মুসলিম বিজ্ঞানী একটি এমন শব্দবন্ধ যা মুসলমানেরা গর্বের সাথে উচ্চারণ করে প্রমাণ করতে চায় যে ইসলাম বিজ্ঞান বিরোধী নয়। কিন্তু সত্যি কি তাই? এইসব মুসলিম বিজ্ঞানীরা কি সত্যই প্রকৃত মুসলমান ছিলেন? তারা কি প্রকৃত মুসলমানের মত কথা বলতেন? এই লেখায় তেমন কয়েকজন বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানীর উক্তি নিয়ে আলোচনা করব। আর দেখব যে মুমিনদের মত কথা তারা বলেন কিনা।

প্রথমে শুরু করি ইবন সিনা বা অভিসেনাকে দিয়ে। তিনি যে কত বড় বিজ্ঞানী তথা ডাক্তার ছিলেন একথা এখানে বিস্তারিত বলব না, এখানে শুধু তার উক্তিগুলি বিচার করব।
১] The knowledge of anything, since all things have causes, is not acquired or complete unless it is known by its causes.

কোনো জ্ঞান অর্জন ততক্ষণ সম্পন্ন হয় না যতক্ষণ না তার কারণ জানা যায়। বন্ধুরা কোনো সাচ্চা মুসলমান কি এই কথা বলে? তারা কি বলে না যে সব জ্ঞান কোরানে আছে? আর সেই জ্ঞানের কারণ জানতে চাওয়া উচিত নয়। এটাও কি তারা বলে না?

২] Now it is established in the sciences that no knowledge is acquired save through the study of its causes and beginnings, if it has had causes and beginnings; nor completed except by knowledge of its accidents and accompanying essentials.

কোনো জ্ঞান ততক্ষণ অর্জন করা যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তার কারণ না জানা যায়। আর সেই জ্ঞান অর্জন পূর্ণতা পায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তার পরিনাম না জানা যায়। প্রথমত মুমিনরা কোরানের জ্ঞানের কারণ তো জানতেই চায় না। পরিনামও তারা জানতে চায় না, কারণ যদি চাইত তাহলে জিহাদের পরিনাম যে নিজের এবং বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যু এবং পুরো মুসলমান জাতি তথা ইসলামের অপমান তা তারা বুঝতে পারত। সেই দিক থেকে বলা যায় যে মুমিনদের জ্ঞান অসম্পূর্ণ।

৩] The world is divided into men who have wit and no religion and men who have religion and no wit.

এই জগতে দুরকম মানুষ আছে : প্রথমজনের ধর্ম নেই কিন্তু বুদ্ধি আছে এবং দ্বিতীয়জনের বুদ্ধি নেই কিন্তু ধর্ম আছে। এখানে ইবন সিনা ধার্মিকদের বুদ্ধিহীন বলেছেন। কোনো মুমিন কোনদিন এই কথা বলবে না।

৪] So the forms of all things contained in the active intelligence are imprinted on his soul either all at once or nearly so, not that he accepts them merely on authority but on account of their logical order which encompasses all the middle terms.

সমস্ত বস্তুর জ্ঞান মানুষের আত্মায় অঙ্কিত আছে। মানুষ শুধু সেই জ্ঞান পায় যখন সে যুক্তিসঙ্গত ভাবে ধাপে ধাপে তাদের খোজ করে। এই কথাও কোনো মুমিন বলবে না। তাদের মতে সমস্ত বস্তুর জ্ঞান আল্লাহের কাছে আছে। তিনি সেই সব জ্ঞান তাদের দেন যারা আল্লাহের নাম মানুষের কল্লা কাটে: যার ভালো নাম জিহাদ।

সুতরাং ইবন সিনা মুসলমান ছিলেন না। থাকলে তিনি এই কথা বলতেন না।

আচ্ছা এবার আরেকজন মুসলিম বিজ্ঞানী কে দেখা যাক। তিনি ইবন রুশদ বা অভেরস। দেখা যাক তিনি কতটা মুসলমান?

১] God, the supreme being, is neither circumscribed by space, nor touched by time; he cannot be found in a particular direction, and his essence cannot change. The secret conversation is thus entirely spiritual; it is a direct encounter between God and the soul, abstracted from all material constraints.

