোঁদা গন্ধ। আজ আর তা নেই। কোথায় যেন সব হারিয়ে গিয়েছে। ফসলের ক্ষেত গুলো ফেটে চৌচির। ধুলো আর ধুলো। কিছু বাড়ি-ঘর আর দিগন্ত জুড়ে ধু ধু বালি। সবুজ ধুয়ে মুছে যেন বিছিয়ে দেয়া হয়েছে বিস্তীর্ন গেরুয়া চাদর। সেখানে প্রাণের স্পর্শ, আবেগ যেন আর নেই। কতশত-সহস্র মানুষের পেশা পরিবর্তিত হয়েছে ফসলী জমি ধ্বংসের কারনে তার ইয়াত্তা বোধ করি নেই। আমি জানিনা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কিভাবে এটি মোকাবেলা করবে, কি অর্জিত হবে কুটনৈতিক দেন-দরবারে। তবে আমার আন্তরিক মত হলো আমি প্রকৃতি হাড়িয়ে বিদ্যুৎ চাই না। আপনার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই বিদ্যুতের বিকল্প খোঁজা হোক, সোলার প্যানেল কিংবা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হোক। আর প্রকৃতি ধ্বংস নয় কাম্য নয় আর একটি নদীরও মৃত্যু। এ আমাদের দেশ। প্রাণের জীয়ন-কাঠি যেখানে প্রথিত!