হিন্দুত্ববাদি শক্তির পরাজয়

বিপ্লব পাল

সাম্প্রতিক পাঁচটি  বিধানসভা  নির্বাচনে কংগ্রেসের সাফল্যে অনেকেই আশ্চর্য্যযারা ভেবেছিলেন হিন্দুত্ববাদজাতিয়তাবাদের সুরসুরি দিয়ে এখনো ঘরে ফসল তোলা যায়তাদের জন্যে রাজস্থানে বিজেপির ভরাডুবি এবং দিল্লীতে কংগ্রেসের টানা তিনবার জয় বড়ই দুঃসংবাদভোটাররা এখন অনেক বেশী পরিণত-এই সব আবেগপ্রবণ ডোবার জল খাওয়ার চেয়ে নিজেদের বস্তুবাদি স্বার্থকেই তারা বেশী দেখছেগণতন্ত্রের নিয়মে এটাই ত প্রত্যাশিত-গণতন্ত্রের অভ্যেসই গণতন্ত্রকে পরিণত করেআদর্শ গণতন্ত্র বলে কিছু হয় না-বিবর্তনের পথে গণতন্ত্রের প্রতি নিষ্ঠা আস্তে আস্তে উন্নততর সমাজের জন্ম দেয় অটোকারেকশনের” মাধ্যমে 

এই জায়গাটার বিশদ বিশ্লেষন প্রয়োজ়ন২০০৭ সালে বাংলাদেশে যখন মিলিটারী ব্যাকড কেয়ারটেকার সরকারের শাসন চালু হয়- বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেকেই আমাকে বলেছিলেন-বাঁচা গেলদুই নেত্রী যা লুটপাট শুরু করেছিলেন দেশটাই বাঁচত না আমি এই  ধারনাকে সমর্থন করি না অন্য কারনে  কারনটা এই, সবাই মনে  করে গণতন্ত্র একটা পার্ফেক্ট সিস্টেম-এখানে কেও টাকা খাবে না-নেতা, নেত্রীরা দ্বায়িত্বশীল হবে আমাদের গনতন্ত্র চাই-কিন্ত তা হতে হবে ইউরোপের দেশগুলির মতন মসৃণএই ধারনা ঝেড়ে ফেলতে হবেগণতন্ত্র আসলেই এমনটা সিস্টেম, যেটা ক্রমাগত বিবর্তিত হতে থাকবেযত বয়স বাড়বে তত পরিণত হবেগণতন্ত্রের এই  বিবর্তনটা সদার্থক হবেই যদি নির্বাচন অবাধ হয় অবাধ এবং কারচুপিহীন নির্বাচন হলে গণতন্ত্র প্রতিটা নির্বাচনেই কিছু কিছু না কিছু উন্নতির দিকে এগোবেভারতে এই সপ্তাহে হওয়া পাঁচটা রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি জাতিয়তাবাদের হাওয়ায় অন্তত চারটিতে জিতবে ধরেই নিয়েছিল বিধি বামনিজের রাজ্য রাজস্থানে ও হারালো বিজেপিদিল্লীতেও প্রায় তথৈবচ অবস্থাসবথেকে বড় কথা গত এক বছর ধরেই হিন্দুত্ববাদি পথ থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে বিজেপিকারন মানুষ উন্নতির স্বপ্ন দেখতে চাইছেতাদের প্রত্যাশা লেটেস্ট নকিয়া ফোনকে ঘিরে, রামকে ঘিরে না