আল্লাহ কে সময় বা কাল স্পর্শ করতে পারে না। তিনি কোনো একটা বিশেষ স্থানে নেই এবং তার মূলতত্ত্ব কখনো পরিবর্তন হয় না। গোপন বার্তালাপ পুরোটাই আধ্যাত্মিক। এটা আত্মা এবং আল্লাহের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগ। ইহা কি মুমিনদের মত কথা? মুমিনদের আল্লাহ তো দেশ কাল দ্বারা সীমাবদ্ধ। তিনি একটা বিশেষ স্থানে থাকেন। তার নাম বেহেশত। যেহেতু তিনি সীমিত সেহেতু তার মূলতত্ত্ব পরিবর্তিত হতে বাধ্য। শুধু অসীম সর্বব্যাপী সত্তার কোনো পরিবর্তন নেই। ইবন রুশদের আল্লাহ নিশ্চই কোরানে বর্ণিত আল্লাহ নন। অন্য কেউ।
আর দ্বিতীয় কথাটা তো ভয়ংকর। আল্লাহ আর আত্মা তথা নফসের প্রত্যক্ষ সংযোগ ? কোনো এমাম বা হুজুর ছাড়াই? তা কি করে সম্ভব? কোনো মুমিন কি এই কথা বলতে বা ভাবতে পারে? আমার মনে হয় না।

ইবন রুশদ তার রচনা “ভাগ্য এবং পূর্বনির্ধারিত গন্ত্যব্য” –তে বলেছেন :
• ২] This is one of the most intricate problems of religion. For if you look into the traditional arguments (Hadith) about this problem you will find them contradictory; such also being the case with arguments of reason। The contradiction in the arguments of the first kind is found in the Qur’an and the Hadith.

এটা ধর্মের খুব অন্তর্নিহিত সমস্যা। তুমি যদি এটার সমাধানে হাদিসের দিকে তাকাও তাহলে তুমি বিরোধ খুঁজে পাবে। এছাড়া কোরান ও হাদিসের যুক্তিগুলি স্ববিরোধী। বাহ। কোনো মুমিন কি কখনো এই কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে? করান আর হাদিস স্ববিরোধী? এ কথা বললে মুমিনরা আর মাদ্রাসার মাতব্বররা তাকে কেটে ফেলাটা বাকি রাখবে। ইবন রুশদ ঠিক কি ধরনের মুসলিম ছিলেন আমার মনে হয় এ থেকে স্পষ্ট।

৩] To master this instrument the religious thinker must make a preliminary study of logic, just as the lawyer must study legal reasoning. This is no more heretical in the one case than in the other. And logic must be learned from the ancient masters, regardless of the fact that they were not Muslims

ধর্মীয় চিন্তাবিদকে লজিক তথা যুক্তিবিগ্জ্ঞান শিখতে হবে। আর তা শিখতে হবে প্রাচীন গুরুদের কাছ থেকে। এটা আরো সুন্দর। মুসলিম আলেম বা উলেমারা কোনদিন লজিকের ধার ধরেনি। তাদের কাছে কোরানই শেষ কথা। তা সে যেমন কথাই হোক। কোনো ইসলামী আলেম বা উলেমা বা ইমাম কি কখনো লজিকের ওপর নির্ভর করার কথা ভেবে দেখেছে? ইবন রুশদ ভেবেছেন। তাই তিনি তেমন ভালো মুসলমান নন। লজিকের কথা বলতে গিয়েই তো অভি দা,রাজীব হায়দার, ওয়াশিকুর বাবু আর অনন্তদা খুন হলেন। অন্তত ইবন রুশদ তাদেরই মত ছিলেন।

৪] For every Muslim the Law has provided a way to truth suitable to his nature, through demonstrative, dialectical or rhetorical methods.

প্রতিটি মুসলমানের জন্য ইসলাম একটা বিশেষ পথ নির্ধারণ করেছে যা তাকে সত্যের কাছে নিয়ে যাবে। সেই পথ তার চরিত্রের সাথে খাপ খেয়ে যায়। আর সেই পথ যুক্তি তর্ক মেনে কাজ করে। তাই নাকি। তা ভাই ইবন রুশদ, আমরা মুমিনরা তো জানি একটিমাত্র পথ সব মুসলমানের জন্য আছে। তোমার কথা মানলে তো অসংখ্য পথের সৃষ্টি হয়। যতরকম মানুষ তত রকম পথ। তাই না। আবার তা যুক্তি তর্ক মেনে চলে। নাঃ, তুমি ভালো মুসলমান না। এটা কি রামকৃষ্ণদেবের “যত মত তত পথ”-এর মত কথা হলো না? আর কে না জানে যে ইসলামে একটাই মত আর একটাই পথ।

ইবন রুশদ তার গ্রন্থ “THE DECISIVE TREATISE, DETERMINING THE NATURE OF THE CONNECTION BETWEEN RELIGION AND PHILOSOPHY” তে কি বলেছেন আসুন দেখা যাক:

