এখন কি আমাদের অভিজিৎ রায়ের “ইমেজ” তৈরি করতে উঠে-পড়ে লাগতে হবে! অভিজিৎ ধর্ম নিয়ে তেমন লিখেননি। তিনি ইসলাম নিয়ে লেখালেখি করেননি। তিনি শুধু নির্দোষ বিজ্ঞান লেখক ছিলেন…। আমরা ভিক্ষে করবো একদল শিক্ষিত হেফাজতী মডারেট মুসলিমদের কাছে আমাদের অভিজিৎকে “গ্রহণযোগ্য” করতে! মডারেটরা তাতে অভিজিতের হত্যাকান্ডে দু:খ প্রকাশ করে বলবে, উনি ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন না। ধর্ম নিয়ে কোন মাথাব্যথা ছিল না। বিজ্ঞান নিয়েই উনি লিখতেন, তার লেখার সঙ্গে আমি একমত নই, তবে তার বাক স্বাধীনতার পক্ষে আমি। নিন্দা জানাই অভিজিতের হত্যাকে…। কেউ বলবে অভিজিৎ থাবা বাবার মত ছিলো না, ও-তো বিজ্ঞান নিয়ে লিখতো শুনেছি…। এইভাবে আমরা অভিজিৎকে অপমান করবো? মুক্তমনা আর মুক্তচিন্তার প্রকাশকে কুন্ঠিত করবো? কিছু বরাহ শাবকের সহানুভূতি আর স্বীকৃতির প্রত্যাশায় অভিজিৎকে আমরা “গ্রহণযোগ্য” করবো? অভিজিৎ নাস্তিক ছিলেন, অভিজিৎ ধর্ম নিয়ে লিখেছেন, ইসলামকে সমালোচনা করেছেন, অভিজিৎ বিজ্ঞান নিয়ে লিখেছেন, তিনি বিবর্তনবাদ নিয়ে, সমকামিদের অধিকার নিয়ে লিখে গেছেন অবিরাম। তিনি মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লেখক ছিলেন। এইসব মিলিয়েই “আমাদের অভিজিৎ”! যাঁকে হারিয়ে আমরা কাঁদছি! কাঁদবো…।

ফেইসবুকে এক বরাহ লিখেছে, অভিজিতের বই পড়ে তো আমি তেমন খারাপ কিছু পাইনি। মানে অভিজিতের চাপাতীর কোপ খাওয়াটা জায়েজ হয়েছে কিনা তার টেস্টিং চলছে! যদি খারাপ কিছু পেতো, যদি খুঁজে পেতো অভিজিৎ নবী উম্মে হানীর সঙ্গে পরকীয়া করতো কিনা। সাফিয়াকে ধর্ষণ করেছে কিনা, মুহাম্মদ হালাকু খান, চেঙ্গিস খান, তৈমুর লংয়ের চেয়ে বড় খুনি ছিলেন কিনা- তাহলে অভিজিতের উপর চাপাতীর কোপটা জায়েজ হয়ে যেতো। অভিজিৎ “ভদ্র নাস্তিক” ছিলো, সে ইসলাম বিদ্বেষী ছিলো না- আজ সেই প্রচারণায় আমাদের নামতে হবে? বেগম রোকেয়াকে যেমন “ভদ্রমহিলা” বানাতে হয়েছে, কবি নজরুলকে যেভাবে “মুসলমান কবি” সাজাতে হয়েছে অভিজিৎকে সেভাবে কর্তিত করতে হবে ঐ সব দুমোখো মডারেটদের কাছে সহানুভূতি আদায় করতে? অভিজিৎ মুক্তমনা ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা। আমরা কি এখন মুক্তমনা ব্লগ সাইটটিকে বন্ধ করে দিবো। এই ব্লগে আমরা ধর্মকে সমালোচনা করেছি মুক্ত কন্ঠে। এখানে বিজ্ঞান চর্চা করেছি। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি। অভিজিৎ এইসব কিছু মিলিয়েই। অভিজিৎ যেমন ছিলো অভিজিৎ সেভাবেই থাকবে। তার কর্ম তাকে জীবিত করে রাখবে বাংলা ভাষায় মুক্তচিন্তার অগ্রদূতদের কাতারে। অভিজিৎ তাসলিমা নাসরিন, মুরতাদ আহমদ শরীফ, ইসলাম বিদ্বেষী হুমায়ূন আজাদদের সমভূক্ত। বরাহগণ, এবার অভিজিতের হত্যাকান্ডকে মূল্যায়ন করো!

রাজনীতির বরাহরা এখন অভিজিৎকে নিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে শুরু করেছে। এরা জানেও না অভিজিতের কাজ সম্পর্কে। নাস্তিক, ধর্ম বিরোধী অভিজিৎকে শেষে এরাও গিলতেও পারবে না। অভিজিৎ- আমরা, এমন এক সমাজে লেখালেখি করি যেখানে আমাদের হত্যার বৈধ অধিকার সকলেরই। সত্য বলার অপরাধে ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। গ্যাললিওকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। ছিঃ ছিঃ করেছে তাদের জনতা। তাদের পক্ষে একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এখন তো সবাই মেনে নিয়েছে পৃথিবী স্থীর নয়। সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরে। আমরা কেন তাহলে অভিজিৎকে বিকৃত করবো? অভিজিৎ অভিজিৎ হয়েই বেঁচে থাকবে। অভিজিৎ তাঁর সমস্ত রচনাবলীর মাঝেই অমর হয়ে থাকবেন।

তাঁর হত্যাকে দুদিন পরেই জায়েজ করা হবে। মডারেটরা কোনদিন অভিজিৎকে পড়ে দেখেনি। এখন একটু একটু করে খুনিদের প্রচারণায় জানতে পারবে অভিজিৎ পৃথিবীর প্রচীনতম প্রতারকদের সম্পর্কে লিখে গেছেন। লিখেছে সাম্প্রদায়িকতার সূত্র ধরেই। তাই দুদিন পরেই শুনতে হবে, “হত্যাকান্ডকে সমর্থন করি না, অভিজিৎও ধর্ম নিয়ে লিখে ঠিক কাজ করেনি…”। এই বরাহ শাবকদের তুমুল ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিতে সম্পূর্ণ অভিজিৎকেই তাই আমাদের তুলে ধরতে হবে। আমরা যেন কিছুতে আমাদের প্রিয় অভিজিৎকে অপমান না করি।…