 বাংলাদেশে ২০০৭ সালের মিলিটারী ক্যু আসলেই গণতন্ত্রকে পিছিয়ে দিয়েছেকারন ওই সময় নির্বাচন হলে বি এন পির ভরাডুবি হত এবং তার থেকে শিক্ষা নিয়েই বি এন পি ঘৃণার রাজনীতি ছেরে উন্নয়নের রাজনীতির দিকে হাঁটতে বাধ্য হতগণতন্ত্রের এই শিক্ষাটা বি এন পি পেল নামনে রাখে হবে গণতন্ত্রে দক্ষিন পন্থি শক্তি থাকবেই কিন্ত তাদের যতবার ভোটে জিততে হবে, তত ঘৃণা আর জাতিয়তাবাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাবে ফলে নতুন করে গণতন্ত্র আসার পর-আবার সেই ঘৃণা আর দুর্নীতির সাইকেল বাংলাদেশের ভাগ্যে আছে বলে মনে হচ্ছেগণতন্ত্রের সমস্যা থাকলে, সেটা গণতান্ত্রিক উপায়েই সমাধান করতে হবেগণতন্ত্র ই উন্নততর গণতন্ত্রের জন্ম দেয়-মিলিটারি দিয়ে জোর করে উন্নততর গণতন্ত্র হয় না-এসব চিন্তা একধরনের বিকৃত ভ্রান্তিবিলাস

মুম্বাই এ সন্ত্রাসবাদের হামলার  পর নানা ফোরামে ঝড় ওঠে গণতন্ত্র দিয়ে নাকি সন্ত্রাসবাদ আটকানো যাবে নাডিক্টেটরশিপ চাই বাংলাদেশের অনেকেই আমাকে বলেন, গণতন্ত্র এলে বাংলাদেশে মৌলবাদ  আরো অনেক বাড়বে-কারন ৯১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সেটা নাকি তাদের অভিজ্ঞতাভারতেও মৌলবাদের উত্থান হয়েছে গণতান্ত্রিক পথেই গণতন্ত্র কি সত্যি মৌলবাদ বা সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে ব্যার্থ

বিজেপি যে আস্তে আস্তে হিন্দুত্ববাদ থেকে দূরে সরতে বাধ্য হচ্ছে-এর একটা বড় কারন অবশ্যই গণতন্ত্রমোদিকেও উন্নয়নের পথেই ভোট চাইতে হচ্ছে কারন উনিও বুঝেছেন ঘৃণার রাজনীতি দিয়ে একবার জেতা যায়, দুবার নয়হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি থেকে সরে আসার জন্যে বিশ্বহিন্দু পরিষদ এবং আর এস এস অখুশীতারা নানান রাজ্যে বিজেপি বিরোধি আরো উগ্র  হিন্দুত্ববাদি দল তৈরী করেছেমধ্যপ্রদেশে উমা ভারতী বিজেপি ছেড়ে উগ্রহিন্দুত্বের আহ্বানে ভারতীয় জনশক্তি পার্টি খুলেছেন গত রবিবার তাদের সবকটি পার্থীই মধ্যপ্রদেশে প্রায় জামানত জব্দ হল(একটা মাত্র সিটে জিতেছে)-বিজেপি সেখানে জিতে গেল উন্নয়নের রাজনীতির জোরেবিশ্বহিন্দু  পরিষদ উমাভারতীর পেছনে থেকে কিছু করতে পারল নাএর থেকেই বোঝা যায় হিন্দুত্বের রাজনৈতিক শক্তি ক্রমশ ফিকে হচ্ছে১৯৯১-২০০১ পর্যন্ত কংগ্রেসে অন্তর্কলহ,দুর্নীতি এবং বামপন্থিদের হটকারী রাজ়নীতি হিন্দু-জাতিয়তাবাদি  শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত করেগুজরাটে দাঙ্গার পর, ভারতের সাধারন মানুষ বুঝতে পারে এরা কারা এবং ফ্যাসিবাদি শক্তির আসল রূপফলে বিজেপি কার্যত দুটো ভাগে ভেঙে যায়একটা দল তীব্র মুসলমান বিরোধিতার পথে থাকতে চাইছিল-অন্যদলটা হিন্দুত্ব বাদ দিয়ে জাতিয়তাবাদের পথে হাঁটতে চাইছিলক্ষমতাসীন নেতারা দেখলো হিন্দুত্ববাদ বা জাতিয়তাবাদ আর কোনটাই খাবে না-ফলে তারাও উন্নয়নের রাজনীতিতে আসতে বাধ্য হয়এটাই গণতন্ত্রের বিবর্তনএইসব আদর্শবাদের নামে ঘৃণার রাজনীতি করে গণতন্ত্রে বেশী দিন টেকা যায় নাআবেগ মিটে গেলে লোকে ভাত-কাপড় চাইবেই না পেলে ছুঁড়ে ফেলে দেবেযেমনটা হয়েছে রাজস্থানেবিজেপির রাজমাতা সেখানে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গুলি চালিয়েছেনকৃষকরা হিন্দু  রাজমাতা বলে তাকে ছেড়ে দেবে না কি? রাজস্থানেএবার বিজেপি সম্পূর্ণ ডুবে গেছে কৃষক বিদ্রোহেবাংলাদেশে ২০০৬-২০০৭ সালে নির্বাচন হলে একই ভাবে কৃষক-জনরোষে বি এন পি ডুবতএবং তার থেকেই দক্ষিনপন্থি শক্তি ঘৃণার রাজনীতি ছেড়েউন্নয়নের পথে হাঁটত-যেমনটা বিজেপি বাধ্য হয়েছেকিন্ত মিলিটারি ক্যু এটা বাংলাদেশে হতে দিল না তাদের আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবেএই জন্যেই আমি বারবার বলছি, বাংলাদেশের মিলিটারী ব্যাকড কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে সুশীল সমাজ যতই উচ্ছাসিত হন না কেন-বাংলাদেশের কি ক্ষতি হয়ে গেল, তারা বুঝতে পারছেন না