৫] উক্ত গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ( যার নাম: Philosophy Contains Nothing Opposed to Islam ) বলেছেন যে – If the apparent meaning of Scripture conflicts with demonstrative conclusions it must be interpreted allegorically, i।e। Metaphorically.
অর্থাত যদি কোরানের আপাত অর্থ বাস্তবের বিরুদ্ধ হয় তাহলে কোরানের অর্থকে রূপক ধরতে হবে। তাই নাকি। এটাও মুসলমানের মত কথা হলো না। মুসলমানরা কোরানের অর্থকেই আক্ষরিক ভাবে মানে। তা সে যত অবাস্তব হোক না কেন। মেয়েরা যতই কর্মঠ হোক না কেন মুসলিমরা তাদের নিষ্কর্মা ভেবে ঘরবন্দী করে রাখবেই কারণ কোরান তাদেরকে তাই করতে বলেছে। কাফেররা যতই মুসলিমদের ভাই বলুক না কেন বা তাদের উপকার করুক না কেন, মুসলিমরা তাদেরকে শত্রু বলে মানবেই কারণ কোরান বলেছে। ৪৭ এর দেশভাগে মুসলিমদের হিন্দুনিধনের মধ্যে দিয়ে এটা প্রমানিত। আবার মুসলিমদের মধ্যে যারা কোরানের সমালোচনা করে, কোরানের ভুলত্রুটি শুদ্ধ করতে চায় , অন্য মুসলিমরা তাদের কাফের বলবেই কারণ কোরান বলেছে। রাজীব হায়দার, হুমায়ুন আজাদ, ওয়াশিকুর বাবুদের হত্যা তার প্রমান। মুসলিমদের এই সকল ব্যবহার প্রমান করে যে তারা কোরানের অর্থকেই মেনে চলে তা সে যতই অবাস্তব হোক না কেন।
এ খানেও ইবন রুশদ মুসলমান হলো না। কাফেরই থেকে গেল।

এবারে আসুন আল রাজির কথায়। তিনিও একজন বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী। তিনি কতটা মুসলমান ছিলেন? আসুন দেখা যাক :

১] Asked if a philosopher can follow a prophetically revealed religion, al-Razi frankly replies: How can anyone think philosophically while listening to old wives’ tales founded on contradictions, which obdurate ignorance, and dogmatism?

তাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে একজন বিজ্ঞানী /দার্শনিক কি ধর্মকে মেনে চলতে পারে? তিনি জবাব দিয়েছিলেন: কিভাবে কোনো বিজ্ঞানী ঠাকুরমার ঝুলির গপ্পকথা নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চিন্তা করতে পারে, বিশেষ করে যে কথা গোড়ামী ভরা এবং অজ্ঞানতা ছড়ায় ? এই কথা কি ইসলামসম্মত? তিনি তো সরাসরি ইসলামকে ঠাকুরমার ঝুলির গল্পকথা বানিয়ে দিলেন। এতটা চাছাছোলা ভাষায় আজকের নাস্তিকরা কথা বলে থাকেন। তাহলে কি আল রাজি নাস্তিক ছিলেন? মুসলিম বিজ্ঞানী ছিলেন না?

২] Gentility of character, friendliness and purity of mind, are found in those who are capable of thinking profoundly on abstruse matters and scientific minutiae.

চারিত্রিক উদারতা, বন্ধুত্তপুর্ণতা, এবং মানসিক নির্মলতা তারই আসে যে বিজ্ঞানের বিষয়ে বা বিমূর্ত বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তন করতে পারে। নাঃ এ কথাটা মোটেই ইসলামসম্মত নয়। মুমিনরা তো চিন্তা করতেই পারে না , গভীরভাবে তো দুরের কথা সাধারনভাবেও নয়। যদি তারা তাই করত তাহলে জিহাদের করুন তথা বর্বর পরিনতি তারা বুঝতে পারত। আজকে এই জিহাদই মুসলিমদের তথা ইসলামকে কলঙ্কিত করেছে। এরই জন্য দুনিয়াজোড়া মুসলমানদের দুর্দশার অন্ত নেই। তারা বোরখার অসারতা বুঝতে পারত। তারা নারীদের ওপর যত হাদিস আছে তার অসারতা বুঝতে পারত। তারা দর্শন ও বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারত। তারা হুজুর তথা ইমাম বা মৌলবিদের যা তা দাবি মানত না। মুসলমানদের মধ্যে যারা একটু চিন্তা করে তাদেরকে কাফের বলে তাদের হত্যা করত না। হুমায়ুন আজাদ, থাবা বাবা, ওয়াশিকুর বাবু, অভিদা : কেউই মরত না। মুসলিমদের চেহারাটাই অন্য রকম হত।
সুতরাং বন্ধুরা আল রাজি মোটেই মুসলমান ছিলেন না। থাকলে তিনি এই কথা বলতেন না।

তাহলে দেখা গেল যে এই সব বিজ্ঞানী কেবল নামে মুসলিম। কিন্তু তাদের কাজকর্ম, জীবনদর্শন কোনো কিছুই মুসলিমদের মত নয়। তাহলে এদের নিয়ে ইসলামী দুনিয়া এত গর্ব করে কোন যুক্তিতে? মুসলিম বিজ্ঞানী কথাটা vatican astronomar বা গে রিপাবলিকান-এর মত অসম্ভব শব্দবন্ধ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
http://www।brainyquote।com/quotes/authors/a/avicenna।html#osSuMTDyQ5XMySQV।99
http://people।uvawise।edu/philosophy/phil205/Averroes।html
https://en।wikiquote।org/wiki/Avicenna