সদা সত্য কথা বলিবে।

আতিক রাঢ়ী

একটি বিষয় নিয়ে আনেক দিন থেকেই লিখবো লিখবো ভাবছি, কিন্তু ঠিক এটে উঠছি না। মানে বেশী মোটা গাছে চড়তে গেলে যা হয় আরকি। আজকেও ঠিক মত পারবো কিনা জানিনা। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি ? দেখা যাক……………

বিষয়ঃ মূল্যবোধ ও চিরন্তনতাঃ

আমার সাবেক বসের সাথে কথা হচ্ছিলো মূল্যবোধ নিয়ে। উনি বলছিলেন কিছু মূল্যবোধ আছে যা চিরন্তন। উদাহরন স্বরূপ বলেছিলেন, যত কথাই বলো “সদা সত্য কথা বলিবে।”এটা একটা চিরন্তন মুল্যবোধ। “যত কথাই বলো” এটা হচ্ছে উনার কথার মুদ্রা দোষ। আমার কলিগ আমার পাশেই বসা ছিলো। এই জ্ঞান বিতরনের উদ্দেশ্য আমাদের দুজনার মূল্যবোধকে আরো শনিত করে তোলা। আমার ছিদ্রান্বেসী স্বভাব এই মহান বাক্য খানির ছিদ্র বের করতে তৎপর হয়ে উঠলো। আমি বললাম স্যার, সত্য কথা, সদা- কি বলা যায় ? ধরুন একজন আসহায় বিপন্ন লোক একদল সন্ত্রাসীর তাড়া খেয়ে আমার ঘরে আশ্রয় নিলো। সন্ত্রাসীরা যদি আমার কাছে লোকটির ব্যাপারে জানতে চায়, আমর কি তখন সত্যি কথা বলা উচিৎ হবে?

বলে রাখি , প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমার স্যারের দক্ষতা সীমাহীন পর্যায়ের। তিনি বললেন, তা হলে সোন- একবার একদল বাংলাদেশী গিয়েছিলো নরওয়েতে। তাদেরকে প্রশ্নকরা হয়েছিলো, মানুষের কোন কোন বৈশিষ্ট অর্যন করা উচিৎ ? তারা অনেক কিছুই লিখেছিলো। তবে Commonly যেটা সবাই লিখেছিলো, তা হলো ‘ সততা’। এতে করে নরোয়েজিয়ান পন্ডিতরা যারপর নাই বিরক্ত হয়েছিলো। কারন, তাদের মতে, সততা- প্রকৃ্তিগত ব্যাপার। একে অর্যন করতে হবে কেন ? It is by Born. এই পর্যায়ে এসে, আমার স্যারের মুখের জ্যোতি প্রায় পূর্ন চন্দ্রের কাছাকাছি এসে গেল। এবং একটি সন্ত সূলভ হাসি ঠোটের কোনায় ঝুলিয়ে রেখে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, এ বিষয়ে আর কোন কথা থাকতে পারে না।

বেরসিক আমি তারপরও প্রশ্নকরে বসলাম, স্যার নরোয়ের লোকেরা পরকিয়া করলে কি বউদেরকে সব বলে দেয় ? আমারতো মনে হয়না।

এর পরবর্তি বাক্যটি ছিলো, তুমি আসলে কি চাও? ক্রোধ চাপা দেয়ার কোন চেষ্টা ছাড়াই প্রশ্নটা আমকে করা হলো।

বলেছিলাম- শুধু বলতে চাই-কোন মূল্যবোধই চিরন্তন না।

– যেমন- স্যারের সমস্ত ব্যাক্তিত্ত্বের সমানুপাতিক হয়ে বেজে উঠলো অক্ষর তিনটা।

আমার পাশে বসা কলিগ ঘন ঘন ইসারা করছিলো – চেপে যাবার জন্য।

কিন্তু তখন আমার পক্ষে ফিরে আসার আর কোন সুযোগ ছিলোনা। চাকুরিটা বাজিরেখেই সিদ্ধান্ত নিলাম চালিয়ে যাবার।

বললাম, যেমন স্যার, আপন ভাই-বোনের মধ্যে বিয়েটাকে এখন আমরা আমাদের মূল্যবোধের বিপরীত মনেকরি।

– তাতে তোমার কি সমস্যা ?

সমস্যা হলো স্যার, আদমের ছেলে-মেয়েতে তো বিয়ে হতো।

– তখন ঐটাই ঠিক ছিলো।

– তারমানে স্যার আপনি বলতে চাচ্ছেন এখন ঠিক নাই। আমিও স্যার এই কথাটাই বলতে চাচ্ছি। তখন ঠিক ছিলো, এখন ঠিক নাই, মানে চিরন্তন না।

স্যার বললেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্যই তো কোরান নাজিল করা হয়েছে। কোরানেই বলেদেয়া হয়েছে চিরন্তন মূল্যবোধ কি হওয়া উচিত।

বললাম, কিন্তু স্যারঃ আপনার কি মনে হয় না, যুদ্ধবন্ধী প্রশ্নে কোরানের নির্দেশনার চাইতে এবিষয়ে জেনেভা কনভেনশন অনেক বেশী মানবিক ?

– কিভাবে ?

এই যেমন, কোরানে যুদ্ধবন্ধীদেরকে গনিমতের মালের সাথে একাকার করে ফেলা হয়েছে। তাদের জীবন, মৃত্যু, দাসত্ব বা স্বাধীনতা সবই বিজয়ী পক্ষের ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়েছে। যেখানে আমরা জেনেভা কনভেনশনে বলছি, নিরস্ত্র যুদ্ধবন্ধীদের উপর কোন প্রকার খারাপ আচরন করা যাবেনা এবং তাদেরকে রেডক্রসের কাছে সমর্পন করতে হবে।

উত্তর সেই চীরচেনা – তখন ঐটাই ঠিক ছিলো।

বললাম স্যার, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, এখন ঠিক নাই।

তার মানে স্যার, আপনি বলছেন- কোরানের উল্ল্যেখিত মূল্যবোধ গুলোও চিরন্তন না। সেগুলোও তখন ও এখনে বিভক্ত। তাহলে যা দাড়ালো, তা হলো- কোরান ও চিরন্তন না।

তারপরে যা ঘটেছিলো তা নাহয় নাই বা শুনলেন।

আল্লাহ আমাকে মার্জনা করুন।

আমিন।