মুম্বাই এর সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মিডীয়াতে এত কংগ্রেস বিরোধি সোরগোল ফেলে, তাই নিয়ে ভোটের দিন দিন ঢালাও বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরেও বিজেপির ভরাডুবিমিডীয়ার প্রচারে মনে হচ্ছিল কংগ্রেস জনরোষে ভষ্ম হলে বলেবিজেপি গত দুবছর বেশ কিছু বিধানসভায় জিতলেও কংগ্রেস ধারাবাহিক ভাবেই ভালো ফল করেছে আঞ্চলিক দলগুলি এবং বামশক্তি কিছু বিচ্ছিন্ন উদাহরন ছাড়া দ্রুত জমি হারাচ্ছে দিল্লীতে সব বাম-পার্থীর জামানত জব্দজাতপাতের রাজনীতি মায়াবতীকে কেন্দ্রকরে কিছুটা হাওয়া পেলেও-একটু বিশ্লেষনের মাধ্যমে আমরা বুঝবো মায়াবতীর ভবিষ্যত ও উজ্জ্বল নয়

পৃথিবীর যেকোন গণতন্ত্রে তিনটি মুখ্য শক্তি থাকে-বাম, ডান এবং মধ্যম পন্থীভারতে এর মধ্যে আরেকটা উটকো শক্তি আছে-সেটা জাতপাতেরএবং মানব সমাজের বিবর্তন মেনেইমায়াবতী-মুলায়েম-লাল্লু-পাশোয়ানদের রাজনীতি  দ্রুত মিউজিয়ামে চালান হবে কিন্তু বাম, ডান এবং মধ্যপন্থী-এই তিনটি মূল শক্তি যেকোন সুস্থ গণতন্ত্রে থাকবে-থাকাই উচিতসেই ভিত্তিতেই আমরা দেখবো কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভিত্তি আসলেই অন্য পার্টি গুলির চেয়ে এখনো অনেক বেশী শক্তিশালীকারন ভারতীয় রাজনীতির বিবর্তনের ধারায়, তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে

আদর্শবাদ থেকে ইস্যুভিত্তিক রাজনীতিতে উত্তোরনঃ বাম এবং দক্ষিন পন্থার রাজনীতি আদর্শবাদের রাজনীতিএটাই তাদের শক্তি-আবার এটাই তাদের দুর্বলতাবাম বা হিন্দুত্ববাদি আদর্শবাদকে কেন্দ্র করে কিছু লোককে এককাট্টা করা সহজ-সমাজ বিজ্ঞানে এই পদ্ধতিকে বলে সেলফ অর্গানাইজেশনসেই জন্যে সিপিএম এবং বিজেপি র সংগঠন অনেক বেশী শক্তিশালীকারন আদর্শবাদের মোহগ্রস্থ ক্যাডার বাহিনী

আবার এই আদর্শবাদ ই তাদের দুর্বলতা  স্যার কার্ল পপারলিব্যারেল ডেমোক্রাসীর বিশ্লেষনে সেটাই বলেছিলেন –আদর্শবাদের শক্তিই তাদের দুর্বলতম দিকযেমন ধরুন প্রকাশ কারাত ভারত-আমেরিকা অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজনৈতিক আত্মহত্যা করে বসলেনকারন পরমানু বিদ্যুত ছাড়া, আগামী একশো বছরে আর কোন উপায় নেইসেটা জেনেও ভারত বর্ষের ভবিষ্যত সকার করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন, সিপিএমের সেক্রেটারী জেনারেল  আমেরিকান ভূত দর্শনের    আদর্শগত বাধ্য-বাধকতানীট ফলভারতের নতুন শিক্ষিত প্রজন্মের কাছে সিপিএম অচ্ছ্যুতএবং বেশ ঘৃণিতও বটেসাধারন লোকে এটা এখন অন্তত বোঝে, এগুলো ক্ষমতাদখলের জন্যে সার্কাস দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অত্যন্ত ভয়ংকর এক খেলারিংমাস্টার আর সার্কাসটা শুধু বদলায়

বিজেপির অবস্থা দেখুনরামসেতুর মধ্যে দিয়ে ক্যানাল তামিলনাডুর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভীষন ভাবে দরকার ছিলসেটাকে নাকি কাটা যাবে না! অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকার করে রামের ঐতিহাসিক অস্তিত্বের কুনাট্য রচনা করল বিজেপি হিন্দুত্ববাদের “ইন্টালেকচুয়াল” সাপোর্টাররা কল্পকাহিনীতে লজ্জা পেতে পারেন বলেপরিবেশ রক্ষার কুযুক্তি দিলেনযেখানে ওই প্রোজেক্টের এনভাইরনমেন্টাল এসেসমেন্ট অনেক আগেই বলে দিয়েছে-কোন ক্ষতি নেইঠিক বামপন্থীরা যেমন ভারতের জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন-নিউক্লিয়ার পাওয়ার না হলেও চলবেএসব ই কুযুক্তিদেশের স্বার্থের ক্ষতি করে ক্ষমতা দখলের লোভনেতারা বোঝেন নি-দলের ব্রেইনওয়াশড ক্যাডারবাহিনীও হুক্কাহুয়া করেছেনিজেদের ক্ষতি, আম জনতা ঠিক ই বুঝেছে

বিজেপি তাও দায়ে পড়ে একটু একটু করে হিন্দুত্ববাদি আদর্শবাদ থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হচ্ছেসিপিএম পশ্চিম বঙ্গে অনেক দিন আগেই ডিগবাজি খেয়ে পুঁজিবাদের মাখন খাওয়া শূরু করেছেকিন্তু আদর্শবাদ থেকে পিছু হঠলে, পার্টির মধ্যেই দ্বিচারিতা এবং ভন্ডামি শুর‌ু হবে চুড়ান্ত মাত্রায়কারন সেলফ-অর্গানাইজশনের শক্তি-অর্থা যে আদর্শবাদের টানে    পার্টিতে লোকজন আসত-দল গঠনের সেই ভিত্তি ভূমিতেই আঘাত লাগবে ফলে পার্টি ভাঙবেবিক্ষুব্ধ ক্যাডারের সংখ্যাও বাড়বে  এই ভাবেই আরো বিশুদ্ধ বামপন্থী আদর্শের সন্ধানে মাওবাদীদের পালে হাওয়া লেগেছে  মাওবাদি-সিপিএম গৃহযুদ্ধে পশ্চিম বঙ্গে এখন ঘোর অমবশ্যাঅন্যদিকে বিজেপি হিন্দুত্ববাদের লাইন ছেড়েছে বলে সতী-সাদ্ধীরা হিন্দু বেলটে নতুন উগ্রহিন্দুত্ববাদি দল খুলছেনতাতে অবশ্য বিজেপির খুব ক্ষতি হয় নি এবারকিন্তু এদের কেও কেও মসজিদে বোমাও মারছেন  এতে একটা কাজই হয়েছেমালগাঁও বিষ্ফোরনের সাথে উগ্রহিন্দুত্ববাদিরা জড়ানোই-মুম্বাই বিষ্ফোরনের পরেও লোকে বুঝেছে, হিন্দুত্ববাদিরা ক্ষমতা দখল করলে উপদ্রব আসলেই আরো বাড়তে পারে

আদর্শবাদ ভিত্তিক রাজনীতির সমস্যা কোথায়হিন্দুত্ববাদ বা কম্যুনিজম -আদর্শবাদের নাম যাই হোক না কেন- এসব কিছুই রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানের অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগণতন্ত্রের আসল কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের সমস্যার সমাধান  করা কিন্তু প্রতিটা সমস্যাই আলাদাএই মুহুর্তে ভারতের মূল সমস্যা হচ্ছে -দারিদ্র, অশিক্ষা এবং  পরিকাঠামো দারিদ্র এবং নিরক্ষরতা দূরীকরনে সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতির বিকল্প নেইআবার পরিকাঠামো চাঙ্গা করতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ নিতেই হবেচাকরী সৃষ্টি করতে গেলেও ধণতন্ত্রের পথেই হাঁটতে হবেএটাই আসলে ইস্যুভিত্তিক রাজনীতির সুবিধা-যেটা কংগ্রেসের আছেকারন কংগ্রেস রোগ বুঝে ঔষুধ দিতে পারে-সমাজতন্ত্র বা ধণতন্ত্র দুটোই কংগ্রেসে আদৃত নীতি৯১ সালে ভারতের অর্থনীতিকে দেওলিয়া করে দেওয়া বিজেপি-সিপিএম-জনতা গ্যাং এর হাত থেকে একমাত্র মনমোহন সিং ই দেশকে বাঁচাতে পারতেন বাজার অর্থনীতি, সংস্কারের পথ খুলে দিয়েতখন সিপিএমের মতন সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটলে ভারত আজ আর্জেন্টিনার মতন পথে বসত

অর্থা এই ইস্যুভিত্তিক রাজনীতি করার ম্যাচুরিটি এখন ভারতীয় ভোটারদের এসে গেছেতাদের জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ব, লেনিনিজম শুনিয়ে লাভ নেই

নেতা এবং নেতৃত্বঃ এই মুহুর্তে কংগ্রেসে দেশ চালচ্ছেন প্রনব, চিদাম্বরম এবং মনমোহনশিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা এবং বিচক্ষনতার মাপকাঠিতে, অরুন জেটলি, আদবানি বা প্রকাশ কারাত কি এদের ধারে কাছে আছেনজি-২০, পৃথিবীর সেরা কুড়িটি দেশের বৈঠকে, সমস্ত রাষ্ট্রনেতা পৃথিবীর অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে মনমোহনের পরামর্শ মেনে নিয়েছেএমন কি আমেরিকাও মনমোহনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেএর কারন আমাদের প্রধানমন্ত্রী  মনমোহন সিং পৃথিবীর একজন সেরা অর্থনীতিবিদ ও বটেভারতবাসী হিসাবে এট পরম গর্বেরচিদাম্বরন হার্ভাডের এম বি এ  অর্থা পৃথিবীর সেরা বিজনেস স্কুলের ছাত্র  ভারতীয় হিসাবে সেখানে ঢুকতে গেলে অসম্ভব মেধাবী হতে হয়-কারন পৃথিবীর সমস্ত কর্পোরেট এবং বিজনেস লিডাররা  এখানে পড়তে আসেনওবামা সহ আমেরিকার অনেক প্রেসিডেন্ট ই  হার্ভাডের প্রাত্তন  ছাত্র  প্রনব মূখার্জির শিক্ষাগত যোগ্যতা হয়ত  এদের সমান না-কিন্তু তার মেধা এবং বুদ্ধিকে কে অস্বীকার করবে? ১৯৮৪ সালে ইউরোমানি ম্যাগাজিনের ভোটে  তিনি পৃথিবীর সেরা  ফাইন্যান্স মিনিস্টার নির্বাচিত হোনএদের সাথে ভারতের বাকী রাজনৈতিক নেতাদের যোগ্যতার পার্থক্য এতটাই বেশী-সে আলোচনা করাটাই অর্থহীন

এরা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বে কিভাবে এলেন এবং কেন বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুসের মতন লোককে আওয়ামী লিগ ঈর্ষার চোখে দেখে দূরে সরিয়ে রাখে , সেটার ও বিশ্লেষন প্রয়োজনএর মূলকারন দ্বিস্তরীয় ভারতীয় পার্লামেন্ট-রাজ্যসভা এবং লোকসভা মনমোহন এবং চিদাম্বরন এর মতন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যাক্তিরা কখনোই মাঠে নেমে রাজনীতি করে একটা দেশের মন্ত্রী হত পারবেন না ডবল টায়ার সিস্টেম দরকার যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশের সুশীল সমাজকে নির্বাচিত করে রাজ্যসভার মতন একটা অভিভাবক সভা” সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেএই অভিভাবক সভার মধ্যে দিয়েই কিন্তু মনমোহন, প্রণব এবং চিদাম্বরন এসছেনবাংলাদেশের মতন এক টায়ারের পার্লামেন্ট হলে ইউনুসের মতন বিচক্ষন ব্যাক্তিত্ব কোনদিন ই বাংলাদেশ চালানোর সুযোগ পাবে নাভারত যখন তার সেরা অর্থনীতিবিদকে দেশ চালানোর সুযোগ দিচ্ছে-বাংলাদেশের ও ইউনুস বা দেশের সেরা অর্থনীতিবিদকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিতসেই জন্যে আমি অনেক দিন থেকে বলে আসছি বাংলাদেশে দ্বিস্তরীয় পার্লামেন্ট চালু করতে যাতে সুশীল সমাজ দেশপরিচালনায় সরাসরি অংশ নিতে পারে

পরিবারতন্ত্রের বিবর্তনঃ  সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীকে শুধু গান্ধী বলে গালাগাল দেওয়াটা আজকাল মর্ডানিস্ট ভারতের লেটেস্ট ফ্যাশনসোনিয়া গান্ধী ইটালিয়ান এবং খ্রীষ্ঠান-তাই হিন্দু বিরোধি-ইত্যাদি কুসা প্রচারও অব্যাহত  পরিবারতন্ত্রের আমিও বিরুদ্ধেকিন্ত দুটো ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে

(১) পৃথিবীর প্রায় সবদেশের গণতন্ত্রে কিছু পরিবারের প্রভাব আছে আমেরিকা এবং বৃটেনেও আছেএটা আসলেই রাজতন্ত্র থকে গণতন্ত্রের বিবর্তনের ধাপে এসেছেযা আস্তে আস্তে চলে যাবেকিন্ত এর বিবর্তনটাও আমাদের দেখতে হবে২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধী কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদ মনমোহনকে দিয়ে নিজে পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছেন৩০ বছর আগে এটা ভাবা যেত না ইন্দিরা গান্ধীনিজে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেরে দেশের খ্যাতনামা কোন অর্থনীতিবিদকে প্রধানমন্ত্রী করছেন-কারন দেশ চালাতে সেই যোগ্যতমএটা বাংলাদেশেও ভাবা যায় নাশেখ হাসিনা মহম্মদ ইউনুসকে যেচে প্রধান মন্ত্রী করছেন  বরং ইউনুস রাজনীতিতে নামবেন শুনেই শেখ হাসিনার ১০৫ ডিগ্রি জ্বর উঠে সুদখোর বলে ইউনুস বিরোধি ডায়ালোগ মারতে থাকেন

এটাই কিন্তু বদলাতভোটারদের লাথি দুতিন-বার খেলেই বাংলাদেশের নেত্রীরা নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যে বাধ্য হতেন পার্টিতে দেশের কৃতি সন্তানদের নিয়ে আসতেতবে তার জন্যে দ্বিস্তরীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশে আগে দরকার

(২) ভারতে যেসব নেতারা সোনিয়া গান্ধীর বিরোধিতা করছেন তাদের চরিত্রটাই বা কি?

সোনিয়া গান্ধী যেভাবে প্রধানমন্ত্রীত্ব ফিরিয়ে দিয়েছেন-একবার না, দুবার, ভারতের কোন রাজনৈতিক নেতা সেটা করে দেখিয়েছেনরাজনীতিবিদ মুখে কি বললো বা তার জাত,ধর্ম, দেশ, পরিবার দিয়ে বোঝা যায় নাব্যাবসায়ী যেমন চেনা যায় টাকায়, লেখক লেখায়, তেমন রাজনীতিবিদ চেনা যায় ক্ষমতার সাথে  সম্পর্কেপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে আদবানী বনাম বাজপেয়ীর খেয়োখেয়ী কি আমরা জানি না? আর যেসব বিজেপির নেতা সোনিয়া গান্ধীর সমালোচনা করছেন, তারা প্রধানমন্ত্রীত্ব দূরের কথা একটা এম পি সিটের জন্যে পাগল! প্রকাশ কারাতের কথা ছেড়েই দিলামউনিত, নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে, ভারত বর্ষের চূড়ান্ত ক্ষতি করতেও রাজী আছেনঅথচ সোনিয়া গান্ধী, বিচক্ষন লোকের হাতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন-যার পরামর্শ গোটা পৃথিবী নিচ্ছে

 সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের হাল ধরার পর, কংগ্রেসের পারফর্মান্সটা কি এরা দেখছেন? এরা কি দেখতে পাচ্ছেন না, কংগ্রেসের গোষ্ঠিদ্বন্দ গুলি আস্তে আস্তে সোনিয়া গান্ধী পরিষ্কার করেছেন বেশ বিচক্ষনতার সাথে?  এবং এই মুহুর্তে কংগ্রেস বিজেপির চেয়ে অনেক বেশী ডিসিপ্লিইন্ডএই ডিসিপ্লিনটা রাজস্থানে কংগ্রেসকে জিতিয়েছেবিজেপির যেখান বিক্ষুব্ধ পার্থী ছিল ৬৯, কংগ্রেসে ছিল গুটী কয়েক মধ্যপ্রদেশে হারলেও রাহুল গান্ধী অনেক নতুন মুখ পার্টিতে এনেছেনমোদ্দা কথা কংগ্রেস তরুন প্রজন্মের কাছে সব সময় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেকংগ্রসে তাও রাহুল গান্ধী, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতন নতুন মুখ আছেতারা আবার আরো নতুন প্রজন্মকে তুলে আনছেনঅন্যান্য পার্টিতে সব বাতিল বুড়োদের দল

 অর্থা এই মুহুর্তে কংগ্রেসের ট্রাম্পকার্ড চারটি-

   –ইস্যু ভিত্তিক রাজনীতি-প্রবলেম অনুযায়ী সল্যুউশন

 —উচ্চস্তরের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পেশাদারদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা

 –সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে, পার্টির সংগঠনে ডিসিপ্লিন

 –রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে তরুন প্রজন্মের আশা আকাক্ষার কাছাকাছি পৌঁছানো

এবং এর কোনটিই কংগ্রেসের অবদান না গণতান্ত্রিক বিবর্তনের পথেই এটা এসে গেছেকংগ্রেসে সবার আগে এসেছে কারন তারা মধ্যমপন্থী হওয়াই অনেক বেশী ফ্লেক্সিবলএগুলো বাকি সব পার্টিতেই আসবেসব দেশেই আসবেকিন্তু তারও আগে গণতন্ত্রকে সুযোগ দিতে হবে

বিদ্রঃ আমি বাংলাদেশের রাজনীতি কিছু রেফারেন্সের জন্যে নিয়ে আসলামকারন  গণতন্ত্রের বিবর্তন বুঝতে তুলনামূলক আলোচনা খুবই দরকার